পরপদানত দারিদ্র ভারে নতশির ভারতবর্ষ বিগত উনিশ ও বিশ শতকে পশ্চিমী সভ্যতাকে কী দিতে পেরেছে তার হিসেব কষতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অধ্যাত্মজ্ঞান, সঙ্গীতরস, সাহিত্যসুধা ও নৃত্যকলা ছাড়া আর কোনও বিষয়েই আমরা আমেরিকা-ইউরোপের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারিনি। অধ্যাত্মবাদীর বাইরে যে ক’টি এক্সপোর্ট কোয়ালিটি নাম আমাদের সঞ্চয়ের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উদয়শঙ্কর এবং রবিশঙ্কর। ভাবতে ভাল লাগে এঁরা সবাই বাঙালী।
আর অধ্যাত্মবাণী প্রচারের সঙ্গে যাঁরা বিস্ময়করভাবে জড়িত তাঁরা সবাই যে বঙ্গসরস্বতীর বরপুত্র তা ভাবতে আরও আশ্চর্য লাগে। এই ক্ষুদ্র তালিকাটি একটু ঝালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। প্রথম নামটি কলকাতার রমণীমোহন চট্টোপাধ্যায়।
এক সময় আমেরিকায় বেদ প্রচারে ছোটখাট আলোড়ন তুলেছিলেন, তারপর স্বদেশে ফিরে এসে ঠাকুরবাড়ির দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই জামাই কলকাতার অ্যাটর্নি প্রফেশনে স্বনামধন্য হন। তাঁর জন্ম ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে আর দেহাবসান ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে।
দ্বিতীয় জন প্রতাপচন্দ্র মজুমদার মোহিনীমোহনের থেকে প্রায় কুড়ি বছরের বড়, ব্রাক্ষ্মবাণী প্রচারের দুঃসাহসে আমেরিকায় যান এবং পরে ১৮৯৩ সালে শিকাগো ধর্মমহাসম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন, যেখানে কলকাতার অনাহূত বক্তা রামকৃষ্ণশিষ্য নরেন্দ্রনাথ দত্ত যে আলোড়ন ফেলে দেন তা ভারতবর্ষ আজও ভুলতে পারেনি।
রামকৃষ্ণ মিশনের বিশ্বব্যাপী জয়যাত্রা উনিশ শতকের মস্ত বড় এক ঘটনা। স্বামী বিবেকানন্দ দীর্ঘজীবন লাভ করেননি, কিন্তু একজন দূরদর্শী ম্যানেজমেন্ট বিশারদ হিসেবে চারজন রামকৃষ্ণ শিষ্যকে আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন। স্বামী সারদানন্দ (১৮৬৫-১৯২৭), স্বামী অভেদানন্দ (১৮৬৬-১৯৩৯), স্বামী তুরীয়ানন্দ (১৮৬৩-১৯২১) ও স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ (১৮৬৫-১৯১৫)। এঁরা সকলেই কলকাতার ছেলে।
যথাসময়ে গ্রিনউইচ ভিলেজে আশ্রয় নেওয়া এবং যথাসময়ে শ্রীচিন্ময় নামে বিশ্ববন্দিত হওয়া। ইনি ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক ব্রুকলিনে শ্রীচিন্ময় মেডিটেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠা করেন। নিউইয়র্কে তাঁর দেহাবসান।
শেষোক্ত জন আমেরিকায় বেদান্ত প্রচারকালেই ২৭ ডিসেম্বর ১৯১৪ বোমার আঘাতে আহত হয়ে কয়েকদিন পরে নতুন বছরে মারা যান। আরও আশ্চর্য, আরও একজন বাঙালী পরবর্তী সময় আমেরিকায় বিপুল সম্মান ও স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন, তাঁর আদি নাম মুকুন্দলাল ঘোষ, পরবর্তীকালে পরমহংস যোগানন্দ।
বাইশ বছর বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে সাতাশ বছর বয়সে (১৯২০) জাহাজযোগে আমেরিকায় যান এবং ভারতীয় প্রচারকদের মধ্যে দীর্ঘতম সময় (১৯২০-৫২) প্রবাসে কাটিয়ে ওদেশেই দেহরক্ষা করেন। তাঁর যোগদা সৎসঙ্গ আজও বিশ্বের নানা অংশে প্রাণবন্ত হয়ে আছে। এঁর আত্মজীবনী ‘অটোবায়োগ্রাফি অব এ যোগী’ আজও লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়।
এখানেই শেষ নয়, ১৯৪৭ সালের পর আরও দু’জন বাঙালী নাম আটলান্টিকের ওপারে বিস্ময়কর সাফল্যের নিদর্শন। একজন সি কে ঘোষ প্রথম পর্বে চট্টগ্রাম থেকে পুদুচেরীর অরবিন্দ আশ্রমে এবং সেখান থেকে অন্তরের আদেশে মাত্র আট ডলার পকেটে নিয়ে একজন ভক্তের দেওয়া এরোপ্লেন টিকিটে নিউইয়র্ক।
যথাসময়ে গ্রিনউইচ ভিলেজে আশ্রয় নেওয়া এবং যথাসময়ে শ্রীচিন্ময় নামে বিশ্ববন্দিত হওয়া। ইনি ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক ব্রুকলিনে শ্রীচিন্ময় মেডিটেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠা করেন। নিউইয়র্কে তাঁর দেহাবসান।
বঙ্গীয় সাধকদের এই ধারাবাহিক বিশ্ববিজয় কাহিনী আজও তেমনভাবে কেন আমাদের গর্বের এবং আত্মবিশ্বাসের কারণ হয়ে ওঠেনি তা ঠিক বুঝতে পারি না। বিশেষ করে শেষজনের কথা আজও তেমনভাবে বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠেনি আজও, যদিও আটলান্টিকের ওপারে তাঁর বিপুল সম্মান ও স্বীকৃতি স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতবর্ষের এক তুলনাহীন গর্বের কাহিনী।
