ভবঘুরেকথা

নফসের সংযম

-আবুতালেব পলাশ আল্লী

নফসকে সহজে পরাস্ত করা যায় না। কেননা নফস সমস্ত খারাপ কাজের উৎপত্তিস্থল। বর্ণিত আছে, কোন এক বেদুঈন কারো মঙ্গলের জন্য দোয়া করে বলেছিল, ‘হে খোদা! নফস ব্যতীত তোমার সমস্ত দুশমনকে অপদস্থ করুন।’

নফসকে প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া চলবে না। তাকে ছাড় দিলেই বিপদ। তবে নেক আমল বা শুদ্ধ সাধনের শক্তি-ক্ষমতা দিয়ে নফসকে নিয়ন্ত্রণ ও সংশোধনের আওতায় রাখা সম্ভব।

তাকে এমনভাবে দুর্বল ও নিস্তেজ করে রাখতে হয়, যাতে সে বিদ্রোহ করার সুযোগ খুঁজে না পায়। মোদ্দকথা, নফসের সংশোধনের জন্য সর্ককতা ও দূরদৃষ্টি আবশ্যক। খেয়াল রাখতে হবে, নফস খুবই শক্তিশালী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। একে বাগে আনা খুবই কঠিন।

নফসকে পরাস্ত করার কৌশল হচ্ছে, তাকে খুব পর্যুদস্ত ও দুর্বল করে ফেলতে হবে। তাহলেই নফস আয়ত্তে থাকবে। সেজন্য বেশি বেশি রোজা করতে হবে। তাই কামেল মনীষীদের জীবনে দেখা যায়, তারা জীবনের বেশি সময় রোজার মধ্যেই কাটিয়ে দেয়।

শয়তান বা নফসের সাথে সামনাসামনি যুদ্ধ করে জয় লাভ করতে হবে। স্রষ্টার দয়া ও সাহায্য ছাড়া কোনভাবেই নফসে আম্মারার সাথে যুদ্ধে জয়ী সম্ভব নয়। তাই স্রষ্টার করুণা ভিক্ষা করতে হবে। তাঁর সাহায্য ছাড়া এ নফস অম্মারা অর্থাৎ কাম-প্রবৃত্তিকে দমন করা কিছুতেই সম্ভব হবে না।

বেশি বেশি ইবাদত ও নেক আমল করে নফসের ওপর বোঝা হিসেবে তা চিপিয়ে দিতে হবে। কারণ দুর্বল গাধা ও শক্তিহীন কোন জন্তুর ওপর যখন ক্ষমতার অধিখ বোঝা চাপিয়ে দেয়া যায়, তখন সে নুয়ে পড়ে। এরজন্য ভাল পরিবেশ অর্থাৎ যাদের আমলে মন্দ কাজের প্রভাব কম তাদের সংস্পর্শে থাকতে হবে।

ব্যাপারটা হল এরকম, অভিজ্ঞ একজন বললেন, ওই পথে যেয়ো না। ওই পথে বিপদ ওৎ পেতে আছে। ওই পথে এমন এক কমনার রূপ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে, যার রূপে মোহিত হয়ে তুমি তোমার আমল নষ্ট করে বসবে। অতএব তুমি বিকল্প পথ ধরে তোমার গন্তব্য স্থানে যাও।

এভাবে নফস যেমন আমাদের ধোঁকা দেয়, তেমনি আমাদেরও নফসকে ধোঁকা দেয়া শিখতে হবে। এটা হলো প্রথমিক স্তরের ধর্মের পথের পথিকের জন্য উত্তম পন্থা।

শয়তান বা নফসের সাথে সামনাসামনি যুদ্ধ করে জয় লাভ করতে হবে। স্রষ্টার দয়া ও সাহায্য ছাড়া কোনভাবেই নফসে আম্মারার সাথে যুদ্ধে জয়ী সম্ভব নয়। তাই স্রষ্টার করুণা ভিক্ষা করতে হবে। তাঁর সাহায্য ছাড়া এ নফস অম্মারা অর্থাৎ কাম-প্রবৃত্তিকে দমন করা কিছুতেই সম্ভব হবে না।

