ভবঘুরেকথা
ফকির সামসুল সাঁইজি

লালন সাধনায় গুরু : দুই

-ফকির সামসুল সাঁইজি

পড়গে নামাজ জেনে শুনে

তারপর আবারও সাঁইজি আর এক পদে বললেন-

পড়গা নামাজ জেনে শুনে,
নিয়ত বাঁধগা মানুষ মক্কা পানে।।

এটাকে দুইভাবে বিভক্ত করবো। ভাববে যে সাঁইজি মানুষকে মক্কাতে নিয়ত বাঁধতে বললেন। কিন্তু ভাবার্থ তো তা না। মানুষকে মানুষ মক্কায় নিয়ত বাঁধতে বললেন। দেল কাবায়। দেল কাবায় নিয়ত বাঁধতে বললেন। অর্থাৎ গুরু মুর্শিদের উপর।

মানুষে মনস্কামনা
সিদ্ধি কর বর্তমানে।

মানুষ ভোজে, গুরু বলে; মনোশ কামনা সিদ্ধি করো। মনের যে বাঞ্ছা প্রতিটা মানুষ চায়, আল্লাহর সান্নিধ্য-নৈকট্য, আত্মমুক্তি। সে বাঞ্ছা তার পূর্ণ হবে।

খেলছে খেলা বিনোদকালা
এই মানুষের তন ভুবনে।।

বিনোদকালা মানে, আল্লাহ। খেলছে যে মানুষের তন ভুবনে অর্থাৎ দেহ ভুবনে। তন মানে দেহ; এ দেহের মধ্যে আল্লাহ্ বিরাজ করছে, খেলছে। কোথায় আল্লাহ্ খুঁজতে যাওয়া হচ্ছে?

শতদল কমলে কালার
আসন স্বর্ণ সিংহাসনে।

শব্দগুলোর অর্থ বুঝতে হবে। কোথায় আল্লাহর আসন? শতদল কমল কোথায়? সেই জায়গায় সাঁই-এর স্বর্ণাসন।

চৌদ্দ ভুবন ফিরয়ে নিশান
ঝলক দিচ্ছে নয়ন কোণে।।

মুরশিদের মেহেরে মোহর
যার খুলেছে সেই তা জানে।

আমাদের মনের মধ্যে গালা করা আছে। অন্ধত্ম, এটা যতক্ষণ মুর্শিদের দয়ায় না খুলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার ঐ জ্ঞান ফিরবে না, আমার চক্ষু খুলবে না।

ফকির লালন বলে ঘর ছেড়ে ধন
খুঁজিস কেনো বনে বনে।।

ঘর ছেড়ে কোথায় খুঁজছি? বনে বনে যথায় তথায় কেনো খুঁজবো?

এ জন্য গুরু ধরা প্রয়োজন বাবা। কোন সুরাতের উপর নামাজ পড়বো? কোন সুরাতের উপর আমি স্মরণ করবো? যার গুরু নাই, তাদের জন্য তো কোন এবাদত বন্দেগী নাই বাবা। অহেতুক কেন এবাদতের নামে নামাজ পড়া হচ্ছে, রোজা করা হচ্ছে? হচ্ছে নাতো। কোন ফায়দা হচ্ছে না। আল্লাহ ত্ কবুল করবেন না। একটা মাধ্যম ছাড়া। এই জন্য প্রয়োজন।

মুর্শিদ বিনে কি ধন আর আছেরে মন এ জগতে।

ভক্তের কাছে মুর্শিদের ঊর্ধ্বে পৃথিবীতে আর কেউ নাই বাবা, কোন ধন নাই। তার ঊর্ধ্বে আর কোন ধন ভাবা যাবে না বাবা।

মুর্শিদ বিনে কি ধন আর আছেরে মন এ জগতে
যে নাম স্মরণো হরে, তাপিত অঙ্গ শীতল করে,
ভব বন্ধন যায়গো দূরে
জপ ঐ নাম দিবা রাতে।।

এ ভব যতন আর থাকবে না বাবা, ভবে আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। জীবান্তর বন্ধ হয়ে যাবে। ঠিক আছে? চুরাশি লক্ষ যোনী খাটা শেষ হয়ে যাবে।

মুর্শিদের চরণ সুধা পান করিলে যাবে ক্ষুধা
করো নারে দিলে দ্বিধা
যেহি মুর্শিদ সেহি খোদা;
ভজো ওলিয়েম মুর্শিদা
আয়াত লেখা কোরানেতে ।।

আপনি আল্লাহ আপনি নবী
আপনি হন আদম ছবি
অনন্ত রূপ করে ধারণ
কে বোঝে সাঁইয়ের লীলার কারণ;
নিরাকারে হাকিম নিরঞ্জন
মুর্শিদ রূপ ঐ ভোজন পথে ।।

যে আল্লাহ্, সে আদম, সেই নবী। সে হাকিম কে? নিরাকারে হাকিম; খুঁজতে হবে কোন রূপে তাকে? মুর্শিদ রূপে।

কুল্লে সাঁই মোহিত আরো
আলা কুল্লে সাঁইন কাদিরো
পড় কালাম লেহাজ কর
তবেই সে ভেদ জানতে পার;
কেন লালন ফাঁকে ফেরো
ফকিরি নাম পাড়াও মিথ্যে ।।

এ তো বাবা, মুর্শিদের যে গুণ, এ গুণের বর্ণনাই সাঁইজি দিচ্ছে। নবী, আদম, খোদা; এ তিন কো কূল ওহি জুরা। তাই আদমকে করিলে সেজদা আলেকজনা পায়, আল্লাহ্ পায়। তাই মুর্শিদের গুণ।

লালন সাধনায় গুরু: দুই-

……………………….
ফকির সামসুল সাঁইজি
বাগলপাড়া, সাঁইনগর রাজশাহী।
শ্রুতি লেখক : মাশফিক মাহমুদ

…………………………………..
চিত্র:
ফকির লালন সাঁইজির প্রকৃত কোনো ছবি নেই। লেখাতে ব্যবহৃত ছবিটি লালন ফকিরের কাল্পনিক একটি ছবি মাত্র। বহুল ব্যবহৃত হলেও এই ছবির সাথে লালন সাঁইজির আদৌ কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই “সাধু পঞ্জিকা” দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………..
আরো পড়ুন:
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: এক
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: দুই
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: তিন


লালন ফকিরের নববিধান: এক
লালন ফকিরের নববিধান: দুই

লালন ফকিরের নববিধান: তিন

লালন সাঁইজির খোঁজে: এক
লালন সাঁইজির খোঁজে: দুই


মহাত্মা লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির স্মরণে বিশ্ব লালন দিবস
লালন গানের বাজার বেড়েছে গুরুবাদ গুরুত্ব পায়নি
লালন আখড়ায় মেলা নয় হোক সাধুসঙ্গ
কে বলে রে আমি আমি
ফকির লালন সাঁই
ফকির লালনের ফকিরি
ফকির লালন সাঁই


বিশ্ববাঙালি লালন শাহ্
ফকির লালন সাঁইজির শ্রীরূপ
গুরুপূর্ণিমা ও ফকির লালন
বিকৃত হচ্ছে লালনের বাণী?

লালন অক্ষ কিংবা দ্রাঘিমা বিচ্ছিন্ন এক নক্ষত্র

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!