এই মানুষটি সম্বন্ধে কানাঘুষো অনেকদিন, কিন্তু তাঁর মহামূল্যবান বাণীগুলি শত-সহস্র শ্বেতাঙ্গের হৃদয়স্পন্দন ঘটালেও আমরা আজও তাঁকে তেমনভাবে জানি না। ভারতবাণী পৃথিবীর দিকে দিকে প্রচারে তাঁর সাফল্য যে শতাব্দীর সেরা তাও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালীর ভাবনা-চিন্তায় আজও তেমনভাবে প্রকাশিত হয় না।
অথচ দেখতে দেখতে তাঁর বিশ্ববিজয় প্রচেষ্টার অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হল। ১৩ অগস্ট ১৯৬৫ সোমবার দুপুরে প্রায় সত্তর বছরের এক বৃদ্ধ একটি ছাতা, দুটি ট্র্যাংক, এক কপি চৈতন্য চরিতামৃত, কিছু চিঁড়ে মুড়কি এবং সেই সঙ্গে আটটি ডলার এবং পাসপোর্ট-ভিসা ও পি-ফর্ম সম্বল করে একটি মিটার ট্যাক্সি চড়ে খিদিরপুর ডকের দিকে এগিয়ে চললেন, যাকে অবশ্যই মহানিষ্ক্রমণ বলা চলতে পারে।
একজন গাইয়ে ভদ্রলোক দয়াপরবশ হয়ে তাঁর সঙ্গে খিদিরপুর পর্যন্ত এলেন, তাঁর নাম শিশির ভট্টাচার্য। জলযানের নাম জলদূত, সিন্ধিয়া কোম্পানির মালবাহী জাহাজ। যাত্রীর সঙ্গে রয়েছে একটা বিনামূল্যের টিকিট এবং সেই সঙ্গে জাহাজে বিনামূল্যে নিরামিষ খাওয়া-দাওয়ার অনুমতি।
সেদিন এই বঙ্গীয় বৃদ্ধের চোখে বিশ্ববিজয়ের স্বপ্ন, জাহাজ থেকে যখন তীরের দিকে তাকালেন তখন একজন অনুরাগীকেও বিদায় জানাতে দেখলেন না। বহুবছর আগে সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ যখন (১৮৯৩) বোম্বাই থেকে ভারত ত্যাগ করেছিলেন তখনও বন্দরে গুণগ্রাহীদের ভিড় না থাকলেও ছিলেন গুণগ্রাহী এক ভক্ত মহারাজের সেক্রেটারি, রাজার নির্দেশে তিনি সন্ন্যাসীর বিদেশযাত্রার গৈরিক বসন কিনে দিয়েছিলেন এবং সেইসঙ্গে একটা উঁচুক্লাসের টিকিট।
এর আগে নিচু ক্লাসের টিকিটের জন্য দক্ষিণের ভক্তরা প্রায় ভিক্ষে করে কিছু টাকা তুলেছিলেন, কিন্তু সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার সম্ভব হয়নি স্বাস্থ্যের কারণে। পরবর্তীকালের অনুসন্ধান বলছে, পেটের রোগে বিব্রত সন্ন্যাসীকে ঘন ঘন টয়লেট যেতে হয় যা ডেকের যাত্রীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। জাহাজ-চড়া সংগ্রামীর জীবনকথায় তার ইঙ্গিত রয়েছে, কৃতজ্ঞ সন্ন্যাসী জানাচ্ছেন, জাহাজের নতুন পরিবেশে তাঁর বাথরুমে ছোটাছুটি কমে গিয়েছে নাটকীয়ভাবে।
স্বামী বিবেকানন্দের সমুদ্রযাত্রার অনেক বিবরণ গত ১২৫ বছরে সংগৃহীত হয়েছে, কিন্তু অভয়চরণ দে’র কলকাতা থেকে ১৯৬৫ অগস্টে আমেরিকা যাত্রার ব্যাপারে আমরা তেমন কিছু জানি না। কলকাতার এক সোনার বেনে পরিবারে অভয়চরণ দে’র জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে। যতটুকু জানা যায়, টালিগঞ্জে আদিগঙ্গাতীরে মাতুলালয়ে এক পর্ণকুটিরে কাঁঠাল গাছতলায় মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই মামা নাম দেন নন্দদুলাল।
মায়ের নাম রজনী, বাবা গৌরাঙ্গমোহন দে, এঁরা নবজাতকের নাম দেন অভয়চরণ। গৌরমোহনের ছিল উত্তর কলকাতায় কাপড়ের ব্যবসা, বসবাস ১৫১ হ্যারিসন রোডের এক তিনতলা বাড়িতে। প্রিয় পুত্রের আরও অনেকগুলো নাম দেওয়া হয়েছিল। পিতৃদেব গৌরমোহন ছিলেন শুদ্ধ বৈষ্ণব, তিনি চেয়েছিলেন ছেলে হয়ে উঠুক কৃষ্ণভক্ত, যদিও মা চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে বিলেত গিয়ে ব্যারিস্টার হোক।
পরবর্তীকালে ভক্তিবেদান্ত তাঁর স্মৃতিচর্চাকালে বলেছেন, বাবার মাসিক রোজগার ছিল আড়াইশো টাকার মতো, তার থেকেও দেবসেবায় ব্যয় করতেন এবং ছেলেকে এক সময় স্কটিশচার্চ কলেজে দর্শন শাস্ত্রে বিএ অনার্স পড়তে পাঠান। সেখানে তাঁর এক বছরের সিনিয়র প্রেসিডেন্সি থেকে বিতাড়িত সুভাসচন্দ্র বসু।
এ বিষয়ে পিতৃদেবের প্রবল আপত্তি, কারণ বিদেশ গেলেই সে কোটপ্যান্ট পরবে, মদ খাবে এবং মেমসাহেবদের সঙ্গে মেলামেশা করবে। তিনি ছোট্ট ছেলেকে মৃদঙ্গ বাজানো শেখার ব্যবস্থা করলেন যাতে সে ভজন-কীর্তনে দক্ষ হয়ে উঠে শ্রীমদ্ভাগবতের বাণী প্রচার করতে পারে।
এদিকে এক জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, জাতক সত্তর বছর বয়সে সাগরপাড়ি দিয়ে বিদেশে যাবেন, একজন বিখ্যাত ধর্মপ্রচারকরূপে স্বীকৃতি লাভ করবেন এবং ১০৮টি মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন। নানা জন এই পুত্রের নানা নাম দিয়েছিলেন- মতি, নন্দু, বোচা। কচুরির প্রতি অস্বাভাবিক দুর্বলতার জন্য দিদিমা ডাকতেন কচুরি-মুখো।
