ভবঘুরেকথা
মা সারদা শ্রীমা

পুরুষশক্তি ও নারীশক্তি

-মেঘনা কুণ্ডু আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আসে নানান উত্থান-পতন অথবা সুখ-দুঃখ। এগুলো চলমান চাকার মতো, চলতেই থাকে। আমরা সুখের সময় ভীষণ আনন্দিত হই, আবার দুঃখের সময় এতোই ভেঙে পরি যে, আমরা নিজেদের আলাদা করে নিই সবার থেকে; মনে হয় জীবনটাকে যেন অন্ধকার গ্রাস করে ফেলেছে, তখন আমাদের ক্রোধ, বিরক্তিও বেড়ে যায়, মাঝেমাঝে আমরা দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ‘ঈশ্বর’-কেও দোষারোপ করে ফেলি।

এইসব ক্রোধ, দুঃখ, কামনা, বাসনা, ঘৃণা আবার এদিকে শ্রদ্ধা, ভক্তি, দয়া, বিশ্বাস, মায়া, মমতা, ভালোবাসা- সবটুকুই আমাদের দেহের অন্দরে অবস্থিত শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে দুধরণের শক্তি পরিলক্ষিত হয়। একটি হলো masculine energy বা পুরুষ শক্তি এবং অপরটি হলো feminine energy বা নারী শক্তি।

একজন মানুষের মধ্যে দুটো শক্তিই উপস্থিত থাকে। পুরুষ শক্তি আমাদের head বা মস্তিষ্ককে পরিচালনা করে এবং নারী শক্তি আমাদের heart বা হৃদয়কে পরিচালনা করে। আচ্ছা, এই শক্তিগুলির এমন নামকরণই বা কেন?

কারণ, একজন পুরুষ(male) ভীষণ বাস্তববাদী হয়ে থাকেন, তাঁরা জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিকে বাস্তবতা দিয়ে সামলাতে চান; অপরদিকে একজন নারীর(female) মধ্যে মায়া-মমতা, দয়াভাব, ভক্তি পরায়ণতার আধিক্য দেখা যায় তাই এই শক্তিগুলোর এমন নামকরণ হতে পারে।

তাহলে, একজন মানুষের কিরূপ ধর্ম হওয়া উচিৎ? একজন মানুষের ধর্ম হওয়া উচিৎ, জলের মতো। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, তার মানে অন্যায়কে মেনে নেওয়া নয়, ওটা আরও বড়ো অধর্ম। যেসব সমস্যাগুলো বাস্তবতার সাথে জড়িত সেগুলো মস্তিষ্ক বা পুরুষ শক্তি দিয়ে পরিচালনা করা এবং যেগুলো একান্তই হৃদয় সংক্রান্ত, সেগুলো হৃদয় দিয়েই বা নারী শক্তি দিয়ে পরিচালনা করাই হলো আমাদের কর্তব্য।

যেহেতু একজন মানুষের মধ্যে দুটো শক্তিই বিদ্যমান, তাই এদের মধ্যে সমতা থাকা প্রয়োজন, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই এই শক্তিগুলির অসমতা দেখা যায়, আর এটাই এখনকার সবচেয়ে বড়ো সমস্যাগুলির মধ্যে একটি; কারণ অধিকাংশ মানুষেরই একটি শক্তির আধিক্যই বেশি এবং অপরটির একদমই কম।

এর ফলে আস্তিক এবং নাস্তিক-এই দুই দলের মানুষের উদ্ভব ঘটেছে। এছাড়াও মানুষের জীবনে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব-এর মতো সমস্যাও দেখা দেয়। আস্তিক এবং নাস্তিক-এর প্রসঙ্গ উঠে আসার কারণ হলো একজন নাস্তিক ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ শক্তি বেশি কাজ করে, তাই তিনি ঈশ্বরকে না ডেকেই তাঁর দর্শন পেতে চান, আর চার-পাঁচটি দ্রব্যের মতো বা কোনো মানুষের মতো, যার নির্দিষ্ট আকার-আয়তন আছে এবং যাঁকে সহজেই দেখা যায় অপরদিকে একজন আস্তিক ব্যক্তির মধ্যে নারীশক্তির প্রভাব বেশি হয়ে থাকে।

তাহলে, একজন মানুষের কিরূপ ধর্ম হওয়া উচিৎ? একজন মানুষের ধর্ম হওয়া উচিৎ, জলের মতো। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, তার মানে অন্যায়কে মেনে নেওয়া নয়, ওটা আরও বড়ো অধর্ম। যেসব সমস্যাগুলো বাস্তবতার সাথে জড়িত সেগুলো মস্তিষ্ক বা পুরুষ শক্তি দিয়ে পরিচালনা করা এবং যেগুলো একান্তই হৃদয় সংক্রান্ত, সেগুলো হৃদয় দিয়েই বা নারী শক্তি দিয়ে পরিচালনা করাই হলো আমাদের কর্তব্য।

স্রষ্টা সকলের মঙ্গল করুন।।
নমস্কার।।

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই “সাধু পঞ্জিকা” দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………..
আরো পড়ুন:
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: এক
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: দুই
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: তিন


লালন ফকিরের নববিধান: এক
লালন ফকিরের নববিধান: দুই

লালন ফকিরের নববিধান: তিন

লালন সাঁইজির খোঁজে: এক
লালন সাঁইজির খোঁজে: দুই


মহাত্মা লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির স্মরণে বিশ্ব লালন দিবস
লালন গানের বাজার বেড়েছে গুরুবাদ গুরুত্ব পায়নি
লালন আখড়ায় মেলা নয় হোক সাধুসঙ্গ
কে বলে রে আমি আমি
ফকির লালন সাঁই
ফকির লালনের ফকিরি
ফকির লালন সাঁই


বিশ্ববাঙালি লালন শাহ্
ফকির লালন সাঁইজির শ্রীরূপ
গুরুপূর্ণিমা ও ফকির লালন
বিকৃত হচ্ছে লালনের বাণী?

লালন অক্ষ কিংবা দ্রাঘিমা বিচ্ছিন্ন এক নক্ষত্র
লালন ফকির : হিন্দু কি যবন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!