ভবঘুরেকথা

সাধনার ধারা

-আবুতালেব পলাশ আল্লী

আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর পূর্বে ভারতীয় সাধু ও সন্ন্যাসীরা আধ্যাত্মিক সাধন বলে মানবদেহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্বের সন্ধান লাভ করেন। অতঃপর তার নামকরণ করেন ‘ব্রহ্মা’।

গ্রিকরা প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মানবদেহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্বের সন্ধান লাভ করেন এবং তার নাম দেন ‘ঈশ্বর’।

পারসিকরা প্রায় দুই হাজার পাঁচশত বছর পূর্বে মানবদেহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্বের সন্ধান লাভ করেন এবং তার নাম দেন ‘তানরি’।

আরবরা দেড় হাজার বছর পূর্বে মানবদেহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্বের সন্ধান লাভ করে তার নাম দেন ‘আল্লাহ’।

অতঃপর মূল আধ্যাত্মিক শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি হয়ে অনুসারীরা সাম্প্রদায়িক নীতিমালা প্রণয়ন করতে আরম্ভ করেন। আধ্যাত্মিক নীতিমালা প্রণয়নের অভাবে এবং সাম্প্রদায়িক নীতিমালা প্রণয়নের প্রভাবে অনুসারীরা ক্রমে ক্রমে সাম্প্রদায়িক নীতিমালার প্রতি উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত থেকে থাকে।

প্রায় চার হাজার বছরের ব্যবধানে ভারতীয় সাধু-সন্ন্যাসীদের অনুসন্ধান ‘ব্রহ্মা’ আর আরবীয় অলি-আব্দালদের অনুসন্ধান ‘আল্লাহ’। উভয় বলয়ের সাধু-সন্ন্যাসী ও অলি-আব্দালদের এ অবিস্মরণীয় অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে; স্বস্ব সম্প্রদায়ের শিষ্যদেরকে অধর সত্ত্বা উদ্ঘাটনের পদ্ধতির প্রশিক্ষণ প্রদান আরম্ভ হয়।

এর ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্নস্থানে মহাগ্রন্থ লিখিত হয়। উল্লেখ্য যে, বিশ্বের সব আধ্যাত্মিক মহাকাব্যের বাচনভঙ্গি, উপমা, নির্মাণশৈলী একই; ব্যবধান কেবল ভাষায়। এছাড়াও সাধুরা ‘ব্রহ্মা’ নামক এ অধরা-সত্ত্বাকে আহরণের লক্ষ্যে সারাবিশ্বের প্রায় সব ভাষাতেই ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় আকারের পুস্তক-পুস্তিকা রচিত করে গেছেন।

একবিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত সারাবিশ্বে অসংখ্য ভাষায় নির্মিত প্রায় ৪,৩০০টিরও অধিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়ের সন্ধান পাওয়া যায়। সর্বক্ষেত্রেই দেখা যায় যাজক বা প্রবর্তকের প্রয়াণের পর তাঁর সহচার্যপ্রাপ্ত একান্ত শিষ্যদের মধ্যে যাজকের প্রবর্তনকৃত মতবাদের সঠিক শিক্ষা মাত্র দুই শতাব্দী পর্যন্তই টিকে থাকে।

অতঃপর মূল আধ্যাত্মিক শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি হয়ে অনুসারীরা সাম্প্রদায়িক নীতিমালা প্রণয়ন করতে আরম্ভ করেন। আধ্যাত্মিক নীতিমালা প্রণয়নের অভাবে এবং সাম্প্রদায়িক নীতিমালা প্রণয়নের প্রভাবে অনুসারীরা ক্রমে ক্রমে সাম্প্রদায়িক নীতিমালার প্রতি উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত থেকে থাকে।

কারণ আধ্যাত্মিক বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র একটি তা হলো ‘মানবদেহ’। ফলে বিশ্বের সব সাধু এক ও অভিন্ন। অন্যদিকে প্রপক নির্ভর সম্প্রদায়গুলো ভিন্ন ভিন্ন। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন সাম্প্রদায়িক মনীষী একত্রে বসে আহার ও বিহার করতে পারে না।