শেষপর্যন্ত মতিলাল শীল ফ্রি স্কুলে ঢুকলেন অভয়চরণ দে। তারও অনেকপরে সময়ের স্রোতে একসময় পুরো নাম হয়েছিল- কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়াচরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। যে প্রতিষ্ঠানের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সারা বিশ্বে যার নাম ‘ইসকন’, বাংলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ।
পরবর্তীকালে ভক্তিবেদান্ত তাঁর স্মৃতিচর্চাকালে বলেছেন, বাবার মাসিক রোজগার ছিল আড়াইশো টাকার মতো, তার থেকেও দেবসেবায় ব্যয় করতেন এবং ছেলেকে এক সময় স্কটিশচার্চ কলেজে দর্শন শাস্ত্রে বিএ অনার্স পড়তে পাঠান। সেখানে তাঁর এক বছরের সিনিয়র প্রেসিডেন্সি থেকে বিতাড়িত সুভাসচন্দ্র বসু।
বঙ্গজীবনে ক্রিশ্চান মিশনারি কলেজের ভূমিকা প্রসঙ্গে একটা জিনিস ইদানীং স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখানকার অনেক ছাত্র যেমন নিজেদের ধর্মে শ্রদ্ধা হারিয়ে স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে পরিবারের উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠেন, তেমন স্বামী পরমহংস বিবেকানন্দ, যোগানন্দ এবং ভক্তি-বেদান্ত এই তিনজনেই স্কটিশচার্চ কলেজের ছাত্র।
ঠাকুরের প্রিয় শিষ্য রামকৃষ্ণ মিশনের স্তম্ভস্বরূপ রামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গের অবিস্মরণীয় লেখক স্বামী সারদানন্দও ছিলেন আর এক মিশনারি কলেজ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র। অর্থাৎ সারাবিশ্বে ভারতীয় অধ্যাত্ম ভাবনা প্রচারে মিশনারি কলেজে শিক্ষিত ছাত্রদের দান অসীম। এ সম্বন্ধে কোনও সময়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ মন্দ হবে না, কিন্তু ভক্তিবেদান্তের বিস্ময়কর বিদেশযাত্রা এই মুহূর্তে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, হ্যারিসন রোডের নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব বস্ত্রব্যবসায়ীর পুত্র শৈশব থেকে কীর্তনে আগ্রহী কৃষ্ণগতপ্রাণ বৈষ্ণব কীভাবে বিশ্বপ্রচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার স্বপ্ন দেখলেন এবং কীভাবে সব বাধা অতিক্রম করে সত্তরোর্ধে তাঁর গুরুর ইচ্ছা পূরণ করলেন তার বিস্তারিত বিবরণ উপন্যাসকেও হার মানায়।
এই সুযোগে অভয়চরণের জীবনবৃত্তান্ত আরও একটু জেনে রাখা যেতে পারে। ছোটবেলায় তিনি একবার কঠিন অসুখে পড়েছিলেন। গৃহ-চিকিৎসক খ্যাতনামা ডাক্তার কার্তিক বসু চিকেন খাবার প্রেসক্রিপশন দিলেন, সেই সঙ্গে বললেন, তিনি নিজেই পথ্য তৈরি করে আনবেন। সেই পথ্য মুখে দিয়েই শিশুর বমি শুরু হল, এই শরীরে আমিষ চলবে না তা বিখ্যাত ডাক্তার বুঝে গেলেন। পরবর্তীকালে ইসকনের নিরামিষ নীতির ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
অভয়চরণ আজন্ম সন্ন্যাসী নন তাঁর বৈষ্ণবগুরু ভক্তিসিদ্ধান্তের মতন। সেকালের নিয়ম মতো কলেজে পড়তে পড়তেই ২২ বছর বয়সেই বিবাহ, কন্যার নাম রাধারানী দত্ত এবং পরবর্তী সময়ে পাঁচ পুত্র ও কন্যার পিতা। এ দেশের অধ্যাত্মসাধনায় এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় শিষ্য স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও স্বামী শিবানন্দ বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা পেরিয়ে সন্ন্যাসমন্ত্র লাভ করেছিলেন।
সংসার জীবনে অর্থ উপার্জনের প্রয়োজন এবং পিতৃদেবের প্রচেষ্টায় অভয়চরণ পারিবারিক বন্ধু ডাক্তার কার্তিক বসুর বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানিতে। মন দিয়েই সংসারধর্ম ও কাজকর্ম করছিলেন মেডিক্যাল সেলসম্যান অভয়চরণ, কিন্তু ১৯২২ সালে তাঁর বন্ধু নরেন্দ্র নাথ মিত্র অভয়চরণকে এক অদ্ভুত বৈষ্ণব সন্ন্যাসীর কাছে নিয়ে গেলেন।
বাগবাজারের গৌড়ীয় মঠে তিনি ভাবী গুরুকে প্রথম দেখলেন এবং প্রথম দর্শনেই ভক্তিভরে মাথানত করলেন। গুরু ভক্তসিদ্ধান্তের পিতাও আর একজন বৈষ্ণব চিন্তানায়ক, বহুগ্রন্থের রচয়িতা এবং একসময়ে পুরী জগন্নাথ মন্দিরের সুপারিনটিন্ডেন্ট। পুরীতেই ভক্তিসিদ্ধান্তের জন্ম। সাত বছর বয়স থেকে ভগবৎগীতা কণ্ঠস্থ।
এক সময় শতকোটিবার হরেকৃষ্ণমন্ত্র উচ্চারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ইনি দিনে একবার মাত্র অন্নগ্রহণ করতেন এবং ভূমিতে শয়ন করতেন। অভয়চরণ প্রথম দর্শনেই অভিভূত। ভাবীগুরু বললেন, ‘তোমরা শিক্ষিত ছেলে, চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী সারাবিশ্বে প্রচার করো।’
