-ড. সৌরভ মণ্ডল
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পূজ্যপাদ শ্রীশ্রী পঞ্চানন ভট্টাচার্য মহাশয়ের পৌত্র শ্রীযুক্ত করুনাময় ভট্টাচার্য মহাশয়ের পুত্রগণ যোগাচার্য শ্রীশ্রী রঙ্গনাথ তিওয়ারী মহাশয়ের নিকট হইতে ক্রিয়াযোগ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তাই আজও শ্রীশ্রী পঞ্চানন ভট্টাচার্য মহাশয়ের আহিড়ীটোলার গৃহে শ্রীশ্রী পঞ্চানন ভট্টাচার্য মহাশয়ের সহিত যোগাচার্য শ্রীশ্রী রঙ্গনাথ তিওয়ারী মহাশয়ের মূর্তি পূজিত হইতেছে।
যোগীবর শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয় অপর এক শিষ্য ছিলেন যোগাচার্য শ্রীশ্রী মহেশ্বরী প্রসাদ দূবে মহাশয়। তিনি হিন্দিতে ‘ক্রিয়াযোগ রহস্য’ নামে একটি পুস্তক রচনা করিয়াছিলেন এবং ঐ পুস্তকের প্রথম কপি তিনি স্বহস্তে গুরুতুল্য জ্যেষ্ঠ গুরুভ্রাতা যোগাচার্য ডা. শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয়কে উপহার দিয়াই উদ্বোধন করিয়া ছিলেন।
যোগাচার্য শ্রীশ্রী মহেশ্বরী প্রসাদ দূবে মহাশয়ের হস্তাক্ষর যুক্ত সেই পুস্তক আজও সংরক্ষিত আছে।
শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরীর লীলা প্রসঙ্গ
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয় যোগসাধনার শীর্ষ বিন্দুতে উন্নীত হইয়াও নিজেকে সকল সময় গোপন করিয়া রাখিতেন। প্রচারের আলোক হইতে তিনি সদা সর্বদা শত যোজন দূরেই অবস্থান করিতেন। কিন্তু পুষ্প প্রস্ফুটিত হইবার পর যেমন তাহার সুগন্ধ ঢাকিয়া রাখা সম্ভবপর হয় না ঠিক তেমনি তিনি প্রচার বিমুখ হইলেও ক্রমে ক্রমে তাঁহার বহু অলৌকিক লীলার প্রকাশ ঘটিয়াছিল।
কখনও কোন ভক্তের বিপদে রক্ষা করিতে ঐশী শক্তির প্রয়োগ, কখনও কোন শিষ্যের ক্রিয়া পরিক্ষার্থে সূক্ষ্ম শরীরে গমন, কখনও দূরবর্তী ভক্তের নিবেদিত অন্নগ্রহণ, কখনও বা পথভ্রান্ত শিষ্যের অলক্ষ্যে পথ প্রদর্শন, কখনও বা রোগাক্রান্ত শিষ্যের আরোগ্যের নিমিত্ত নিজ দেহে তাহার রোগযন্ত্রণা গ্রহণ ইত্যাদি বহু ঘটনার মধ্যদিয়া তাঁহার যে যোগৈশ্বর্যের প্রকাশ ঘটিয়াছিল তাহা লিখিয়া এই প্রতিবেদনের কলেবর বৃদ্ধি করিতে চাহিনা।
অজানুলম্বিত গৌরকান্তি দেহ, প্রশস্ত ললাট, উন্নত মস্তক -এক জ্যোতির্ময় পুরুষ রূপে তিনি সদাই প্রফুল্ল, উদার, শান্ত, ধীর স্থির ও করুণার সাগর ছিলেন। তাঁহার বাচন ভঙ্গিমাতে অতি ক্রূর স্বভাব ব্যক্তিও অত্যন্ত শান্ত ও মুগ্ধ হইয়া যাইত।
তাঁহার অকৃত্রিম ভালোবাসা হইতে পাপী-তাপী, ধার্মিক-অধার্মিক, ধনী-দরিদ্র কেহই বঞ্চিত হয় নাই। সমস্ত ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে তিনি বিরাজ করিতেন। সর্বভূতে নারায়ণ দর্শন করিতেন তিনি, কোনও দর্শনার্থী বা ভক্ত তাঁহাকে প্রণাম করিলে তিনি তৎক্ষণাৎ প্রত্যাভিবাদন জানাইতেন।
পরবর্তীকালে শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের মহাপ্রয়ানের পর তাঁহার পৌত্র শ্রদ্ধেয় দাদা শ্রীযুক্ত কুনাল বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয় যোগাচার্য শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয়ের নিকট হইতে ক্রিয়াযোগ প্রাপ্ত হইয়াছেন।
হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, জৈন -কোনও ধর্মের মানুষই তাঁহার স্নেহ পূর্ণ ভালোবাসা ও কৃপালাভ হইতে বঞ্চিত হয় নাই। সমাজের সকল ধর্মের ও সকল স্তরের মানুষই তাঁহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং তাঁহার সহস্র সহস্র শিষ্যের মধ্যে বহু ব্যক্তিই সাধনার উন্নত স্তরে উন্নীত হইয়াছেন।
বড়ই স্বল্পভাষী ও মৃদুভাষী ছিলেন তিনি, আধ্যাত্ম জগতের কথা ভিন্ন অন্যকথা প্রায় বলিতেন না এবং এমন সুমধুর বিনয় বচন দ্বারা নিজেকে আবৃত করিয়া রাখিতেন যে কেহই সহজে তাঁহার যোগৈশ্বর্যের সন্ধান পাইত না।
ভক্ত ও শিষ্যদের জন্য তাঁহার বাসভবনের দুয়ার সদাই থাকিত উন্মুক্ত।
প্রতিনিয়তই অগণিত দর্শনার্থীর ভিড় সদা সর্বদাই লাগিয়া থাকিত তাঁহার গৃহে। তাহাদের মধ্য হইতে কেহ যদি কোনও গুরুপ্রণামী, উপঢৌকন অথবা নজরানা তাঁহার সম্মুখে রাখিত তৎক্ষণাৎ তিনি অতি বিনয়ের সহিত তাহা তাহাকেই ফিরাইয়া দিতেন।
কেহ যদি তাহা লইতে অস্বীকার করিত তাহা হইলে তা তিনি আশ্রমের উন্নয়নের জন্য পাঠাইয়া দিতেন। সহস্র সহস্র দর্শনী মুদ্রার একটি ক্ষুদ্রতম অংশও তিনি গ্রহণ করিতেন না। ঐশ্বর্য ও আড়ম্বরের অন্তরালে বৈরাগ্য রূপী দীপের নিস্ফল শিখা জ্বালাইয়া শক্তিমান সিদ্ধ পুরুষ সদাই থাকিতেন আত্মসমাহিত।
তিনি স্বয়ং মুক্ত পুরুষ হইয়াও আপন শিষ্য ও ভক্তগণের শিক্ষার জন্য সামাজিক সকল নিয়মই পালন করিতেন। বয়সে অনেক ছোট হইবার সত্ত্বেও আপন গুরুদেব যোগীবর শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের ঔরসজাত পুত্র শ্রীযুক্ত দণ্ডপাণী বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়কে গুরুতুল্য শ্রদ্ধা করিতেন।
আবার শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত দণ্ডপাণী বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয় তাঁহাকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার ন্যায় সম্মান করিতেন। তিনি বলেন, ‘যোগাচার্য শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয় আমার পিতার সকল শিষ্যগণের মধ্যে প্রধান ছিলেন। আমি আমার পিতার ঔরসজাত সন্তান হইলেও তিনি ছিলেন আমাদের জেষ্ঠ ভ্রাতা।’
পরবর্তীকালে শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের মহাপ্রয়ানের পর তাঁহার পৌত্র শ্রদ্ধেয় দাদা শ্রীযুক্ত কুনাল বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয় যোগাচার্য শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয়ের নিকট হইতে ক্রিয়াযোগ প্রাপ্ত হইয়াছেন।
জগতের অন্যান্য ধর্মীয় মহান গুরুদিগের প্রতি তাঁহার শ্রদ্ধার কোনও অভাব পরিলক্ষিত হইত না। শুধুমাত্র তাহাই নহে মহান ক্রিয়াযোগের অন্যান্য আচার্যগণের প্রতিও তাঁহার সদভাবের কোনও ঘাটতি ছিল না।
