ভবঘুরেকথা
নবী হজরত মোহাম্মদ নবীজী মুস্তফা

নবী না চিনলে সে কি, খোদার ভেদ পায় : পর্ব এক

বিবি আমেনার কোলে
হযরত নূর নবী দোলে!

প্রথম রাতেই নূর স্থানান্তর

যে দিন আব্দুল্লাহর সাথে বিবি আমেনার বিবাহ সম্পন্ন হয়। সে দিনই, মক্কা নগরীতে অবস্থিত মিনার কাছে শিয়াবে আবি তালিব নামক স্থানে, তাদের সাক্ষাৎ হয়। আর ঐ দিন রাতেই, হযরত ললাট থেকে নবীর নূর আমেনার পবিত্র গর্ভে স্থানান্তরিত হয়।

আর এই রাতে, আমেনাকে স্বপ্নযোগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ নূরানি সন্তান, আপনি আপনার পবিত্র গর্ভে ধারণ করেছেন। এই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যেন নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’।

বিবি আমেনা গর্ভে নবীর নূরের শুভাগমন করার প্রথম রাতেই, কোরাইশদের গৃহপালিত পশুগুলো, নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল যে, আজ সমগ্র দুনিয়ার চেরাগ, মহান আল্লাহর প্রিয় রাসুল তাঁর মাতৃগর্ভে এসেছেন।

স্বপ্নে তাঁকে আরো বলা হলো- এই নূর দুনিয়াতে শুভাগমনের সময় সিরিয়ার রাজপ্রসাদ সমূহ আলোকিত করে ফেলবে। তাঁর নাম রাখা হবে মুহাম্মদ। তাওরাত কিতাবে তাঁর নাম আহমদ। ইঞ্জিল কিতাবেও তাঁর নাম আহমদ। কোরআনে নাম মুহাম্মদ। আকাশ ও জমিনের অধিবাসীরা তাঁর প্রশংসা করবে।

আল্লাহর কুদরতে, সারা জাহানের প্রাণীকূলের মধ্যে এক নৈসর্গিক আনন্দের ঢেউ বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খুশি হতে পারেনি, একমাত্র অভিশপ্ত শয়তান।

নবীর নূর আগমনের প্রথম রাতেই স্বপ্ন

আমেনা আনহু গর্ভধারণের প্রথম রাতের স্বপ্ন, যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। সে বিষয়ে অন্য জায়গায় আরো বিস্তৃতভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত আমেনা নিজেই তা বর্ণনা করে বলেন, তাঁর গর্ভে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু থাকাকালে স্বপ্নের মধ্যে কে যেন এসে বললেন, এই নূর ভূমিষ্ঠ হলে আপনি বলবেন-

এঁকে আমি সকল হিংসুকের অনিষ্ট ও যাবতীয় বিপদ আপদ থেকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করছি। কারণ, মহান আল্লাহর নিকট তিনি সর্বাধিক মর্যাদাবান।

স্বপ্নে তাঁকে আরো বলা হলো- এই নূর দুনিয়াতে শুভাগমনের সময় সিরিয়ার রাজপ্রসাদ সমূহ আলোকিত করে ফেলবে। তাঁর নাম রাখা হবে মুহাম্মদ। তাওরাত কিতাবে তাঁর নাম আহমদ। ইঞ্জিল কিতাবেও তাঁর নাম আহমদ। কোরআনে নাম মুহাম্মদ। আকাশ ও জমিনের অধিবাসীরা তাঁর প্রশংসা করবে।

নবী সম্পর্কে জনৈক পাদ্রীর ভবিষৎবাণী

আবু নুয়াইম, শুয়াইবের দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মাররুয যাহরান নামক স্থানে এক ধর্মযাজক বাস করতেন। তার নাম ছিল ঈস। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী ছিলেন। সে ছিল আস ইবনে ওয়ায়েল এর কাছে আশ্রিত।

মহান আল্লাহ, তাকে প্রচুর জ্ঞান দান করেন। এতে করে তিনি মক্কাবাসীর জন্য বহু উপকার করেছিল। তার একটি উপাসনালয় ছিল। তা’তেই তিনি সর্বদা থাকত। বছরে কেবল একবার মক্কা নগরীতে আসত এবং এসে মক্কাবাসীর সাথে দেখা সাক্ষাত করত। সে তাদেরকে বলতো-

হে মক্কাবাসী! অচিরেই তোমাদের মাঝে এমন একজন নবজাতকের আবির্ভাব হবে। সমগ্র আরব যাঁর ধর্ম অবলম্বন করবে। আজম তথা আরবের বাইরেও, তাঁর রাজত্ব ছড়িয়ে পরবে।

এই সেই সময়, যে ব্যক্তি তাঁকে পাবে এবং তাঁর আনুগত্য করবে, সেই কৃতকার্য হবে। আর যে ব্যক্তি তাঁকে পেয়েও, তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে ব্যর্থকাম হবে।

আল্লাহর শপথ! তাঁর অনুসন্ধান ব্যতীত, অন্য কোন উদ্দেশ্যে, মদ রুটি ও শান্তির দেশত্যাগ করে, এই অভাব-অশান্তি ও নিরাপত্তাহীন দেশে আমি আসিনি।