একজন হতাশা প্রকাশ করে বলল, ‘আপনার চৈতন্যবাণী কে শুনবে? আমরা পরপদানত ও পরাধীন, প্রথমে ভারত স্বাধীন হোক।’ ভক্তিসিদ্ধান্তকে আরেকটি প্রশ্ন, ‘ইংরেজের অধীনে থাকলে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি কী করে প্রচার করব?’ স্মরণীয় কয়েকটি সাক্ষাৎকারে ভক্তিসিদ্ধান্ত তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তার ইঙ্গিত দিলেন। তিনি ছাপাখানার মাধ্যমে বৈষ্ণবগ্রন্থের বিপুল প্রচারে বিশ্বাসী। নিজের মুদ্রণযন্ত্রের নামও দিয়েছিলেন ‘বিপুল মৃদঙ্গ’।
তাঁর বক্তব্য, কীর্তন আর কত দূর শোনা যায়? বৃহৎ মৃদঙ্গের সাহায্যে চৈতন্যদেবের বাণী শোনা যাবে সারা বিশ্বে। যথাসময়ে অভয়চরণ জানলেন, বৃহন্নারদীয় পুরাণ এবং উপনিষদ থেকে সঞ্চয়িত মন্ত্র :
হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম, হরে রাম
রাম রাম, হরে হরে।
অভয়চরণ তখন যথেষ্ট ভক্তি ও যথেষ্ট উপার্জনের দ্বৈতপথে যাতায়াত করছেন। তাঁর ইচ্ছা, বিজনেস থেকে প্রভূত উপার্জন হলে তিনি ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে অর্থসাহায্য করবেন। এইসময় একজন জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, অভয়চরণ একদিন ভারতবর্ষের অন্যতম ধনবান হবেন। অতএব ব্যবসায়ের বিস্তার প্রয়োজন। ডাক্তার বসুর সঙ্গে কিছু কথা হল। তিনি বললেন, অভয় উত্তর ভারতে তাঁর কোম্পানির এজেন্ট হতে পারেন।
অভয় সপরিবার চলে এলেন ইলাহাবাদে। সেখানে কলকাতার কোম্পানির এজেন্সি ছাড়াও নিজের তৈরি ওষুধও বিক্রি হবে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম প্রয়াগ ফার্মাসি। সেখানে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পার্টনারশিপ হল। তিনি জনস্টনগঞ্জের দোকানে বসে রোগী দেখবেন, প্রেসক্রিপশন লিখবেন এবং সেই প্রেসক্রিপশনের দামের পঁচিশ ভাগ কমিশন পাবেন।
একসময় প্রয়াগ ফার্মাসির নাম ছড়িয়ে পড়ল। স্বয়ং মতিলাল নেহরু ও জওহরলাল তাঁর খরিদ্দার ছিলেন এবং অভয়চরণ আট হাজার টাকায় একখানা সেকেন্ডহ্যান্ড বুইক গাড়ি কিনে ফেললেন। এই গাড়ি ট্যাক্সি হিসেবেও খাটানো হত।
এই প্রয়াগেই পিতৃদেব গৌরমোহনের দেহাবসান হল। শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের আগে ছেলেকে তিনি বললেন, বাড়ির গরু ও বাছুরটি স্থানীয় বৈষ্ণব মঠকে দিও এবং মঠের লোকরা যেন কীর্তন করতে করতে তাঁর মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যায়।
গুরু ভক্তিসিদ্ধান্তের দেহাবসান ১৯৩৭ সালের ১ জানুযারি। তার আগে শিষ্যের কাছে বারবার আবেদন, ইংরিজিটার ওপর জোর দাও, অনুবাদে মন দাও, বই ছাপো, না হলে সারা বিশ্বে প্রচার সম্ভব হবে না।
গুরু ভক্তিসিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে তাঁর প্রচারকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর ছাপাখানার সংখ্যা ১৯৩২-এ তিন, সেখান থেকে ছ’টি সাময়িকপত্র ছাপা হচ্ছে। এক সময় ‘নদিয়া প্রকাশ’ বলে দৈনিকপত্র প্রকাশের কথাও ভেবেছেন। একই বছরে তিনি শতসঙ্গী নিয়ে বৃন্দাবন পরিক্রমায় এলেন। পাঁচ হাজার বছর আগে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনের যে সব অংশ পদব্রজে পরিক্রমা করেছিলেন, সেই সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন।
আরও পরে প্রয়াগের এক অনুষ্ঠানে ভক্তিসিদ্ধান্ত তাঁর প্রিয় অভয়কে দীক্ষা দিলেন। তাঁর নতুন নাম হল অভয়াচরণারবিন্দ। ইলাহাবাদ ছাড়বার আগে গুরু নির্দেশ দিলেন রূপ গোস্বামী রচিত ভক্তি-রসামৃত-সিন্ধু মন দিয়ে পড়তে হবে। গুরুর সঙ্গে অভয়ের যোগাযোগ ক্রমশ নিবিড় হতে লাগল এবং তিনি একসময় চিঠিতে শিষ্যকে জানালেন, তুমি ইংরিজিতে ভাল প্রচারক হতে পারো, এতে মানুষের মঙ্গল হবে।
অভয়চরণ তখনও ভাবছেন বিজনেসকে বিস্তৃত করে আরও উপার্জনের কথা। আর গুরু বলছেন, যদি কখনও টাকা পাও তাহলে কিছু বই ছেপো। গুরু ভক্তিসিদ্ধান্তের দেহাবসান ১৯৩৭ সালের ১ জানুযারি। তার আগে শিষ্যের কাছে বারবার আবেদন, ইংরিজিটার ওপর জোর দাও, অনুবাদে মন দাও, বই ছাপো, না হলে সারা বিশ্বে প্রচার সম্ভব হবে না।
ইতিমধ্যে ব্যবসায়িক সাফল্যের সন্ধানে অভয়চরণ কখনও কানপুরে, কখনও বোম্বাইতে এবং অবশেষে কলকাতায়। সেখানকার ঠিকানা ৬নম্বর সীতাকান্ত ব্যানার্জি লেন, কোম্পানির নাম অভয়চরণ দে অ্যান্ড সন্স, সেই সঙ্গে বাত-বেদনা থেকে মুক্তির মালিশ দে’জ পেইন লিনিমেন্ট!
