ভবঘুরেকথা
ফকির লালন সাঁইজি

-দ্বীনো দাস

পূর্বসংস্কার সঙ্গে নিয়ে, বহু জন্মজন্মান্তর পাড়ি দিতে দিতে আজ আমরা মায়ার এই নিখুঁত সাজানো প্রপঞ্চময় পৃথীবিতে এসে, কামনা বাসনার আসক্তিতে জর্জরিত হয়ে, জ্ঞান চৈতন্যহারা, এককথায় (লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া) অবশ হয়ে বসে আছি।

সংস্কারের অন্য রূপ হল বাসনা। জন্ম জন্মান্তরের কর্মভোগ বা কর্মফল মাফিক ভোগকেই সংস্কার বলে। আসক্তি হল- একটা বস্তু আশা করে সে বস্তু পেয়েও, সেই বস্তু ভোগ করতে না পারায়, তার প্রতি একটা মোহটান থাকা।

আর আশা করেও সেই বস্তু পায় নাই আর ভোগও করতে পারে নাই এটাই সংস্কার।

মরণশীল জীব মায়া দ্বারা অবশ হয়ে কর্ম করে। তাই তাদের জন্ম মৃত্যু ইচ্ছাধীন নয়। তাদের জন্ম মৃত্যু প্রকৃতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জন্ম-মৃত্যু শুধু একটা অবশ অজ্ঞান ভাব।

সাঁইজি বললেন, কামনা বাসনা পরিহার করো, কারণ তুমি স্রষ্টার সত্তায় সত্যবান, তুমি তার সার, সেই পরমসত্তা, পরমাত্মার ঐশ্বর্য্যে ধনী হও। উদভ্রান্ত ভিখারী না হয়ে, এক টুকরো মাংস ও কিছু শারীরিক আরামের কাঙ্গাল না হয়ে তুমি সেই পরম অনন্ত ঈশ্বরের সত্যবান হও ও মহান গরিমাময় স্থান পুনপ্রাপ্ত হও।

অহংবোধ ত্যাগ করো। দেখবে প্রকৃতি স্ব-রূপে ধরা দিবে। ব্রহ্মা অনুভূতি প্রকাশ পাবে। আর এই অনুভূতি এমন একটা অবস্থা যা কিনা কথায় বা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। সে ভাব কোনকিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না।

তাই সাঁইজি লালন ফকির বললেন-

আপনার আপনি ফানা হলে
সকল জানা যাবে,
কোনরূপে হলে ফানা
সে ভেদ জানতে পাবে।।

আল্লা হরি ভজন পুজন
মানুষের সকল সৃজন,
অচানক অচিনাই কখন
জ্ঞান ইন্দ্রিয় না সম্ভবে।।

অচেনা ভাষা দিয়ে কখনো ভাব বা প্রেম হয় না। যার যার মাতৃভাষা দিয়েই ভাব বা প্রেমের উদয় হয়। ব্রহ্মা অনুভুতির কথা তাই ভাষা, বাক্যে জ্ঞান ইন্দ্রিয়ে না সম্ভবে।

স্বরূপে যিনি ঈশ্বর সেই তিনিই মায়ার অতীত নিত্তরঙ্গ মহাকাল বা মাহাশূন্যে বিরাজ করছেন। এখানে পিতৃরূপে তিনি ঈশ্বর। তিনি হচ্ছেন মূলধন যা সৃষ্টিকে পরিপুষ্ট করছে। আর পুত্র অর্থাৎ জ্ঞানমূর্তি কূটস্থ চৈতন্য। যা কিনা সারা বিশ্ব জুড়ে ব্যাপ্ত রয়েছে, তা হচ্ছে পালন বা পরিচালন কর্তা।

আর পবিত্র আত্মা, অর্থাৎ স্বর্গীয় অদৃশ্য স্পন্দন শক্তি, যা পুরো ব্রহ্মাণ্ডকে যাবতীয় রূপ বা আকার দান করে, তা হচ্ছে (——) এই ডেস ডেস কথাটা অপূর্ণ রাখলাম।

…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার

ভক্তি-সংসার-কর্ম

………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!