৪৬. প্রজাপতির দেহাদিবিষয়ের ইচ্ছা পরিত্যাগে জীবেরও কর্ম্মনিবৃত্তি
তস্মিন্ স্বপিতি তু স্বস্থে কর্মাত্মানঃ শরীরিণঃ।
স্বকর্মভ্যো নিবর্তন্তে মনশ্চ গ্লানিমৃচ্ছতি।।৫৩
প্রজাপতি যখন স্বীয় দেহ ও মনের ব্যাপার রহিত করিয়া সৃষ্টিস্থিতি বিষয়ে ইচ্ছা পরিত্যাগ করেন, তখন স্বস্ব কর্ম্মানুরূপ দেহধারী জীবেরাও দেহধারণাদি কর্ম্ম হইতে নিবৃত্ত হয় এবং মনও বৃত্তিরহিত হইয়া যায়। ৫৩
৪৭. পরমাত্মার সুখশয়ন
যুগপত্ তু প্রলীযন্তে যদা তস্মিন্ মহাত্মনি।
তদাঽযং সর্বভূতাত্মা সুখং স্বপিতি নির্বৃতঃ।।৫৪
যখন সেই পরমপুরুষ পরমাত্মাতে সকল ভূত এককালে প্রলয় প্রাপ্ত হয়, তখন তিনি নিশ্চিন্তরূপে পরমসুখে শয়ান হয়েন। ৫৪
৪৮. জীবের দেহান্তরপ্রাপ্তি
তমোঽযং তু সমাশ্রিত্য চিরং তিষ্ঠতি সৈন্দ্রিযঃ।
ন চ স্বং কুরুতে কর্ম তদোত্ক্রামতি মূর্তিতঃ।।৫৫
জীব অজ্ঞানদশায় ইন্দ্রিয়ের সহিত বহুকাল অবস্থা করিয়া যখন নিশ্বাসপ্রশ্বাসাদি কোন কর্ম্ম করে না, তখন পূর্ব্বদেহ পরিত্যাগ করিয়া দেহান্তর প্রাপ্ত হয়। ৫৫
৪৯. লিঙ্গশরীর
যদাঽণুমাত্রিকো ভূত্বা বীজং স্থাণু চরিষ্ণু চ।
সমাবিশতি সংসৃষ্টস্তদা মূর্তিং বিমুঞ্চতি।।৫৬
সূক্ষ্ম পঞ্চভূত, জ্ঞানেন্দ্রিয়, কর্ম্মেন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, বাসনা, কর্ম্ম, বায়ু, অজ্ঞান ইহাদিগকে পূর্য্যষ্টক অর্থাৎ লিঙ্গশরীর বলে। যখন জীব এই লিঙ্গশরীরযুক্ত হইয়া স্থাবরবীজে প্রবেশক অরে, তখন বৃক্ষাদি রূপ ধারণ করে; আর যখন জঙ্গমবীজে প্রবেশ করে, তখন মনুষ্যাদি শরীর প্রাপ্ত হয়। ৫৬
৫০. অবস্থাভেদে সৃষ্টি ও সংহার
এবং স জাগ্রত্স্বপ্নাভ্যামিদং সর্বং চরাচরম্।
সঞ্জীবযতি চাজস্রং প্রমাপযতি চাব্যযঃ।।৫৭
এইরূপে সেই অব্যয় পুরুষ ব্রহ্ম আপন জাগরণ ও স্বপ্ন অবস্থা দ্বারা এই স্থাবরজঙ্গমাত্মক জগতের সৃষ্টি এবং সংহার করিতেছেন। ৫৭
৫১. মনুর অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা
ইদং শাস্ত্রং তু কৃত্বাঽসৌ মামেব স্বযমাদিতঃ।
বিধিবদ্ গ্রাহযামাস মরীচ্যাদীংস্ত্বহং মুনীন্।।৫৮
হিরণ্যগর্ভ ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথমে এই শাস্ত্র প্রস্তুত করিয়া বিধানক্রমে স্বয়ং আমাকেই অধ্যয়ন করাইয়াছেন, আমি মরীচি প্রভৃতি মুনিগণকে অধ্যয়ন করাইয়াছি। ৫৮
৫২. ভৃগুকে মনুর অনুজ্ঞা
এতদ্ বোঽযং ভৃগুঃ শাস্ত্রং শ্রাবযিষ্যত্যশেষতঃ।
এতদ্ হি মত্তোঽধিজগে সর্বমেষোঽখিলং মুনিঃ।।৫৯
ভৃগু এই শাস্ত্র আদ্যোপান্ত তোমাদিগকে শ্রবণ করাইবেন, যেহেতু, তিনি আমার নিকট হইতে এই শাস্ত্র সমস্ত সম্যকরূপ অধ্যয়ন করিয়াছেন। ৫৯
৫৩. ভৃগু কর্ত্তৃক মনু-সংহিতা কথনারম্ভ
ততস্তথা স তেনোক্তো মহর্ষিমনুনা ভৃগুঃ।
তানব্রবীদ্ ঋষীন্ সর্বান্ প্রীতাত্মা শ্রূযতামিতি।।৬০
অনন্তর মহর্ষি ভৃগু ভগবান মনু কর্ত্তৃক এই প্রকার অভিহিত হইয়া ‘শ্রবণ করুন’ বলিয়া তাঁহাদিগকে বলিতে লাগিলেন। ৬০
৫৪. স্বায়ম্ভুব মনুর বংশীয় অপর মনুগণের নাম ও বিশ্বসংসার সৃষ্টি
স্বাযংভুবস্যাস্য মনোঃ ষড্বংশ্যা মনবোঽপরে।
সৃষ্টবন্তঃ প্রজাঃ স্বাঃ স্বা মহাত্মানো মহৌজসঃ।।৬১
ব্রহ্মার পৌত্র এই স্বায়ম্ভুব মনুর বংশে অপর মহাতেজস্বী মহাত্মা ছয় জন মনু জন্মগ্রহণ করেন, তাঁহারা আপন আপন অধিকারকালে প্রজা সকল উৎপাদন করেন। ৬১