হজরত ইউসুফ (আ) বলেছেন, ‘নফস তো সব সময় মন্দের প্রতিই আকর্ষণ করে। কেবলমাত্র যে নফসের ওপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হয়েছে তা ব্যতীত।’ (সুরা ইউসুফ, ৫৩) এটাই হলো নফস থেকে বাঁচার পন্থা। তার সাথে মনে রাখতে হবে মনে কোনো সময়ই অহংকার রাখা চলবে না।

তিনি পরমেশ্বর, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনিই যেমন ইব্রাহীমকে পৌত্তলিকতা থেকে ঈমানের সাথে সত্য সরল পথে এনেছিলেন, আমাদেরও তেমনি নফসের শত প্রলোভনের মধ্যেও ঈমান আর ভাল আমলসহ বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।

যদি মনে করেন, নফস আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে, এর থেকে কোন বিপদ বা ভয় নেই। তাহলে তা হবে সবচেয়ে বড় ভুল। আকাশের রং যেমন প্রতি ক্ষণে ক্ষণে বদলায় তেমনি মনের রংও প্রতি মুর্হূতেই বদলায়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই হাদিস এবং কোরানের আয়াতগুলোতে-

হজরত আনাস (রা) বলেন, নবীজী বলেছেন, ‘নিশ্চয় শয়তান মানুষের রক্ত প্রবাহের শিরায় শিরায় প্রবাহমান থাকে।’ (বোখারী, মুসলিম-৬৩)

হজরত ইবনে মাউস (রা) বলেন, ‘নবীজী বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের সাথে একজন জ্বীন বা ফেরেশতাকে অবশ্যই সাথী নিযুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, তবে কি আপনার সাথেও?

বললেন, হাঁ, আমার সাথেও। তবে আল্লাহ পাক তার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন।

সে (শয়তান) আমার বাধ্য হয়ে গেছে, ফলে সে আমাকে ভাল কাজ ছাড়া কোন হুকুম দেয় না।’ (মুসলিম-৬২)

কোরানে বলা হয়েছে-

সে যে স্ত্রীলোকের গৃহে ছিল সে তা হতে অসৎ কর্ম কামনা করল এবং দরজগুলো বন্ধ করে দিলো এবং বলল ‘আইস।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহর স্মরণ লইতেছি, তিনি আমার প্রভু, তিনি আমাকে সম্মানজনক ভাবে থাকতে দিয়েছেন, সীমা লংঘনকারীরা সফলকাম হয় না।’ (সুরা য়ুসুফ, ১২:২৩)

‘সেই রমণীতো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পরতো যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত। তাকে মন্দ কর্ম ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখবার জন্য এইভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধ-চিত্ত বান্দাদিগের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা য়ুসুফ, ১২:২৪)

জুলেখার সৌন্দর্য, যৌবন বা যৌন প্ররোচনা থেকে একমাত্র খোদার সাহায্যেই ইউসুফ (আ) বেঁচেছিলেন। তাই সব সময়ই স্রষ্টাকে স্মরণ করতে হবে। বলতে হবে, নফসের হাত থেকে তুমি আমাকে রক্ষা কর। বাকিটা তাঁর ইচ্ছা।

তিনি পরমেশ্বর, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনিই যেমন ইব্রাহীমকে পৌত্তলিকতা থেকে ঈমানের সাথে সত্য সরল পথে এনেছিলেন, আমাদেরও তেমনি নফসের শত প্রলোভনের মধ্যেও ঈমান আর ভাল আমলসহ বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।

তাই নফসের স্বরূপ বুঝে তাকে পরাস্ত করার কৌশল নিজেকেই শিখে নিতে হবে। জানতে হবে, যুগে যুগে আলোকিত মানুষেরা কিরূপে নিজ নিজ নফসকে পরাহত করেছেন। সেই থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের নফস দমনে রত থাকতে হবে। তবেই মিলবে মক্তির দিশা।

স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির আবির্ভাব>>

……………………………
পুনপ্রচারে বিনীত: আবুতালেব পলাশ আল্লী
মা শাহে সেতারার রওজা বা দরবার শরিফ
খুলনা, বাংলাদেশ।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………
আরও পড়ুন-
দোজখ
নফসের সংযম
স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির আবির্ভাব
মোরাকাবা-মোশাহেদা
নফসের পঞ্চস্তর
তরিকায় নামাজ রোজা
তরিকায় জাকাত
দেহতত্ত্বে লতিফা ও চক্র ভেদ
সাধনার ধারা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!