আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তার সুসংবাদদাতা। পরে সে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের নিকট আসল তারা বলতে লাগল, এতো এক স্পষ্ট যাদু। যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহুত হয়েও আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে তার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে?
আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভাতে চায় কিন্তু আল্লাহ তার নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ : ৬-৮)
এরপরে আল্লাহ বলেন? হে মুমিনগণ! আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী হও, যেমন মারিয়াম তনয় ঈসা বলেছিল তার শিষ্যগণকে, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? শিষ্যগণ বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী ইসরাঈলদের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল।
পরে আমি মুমিনদেরকে শক্তিশালী করলাম তাদের শক্রদের মুকাবিলায়; ফলে তারা বিজয়ী হল। (৬ সূরা সাফ : ১৪)। অতএব, ঈসা (আ) হলেন বনী ইসরাঈলের শেষ নবী। তিনি তাদের তার পরে আগমনকারী সর্বশেষ নবীর সুসংবাদ দান করেন, তার নাম উল্লেখ করেন এবং তাঁর লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে করে সেই নবী যখন আগমন করবেন তখন তারা তাকে চিনতে পারে ও তাঁর আনুগত্য করতে পারে।
তারা যাতে কোন রকম অজুহাত তুলতে না পারে, সে জন্যে তিনি দলীল-প্রমাণ চুড়ান্তভাবে পেশ করেন এবং তাদের প্রতি এটা ছিল আল্লাহর অনুকম্পা স্বরূপ। যেমনটি আল্লাহ বলেন : যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উন্ময়ী নবীর যার উল্লেখ তাওরাত ও ইনজীল যা তাদের নিকট আছে তাতে লিপিবদ্ধ পায়।
যে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে বাধা দেয়, যে তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু বৈধ করে ও অপবিত্র বস্তু অবৈধ করে এবং যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার থেকে ও শৃংখল থেকে যা তাদের উপর ছিল। সুতরাং যারা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তার সাথে অবতীর্ণ হয়েছে
তার অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম। (৭ আরাফ : ১৫৭)
মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক … রাসূল (সা)-এর কতিপয় সাহাবীদের বরাতে বর্ণনা করেন যে, একদা তাঁরা বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে আপনার নিজের সম্পর্কে অবহিত করুন। উত্তরে তিনি বলেন, আমি ইবরাহীম (আ)-এর দোয়ার ফলে, ঈসা (আ)-এর সুসংবাদ। যখন আমি মায়ের পেটে ছিলাম তখন আমার মা স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি নূর বের হয়ে শাম দেশের বুসরা নগরী প্রাসাদ।
রাজিকে আলোকে উদ্ভাসিত করে দিয়েছে। ইরাবায ইব্ন সারিয়া ও আবু উমামাও রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাদের বর্ণনায় এসেছে যে, আমি ইবরাহীম (আ)-এর দোয়া এবং ঈসা (আ)-এর সুসংবাদ। ইবরাহীম (আ) যখন কাবা ঘর নির্মাণ করেন তখন আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন যে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্য হতে তাদের নিকট এক রাসূল প্রেরণ করা। (২ বাকারা? ১২৯)।
অতঃপর বনী ইসরাঈলের মধ্যে নবুওতের ধারাবাহিকতা যখন ঈসা (আ) পর্যন্ত এসে শেষ হল তখন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, তাদের মধ্যে নবী প্রেরণের ধারা শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপর আরবদের মধ্যে এক উক্ষ্মী নবী আসবেন। তিনি হবেন খাতিমুল আম্বিয়া বা শেষ নবী। তাঁর নাম হবে আহমদ, তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইব্ন আবদুল্লাহ ইব্ন আবদুল মুত্তালিব ইব্ন হাশিম। ইসমাঈল ইব্ন ইবরাহীমের বংশধর।