স্বারোচিষশ্চোত্তমশ্চ তামসো রৈবতস্তথা।
চাক্ষুষশ্চ মহাতেজা বিবস্বত্সুত এব চ।।৬২
তাঁহাদিগের নাম স্বারোচিষ, ঔত্তমি, তামস, রৈবত, মহাতেজস্বী চাক্ষুষ ও বৈবস্বত। ৬২
স্বাযংভুবাদ্যাঃ সপ্তৈতে মনবো ভূরিতেজসঃ।
স্বে স্বেঽন্তরে সর্বমিদমুত্পাদ্যাপুশ্চরাচরম্।।৬৩
অসীমক্ষমতাসম্পন্ন স্বায়ম্ভুবাদি সপ্ত মনু স্ব স্ব অধিকারকালে এই স্থাবর-জঙ্গম বিশ্বসংসার সৃষ্টি করিয়া প্রতিপালন করেন। ৬৩
৫৫. নিমেষাদি কাল
নিমেষা দশ চাষ্টৌ চ কাষ্ঠা ত্রিংশত্ তু তাঃ কলা।
ত্রিংশত্ কলা মুহূর্তঃ স্যাদহোরাত্রং তু তাবতঃ।।৬৪
এক্ষণে মম্বন্তরাদি কালের নিয়ম কহিতেছেন।–চক্ষুর পলকের নাম নিমেষ, অষ্টাদশ নিমেষে এক কাষ্ঠা হয়, ত্রিংশৎ কাষ্ঠায় এক কলা হয়, ত্রিংশৎ কলায় এক মুহূর্ত্ত হয়, ত্রিংশৎ মুহূর্ত্তে এক দিবারাত্রি হয়। ৬৪
৫৬. মনুষ্যের দিবা ও রাত্রি
অহোরাত্রে বিভজতে সূর্যো মানুষদৈবিকে।
রাত্রিঃ স্বপ্নায ভূতানাং চেষ্টাযৈ কর্মণামহঃ।।৬৫
দিবাকরের দ্বারা মনুষ্যদিগের ও দেবতাদিগের দিবারাত্রি বিভক্ত হয়। জীবগণের নিদ্রার জন্য রাত্রি ও কর্ম্ম করিবার জন্য দিন নিরূপিত হইল। ৬৫
৫৭. পিতৃলোকের দিবা ও রাত্রি
পিত্র্যে রাত্র্যহনী মাসঃ প্রবিভাগস্তু পক্ষযোঃ।
কর্মচেষ্টাস্বহঃ কৃষ্ণঃ শুক্লঃ স্বপ্নায শর্বরী।।৬৬
মনুষ্যদিগের এক মাসে পিতৃলোকের এক দিবারাত্রি হয়, তন্মধ্যে কর্ম্ম করিবার জন্য কৃষ্ণপক্ষকে দিন ও নিদ্রিত থাকিবার জন্য শুক্লপক্ষকে রাত্রি বলে। ৬৬
৫৮. দেবগণের দিবা ও রাত্রি
দৈবে রাত্র্যহনী বর্ষং প্রবিভাগস্তযোঃ পুনঃ।
অহস্তত্রোদগযনং রাত্রিঃ স্যাদ্ দক্ষিণাযনম্।।৬৭
মনুষ্যদিগের এক বৎসরে দেবতাদিগের এক দিবারাত্রি হয়, উহা এইরূপে বিভক্ত হইয়াছে,–উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন। উত্তরায়ন তাঁহাদিগের দিন ও দক্ষিণায়ন রাত্রি হয়। ৬৭
৫৯. ব্রহ্মার দিবা ও রাত্রি এবং যুগপরিমাণ কথন
ব্রাহ্মস্য তু ক্ষপাহস্য যত্ প্রমাণং সমাসতঃ।
একৈকশো যুগানাং তু ক্রমশস্তন্নিবোধত।।৬৮
হে মহর্ষিগণ! ব্রহ্মার দিবারাত্রির ও সত্যত্রেতাদি এক এক যুগের যে পরিমাণ, তাহা আমি ক্রমে ক্রমে সংক্ষেপে আপনাদিগকে বলিতেছি, অবধান করুন। ৬৮
৬০. সত্যযুগ পরিমাণ
চত্বার্যাহুঃ সহস্রাণি বর্ষাণাং তত্ কৃতং যুগম্।
তস্য তাবত্শতী সংধ্যা সংধ্যাংশশ্চ তথাবিধঃ।।৬৯
দৈবপরিমাণে চারি সহস্র বৎসরে সত্যযুগ হয়, সেই যুগের পূর্ব্ব চারি শত বৎসর সন্ধ্যা ও যুগের উত্তর চারি শত বৎসর সন্ধ্যাংশ হয়। ৬৯
<<মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব তিন ।। মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব পাঁচ>>
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………….
আরও পড়ুন-
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব এক
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব দুই
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব তিন
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব চার
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব পাঁচ
মনুসংহিতায় সৃষ্টিরহস্য-বিজ্ঞানপ্রকরণ : পর্ব ছয়