১৯৩৮-৩৯-এর কথা। অভয়চরণ পরের বছর ইংরিজিতে বই লিখলেন ইনট্রোডাকশন টু গীতোপনিষদ। পরিচিতজনরা তাঁকে ‘ভক্তিসিদ্ধান্ত’ টাইটেল দিতে চাইলেন। কিন্তু তিনি গুরুর নাম নিলেন না, অবশেষে পছন্দ করলেন ‘ভক্তিবেদান্ত’।
এ সব মহাযুদ্ধের আগের কথা। এই সময়য়েই পরবর্তী কালে বিশ্ববিখ্যাত ইংরিজি সাময়িকপত্র ‘ব্যাক টু গড্ হেড্’ প্রকাশ। যুদ্ধের পর ভাগ্যসন্ধানে কলকাতার ব্যবসা তুলে দিয়ে ৬০০ মাইল দূরে লখনউতে চল্লিশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে অভয়চরণ ওষুধের কারখানা খুললেন। কিন্তু তা চলল না। তিন বছর পরে অভয়চরণ আবার ইলাহাবাদে ফিরে এলেন। সেখান থেকে আবার কলকাতায়, বসবাস চেতলায়।
আবার নতুন সব ভাবনা। ভারতীয় ধারা অনুযায়ী বিশ বছর পর্যন্ত ব্রহ্মচর্য, একুশ বছর গার্হস্থ্য, একান্ন বছরে বানপ্রস্থ। ১৯৫৪ সালে ৫৮ বছর বয়সে অভয়চরণ সংসার থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পাঁচ বছর পর ৬৩ বছর বয়সে মথুরায় কেশব মহারাজের কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যেই নানাপথ ঘুরে বৃন্দাবনের সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো রাধারমণ মন্দিরে ছোট্ট একটি ঘরে আশ্রয়লাভ। বিনামূল্যে নয়, মাসিক ভাড়া পাঁচ টাকা।
ছোট্ট এইটুকু ঘরে গুরুর ইচ্ছাপূরণের জন্য শ্রীমদ্ভাগবতমের ইংরিজি অনুবাদের ম্যারাথন যাত্রা শুরু। আকারে বিশাল এই বই, কাজের সুবিধার জন্যে অভয়চরণ একটি পোর্টেবল টাইপরাইটার সংগ্রহ করলেন। খণ্ডে খণ্ডে এই বই প্রকাশ একজন মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব, কিন্তু গুরুর স্বপ্নকে সম্ভব করে তুলবার জন্য দুঃসাহসী শিষ্য সম্পূর্ণ তৈরি।
অভয়চরণ একসময় ভাবলেন, অনুবাদের কাজ শেষ করে তার পর মুদ্রণের চেষ্টা করলে ভাল হবে না, তার থেকে ধৈর্য ধরে এক একটা খণ্ড প্রকাশ করো, বিক্রি করো, তারপর আবার ছাপো। এই অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টার শুরু বৃন্দাবনে, ছাপাবার জন্যে যাতায়াত দিল্লিতে। দিল্লিতে থাকার কোনও জায়গা নেই, তাই ওখানকার কাজ শেষ করে প্রতিদিন আবার বৃন্দাবনে ফিরে আসা।
ইংরেজি শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম খণ্ডের প্রকাশ ১৯৬২ সালের শেষ দিকে। তারপর দরজায় দরজায়, অফিসে অফিসে ঘুরে ১৫ টাকায় সেট বিক্রি করা। কঠিন কাজ, কিন্তু না করলে পরের খণ্ডের অর্থ পাওয়া যাবে না। ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয় খণ্ডের প্রকাশ এবং জানুয়ারি ১৯৬৫-তে শ্রীমদ্ভাগবতমের তৃতীয় খণ্ডের প্রকাশ। কিন্তু এখনও অনেক খণ্ড বাকি।
মাথায় মস্ত চিন্তা, ইংরিজি বইকে কীভাবে সাগরপারে প্রচার করা হবে? কৃষ্ণনামের সর্বত্র প্রচার যে তাঁর গুরুর ইচ্ছা। দ্বারে দ্বারে প্রচারের জন্য সন্ন্যাসী ভক্তিবেদান্ত একসময় বোম্বাইতে হাজির। এখানে ধনী জনের সংখ্যা কম নয়। বোম্বাইতে গৌড়ীয় মঠের কৃপাসিন্ধুর সাহায্যপ্রার্থী হলেন, আমেরিকায় যাবার একটা পথ খুঁজে বের করতেই হবে।
একজন বড় ব্যবসায়ী হেমরাজ খাণ্ডেলওয়ালাকে অনেক অনুরোধ করলেন, কিন্তু কোনও সাহায্য মিলল না। কৃপাসিন্ধু এবার সিন্ধিয়া স্টিম নেভিগেশনের ধর্মপ্রাণা সুমতি মোরারজির কথা বললেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা সহজ নয়। ভক্তিবেদান্ত বলতে চান, ভাগবতে ১৮০০০ স্তোত্র, ইংরিজিতে অন্তত ৬০ খণ্ড লাগবে, অনুবাদ শেষ হতেও যে সাত বছর লাগবে তত দিন কৃষ্ণ যেন তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেন।
বম্বের সুমতি মোরারজির সঙ্গে দেখা করবার জন্য একদিন সন্ন্যাসী ভক্তিবেদান্ত অফিসে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা বসে রইলেন এবং অবশেষে তাঁকে ধরতে পারলেন। ভক্তিবেদান্ত বললেন, ভাগবতের শুরু পাঁচ হাজার বছর আগে নৈমিষারণ্যের গুণিজন সম্মেলনে, এর রচয়িতা ব্যাসদেব, পরামর্শদাতা তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু নারদ মুনি। তিনি জানালেন, শুধু অনুবাদ করলেই হবে না, তাঁকে বিদেশে গিয়ে অনুবাদের প্রচার করতে হবে, গুরু ভক্তিসিদ্ধান্তের তাই ইচ্ছা ছিল।
তিনি মন্দির রচনার থেকে গ্রন্থ রচনাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের কাছে কৃষ্ণের বাণী প্রচার বিশেষ প্রয়োজনীয়, তাঁদের জয় করতে পারলেই বিশ্ববিজয় হবে।
সুমতি মোরারজি তাঁকে মনে করিয়ে দিলেন, আপনার বয়স ৬৯, আপনি ওই দেশের কিছুই জানেন না, আপনার বিদেশে যাওয়া মোটেই নিরাপদ হবে না। কিন্তু সন্ন্যাসী নাছোড়বান্দা, গুরুনির্দেশে তাঁকে যে করেই হোক আমেরিকায় যেতে হবে। পরের ঘটনাবলি এখন ইতিহাস।
সুমতি মোরারজি তাঁকে একটা ফ্রি টিকিট এবং সেই সঙ্গে ট্রাম্পজাহাজে বিনামূল্যে নিরামিষ খাবার দিতে রাজি হলেন। জাহাজের নাম জলদূত, ছাড়বে কলকাতা থেকে ১৩ অগস্ট ১৯৬৫।
সন্ন্যাসী দ্রুত পাসপোর্ট জোগাড় করে ফেললেন। বৃন্দাবনের এক ব্যবসায়ী (মিস্টার আগরওয়াল) তাঁর মার্কিন প্রবাসী ছেলেকে অনুরোধ করলেন স্পনসরশিপ পাঠাতে। ছেলেটি পিতৃ-আজ্ঞা অবহেলা করতে পারল না, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে দিল এবং অবশেষে কলকাতা থেকে যাত্রার দিন সমাগত।
দিকে দিকে বার্তা রটেছে হরে কৃষ্ণ হরে রাম। সে এক আশ্চর্য ইতিহাস, কেমন করে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন কলকাতায় জন্মানো নামহীন পরিচয়হীন এক কীর্তনীয়া।
পঞ্চাশ বছর আগের ১৩ অগস্ট ১৯৬৫ ও অর্ধ শতাব্দী পূর্তির ১৩ অগস্ট এক নয়। একজন বৃদ্ধ বৈষ্ণব সন্ন্যাসী বিদেশের মাটিতে শ্রীকৃষ্ণ নামের যে জয়ধ্বনি তুললেন, তা পৃথিবীর আধ্যাত্মিক ইতিহাসে এক আশ্চর্য ঘটনা। কলকাতা থেকে বোস্টনের ৩৫ দিনের জলযাত্রার মধ্যেও কিছু অঘটন ঘটেছে। সত্তর বছরের নিঃসঙ্গ যাত্রীর দু’বার হার্ট অ্যাটাক করেছে, কিন্তু কৃষ্ণনামে বিশ্বাসী সন্ন্যাসী হাল ছেড়ে দেননি, পরাজয় মেনে নেননি।
বৃন্দাবনের ব্যবসায়ী মিস্টার আগরওয়ালের বিদেশি পুত্র তাঁকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছেন, তারপর সন্ন্যাসী ভক্তিবেদান্ত নিউইয়র্কে এসে ঘরছাড়া দিকহারা নবীন আমেরিকানদের সঙ্গে পার্কে পার্কে কৃষ্ণনামে মাতোয়ারা হয়ে মার্কিনি সভ্যতাকে নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ দিয়েছেন। দিকে দিকে বার্তা রটেছে হরে কৃষ্ণ হরে রাম। সে এক আশ্চর্য ইতিহাস, কেমন করে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন কলকাতায় জন্মানো নামহীন পরিচয়হীন এক কীর্তনীয়া।
বিস্তারিত বিবরণের মধ্যে না গিয়ে প্রভুপাদ ১৯৬৮ সালে সিয়াটলের এক সংবাদপত্রে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তার থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া যায়।
পত্রিকা: কৃষ্ণভাবনামৃতের দিকে মানুষের আকর্ষণ কেন?