আর তা হচ্ছে তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। সুতরাং নাসারাদের (খ্ৰীষ্টানদের) উপর তারা বিজয়ী থাকবেন। কেননা, নাসারাগণ তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে তার ব্যাপারে সীমালজান করেছে, এবং আল্লাহ তাকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তারা তার চাইতে উর্ধে স্থান দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন, পরে সে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের নিকট আসল, তারা বলতে লাগল, এতো এক স্পষ্ট যাদু (৬ সাফ : ৬)। সে যখন আসল –এখানে সে সর্বনাম দ্বারা ঈসা। (আ)-কেও বুঝান হতে পারে, এবং আবার মুহাম্মদ (সা)-কেও বুঝান হতে পারে। তারপার আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে, মুসলমানদেরকে সাহায্য করতে এবং নবীকে সম্মান করতে ও ইকামতে দীন এবং দাওয়াত সম্প্রসারণ কাজে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দান করেন।
আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী হও, যেমন মারিয়াম-তনয় বলেছিল তার শিষ্যগণকে, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে। অর্থাৎ আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান জানাবার কাজে কে আমাকে সাহায্য করবে? শিষ্যগণ বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। নাসিরা নামক একটি গ্রামে ঈসা নবীর সাথে শিষ্যদের এই কথাবার্তা হয়েছিল; এ জন্যেই পরবর্তীতে তারা নাসারা নামে আখ্যায়িত হয়।
আল্লাহার বাণী- অতঃপর বনী ইসরাঈলদের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফারী করল। অর্থাৎ ঈসা (আ) যখন বনী ইসরাঈলসহ অন্যদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেন। তখন কিছু লোক দাওয়াত কবুল করল এবং কিছু লোক প্রত্যাখ্যান করল। সীরাতবেত্তা ইতিহাসবিদ ও তাফসীরবিদগণ লিখেছেন যে, এন্টিয়কের সমস্ত অধিবাসী ঈসা (আ)-এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে।
ঈসা (আ) এন্টিয়াকে তিনজন দুত প্রেরণ করেন। তাদের এক জনের নাম শামউন আস-সাফা। তারা তার আহবানে সাড়া দেয় এবং ঈমান গ্রহণ করে। সূরা ইয়াসীনে যে তিনজন দূতের উল্লেখ আছে, এরা সেই তিনজন নন, আলাদা তিনজন। আসহাবুল কারিয়ার ঘটনায় আমরা এ বিষয়ে আলোচনা ইতিপূর্বে করেছি। বনী ইসরাঈলের অধিকাংশ ইয়াহুদী ঈসা। (আ)-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে।
পরবর্তীতে আল্লাহ ঈমান গ্রহণকারীদেরকে সাহায্য ও শক্তি দান করেন। ফলে তারা ঈমান প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে পযুদস্ত করে এবং তাদের উপর বিজয় লাভ করে। এ প্রসংগে আল্লাহ বলেন, স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমার মেয়াদ পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি এবং যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের মধ্য হতে তোমাকে মুক্ত করছি।
আর তোমার অনুসারীগণকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের উপরে প্রাধান্য দিচ্ছি। (৩ আলে ইমরান : ৫৫) এ আয়াতের আলোকে যে সব দল ও সম্প্রদায় হযরত ঈসা (আ)-এর দীন ও দাওয়াতের অধিক নিকটবতী, তারা তুলনামূলক নিম্নবতীদের উপর বিজয় ও প্রাধান্য লাভ করবে। সুতরাং ঈসা (আ)-এর ব্যাপারে মুসলমানদের বিশ্বাসই যথার্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই।
