ভবঘুরেকথা

-মোতওয়াল্লী চিলু ভূঁইয়া জালালী

: জালালী দর্শন বা উপাসনা :

সৃষ্টিতত্ব নিয়ে অতীন্দ্রিয় গুরু আমাকে যে প্রকারে তিনি বলেন; তিনি সয়ংম্ভু অর্থাৎ কারোর সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ এই যে মহাবায়ু রূপে যে অনন্ত দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান শক্তি বিদ্যমানতা; ইহা স্রষ্টারই বিকাশমান রূপ বিশেষ। খণ্ডজ্ঞানে ইহা বোধ-বুদ্ধিতে বুঝা যায় না।

‘প্রথম ও আদি সৃষ্টি জ্ঞান। জ্ঞান থেকে সৃষ্টি হয়েছে আশেকের। আশেক থেকে সৃষ্টি মাশুকের। মাশুক থেকে সৃষ্টি বিশ্ব ভূমণ্ডল। এই আদি শক্তিই মহাজ্ঞান। এই মহাজ্ঞানই মহাশক্তি। এই শক্তি সৃষ্টিতে বিলীন। গাছবৃক্ষ- তরুলতা, জ্বীন ইনসান, ফেরেশতা, কীটপতঙ্গ, দানব-মানবাদি সবার মধ্যেই এই মহাশক্তি বিলীন।’

অতীন্দ্রিয় গুরু একদা আমাদের প্রশ্ন করেছেন, “আমি কি সৃষ্টি হইয়াছি, নাকি আমাকে কেউ সৃষ্টি করিয়াছে?” মূল অর্থে বর্তমান দেখিয়ে দাও?” তিনি উত্তরে বলেন, “আমি নিজেই সৃষ্টি হইয়াছি। যেমন- আমি সৃষ্টিতে বিলীন। আমি আদি আমি অনন্ত।’

জালালী মতে, এই বায়ুময় বা গ্যাসময় হইতে বরফের সৃষ্টি, ইহা হইতে গ্রহ নক্ষত্রের ও জলের সৃষ্টি হইয়াছে। জলের মধ্য হইতে শেওলার সৃষ্টি। এই শেওলাই জলের উপরে প্রথম প্রাণীজ উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়। অতীন্দ্রিয় অতিমানবের নিজ লেখা পুস্তকের নাম তিনি ‘শেওলা’ নামকরণ করেছেন। সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তিনি এই পুস্তকের নাম রেখেছেন।

যদিও সাধারণত যে কোন পদার্থ অগ্নিতে ভস্মীভূত হইয়া যায়; যে কোন প্রজাতির মাঝেই পরিবেশকে মোকাবেলা করার জন্যে জীব তার শারীরিক পরিবর্তন ঘটাইয়া থাকে। ইহা বৈজ্ঞানিক সত্য। তেমনি তিনি ইহাও বলেছেন যে, মানুষের চেয়ে আরও অধিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, জলের মধ্যে বসবাস করে এমন মানুষের মতই প্রাণী আছে।

পরম প্রকৃতি রূপ মহাশক্তির ক্রমবিকাশের ধারাতে জীব বা মনুষ্য লোকের আবির্ভাব হয়েছে। আদি বা অনাদি হইতে অদ্য পর্যন্ত বা আগামীতেও একই পরম প্রকৃতি রূপ মহাশক্তির তার সহজাত ক্রিয়া বিক্রিয়াতে বিভিন্ন রূপের জীব উদ্ভিদ, মনুষ্য লোকাদির রূপ বিশেষের সৃষ্টি হইয়াছে এবং হইতে থাকিবে।

যাঁহা জলে কি স্থলে বা আকাশের বা মহাশূন্যের অন্যান্য অংশে, যেমন- গ্রহে কি নক্ষত্রলোকে হইতেছে এবং হইতে থাকিবে। যেমন- কিছুদিন একটি পাত্রে পানি রেখে দিলে দেখিবে কিছু কীটের সৃষ্টি হইয়াছে; বলতো ইহা কে সৃষ্টি করিল?

