ভবঘুরেকথা
লাটু মহারাজ শ্রীরামকৃষ্ণ

সকলেই যদি সাধু হবে, তো গৃহস্থ হবে কে? সাধু হওয়া সহজ কথা নয়; লক্ষ লক্ষ গৃহস্থের মধ্যে একজন সাধু হয়। গেরুয়া পরলেই সাধু হওয়া যায় না। ঠিক ঠিক বৈরাগ্য চাই, সংযম, ত্যাগ, তপস্যা চাই—তবে সাধু হওয়া যায়। তেমনি, গৃহস্থ হলেই হলো না। বিয়ে করে কতকগুলো ছেলে-পিলে হলে, আর খুব টাকা কামাতে পারলেই গৃহস্থ হল না।

যে গৃহস্থ এই-সব ধন-দৌলত, ছেলেপিলে থাকা সত্ত্বেও ভগবানের জন্য ব্যস্ত, ঐ-সবে তার মন নেই; সেই ঠিক ঠিক গৃহস্থ। গৃহস্থ সত্‌, শান্ত, জ্ঞান-পিপাসী হবে, আর সেই ঠিক আদর্শ গৃহী। আদর্শ গৃহী, আর সাচ্চা সাধু-এক।

ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করার নাম হচ্ছে সন্ন্যাস। গীতাতে এ-সব কথা আছে। গেরুয়া পরলেই সন্ন্যাসী হয় না; অনেক ত্যাগ তপস্যার দরকার। তোমরা হয়তো বলবে—এত যে সন্ন্যাসী দেখছি, তারা কি সকলেই ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করেছে? না—তা করতে পারেনি; তবে এরা চেষ্টা করছে তাঁর জন্য সর্বত্যাগী হতে, তাঁকে মনেপ্রাণে ভালবাসতে। তাঁর দায় হলে এক মুহূর্তে ঠিক ঠিক সন্ন্যাসী হয়ে যেতে পারে।

আর দেখ, একটা ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে লোকে সন্ন্যাস নেয়। আর কিছু না হোক, সদ্‌ভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কারো অনিষ্ট করতে যায় না। এটা কি কম কথা! যুবা বয়সই সাধন-ভজনের ঠিক সময়; এ সময়টা আলস্যে কাটিও না, সাধন-ভজন করে তাঁকে লাভ কর, মানুষ হও। যদি সাধন-ভজন না করতে পার, তবে কোন সৎ কাজ কর, কারও অনিষ্ট করো না। পরচর্চা করো না, তার চেয়ে ঘুমান ভাল।

যার সাধু স্বভাব সে কখনও অসাধু ভাব আনতে পারে না। তার মনে কখনও অমন প্রবৃত্তি হয় না। সে কোন কাজ গোপন করে করতে চায় না, যা করে সব প্রকাশ্যে সে নির্ভীক-চিত্ত সিংহের মত দুনিয়ার কাউকেও ভয় করে না। আর কেনই বা করবে? কারো অনিষ্ট করে না, কারো চর্চায় থাকে না, সত্—কপটতা নেই, কেনই বা (ভয়) করবে?

ছেলের বাপ হলেই হল? তোমার যে দায়িত্ব আছে—যে পর্যন্ত ছেলে সাবালক না হয়। ছেলের ভালমন্দ তোমার উপর নির্ভর করছে। বাপ-মায়ের দোষেই ছেলে খারাপ হয়। তারা কি জানে?—যেমন শিক্ষা পাবে, তেমনই হবে। সেজন্য বাপ-মাকে খুব সাবধানে চলাফেরা, কথাবার্তা কইতে হয়। কারণ বাপ-মাকেই ছেলে বেশী নকল করে।

সৎলোক অপরের দুঃখ দেখলে দুঃখিত হয়; আর যদি শক্তিতে কুলোয় তো যতটুকু পারে দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করে। কিন্তু অসৎলোক অন্যের দুঃখে আনন্দিত হয়, হাসে; বলে—কর্মফলে ভুগছে। জানে না—তারও একদিন অমনি দুঃখ হতে পারে। এ-সব অতি নীচ জীবের কথা। মানুষের ধর্ম হচ্ছে—পরস্পরের দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করা, পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। মহাপুরুষদের জীবন দেখলে এ সব বুঝতে পারবে।

ছেলে সাবালক হয়ে গেলে—নিশ্চিন্ত; তখন সে নিজের কর্মের জন্য নিজেই দায়ী, বাপ-মার আর কোন ‘দায়’ থাকে না। কিন্তু এ ঘোর দায়িত্ব কটা লোক বুঝে? ছেলেগুলো কোন প্রকারে খেতে-পরতে পেলেই যথেষ্ট হল—এই ভাল। আরে, মানুষের আকার হলেই কি মানুষ হয়? মানুষের আকারে অনেক দানা-দৈত্যও আছে—পশু আছে। দশটা দানা-দৈত্যের মতো ছেলের চেয়ে একটা ‘মানুষ’ ভাল। ছেলেদের আর দোষ কি?