আর তা হচ্ছে তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। সুতরাং নাসারাদের (খ্ৰীষ্টানদের) উপর তারা বিজয়ী থাকবেন। কেননা, নাসারাগণ তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে তার ব্যাপারে সীমালজান করেছে, এবং আল্লাহ তাকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তারা তার চাইতে উর্ধে স্থান দিয়েছে।
যেহেতু মোটামুটিভাবে অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের তুলনায় ঈসা (আ)-এর আদর্শের কাছাকাছি অবস্থানে আছে, সে জন্যে তারা ইয়াহুদীদের উপরে বিজয়ী হয়ে ইসলামের পূর্বেও ছিল এবং ইসলামের আবির্ভাবের পরেও রয়েছে।
আসমানী খােঞ্চার বিবরণ
আল্লাহর বাণী-
স্মরণ কর, হাওয়ারীগণ বলেছিল, হে মারিয়াম-তনয় ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি? আমাদের জন্যে আসমান হতে খাদ্য পরিপূর্ণ খািঞ্চ (মায়িদা) প্রেরণ করতে সক্ষম? সে বলেছিল, আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। তারা বলেছিল, আমরা চাই যে, তা থেকে কিছু খাব এবং আমাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করবে। আর আমরা জানতে চাই যে, তুমি আমাদেরকে সত্য বলেছ এবং আমরা এর সাক্ষী থাকতে চাই।
মারিয়াম-তনয় ঈসা বলল, হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্যে আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করা; এটা আমাদের পূর্ববতী ও পরবর্তী সকলের জন্যে হবে আনন্দােৎসব স্বরূপ ও তোমার নিকট হতে নিদর্শন। এবং আমাদেরকে জীবিকা দান কর; তুমিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।
আল্লাহ বললেন, আমিই তোমাদের নিকট এটা প্রেরণ করব; কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরী করলে তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শান্তি বিশ্বজগতের অপর কাউকেও দিব না। (মায়িদা : ১১২-১১৫)
তাফসীর গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা খাঞ্চা অবতারণ প্রসংগে সেই সব হাদীস উল্লেখ করেছি। যা হযরত ইব্ন আব্বাস, সালমান ফারসী, আম্মার ইব্ন ইয়াসির প্রমুখ থেকে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনার সারসংক্ষেপ এই; হযরত ঈসা (আ) হাওয়ারীগণকে ত্রিশ দিন সওম পালনের নির্দেশ দেন। তারা ত্রিশ দিন সওম পালন শেষে ঈসা (আ)-এর নিকট আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা অবতীর্ণ করার আবদার জানায়।
এ জাতীয় লোকদের সংখ্যা ছিল তেরশ। সকলেই তা থেকে খেলো। ফলে দুঃখ-দুৰ্দশা ও রোগ-শোক যার যে সমস্যা ছিল, এই খাদ্যের বরকতে তা থেকে সে নিরাময় লাভ করল। যারা খেতে অস্বীকার করেছিল। তা দেখে তারা খুবই লজ্জিত হল ও অনুশোচনা করতে লাগল। কথিত আছে, এই খাঞ্চা প্রতিদিন একবার করে আসত।
উদ্দেশ্য ছিল— তারা আল্লাহর প্রেরিত এই খাদ্য আহার করবে। তাদের সওম ও দোয়া আল্লাহ। কবুল করেছেন এ ব্যাপারে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করবে, সওমের মেয়াদ শেষে সওম ভংগের দিনে ঈদ উৎসব পালন করবে, তাদের পূর্ব পুরুষ ও উত্তর পুরুষ এবং তা ধনী ও দরিদ্র সকলের জন্যে আনন্দের বিষয় হিসেবে গণ্য হবে। ঈসা (আ) এ ব্যাপারে তাদেরকে অনেক উপদেশ দিলেন।
তাঁর আশংকা হল, এরা আল্লাহর এ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে এবং এর শর্তাদি পূরণ করতে সক্ষম হবে না। কিন্তু তারা তাদের আবদার পূরণ না হওয়া পর্যন্ত উপদেশ শুনতে প্রস্তুত হল না। অবশেষে তাদের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তিনি আল্লাহর নিকট দোয়া করতে প্রস্তুত হন। তিনি সালাতে দণ্ডায়মান হলেন।
