ভবঘুরেকথা
ব্রহ্মা সৃষ্টি রহস্য ব্রহ্মাণ্ড মহাবিশ্ব জগৎ ভু

১৬. আকাশাদির গুণ

আদ্যাদ্যস্য গুণং ত্বেষামবাপ্নোতি পরঃ পরঃ।
যো যো যাবতিথশ্চৈষাং স স তাবদ্ গুণঃ স্মৃতঃ।।২০

আকাশের গুণ শব্দ, বায়ুর গুণ স্পর্শ, অগ্নির গুণ রূপ, জলের গুণ রস, পৃথিবীর গুণ গন্ধ। প্রথম ভিন্ন প্রত্যেকে স্ব স্ব গুণাতিরিক্ত পূর্ব্ব পূর্ব্বের গুণ গ্রহণ করে; যে যত সংখ্যায় গণিত, তাহার ততই গুণ হয়, অর্থাৎ আকাশের গুণ শব্দ, বায়ুর শব্দ ও স্পর্শ, অগ্নির শব্দ স্পর্শ ও রূপ, জলের শব্দ স্পর্শ রূপ ও রস, পৃথিবীর শব্দ স্পর্শ রূপ রস ও গন্ধ গুণ হয়। ২০

১৭. মনুষ্যাদির নাম ও কর্ম্মবিভাগ

সর্বেষাং তু স নামানি কর্মাণি চ পৃথক্ পৃথক্।
বেদশব্দেভ্য এবাদৌ পৃথক্ সংস্থাশ্চ নির্মমে।।২১

হিরণ্যগর্ভরূপে অবস্থিত সেই পরমাত্মা সকলের নাম অর্থাৎ মনুষ্যজাতির মনুষ্য, গোজাতির গো ইত্যাদি ও ব্রাহ্মণাদি চাতুবর্ণের বেদোক্ত অধ্যয়নাদি কর্ম্ম, এবং অন্যান্য জাতির লৌকিক কর্ম্ম, অর্থাৎ কুলালের ঘটনির্ম্মাণ, কুবিন্দের পটনির্ম্মাণ ইত্যাদি, প্রথমতঃ বেদশাস্ত্র হইতে অবগত হইয়া, পূর্ব্বকল্পে যাহার যেরূপ ছিল, এ কল্পেও তাহার সেইরূপ নির্দিষ্ট করিয়া দিলেন। ২১

১৮. দেবগণ ও যজ্ঞাদি সৃষ্টি

কর্মাত্মনাং চ দেবানাং সোঽসৃজত্ প্রাণিনাং প্রভুঃ।
সাধ্যানাং চ গণং সূক্ষ্মং যজ্ঞং চৈব সনাতনম্।।২২

সেই পরমাত্মা প্রাণধারী ইন্দ্রাদি দেবগণ, অপ্রানী কর্ম্মহেতুক পাষাণময় দেবগণ ও সাধ্যনামক সূক্ষ্ম দেবসমূহ এবং জ্যোতিষ্টোমাদি নিত্যযজ্ঞ সকল সৃষ্টি করিলেন। ২২

১৯. বেদোদ্ধার

অগ্নিবাযুরবিভ্যস্তু ত্রযং ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ যজ্ঞসিদ্ধ্যর্থং ঋচ্.যজুস্.সামলক্ষণম্।।২৩

তিনি যজ্ঞকার্য্যসিদ্ধির নিমিত্ত অগ্নি হইতে সনাতন ঋগবেদ, বায়ু হইতে যজুর্ব্বেদ এবং সূর্য্য হইতে সামবেদ উদ্ভূত করিলেন। ২৩

২০. বৎসরাদি কাল, নক্ষত্র সকল, গ্রহসমূহ ও পর্ব্বতাদি সৃষ্টি

কালং কালবিভক্তীশ্চ নক্ষত্রাণি গ্রহাংস্তথা।
সরিতঃ সাগরান্ শৈলান্ সমানি বিষমানি চ।।২৪