তাদের মানুষ করলে তবে তো মানুষ হবে? ছেলেকে মানুষ করতে হলে বাপ-মাকে আগে মানুষ হতে হবে—তবে হবে। এই দায়িত্ব-জ্ঞান কি অমনি হয়, কত সৎসঙ্গ করতে হয়, আদর্শ পুরুষদের জীবন দেখতে হয়, কত সব চেষ্টা করতে হয়, তবে হয়। যার এ দায়িত্ব-জ্ঞান আছে সেই মানুষ।

আমার ছবি ‘অমুক’ পূজো করছে। তা সে পূজো না করলে আমার আর স্বর্গে যাওয়া হবে না! আমার ছবি পূজা করে কি হবে? তাঁকে (ঠাকুরকে) পূজো কর, যাতে কল্যাণ হবে। ত্রৈলঙ্গস্বামী কত যে কষ্ট (তপস্যা) করেছেন, তা তোমরা কি বুঝবে?

তাঁকে যারা ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, পূজো করে, তাদের কল্যাণ হবেই। তিনি (ঠাকুর) বলতেন—‘‘ত্রৈলঙ্গস্বামী সব্‌সে পার। শরীর সাধারণের মতো, কিন্তু কর্ম মানুষের মতো নয়। শিবত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। বিশ্বনাথ আর ত্রৈলঙ্গস্বামী অভেদ।’’

মাস্টার মহাশয় খুব পণ্ডিত লোক; ওঁর দরুণ কত লোকের কল্যাণ হয়েছে, আর এখনও হচ্ছে। ‘কথামৃত’ পড়ে কত লোকে ঠাকুরকে জানতে পাচ্ছে। মাস্টার মহাশয়ের বয়স হয়ে আসছে, এখন তাঁর দয়ার শরীর ভাল থাকলেই বাঁচোয়া। এ-সব লোক যতদিন সংসারে থাকে সংসারের কল্যাণ।

সৎলোক অপরের দুঃখ দেখলে দুঃখিত হয়; আর যদি শক্তিতে কুলোয় তো যতটুকু পারে দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করে। কিন্তু অসৎলোক অন্যের দুঃখে আনন্দিত হয়, হাসে; বলে—কর্মফলে ভুগছে। জানে না—তারও একদিন অমনি দুঃখ হতে পারে। এ-সব অতি নীচ জীবের কথা। মানুষের ধর্ম হচ্ছে—পরস্পরের দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করা, পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। মহাপুরুষদের জীবন দেখলে এ সব বুঝতে পারবে।

……………………….
স্বামী সিদ্ধানন্দ-সংগৃহীত স্বামী অদ্ভুতানন্দের (লাটু মহারাজের ) সত্‌কথা ” বর্তমান পত্রিকা ” থেকে
পুণঃপ্রচারে বিনীত -প্রণয় সেন

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………….
আরও পড়ুন-
স্বামী অড়গড়ানন্দজী
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব
শিরডি সাই বাবা
পণ্ডিত মিশ্রীলাল মিশ্র
নীলাচলে মহাপ্রভুর অন্ত্যলীলার অন্যতম পার্ষদ ছিলেন রায় রামানন্দ
ভক্তজ্ঞানী ধর্মপ্রচারক দার্শনিক রামানুজ
সাধক ভোলানন্দ গিরি
ভক্ত লালাবাবু
লাটু মহারাজ শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্ভুত সৃষ্টি
কমলাকান্ত ভট্টাচার্য
ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন
পরিব্রাজকাচার্য্যবর শ্রীশ্রীমৎ দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেব
আর্যভট্ট কাহিনী – এক অজানা কথা
গিরিশচন্দ্র ঘোষ
কঠিয়াবাবা রামদাস
সাধু নাগ মহাশয়
লঘিমাসিদ্ধ সাধু’র কথা
ঋষি অরবিন্দ’র কথা
অরবিন্দ ঘোষ
মহাত্মাজির পুণ্যব্রত
দুই দেহধারী সাধু
যুগজাগরণে যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ
শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর
বাচস্পতি অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে
মুসলমানে রহিম বলে হিন্দু পড়ে রামনাম
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : প্রথম খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব: দ্বিতীয় খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : অন্তিম খণ্ড
মহামহোপাধ্যায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ
শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর
শ্রীশ্রী ঠাকুর সত্যানন্দদেব
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: এক
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: দুই
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: তিন
সাধক তুকারাম
সাধক তুলসীদাস: এক
সাধক তুলসীদাস: দুই
সাধক তুলসীদাস: তিন
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: এক
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: দুই
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!