মক্কা নগরীতে কোন সন্তান জন্ম হলেই, তিনি তার খোঁজ খবর নিত এবং শুনে বলত, না। এখনও তাঁর আগমন ঘটেনি।

তখন তাকে বলা হতো, তাহলে বলুন না! সে নবজাতক কেমন হবে! তখন সে জবাব দিত, না। বলা যাবে না।

প্রতীক্ষিত সেই মহান নবজাতকের পরিচয়, তিনি তাঁর নিরাপত্তার খাতিরে গোপন রাখতেন। কারণ, তিনি জানতেন যে, সেই নবজাতকের স্বজাতি তাঁর অনিষ্ট করার চেষ্টা করবে।

তবে, অন্য বর্ণনাতে এসেছে যে, এই ধর্মযাজক বা পাদ্রী, সে নবজাতক মহামানবের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ইশারা ইঙ্গিতে বর্ণনা করেছিল-

১. সে মহান নবজাতক সোমবার দিনে দুনিয়ার জমিনে শুভাগমন করবেন।
২. সোমবার দিনে নবুওত লাভ করবেন।
৩. আর সোমবার দিনই তিনি ওফাত করবেন।

নবীর দুনিয়াতে শুভাগমনের মুহূর্ত

বিবি আমেনার বর্ণনা করেন, এই নূর হযরত খাজা আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আসার পর হতে আমার পবিত্র গর্ভে থাকা অবস্থায় এবং প্রসব পর্যন্ত, তাঁর জন্য আমি কোন দিন বিন্দু পরিমাণ কষ্ট অনুভব করিনি।

অর্থাৎ পবিত্র গর্ভকালীন এবং প্রসবকালীন সময়ে অতিরিক্ত কোন ওজন অথবা ব্যথাবেদনা কিছুই অনুভব করেননি। প্রসবের সময়ে কোন ধরণের রক্তক্ষরণ হয়নি।

বরং পবিত্র গর্ভ হতে বের হয়েছিল একটি নূরই। যা মক্কা নগরী থেকে সিরিয়া পর্যন্ত আলোকিত করেছিল।

উসমান ইবনে আবুল আস বর্ণনা করে বলেন, আমার মা আমাকে বলেছেন যে, মা আমেনার প্রসবের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আমার মায়ের প্রত্যক্ষভাবে দেখার ভিত্তিতে বলেন, সেই রাতে বিবি আমেনার ঘরে নূর ছাড়া আমি কিছু দেখতে পাইনি।

প্রসবকালীন সময়, যখন এই নূর দুনিয়াতে শুভাগমন করে, তখন দুনিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত আলোকিত করে তোলেন।

মা আমেনা বলেন, আমার পবিত্র গর্ভ থেকে সে নূর শুভাগমনের সময়ে, তাঁর উভয় হাত মাটিতে ভর করে আগমন করেন।

আরেক বর্ণনাতে রয়েছে, মুহাম্মদ তাঁর দুই হাটুতে ভর করে, হামাগুড়িরত অবস্থায় মায়ের গর্ভ থেকে দুনিয়াতে তাশরিফ আনেন।

এই নূর দুনিয়াতে শুভাগমনের ফলে এবং আগমনের সাথে সাথে সেই নূরের আলোতে, সিরিয়ার রাজপ্রসাদ ও হাট বাজার সব আলোকিত হয়ে যায়।

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, মা আমেনা বলেন, আমার প্রসবকৃত নূরের আলোতে বসরার উটের ঘাড়গুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠে। আর তখন নবজাতকের মাথা আসমানের দিকে উখিত ছিল।

উসমান ইবনে আবুল আস বর্ণনা করে বলেন, আমার মা আমাকে বলেছেন যে, মা আমেনার প্রসবের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আমার মায়ের প্রত্যক্ষভাবে দেখার ভিত্তিতে বলেন, সেই রাতে বিবি আমেনার ঘরে নূর ছাড়া আমি কিছু দেখতে পাইনি।

তখন আমি দেখতে পেলাম, আকাশের তারকাগুলো যেন আমার গায়ের উপর পরেছে।

এক বর্ণনায় রয়েছে, দয়াল নবী তাঁর দুই হাতের উপর ভর করে যখন এই দুনিয়ার জগতে শুভাগমন করেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আলোয় এমন এক আলোতে উদ্ভাসিত হয় যে, সে আলোতে রোমের রাজপ্রসাদগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠে।

(চলবে…)

নবী না চিনলে সে কি, খোদার ভেদ পায় : পর্ব দুই>>

…………………………..
আরো পড়ুন-
নবী না চিনলে সে কি, খোদার ভেদ পায় : পর্ব এক
নবী না চিনলে সে কি, খোদার ভেদ পায় : পর্ব দুই
নবী না চিনলে সে কি, খোদার ভেদ পায় : পর্ব তিন
নবী না চিনলে সে কি, খোদার ভেদ পায় : পর্ব চার
সৃষ্টির শুরু এবং নবী নূর (দঃ)
শেরে খোদা মাওলা আলী

…………………………………
পুণঃপ্রচারে বিনীত -নূর মোহাম্মদ মিলু

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!