ব্রহ্মা সূর্য্যাদির ক্রিয়া-প্রচয়রূপ সামান্য কাল ও মাস, ঋতু, অয়, বৎসরাদি বিশেষ কাল, কৃত্তিকা প্রভৃতি সপ্তবিংশতি নক্ষত্র, আদিত্যাদি গ্রহ সকল, নদী, সমুদ্র, পর্ব্বত, সমস্থান ও উন্নতানত বিষমস্থান সকল সৃষ্টি করিলেন। ২৪

২১. প্রজাপত্যাদি তপস্যা ও চিত্তবিকার প্রভৃতি সৃষ্টি

তপো বাচং রতিং চৈব কামং চ ক্রোধমেব চ।
সৃষ্টিং সসর্জ চৈবৈমাং স্রষ্টুমিচ্ছন্নিমাঃ প্রজাঃ।।২৫

তিনি বক্ষ্যমাণ বিবিধ প্রকার প্রজা সৃষ্টি করিবার অভিলাষে প্রথমে প্রাজাপত্যাদি তপস্যা, বাক্য, চিত্তসন্তোষ, অভিলাষ ও নেত্রলৌহিত্যাদির কারণ চিত্তবিকার প্রভৃতি সৃষ্টি করিলেন। ২৫

২২. ধর্ম্মাধর্ম্ম বিভাগ ও তাহার ফল

কর্মণাং চ বিবেকার্থং ধর্মাধর্মৌ ব্যবেচযত্।
দ্বন্দ্বৈরযোজযচ্চৈমাঃ সুখদুঃখাদিভিঃ প্রজাঃ।।২৬

তিনি কর্ত্তব্য ও অকর্ত্তব্য কর্মের বিভাগ জন্য ধর্ম্ম ও অধর্ম্ম পৃথক করিয়া বিভক্ত করিলেন। ধর্ম্মের ফল সুখাদি ও অধর্ম্মের ফল দুঃখাদি, এই সুখদুঃখাদি দ্বারা সমূদয় প্রজাদিগকে সংযুক্ত করিলেন। ২৬

২৩. সূক্ষ্মস্থূলাদি ক্রমে জগৎসৃষ্টি

অণ্ব্যো মাত্রা বিনাশিন্যো দশার্ধানাং তু যাঃ স্মৃতাঃ।
তাভিঃ সার্ধমিদং সর্বং সংভবত্যনুপূর্বশঃ।।২৭

পঞ্চ মহাভূতের যে সকল সূক্ষ্ম অংশ এবং স্থূলভাগ, তৎক্রমে অর্থাৎ সূক্ষ্ম হইতে স্থূল, স্থূলভাগ হইতে স্তূলতর ভাগ ইত্যাদি ক্রমে এই জগৎ সৃষ্ট হইল। ২৭

২৪. জীবধর্ম্ম

যং তু কর্মণি যস্মিন্ স ন্যযুঙ্ক্ত প্রথমং প্রভুঃ।
স তদেব স্বযং ভেজে সৃজ্যমানঃ পুনঃ পুনঃ।।২৮

প্রজাপতি ব্রহ্মা সৃষ্টিকালে যে জাতিকে যাদৃশ কর্ম্মে,–অর্থাৎ ব্যাঘ্রাদিকে হরিণমারণাদিরূপে নিযুক্ত করিলেন, তাহারা বারংবার সৃষ্ট হইয়াও স্বস্ব কর্ম্মানুসারে সেই সেই কর্ম্মই আচরণ করিতে লাগিল। ২৮

হিংস্রাহিংস্রে মৃদুক্রূরে ধর্মাধর্মাবৃতানৃতে।
যদ্ যস্য সোঽদধাত্ সর্গে তত্ তস্য স্বযমাবিশত্।।২৯

পূর্ব্ববচনের উদাহরণ। সিংহাদির হিংসা, হরিণাদির অহিংসা, ব্রাহ্মণাদির দয়া, ক্ষত্রিয়াদির যুদ্ধাদি, ব্রহ্মচর্য্যাদির গুরুশুশ্রুষাদি ধর্ম্ম ও মাংসমৈথুনসেবাদি অধর্ম্ম, সত্য ও অসত্য ইত্যাদি প্রজাপতি সৃষ্টিকালে যাহার যাহা বিধান করিলেন, উত্তরকালেও সকলে অদৃষ্টবলে তাহাই প্রাপ্ত হইল। ২৯