পশম ও চুলের তৈরি কম্বল পরিধান করলেন এবং অবনত মস্তকে কান্নায় বুক ভাসিয়ে দিলেন। তিনি আল্লাহর নিকট কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করলেন যেন তাদের প্রার্থতি জিনিস তিনি দিয়ে দেন। আর আল্লাহ আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা অবতীর্ণ করেন।
মানুষ তাকিয়ে দেখছিল যে, দুটি মেঘের মাঝখান থেকে খাঞ্চাটি ধীরে ধীরে নীচের দিকে নেমে আসছে। খািঞ্চাটি যতই পৃথিবীর নিকটবতী হচ্ছিল ততই ঈসা (আ) বেশী বেশী করে আল্লাহর নিকট দোয়া করছিলেন, হে আল্লাহ! একে তুমি রহমত, বরকত ও শান্তি হিসেবে দান কর। শাস্তি হিসেবে দিও না। খাঞ্চাটি ক্রমান্বয়ে নেমে এসে একেবারে নিকটবতী হয়ে গেল এবং ঈসা (আ)-এর সম্মুখে মাটির উপর থামল।
খািঞ্চাটি ছিল রুমাল দিয়ে ঢাকা। ঈসা। (আ) ১৩ বলে রুমালখানা উঠালেন। দেখলেন, তাতে সাতটি মাছ ও সাতটি রুটি আছে। কেউ বলেছেন, এর সাথে সির্ক ছিল। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ঐগুলোর সাথে ডালিম এবং ফল ফলাদিও ছিল। উক্ত খাদ্য দ্রব্যগুলো ছিল অত্যন্ত সুগন্ধি। আল্লাহ বলেছিলেন, হও আর তাতেই তা হয়ে গিয়েছিল।
তারপর ঈসা (আ) তাদেরকে খাওয়ার জন্যে আহবান করেন। তারা বলল, আপনি প্রথমে খাওয়া আরম্ভ করুন তারপরে আমরা খাব। ঈসা (আ) বললেন, এ খাঞ্চার জন্যে তোমরাই প্রথমে আবেদন করেছিলে; কিন্তু প্রথমে খেতে তারা কিছুতেই রাজি হল না। হযরত ঈসা (আ) তখন ফকীর, মিসকীন, অভাবগ্ৰস্ত, রোগাক্রান্ত ও পঙ্গুদেরকে খাওয়ার আদেশ দেন।
এ জাতীয় লোকদের সংখ্যা ছিল তেরশ। সকলেই তা থেকে খেলো। ফলে দুঃখ-দুৰ্দশা ও রোগ-শোক যার যে সমস্যা ছিল, এই খাদ্যের বরকতে তা থেকে সে নিরাময় লাভ করল। যারা খেতে অস্বীকার করেছিল। তা দেখে তারা খুবই লজ্জিত হল ও অনুশোচনা করতে লাগল। কথিত আছে, এই খাঞ্চা প্রতিদিন একবার করে আসত।
লোক এ থেকে তৃপ্তি সহকারে আহার করত। খাদ্য একটুও হ্রাস পেতো না। প্রথম দল যেভাবে আহার করত, শেষের দলও ঐ একইভাবে আহার করত। কথিত আছে, প্রতিদিন সাত হাজার লোক ঐ খাদ্য আহার করত।
কিছু দিন অতিবাহিত হলে একদিন পর পর খাঞ্চ অবতরণ করত। যেমন সালিহ (আ)-এর উটনীর দুধ একদিন পর পর লোকেরা পান করত। অতঃপর আল্লাহ হযরত ঈসা (আ)-কে আদেশ দেন যে, এখন থেকে খাঞ্চার খাবার শুধুমাত্র দরিদ্র ও দুর্দশাগ্ৰস্ত লোকেরাই আহার করবে। ধনী লোকেরা তা থেকে আহার করতে পারবে না। এই নির্দেশ অনেককেই পীড়া দেয়। মুনাফিকরা এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করতে শুরু করল। ফলে আসমানী খাঞ্চী সম্পূণরূপে বন্ধ হয়ে গেল এবং সমালোচনাকারীরা শূকরে পরিণত হল।
ইব্ন আবি হাতিম ও ইব্ন জারীর উভয়ে… আম্মার ইব্ন ইয়াসির (রা) থেকে বর্ণনা
করেন। নবী করীম (সা) বলেছেন : রুটি ও গোশতসহ খাঞ্চা আসমান থেকে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং বনী ইসরাঈলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা এর অপব্যবহার করবে না, সঞ্চয় করে রাখবে না ও আগামী দিনের জন্যে ঘরে তুলে নিবে না। কিন্তু তারা এতে খিয়ানত করে সঞ্চয় করে রাখে ও আগামী দিনের জন্যে ঘরে তুলে নেয়। ফলে তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করা হয়।
আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী… বকর থেকে অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইব্ন আবিদ। দুনিয়া… ফুযায়ল ইব্ন ইয়ায থেকে বর্ণনা করেন : জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে ঈসা! আপনি কিসের সাহায্যে পানির উপর দিয়ে হাঁটেন? তিনি বললেন, ঈমান ও ইয়াকীনের বলে। উপস্থিত লোকেরা বলল, আপনি যেমন ইয়াকীন রাখেন, আমরাও তেমনি ইয়াকীন রাখি।