প্রভুপাদ: বিশ্বাস, সবই বিশ্বাস। নিউইয়র্কে আমি একা একাই কৃষ্ণনাম করছিলাম। একজন কৌতূহলী হয়ে ভারতীয় স্বামী কী করছে দেখতে এল, সেখানে বসে পড়ল। পরে বলল, আমি আপনার শিষ্য হতে চাই।
পত্রিকা: আপনাদের মন্দির সম্বন্ধে কিছু বলবেন?
প্রভুপাদ: এখন আমাদের চোদ্দোটি মন্দির- নিউইয়র্ক, সানফ্রান্সিসকো, লস এঞ্জেলেস, বোস্টন, সিয়াটল ইত্যাদি শহরে। নব বৃন্দাবন তৈরির জন্য আমরা ১৩১ একর জমি সংগ্রহ করেছি। লন্ডন, বার্লিন এবং ফ্রান্সেও আমাদের মন্দির হয়েছে। তরুণরাই আমার ভরসা, আমার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ শিষ্যের বয়স ৩৫, বেশিরভাগ শিষ্যের বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ।
পত্রিকা: আপনার নিজের সম্বন্ধে কিছু বলবেন?
প্রভুপাদ: আমার জন্ম কলকাতায় ১৮৯৬ সালে। আমার গুরুমহারাজের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ১৯২২-এ। আমি সংসারী হয়ে ব্যবসা করতাম। ১৯৫৪ সালে আমি অবসর নিই। চার বছর নিঃসঙ্গ ছিলাম, তারপর ১৯৫৯ সালে সন্ন্যাস নিয়ে, বই লেখা শুরু করি। আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। তিনখানা বই প্রকাশ করে আমি ১৯৬৫ সালে আপনাদের দেশে আসি।
পত্রিকা: আপনার হাতের থলিয়াটিতে কী আছে?
প্রভুপাদ: সুযোগ পেলেই আমি হরেকৃষ্ণ মন্ত্র জপ করি- আমার থলিয়াতে ১০৮টি ‘বিড’-এর জপমাল্য প্রতিটি বিড-এ আমি ষোলো বার জপ করি।
৭ নভেম্বর ১৯৭০ আরও এক বার কয়েকজন অতিথির কাছে প্রভুপাদ তাঁর প্রথম জলযাত্রা সম্বন্ধে মুখ খুলেছিলেন।
প্রভুপাদ: এক ভদ্রলোক এক মাসের জন্য আমেরিকায় আমাকে স্পনসর করেছিলেন। আমি তাঁর আশ্রয়ে তিন সপ্তাহ ছিলাম। তারপর আমি নিজেই বাকিটা ঠিক করে নিই। প্রথম জন আমার বন্ধুর ছেলে। আমার বন্ধু পুত্রকে অনুরোধ করেছিলেন, আমাকে এক মাসের জন্য দেখভাল করতে।
প্রশ্ন: তারপর?
প্রভুপাদ: আমার দর্শন একটু আলাদা। আমি নতুন দেশে বলতে চাই চতুর্বিধ পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে- বেআইনি যৌন সংসর্গ, মাছ মাংস আহার, মদ ও নেশাভাঙ, জুয়াখেলা।
প্রশ্ন: আপনি আমেরিকাকেই অগ্রাধিকার দিলেন কেন?
প্রভুপাদ: আমার গুরু মহারাজের আদেশ ইংরেজেভাষী পশ্চিমী দেশে গিয়ে আমাকে প্রচারে নামতে হবে, প্রথমে লন্ডনে যাব ভেবেছিলাম, কিন্তু কোথায় লন্ডন, টাকা কোথায়? বিনামূল্যে আমেরিকায় পাড়ি দেবার সুবিধা পেয়ে গেলাম সিন্ধিয়া স্টিম নেভিগেশন থেকে। জাহাজের নাবিক যে কেবিন ব্যবহার করেন, সেই কেবিনে আশ্রয় পেলাম। বিমানে যেতে গেলে অনেক টাকা লাগত।
প্রশ্ন: আমার প্রশ্ন আমেরিকা কেন?
প্রভুপাদ: জাহাজটা আমেরিকায় যাচ্ছে, আমি সেই সুযোগটা নিয়ে নিলাম। লন্ডন নিউইয়র্কের মধ্যে আমার পক্ষে নিউইয়র্কই ভাল জায়গা।
আর একবার ৮ জুন ১৯৭৬ সালে প্রভুপাদ বলেন, গোপাল আগরওয়ালার বাবা ছেলেকে বলেন, স্বামীজি আমেরিকায় যেতে চান। তিন চারমাস পরে ইন্ডিয়ান এমব্যাসি নিউইয়র্ক থেকে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট এল। এরপর আমি পাসপোর্টের ব্যবস্থা করলাম। সুমতি মোররাজি একবার পাঁচশ টাকা দিয়ে আমার কাছ থেকে বই কিনেছিলেন, তাই ওঁকেই ধরলাম, একটা ফ্রি টিকিট দিন।
মার্কিনদেশে প্রভুপাদের আগমন ও প্রাথমিক সংগ্রামের নানা বিবরণ যথাসময়ে গভীর ধৈর্যের সঙ্গে সংগৃহীত হয়েছে। তার বিবরণ অনেক অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীকেও হার মানায়।
প্রভুপাদের নিজের কথায়:
বোস্টনে জলদূত জাহাজে ঢুকে মার্কিন ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ দেশে কতদিন থাকতে চান? আমি ভাবলাম, আমার আশ্রয় নেই, অর্থ নেই, কিন্তু একটা রিটার্ন টিকিটের সম্ভাবনা রয়েছে। আমি নিজেই বুঝতে পারছি না কতদিন থাকা যায়? অবশেষে উত্তর দিলাম দু’মাস, কারণ তার থেকে বেশি সময় কোথায় থাকব? কোথায় খাব?