তাঁহাদিগের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঝাড়গ্রাম সেবায়তনের শ্রীমৎ স্বামী সত্যেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের শিষ্য শ্রীযুক্ত আচার্য সুবোধ চক্রবর্তী, বীরেন্দ্রলাল চৌধুরী, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ ; মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের যুক্তেশ্বর মঠের শ্রীমৎ ভবানন্দ গিরি মহারাজের শিষ্য পরম্পরায় শ্রীযুক্ত সাধু সমরনাথ জী ও তাঁহার গুরুভ্রাতা বৃন্দ।
নিত্যানন্দ যোগাশ্রমে মহাযোগী শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের ২৫তম তিরোধান তিথি উৎসবে আগত যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার জয়েন্ট সেক্রেটারী শ্রীমৎ স্বামী শান্তানন্দ গিরি।
এবং যোগীরাজ শ্যামাচরণ সনাতন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় বাচস্পতি শ্রীশ্রী অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের সহিত যোগাচার্য ডা. শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয় একত্রে তাঁহার গুরুদেব যোগীবর শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের প্রতি যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করিয়াছিলেন তার স্মৃতি আজও তাঁহার সকল ভক্ত, শিষ্য ও অণুগামীগণের হৃদয়ে দিব্য আনন্দ প্রদান করে।
তিনি তাঁহার সাধন জগতের অনুভব দ্বারা বহু প্রবন্ধ ও রচনাসহ শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রতিটি শ্লোকের এক অতি অপূর্ব আধ্যাত্মিক ব্যাখা রচনা করিয়াছিলেন। এছাড়াও তিনি তাঁহার গুরুদেবের সহিত ভারতবর্ষের যে সকল তীর্থস্থান ভ্রমণ করিয়াছিলেন সেই সকল ভ্রমণ কাহিনী তিনি সেই সময়ের ডায়েরিতে নথিবদ্ধ করিয়াছিলেন।
পঞ্চানন বাবা হইতে গুরুপরম্পরার রীতি অনুযায়ী প্রাপ্ত ক্রিয়াযোগের উচ্চতর ক্রমাদি ও বিভিন্ন প্রকারভেদের যে ডায়েরি তিনি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন সেই সকল অমূল্য সম্পদ কখনই তিনি সর্বসমক্ষে আসিতে দেন নাই। তাহার কারণ তিনি আজীবন প্রচার বিমুখ ছিলেন।
পরবর্তীকালে তাঁহার মহাপ্রয়াণের পর তাঁহার একান্ত অনুগত কয়েকজন শিষ্য তাঁহার রচিত দুইটি প্রবন্ধ সহ শ্রীমদ্ভগবদগীতার যৌগিক ব্যাখা পুস্তকারে প্রকাশ করে।
তাঁহার কথাবার্তা, বেশভূষা ও আচার ব্যবহারে আড়ম্বরের লেশমাত্রও ছিল না। তিনি আজীবন গৃহস্থাশ্রমী ছিলেন। ইহা জানার সত্ত্বেও তাঁহার অপূর্ব যোগ প্রতিভায় মুগ্ধ হইয়া ক্রিয়াযোগ সহ অন্যান্য আশ্রমের মহান আচার্য ও গুরুগণ তাঁহার নিকট হইতে কৃপাশীর্বাদ লাভের জন্য প্রায়ই আসিয়া উপস্থিত হইতেন এবং তাঁহার প্রেম ও কৃপা লাভ করিয়া কৃতার্থ হইয়া যাইতেন।
তাঁহাদিগের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঝাড়গ্রাম সেবায়তনের শ্রীমৎ স্বামী সত্যেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের শিষ্য শ্রীযুক্ত আচার্য সুবোধ চক্রবর্তী, বীরেন্দ্রলাল চৌধুরী, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ ; মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের যুক্তেশ্বর মঠের শ্রীমৎ ভবানন্দ গিরি মহারাজের শিষ্য পরম্পরায় শ্রীযুক্ত সাধু সমরনাথ জী ও তাঁহার গুরুভ্রাতা বৃন্দ।
