ভবঘুরেকথা
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী ফকির লালন

ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী

-দ্বীনো দাস

কথাটা বড়ই মর্মস্পশী ও বেদনাদায়ক।

ঈশ্বরকে আমরা ভিখারীই বলতে পারি।

তিনি তার সৃষ্টিকুলে বিশেষ করে মানুষের মন পাবার জন্য প্রেম পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে অধীর হয়ে আছেন।

যিনি সমগ্র জগতের প্রভু। যার হুকুমে, ইশারায় সমগ্র ভু-বায়ুমণ্ডলে সব কিছুই তার আজ্ঞা বহন করে চলে। তার দৃষ্টিপাতে চাঁদ, সূর্য, পাহাড়, গ্রহ, তারা সবই কম্পিত হয়। সেই তিনিই মহাশক্তি।

মানুষের পিছে ছুটে চলেছেন আর বলছেন-

তুমি কি আমাকে একটুও প্রেমের সহিত ডাকবে না?

একটুও ভালোবাসবে না?

তুমি কি আমার একটু সন্ধান কখনও নেবে না?

আমি তোমাদের জন্য সমগ্র ভুমণ্ডলে যা কিছু সব সৃষ্টি করেছি তোমাদের জন্য। আমি এ সব কিছুরই দাতা। আমাকে কি তাদের চেয়ে বেশী। ভলোবাসবে না?

তখন আমরা সকলে বলি, আমি এখন খুব ব্যস্ত। সংসারে আমার অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। তোমার খোঁজে আমি এখন সময় দিতে পারবো না। আমার সে সময় নেই।

তখন পরম স্রষ্টা বলেন, বেশতো, আমি অপেক্ষা করে পথ চেয়ে বসে থাকবো।

ঠিক এমন ভাবেই জগতে সদ্ গুরুরা অধীর অপেক্ষায় বসে আছেন ভক্তকুলকে তরাবেন বলে। তাইতো সাঁইজি ফকির লালন সাঁই বললেন-

পারে কে যাবি তোরা আয়না ছুটে।
দয়াল চাঁদ মোর দিচ্ছে
খেওয়া ভবের ঘাটে।

দয়াল বড় দয়াময়
পারের কড়ি নাহি সে লয়,
এমন দয়াল মিলবে কোথায়
এই ললাটে।।

কিন্তু সাঁইজি এ কথাও বলেছেন-

সেরে শুরু মনের বেড়ি
ভার দেনারে
মনে গলদ থাকতে হবে না।

এখন উপায়?

আমরাতো সংসার মায়াজ্বালে চিত্যচাঞ্চল্য, ভবযাতনা নিয়ে সারাক্ষণ আমার, আমার, নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ঈশ্বরতো আমাদের সংসার দিয়েছেন, পরিবার দিয়েছেন।

হ্যাঁ এটা দিয়েছেন অধিকাংশ সকলেরই।

চিত্তচাঞ্চল্য, মায়ামোহের বেড়া ধ্যানের দ্বারা অপসারিত হয়। মানুষের চিত্তশক্তি তখন অনন্তে প্রসারিত হয়ে সর্বব্যাপিত্বে লীন হয়। জীবন একটা স্রষ্টার লিখিত মহৎ নাট্যকলা। বেশী করে ধ্যান করলে, আমাদের বোধি, স্বজ্ঞার অপরূপ পাত্র আরও বড় করে তোলা যাবে। আর তাহলেই সেই অনন্ত জ্ঞান সমুদ্রকে ধারণ করা যাবে।

ইহার ভেতরেই মঙ্গল ও সৎকর্ম লুকায়ে আছে। সৃষ্টিকর্তা পরিবার পরিজন ও সমাজের মধ্যে আমাদের স্থাপন করেন। কারণ স্বার্থপরতা ত্যাগ ও আশেপাশের সবার ভালো-মন্দ ভাবার সুযোগ করে দেন। বন্ধুত্বের মাধ্যমে আমাদের সহানুভূতি আরো বিস্তৃত হবার পথ দেখান।

তবে এখানেই শেষ না আমাদের। প্রেমকে উত্তরোত্তর বর্ধিত করবার চেষ্টা করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা সর্বত্র, সকল প্রাণীকে ঘিরে স্বর্গীয় হয়ে ওঠে। তা না হলে জগৎ ঈশ্বরের সাথে আমাদের একত্ব স্থাপিত হবে কি ভাবে?

চিত্তচাঞ্চল্য আর মায়া মহো কি করে কাটায়?

চিত্তচাঞ্চল্য, মায়ামোহের বেড়া ধ্যানের দ্বারা অপসারিত হয়। মানুষের চিত্তশক্তি তখন অনন্তে প্রসারিত হয়ে সর্বব্যাপিত্বে লীন হয়। জীবন একটা স্রষ্টার লিখিত মহৎ নাট্যকলা। বেশী করে ধ্যান করলে, আমাদের বোধি, স্বজ্ঞার অপরূপ পাত্র আরও বড় করে তোলা যাবে। আর তাহলেই সেই অনন্ত জ্ঞান সমুদ্রকে ধারণ করা যাবে।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার

ভক্তি-সংসার-কর্ম

………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!