অফিসার সঙ্গে সঙ্গে দু’মাস ম়ঞ্জুর করে দিলেন। এর পরে তো মাঝে মাঝে ভিসা বাড়াচ্ছি, প্রতি বারের জন্য? ডলার ফি দিতে হচ্ছে। এইভাবে যখন একবছর হয়ে গেল তখন ওঁরা বললেন, আর এক্সটেনশন নয়। স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একজন উকিলকে ধরতে হল। তিনি প্রতিবার দেড়শো ডলার ফি নিতেন। ইতিমধ্যে মে মাসে প্রভুপাদের গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হল।
স্বামী প্রভুপাদর প্রথম দিকের যৎসামান্য বিবরণ:
নিউইয়র্কে জাহাজ থেকে নেমে একটা বাস ধরে বহু দূরে পেনসিলভেনিয়া। জাহাজ থেকে নামলেন দুপুর একটায়, পাঁচটায় বাস ধরলেন, ভোর তিনটেয় লক্ষ্যস্থানে, সেখানে বাসস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুপুত্র গোপাল আগরওয়ালা, সেখান থেকে তিরিশ মাইল ড্রাইভ করে বাটলার কাউন্টি। গোপালের বাড়তি ঘর নেই, তাই তাঁকে ওয়াইএমসিএ-তে দিয়ে এলেন।
গোপালের মেমসাহেব বউ যথেষ্ট সাহায্য করলেন। এঁদের সঙ্গে তিন সপ্তাহ থেকে আবার পাঁচশ মাইল দূরে নিউইয়র্ক।
ছ’টি মহাদেশে হাজার হাজার ভক্তের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। এরমধ্যে কয়েকবার তিনি ভারতে, বিশেষ করে কলকাতাতেও আসেন। এ দেশেও বেশ কয়েকটি মন্দির স্থাপিত হয়।
সঙ্গে কয়েক কপি ইংরেজি শ্রীমদ্ভগবৎ ছিল, সেইগুলো বিক্রি করে চলছিল। তারপর সেভেনটি ফার্স্ট স্ট্রিটে কয়েকমাস বসবাস। তারপর আর একটা বাড়ি ভাড়া এবং প্রতিদিন বিকেল ৩-৬টা টমকিন্স স্কোয়্যার পার্কে কৃষ্ণনাম কীর্তন এবং সেখান থেকেই বিশ্ববিজয়ের শুরু এবং সে এক অবিশ্বাস্য মহাভারত-কথা।
আর একবার ভক্তিবেদান্ত পোপের কাছে দীর্ঘ চিঠিতে শ্রীমদ্ভাগবতকে ঈশ্বরবিজ্ঞান বলে বর্ণনা করেন এবং ঈশ্বরবিহীন সভ্যতার বিপদের কথা উল্লেখ করেন। কৃষ্ণভাবনামৃতের শুরুতেই রয়েছে চারটি অধঃপতন থেকে দূরে থাকা। এগুলি হল- বিবাহবন্ধনের বাইরে যৌন সম্পর্ক, মাছমাংস ইত্যাদি খাওয়া, সবরকমের নেশাভাঙ ও জুয়াখেলা। বহুবছর আগে শ্রীচৈতন্য এ রকমই চেয়েছিলেন।
১৩ অগস্টের ঐতিহাসিক জলযাত্রার পরে প্রভুপাদ এগারো বছরে চোদ্দোবার বিশ্ব প্রদক্ষিণ করেন। ছ’টি মহাদেশে হাজার হাজার ভক্তের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। এরমধ্যে কয়েকবার তিনি ভারতে, বিশেষ করে কলকাতাতেও আসেন। এ দেশেও বেশ কয়েকটি মন্দির স্থাপিত হয়।
শেষ বছর ১৯৭৭-এর শুরুতে আমরা প্রভুপাদকে ভুবনেশ্বরে দেখি। বিশ্বব্যাপী সঙ্ঘের নানা পরিচালন পত্র ও আইনি সমস্যা তাঁর অসুস্থ শরীরকে আরও জর্জরিত করে রেখেছিল। তিনি বলতেন, আমরা কখনও মগজধোলাই করার চেষ্টা চালাইনি। সবই করেছি শাস্ত্রের নির্দেশে। পরের মাসে (৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭) তিনি চৈতন্য জন্মভূমি মায়াপুরে। নবনির্মিত মন্দির দেখে বললেন, ‘এখন যদি আমার মৃত্যু হয় কিছু এসে যায় না।’
লেখক প্রভুপাদের ইতিমধ্যেই বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি
শুধুমাত্র ইংরেজিতেই চার কোটি চৌত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার বই প্রকাশিত হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবৎ তখনও সম্পূর্ণ হয়নি- বেঁচে থাকার শেষমুহূর্ত পর্যন্ত অনুবাদের কাজ অব্যাহত। মৃত্যু পথযাত্রী অনুবাদককে একজন শ্লোকটি পড়ে শোনাত। আর একজন মুখের সামনে মাইক্রোফোন ধরত। কী বলছেন, তা শুনতে অসুবিধে হত। কিন্তু অনুবাদকর্ম ব্যাহত হত না।
মার্চ মাসে খবর এল, নিউইয়র্ক হাইকোর্ট হরেকৃষ্ণ আন্দোলনকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে। অসুস্থ শরীর সম্বন্ধে প্রভুপাদ বলতেন, এটা পুরনো মেশিন, যতই সারানো যায়, ততই এটা খারাপ হয়।
স্বামী প্রভুপাদর এ বার কেন্দ্র হৃষীকেশ:
পাঠকদের বললেন, ‘একটা উইল করো। আমি সই করব।’ আরও বললেন, ‘আমি বৃন্দাবনে যেতে চাই। যদি আমাকে দেহত্যাগ করতে হয়, তা যেন বৃন্দাবনে হয়। আমার যা কিছু বলার আমি আমার বইয়ের মধ্যে বলেছি।’ আরও বলেছিলেন, ‘দুটি বিষয় রয়েছে- বেঁচে থাকার চেষ্টা করা, আর মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়াই শ্রেয়।’
জুলাই মাস, বৃন্দাবনে শ্রীমদ্ভাবগবতের অনুবাদ ও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই একই সঙ্গে চলেছে:
এরইমধ্যে একটু ভাল হয়ে শ্রীশ্রীরাধা-লন্ডনেশ্বর দেখার বাসনা। ইচ্ছে লন্ডনে দু’সপ্তাহ থেকে আবার আমেরিকা যাওয়া। লন্ডনে পদার্পণের দু’সপ্তাহ পরে কিন্তু আবার স্বাস্থ্যের অবনতি, অতএব বোম্বাইতে ফিরে আসা এবং সঙ্কটজনক অবস্থায় বৃন্দাবনের কৃষ্ণ-বলরামের মন্দিরে ফিরে আসা। শুয়ে শুয়ে ভক্তদের কাছে সম্রাট কুলশেখরের প্রার্থনা বর্ণনা করলেন, ‘হে কৃষ্ণ দয়া করে তুমি এখনই আমাকে মরতে দাও, যাতে হংসরূপী আমার মন তোমার শ্রীপাদপদ্ম প্রদক্ষিণ করতে পারে।’