বাকসাড়ার শ্রীযুক্ত সরোজ কুমার লাহিড়ী মহাশয়ের শিষ্যা অখণ্ড মহাপীঠ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রী সর্বাণী মাতা ঠাকুরাণী এবং তাঁহার অনুগামী ও গুরু ভ্রাতৃবৃন্দ ; মহাযোগী শ্রীশ্রী ভোলানাথ ঘোষ মহাশয়ের সুযোগ্য শিষ্য যোগাচার্য শ্রী বিশ্বনাথ ঘোষ মহাশয় ; ঠাকুর শ্রীশ্রী বালক ব্রহ্মচারী মহারাজের শিষ্য শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রী দাদাজী মহারাজ ও তাহার অনুগামী বৃন্দ এবং অন্যান্য বহু আশ্রমের মহান আচার্য সহ যোগদা সৎসঙ্গের বহু অনুগামী।
শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরীর মহাসমাধি
বহু বৎসর পূর্ব হইতে এই মহান ক্রিয়াযোগের যে উপদেশ দান শুরু করিয়াছিলেন এই বার তার সমাপ্তির পালা শুরু হইল। তিনি যে সহস্র সহস্র কাতর ব্যক্তির হৃদয়ে প্রেমরস ও প্রশান্তির বাতাবরন সৃষ্টি করিয়াছিলেন তাহার জন্য তিনি কখনোই হাটে – ঘাটে বক্তৃতা দেন নাই বা সংবাদপত্রে তাঁহার প্রচার কার্য ঘোষণা করেন নাই।
জীবনের শেষ দিকটায় যাহারা তাঁহার সান্নিধ্যে আসিয়াছিলেন তাহারা দেখিবার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছিলেন- সে স্তব্ধ, মৌন ও প্রশান্ততার ছবি। সে দৃশ্য কিছুতেই বিস্মৃত হইতে পারা যায় না।
তাঁহার অগণিত শিষ্যগণের মধ্যে অনেকেই প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। তিনি আপন শিষ্যগণের মধ্য হইতে তিনজনকে আচার্যপদাভিষিক্ত করিয়া গিয়াছেন। তাঁহাদের শিষ্য সংখ্যাও অনেক। ভারতের বঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, কর্নাটক প্রভৃতি স্থানে তাঁহার অনুগামী বর্তমান। কেবলমাত্র ভারতবর্ষে নহে সুদূর আমেরিকা, আরব সহ বহু স্থানে আজও তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহাকে নিত্য স্মরণ করেন।
হৃদয় দেবতার সহিত নিগূঢ় মিলনজনিত অতুল আনন্দ তাঁহার মুখমণ্ডলকে সর্বদা আলোক প্রভায় প্রদীপ্ত করিয়া রাখিত। এই সময় তিনি অধিকাংশ সময় আত্মমগ্ন অবস্থাতেই অতিবাহিত করিতেন এবং দেহবোধের ঊর্ধ্বে থাকিতেন। এই সময় তিনি কথা পর্যন্ত বেশি বলিতে পারিতেন না।
কথা কহিতে কহিতে সর্বদা তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দিতে হইত তিনি কি বলিতেছিলেন, একটু অন্যমনস্ক হইলেই তিনি পূর্বকথা ছাড়িয়া পুনরায় আত্মমগ্ন হইয়া যাইতেন। সে এক আশ্চর্য অবস্থার কথা- যা লেখনীর দ্বারা বর্ণনা করা যেমন কঠিন ঠিক তেমনি সাধারন মনুষ্যের পক্ষে ধারণা করাও দুরূহ।
ক্রমে বর্ষপঞ্জীতে উপস্থিত হইল সেই পূর্ব নির্ধারিত দিন ১০ই জুলাই ২০০৯ ; শুক্রবার। প্রভাত হইতে একের পর এক শিষ্য, আত্মীয়স্বজন তাঁহাকে দর্শন করিয়া যাইতেছেন। অপরাহ্ন অতিক্রান্ত হইল। শোকাভিভূত শিষ্য ও ভক্তগণ একের পর এক, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অশ্রু সজল নয়নে আশীর্বাদ গ্রহণ করিয়া বিদায় লইতেছেন।