ইব্ন জারীর আম্মার (রা) থেকে বিভিন্ন সূত্রে মওকুফব্রুপে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং এটাই সঠিক। হাদীসটি যে সূত্রে মারফুরূপে বর্ণিত হয়েছে তা মুনকাতা বা বিভিন্ন সূত্রের হাদীস। হাদীসটির মারফু হওয়া নিশ্চিত হলে এ ব্যাপারে এটি হবে চূড়ান্ত ফয়সালা; কেননা, খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা আদৌ অবতীর্ণ হয়েছিল কি না সে সম্পর্কে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশের মতে তা অবতীর্ণ হয়েছিল। উপরোক্ত হাদীস ও কুরআনের প্রকাশভংগী থেকে তাই বুঝা যায়।
বিশেষ করে এই আয়াত- আমি অবশ্যই তা তোমাদের উপর অবতীর্ণ করব।
ইব্ন জারীর দৃঢ়তার সাথে এই মতের পক্ষে প্রমাণাদি উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশুদ্ধ সনদে মুজাহিদ ও হাসান বসরীর মতামত উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, মায়িদা আন্দীে অবতীর্ণ হয়নি। তারা বলেন, এই আয়াত এরপর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরী করলে তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি বিশ্বজগতের অপর কাউকেও দিব না। (মায়িদা ৪১১৫) যখন নাযিল হয় তখন বনী-ইসরাঈলরা মায়িদা অবতীর্ণের আবদার প্রত্যাহার করে নেয়।
এ কারণেই বলা হয়ে থাকে যে, নাসারগণ মায়িদার ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নয় এবং তাদের কিতাবেও এ ঘটনার বাস্তবে কোন উল্লেখ নেই। অথচ এমন একটি ঘটনা বাস্তবে সংঘটিত হলে তার উল্লেখ না থেকে পারে না। তাফসীর গ্রন্থে এ বিষয়ে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করেছি। আগ্রহী ব্যক্তি সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
পরিচ্ছেদ
আবু বকর ইব্ন আবিদ দুনিয়া… বকর ইব্ন আবদিল্লাহ মুযানী থেকে বর্ণনা করেনঃ একদা হাওয়ারীগণ হযরত ঈসা (আ)-কে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জনৈক ব্যক্তি তাদেরকে বলল, তিনি সমুদ্রের দিকে গিয়েছেন। তারা সন্ধান করতে করতে সমুদ্রের দিকে গেল। সমুদ্রের তীরে গিয়ে দেখেন, তিনি পানির উপর দিয়ে হাঁটছেন। সমুদ্রের তরঙ্গ একবার তাকে উপরে উঠাচ্ছে এবার নীচে নামাচ্ছে। একটি চাদরের অর্ধেক গায়ের উপর দিয়ে রেখেছেন আর বাকী অর্ধেক
মধ্যকার শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিটি বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমি কি আপনার নিকট আসব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এস, যখন তিনি এক পা পানিতে রেখে অন্য পা তুলেছেন, আমনি চিৎকার করে উঠেন উহঃ হে আল্লাহর নবী! আমি তো ডুবে গেলাম। ঈসা (আ) বললেন, ওহে দুর্বল ঈমানদার! তোমার হাত আমার দিকে বাড়াও। কোন আদম সন্তানের যদি একটা যাব পরিমাণও ঈমান থাকে তাহলে সে পানির উপর দিয়ে হাটতে পারে।
আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী… বকর থেকে অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইব্ন আবিদ। দুনিয়া… ফুযায়ল ইব্ন ইয়ায থেকে বর্ণনা করেন : জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে ঈসা! আপনি কিসের সাহায্যে পানির উপর দিয়ে হাঁটেন? তিনি বললেন, ঈমান ও ইয়াকীনের বলে। উপস্থিত লোকেরা বলল, আপনি যেমন ইয়াকীন রাখেন, আমরাও তেমনি ইয়াকীন রাখি।
ফুযায়ল ইব্ন ইয়োয, ইউনুস ইব্ন উবায়দ সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত ঈসা (আ) বলতেন, যতক্ষণ আমরা দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে বিমুখ হতে না পারবো, ততক্ষণ প্রকৃত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারব না। ফুযায়ল আরও বলেছেন, ঈসা (আ) বলতেন, আমি সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেছি।