২৫. স্বস্ব কর্ম্মপ্রাপ্তি

যথর্তুলিঙ্গান্যর্তবঃ স্বযমেবর্তুপর্যযে।
স্বানি স্বান্যভিপদ্যন্তে তথা কর্মাণি দেহিনঃ।।৩০

যেমন বসন্তাদি ঋতু আপন আপন অধিকারকালে চুতমঞ্জরী প্রভৃতি আপন আপন চিহ্ন ধারণ করিয়া থাকে, সেইরূপ শরীরধারী পুরুষেরাও আপন আপন কর্ম্ম প্রাপ্ত হইয়া থাকে। ৩০

২৬. ব্রাহ্মণাদি চারিবর্ণ সৃষ্টি

লোকানাং তু বিবৃদ্ধ্যর্থং মুখবাহূরুপাদতঃ।
ব্রাহ্মণং ক্ষত্রিযং বৈশ্যং শূদ্রং চ নিরবর্তযত্।।৩১

সৃষ্টিকর্ত্তা পরমেশ্বর ভূলোকাদি প্রজা বৃদ্ধি করিবার মানসে আপন মুখ, বাহু, উরু ও পদ হইতে ক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারি বর্ণের সৃষ্টি করিলেন, অর্থাৎ মুখ হইতে ব্রাহ্মণ, বাহু হইতে ক্ষত্রিয়, উরু হইতে বৈশ্য ও পদ হইতে শূদ্রের সৃষ্টি করিলেন। ৩১

২৭. পুরুষ নারী ও বিরাট উৎপত্তি

দ্বিধা কৃত্বাঽত্মনো দেহমর্ধেন পুরুষোঽভবত্।
অর্ধেন নারী তস্যাং স বিরাজমসৃজত্ প্রভুঃ।।৩২

সৃষ্টিকর্ত্তা জগদীশ্বর আপন শরীরকে দুই খণ্ড করিয়া অর্দ্ধাংশে পুরুষ ও অর্দ্ধাংশে নারী হইলেন। ঐ উভয়ের পরস্পর সংযোগে বিরাট্‌-নামক পুরুষ উৎপন্ন হইল। ৩২

২৮. মনুর আবির্ভাব

তপস্তপ্ত্বাঽসৃজদ্ যং তু স স্বযং পুরুষো বিরাট্।
তং মাং বিত্তাস্য সর্বস্য স্রষ্টারং দ্বিজসত্তমাঃ।।৩৩

হে দ্বিজসত্তম! সেই বিরাট পুরুষ বহুকাল তপস্যা করিয়া যাহাকে সৃষ্টি করিলেন, আমি সে মনু, আমাকে সৃষ্টিকর্ত্তা বলিয়া অবগত হও। ৩৩

২৯. দশ প্রজাপতি সৃষ্টি

অহং প্রজাঃ সিসৃক্ষুস্তু তপস্তপ্ত্বা সুদুশ্চরম্।
পতীন্ প্রজানামসৃজং মহর্ষীনাদিতো দশ।।৩৪

অনন্তর আমি প্রজা সৃষ্টি করিবার অভিলাষে বহুকাল অতি কঠোর তপস্যা করিয়া প্রথমতঃ প্রজা সৃজনে সমর্থ দশ জন প্রজাপতির সৃষ্টি করিলাম। ৩৪

৩০. দশ প্রজাপতির নাম

মরীচিমত্র্যঙ্গিরসৌ পুলস্ত্যং পুলহং ক্রতুম্।
প্রচেতসং বসিষ্ঠং চ ভৃগুং নারদমেব চ।।৩৫

আমি মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রুতু, প্রচেতা, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও নারদ পূর্ব্বোক্ত এই দশ জন প্রজাপতির সৃষ্টি করিলাম। ৩৫

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………….
আরও পড়ুন-
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব এক
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব দুই
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব তিন
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব চার
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব পাঁচ
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব ছয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!