সন্ধ্যা আগত দেখিয়া যোগাচার্যদেব হঠাৎ এক শিষ্যের কাছে জানিতে চাহিলেন, ‘সবাই এসেছে, আর কেউ বাকি নেই তো?’ উপস্থিত হইল অমৃতযোগের শুভ মুহূর্ত। যোগাচার্যদেব শিষ্য সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের সম্মুখেই ক্রিয়াযোগের একটি বিশেষ যৌগিক প্রক্রিয়া অবলম্বনে যোগবলে দেহত্যাগ করলেন।
ভক্তগণ পুস্পমাল্য ও চন্দনাদি সুগন্ধি দ্বারা তাঁহার পরম পবিত্র দেহ সুসজ্জিত করিয়া তাহাদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করিল এবং তাঁহার পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী তাঁহার পবিত্র শ্রীতনু গঙ্গাতীরে অগ্নিসংস্কার করেন তাঁহার পুত্র ও শিষ্যগণ।
তিনি তাঁহার জীবনে গুরুপদে সমর্পিত প্রাণ ছিলেন তাহা তাঁহার আবির্ভাব ও তিরোভাবে প্রমাণিত হয়। মহাযোগী শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের আবির্ভাব দিবস ৩রা আষাঢ়েই যোগীবর ডা. শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয়ের আগমন এবং শ্রীশ্রী নিতাইচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের পবিত্র তিরোধান দিবস শুক্রবারকেই তিনি বাছিয়া লইয়াছিলেন অমৃতলোকে প্রস্থানের নিমিত্ত।
তাঁহার অগণিত শিষ্যগণের মধ্যে অনেকেই প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। তিনি আপন শিষ্যগণের মধ্য হইতে তিনজনকে আচার্যপদাভিষিক্ত করিয়া গিয়াছেন। তাঁহাদের শিষ্য সংখ্যাও অনেক। ভারতের বঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, কর্নাটক প্রভৃতি স্থানে তাঁহার অনুগামী বর্তমান। কেবলমাত্র ভারতবর্ষে নহে সুদূর আমেরিকা, আরব সহ বহু স্থানে আজও তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহাকে নিত্য স্মরণ করেন।
পরবর্তীকালে তাঁহার ভক্তও শিষ্যগণ দ্বারা নিত্যানন্দ যোগাশ্রমে তাঁহার পবিত্র চিতাভস্ম স্থাপনার মাধ্যমে সমাধি ও স্মৃতিমন্দির প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এবং বর্তমানে ভারতের বহুস্থানে তাঁহার ভক্তগণ দ্বারা তাঁহার স্মরণ, মনন ও নিত্য পূজার মাধ্যমে তাহারা তাঁহার কৃপা প্রাপ্ত হইতেছে।
(সমাপ্ত)
………………………………
আরো পড়ুন:
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: এক
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: তিন
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………
আরও পড়ুন-
যোগীবর শ্যমাচরণ লাহিড়ী মহাশয়
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী
ত্রৈলঙ্গ স্বামীর কিছু কথা
গাঁধীজিকে ক্রিয়াযোগে দীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি
তারা মায়ের আদরের দুলাল ‘বামাক্ষেপা’
মহর্ষি মহেশ যোগীর কথা
স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরের দর্শনলাভ : যোগী-কথামৃত থেকে
‘বাবাজী’ আধুনিক ভারতের মহাযোগী
বিনিদ্র সাধু
রামদাস বাবাজী
সীতারাম
তারাপীঠের ‘বামদেব’
বহুবর্ষজীবি শ্রীশ্রী বরফানী দাদাজি
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: এক
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: এক
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: তিন