এমনি ভাবেই নানাপ্রকার জীবের বা প্রকৃতির সৃষ্টি হইয়াছে এবং হইতে থাকিবে, নিরাকার- নির্গুণ শক্তি হইতেই সকল শক্তির সৃষ্টি। যেমন- পিতা-মাতা হইতে পুত্র-কন্যার সৃষ্টি, শুধু রূপক পার্থক্য আছে কিন্তু এক শক্তিরই বিকাশ মাত্র, শাহ্ সুলতান জালালীর বর্ণনা বিশ্লেষণে উহারই ইঙ্গিত প্রতিফলিত হয়।

তিনি বলেন যে, পৃথিবীতে আগামীতে মনুষ্য জাতির মতই দেখতে চতুর্মাত্রিক নেত্রধারী মানব আকৃতি মানবের দূর-ভবিষ্যতে জলের মধ্য হইতে সৃষ্টি হইবে, ইহা অবিশ্বাস্য কিছু নয়। তিনি এও বলেন, সূর্য্যের মধ্যেও এক প্রকারের কীট জন্ম হইয়াছে।

সৃষ্টিতত্ত্বকে বোঝাতে যেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সৃষ্টিতে বিলীন, আমি আদি, আমি অনন্ত।’ অর্থাৎ জালালী সৃষ্টিতত্ত্বে সৃষ্টির বিকাশে শেষ বলে কিছু নেই। পরম প্রকৃতির আকার ও গুণের কোন শেষ নেই। রূপ ভেঙ্গে রূপ তৈরি হয়, হইতেছে এবং হইতে থাকিবে। তেমনি এই রূপ ও গুণের মাঝেই তিনি বিলীন। ইহা জালালী মত।

যদিও সাধারণত যে কোন পদার্থ অগ্নিতে ভস্মীভূত হইয়া যায়; যে কোন প্রজাতির মাঝেই পরিবেশকে মোকাবেলা করার জন্যে জীব তার শারীরিক পরিবর্তন ঘটাইয়া থাকে। ইহা বৈজ্ঞানিক সত্য। তেমনি তিনি ইহাও বলেছেন যে, মানুষের চেয়ে আরও অধিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, জলের মধ্যে বসবাস করে এমন মানুষের মতই প্রাণী আছে।

ইহারা যান্ত্রিক দ্রুততম গতি স্পেস যানবাহন ব্যবহার করে। আমার সন্দেহের সাথে ইহা মিলে যায় যখন দেখতে পাই যে, এমনটি আধুনিক উন্নত দেশের মানুষ ইহাদের কেহ কেহ দেখছে। ইহাকে ufo বা unidentified flying object বলে। তবে ইহারা অতীন্দ্রিয় সত্বাধারীদের সাথে পারে না। ইহাদের ব্রহ্মজ্ঞান নাই। ভয়ের কিছু নাই।

সৃষ্টতত্ত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন যে,

‘বিশ্বময় যাহা কিছু আছে, সব তাঁহারই রূপের বিকাশ, রূপ ভাঙিয়ে রূপ উজালা, এক রূপে অনন্তময়।’

‘রূপের অন্তরালে রূপ; কতই করে খেলা, কখনও আলো কখনও অন্ধকার, তাতেই আছে নিত্য লীলা।’

‘আমারই লীলা; আমিই নিত্য। যাঁহার অখণ্ড জ্ঞান জন্মিয়াছে তিনিই ইহা বিশেষ অবগত।’

সৃষ্টিতত্ত্বকে বোঝাতে যেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সৃষ্টিতে বিলীন, আমি আদি, আমি অনন্ত।’ অর্থাৎ জালালী সৃষ্টিতত্ত্বে সৃষ্টির বিকাশে শেষ বলে কিছু নেই। পরম প্রকৃতির আকার ও গুণের কোন শেষ নেই। রূপ ভেঙ্গে রূপ তৈরি হয়, হইতেছে এবং হইতে থাকিবে। তেমনি এই রূপ ও গুণের মাঝেই তিনি বিলীন। ইহা জালালী মত।

<<মৃত্যু ও পরকাল ।। পুনর্জন্ম>>

………………………………….……………..
জালালী দর্শন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন-
মৃত্যু ও পরকাল

সৃষ্টিতত্ত্ব
পুনর্জন্ম
স্বর্গ
নরক
দ্বৈত-অদ্বৈত-বিশিষ্ট অদ্বৈত
আত্মজ্ঞান সাধনায় চারটি ধাপ বা স্তর
স্থূল
স্থূল-২

…………………………..
-জালালী উপাসনা বা দর্শন

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………
আরো পড়ুন:
গ্রীক পৌরাণিকে সৃষ্টিতত্ত্ব
বাইবেলে সৃষ্টিতত্ত্ব
সৃষ্টিতত্ত্ব : জালালী মত
মৎস্য অবতারের কাহিনী
কূর্ম অবতারের কাহিনী
বরাহ অবতারের কাহিনী
নৃসিংহ অবতারের কাহিনী
বামন অবতারের কাহিনী
পরশুরাম অবতারের কাহিনী
শ্রীরাম অবতারের কাহিনী

বলরাম অবতারের কাহিনী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!