ঈসা। বললেন, তাই যদি হয় তা হলে তোমরাও পানির উপর দিয়ে হেঁটে চল। তখন তারা নবী ঈসার সাথে পানির উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করল। কিন্তু ঢেউ আসা মাত্রই তারা সকলেই ডুবে গেল। নবী বললেন, তোমাদের কী হল হে? তারা বলল, আমরা ঢেউ দেখে ভীত হয়ে গিয়েছিলাম। নবী বললেন, কত ভাল হত যদি ঢেউ এর মালিককে তোমরা ভয় করতে।
অতঃপর তিনি তাদেরকে বের করে আনলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মাটিতে হাত মেরে এক মুষ্টি মাটি নিলেন। পরে হাত খুললে দেখা গেল এক হাতে স্বর্ণ এবং অন্য হাতে মাটির ঢেলা কিংবা কঙ্কর। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ দুহাতের কোনটির বস্তু তোমাদের কাছে প্রিয়তর? তারা বলল, স্বর্ণ। নবী বললেন, আমার নিকট স্বর্ণ ও মাটি উভয়ই সমান।
ইতিপূর্বে ইয়াহয়া ইব্ন যাকারিয়া (আ)-এর ঘটনায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, হযরত ঈসা (আ) পশমী বস্ত্র পরিধান করতেন, গাছের পাতা আহার করতেন। তাঁর বসবাসের কোন ঘরবাড়ী ছিল না। পরিবার ছিল না, অর্থ সম্পদ ছিল না এবং আগামী দিনের জন্যে কিছু সঞ্চয় করেও তিনি রাখতেন না। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি তাঁর মায়ের সূতা কাটার চরকার আয় থেকে আহার করতেন।
ইব্ন আসাকির শাবী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঈসা (আ)-এর সম্মুখে কিয়ামতের আলোচনা করা হলে তিনি চিৎকার করে উঠতেন এবং বলতেন, ইব্ন মারিয়ামের নিকট কিয়ামতের আলাচনা করা হবে। আর তিনি চুপচাপ থাকবেন তা হয় না। আবদুল মালিক ইব্ন সাঈদ ইব্ন বাহর থেকে বর্ণিত- হযরত ঈসা (আ) যখন উপদেশ বাণী শুনাতেন তখন তিনি সন্তান হারা মায়ের ন্যায় কান্নাকাটি করতেন।
আবদুর রাযযাক জাফর ইব্ন বালকাম থেকে বর্ণনা করেন যে, ঈসা (আ) সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে। এরূপ দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমার যা অপছন্দ তা থেকে আত্মরক্ষা করতে আমি সক্ষম নই; যে কল্যাণ আমি পেতে চাই তা আমার অধিকারে নেই, সব বিষয় রয়েছে অন্যের হাতে, আমি আমার কাজের মধ্যে বন্দী: সুতরাং আমার চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই।
হে আল্লাহ! আমার শক্রকে হাসিয়ো না এবং আমার কারণে আমার বন্ধুকে কষ্ট দিও না। আমার দীনের মধ্যে সংকট সৃষ্টি করিও না এবং : আমার প্রতি সদয় হবে না। এমন লোককে আমার উপর চাপিয়ে দিও না।
ফুযায়ল ইব্ন ইয়োয, ইউনুস ইব্ন উবায়দ সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত ঈসা (আ) বলতেন, যতক্ষণ আমরা দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে বিমুখ হতে না পারবো, ততক্ষণ প্রকৃত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারব না। ফুযায়ল আরও বলেছেন, ঈসা (আ) বলতেন, আমি সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেছি।
<<হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : তিন ।। হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : পাঁচ>>
………………..
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………….
আরও পড়ুন-
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : এক
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : দুই
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : তিন
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : চার
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : পাঁচ