এই প্রচেষ্টার প্রারম্ভে ভাবতে ভাল লাগে উনিশ ও বিশ শতকে মহাসমুদ্রের ও পারে ভারতবাণী প্রচারে যে দশ জন স্বদেশবাসী অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার দুর্বার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই বঙ্গ-সরস্বতীর বরপুত্র।
খবর পেয়ে প্রভুপাদের বোন বৃন্দাবনে উপস্থিত হলেন, তাকে দেখে প্রভুপাদ সস্নেহে খিচুড়ি রান্না করতে বললেন, অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও সেই খিচুড়ি খেয়ে তিনি যথেষ্ট আনন্দপ্রকাশ করলেন। ১৪ নভেম্বর ১৯৭৭ কার্তিক মাসে গৌরচতুর্থীর দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে জগৎসংসার থেকে চিরবিদায় নিলেন। আগের দিনে চিকিৎসক কবিরাজ জানতে চেয়েছিলেন, আপনি কিছু চান? তাঁর স্পষ্ট উত্তর, না আমার কোনও ইচ্ছে নেই।
তবে মন্দির প্রতিষ্ঠাতা প্রভুপাদ অপেক্ষা লেখক-অনুবাদক ভক্তিবেদান্তর ভূমিকা যথেষ্ট বড়, অনেকের মতে। এরমধ্যে রয়েছে তিরিশ খণ্ডে শ্রীমদ্ভাগবতম এবং সতেরো খণ্ডের শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত। ছিয়াত্তরটি ভাষায় এই সব বই অনূদিত হয়েছে এবং ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট পৃথিবীর বৃহত্তম বৈষ্ণব সাহিত্য প্রকাশকের বিশিষ্টতা অর্জন করেছে।
হরেকৃষ্ণর মন্ত্রজপের মধ্যেই মানুষের মুক্তি, এইকথা শুনে একসময় এ দেশের অনেক অধিবাসীই হেসেছিলেন, পাঁচ হাজার বছর আগের শ্রীকৃষ্ণ, পাঁচশো বছর আগের নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্য এবং পঞ্চাশ বছর আগের অভয়চরণ দে-কে কেউ তেমন বিশ্বাস করেননি, কিন্তু সত্তর বছর বয়সে বিশ্ববিজয়ে বেরিয়ে কলকাতার ওষুধ ব্যবসায়ী মৃদঙ্গ বাজিয়ে দেশে দেশে যা কাণ্ড করলেন, তারসঙ্গে তুলনীয় কিছু নেই। বৃন্দাবনে তাঁর দেহাবসান ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৭ সালে।
সেই লেখক, অনুবাদক, দার্শনিক, কীর্তনিয়া বৈষ্ণব আমাদের যা দিয়ে গেলেন, তার হিসেবনিকেশ আজও হয়নি- মহানিষ্ক্রমণের অর্ধশতাব্দীতে জন্মভূমি কলকাতায় তাঁর মূল্যায়ন শুরু হলে মন্দ হয় না। এই প্রচেষ্টার প্রারম্ভে ভাবতে ভাল লাগে উনিশ ও বিশ শতকে মহাসমুদ্রের ও পারে ভারতবাণী প্রচারে যে দশ জন স্বদেশবাসী অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার দুর্বার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই বঙ্গ-সরস্বতীর বরপুত্র।
এই সুযোগে আমরা যেন মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী সারদানন্দ, স্বামী অভেদানন্দ, স্বামী তুরীয়ানন্দ, পরমহংস যোগানন্দ, শ্রীচিন্ময় এবং কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়াচরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি।
ঋণস্বীকার :
আনন্দবাজার পত্রিকা
………………….
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………………….
আরও পড়ুন-
স্বামী অড়গড়ানন্দজী
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব
শিরডি সাই বাবা
পণ্ডিত মিশ্রীলাল মিশ্র
নীলাচলে মহাপ্রভুর অন্ত্যলীলার অন্যতম পার্ষদ ছিলেন রায় রামানন্দ
ভক্তজ্ঞানী ধর্মপ্রচারক দার্শনিক রামানুজ
সাধক ভোলানন্দ গিরি
ভক্ত লালাবাবু
লাটু মহারাজ শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্ভুত সৃষ্টি
কমলাকান্ত ভট্টাচার্য
ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন
পরিব্রাজকাচার্য্যবর শ্রীশ্রীমৎ দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেব
আর্যভট্ট কাহিনী – এক অজানা কথা
গিরিশচন্দ্র ঘোষ
কঠিয়াবাবা রামদাস
সাধু নাগ মহাশয়
লঘিমাসিদ্ধ সাধু’র কথা
ঋষি অরবিন্দ’র কথা
অরবিন্দ ঘোষ
মহাত্মাজির পুণ্যব্রত
দুই দেহধারী সাধু
যুগজাগরণে যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ
শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর
বাচস্পতি অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে
মুসলমানে রহিম বলে হিন্দু পড়ে রামনাম
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : প্রথম খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব: দ্বিতীয় খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : অন্তিম খণ্ড
মহামহোপাধ্যায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ
শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর
শ্রীশ্রী ঠাকুর সত্যানন্দদেব
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: এক
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: দুই
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: তিন
সাধক তুকারাম
সাধক তুলসীদাস: এক
সাধক তুলসীদাস: দুই
সাধক তুলসীদাস: তিন
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: এক
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: দুই
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: তিন