একসময় তা দল বা সম্প্রদায় রূপে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক নীতিমালা মান্যকারী জনগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক সম্প্রদায় রূপে আত্মপ্রকাশ করে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৪,৩০০টি সম্প্রদায়ের সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমান বাংলাদেশেই প্রায় ৫০টির অধিক সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করা যায়।

মূল শ্বরবিজ্ঞান থেকে বিচ্যুতি হওয়ার কারণে কোনো সময়ই বিশেষ কোনো একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সব মনীষী স্ব-সাম্প্রদায়িক মতবাদের অনেক বিষয়ের ওপর একমত থেকে পারে না। ফলে যুগে যুগে প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে গড়ে ওঠে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা ও দল উপদল।

বরাবরই এসব মূল হারানো দল-উপদলের মতানৈক্যের দ্বারা আত্মঘাতী সংঘর্ষে সাগর সাগর রক্তহানি ও লাখ লাখ প্রাণহানি হয়ে আসছে। এ থেকে বলা যায়, মূল শ্বরবিজ্ঞান হারিয়ে যার ঠুনকো মতবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত আগাছা ও পরগাছা দল উপদলের সংখ্যার আড়ালে। কিন্তু শ্বরবিজ্ঞান পূর্বেও যা ছিল; এখনও ঠিক তাই রয়েছে।

এখনও একজন বাঙালী সাধু, ভারতীয় সন্ন্যাসী, আরবীয় অলি, নেপালীয় ভিক্ষু ও বার্মিজ শ্রমণদের মধ্যে পরিচ্ছদ, চুল, দাড়ি, পথ, মত, আশা, আকাঙ্ক্ষা, ওঠাবসার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তাই সাধু, সন্ন্যাসী, অলি, ভিক্ষু ও শ্রমণ সবাই একত্রে বসে সভা করতে, সেবা করতে ও ঘুমাতে কোনো সমস্যা হয় না।

কারণ আধ্যাত্মিক বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র একটি তা হলো ‘মানবদেহ’। ফলে বিশ্বের সব সাধু এক ও অভিন্ন। অন্যদিকে প্রপক নির্ভর সম্প্রদায়গুলো ভিন্ন ভিন্ন। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন সাম্প্রদায়িক মনীষী একত্রে বসে আহার ও বিহার করতে পারে না।

স্থূল দৃষ্টিতে যদিও সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। তখনই সাম্প্রদায়িক সর্বপ্রকার সংঘর্ষ ও সংঘাত এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। তখনই দূর করা সম্ভব হবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ ও আতঙ্কবাদ থেকে মুক্তি লাভ করতে না পারলে। কখনই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।

এক সাম্প্রদায়িক মনীষী অন্য সাম্প্রদায়িক মনীষীকে বলে যবন। সাম্প্রদায়িক মনীষীরা সবাই স্বস্ব সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করে। এছাড়াও তারা অন্যান্য সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদকে ঘৃণা করে। এ হতেই সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি হয়।

যদি সারাবিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক মতবাদের মানুষের এক বাতাস, এক আগুন ও একই জল থেকে পারে। এমনকি একই মোবাইল হতে পারে। তবে কেন এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে প্রপক থেকে রূপক এবং রূপক থেকে মানবদেহের একই মূলকে প্রবেশ করতে পারা যাবে না? অবশ্যই পারা যাবে।

যখনই পুরাণের রূপক বর্ণনার মৌলিক উপাদান মূলক পরিভাষা ও ‘পৌরাণিক মূলক সংখ্যা’য় প্রবেশ করা হবে। তখনই সারাবিশ্বের সব পুরাণকে এক ও অভিন্ন দেখতে পাওয়া যাবে। তখনই স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে সারাবিশ্বের সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক নীতিমালা এবং সাম্প্রদায়িক ও সাম্প্রদায়িক সংস্কার এক ও অভিন্ন বলে মনে হবে।

স্থূল দৃষ্টিতে যদিও সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। তখনই সাম্প্রদায়িক সর্বপ্রকার সংঘর্ষ ও সংঘাত এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। তখনই দূর করা সম্ভব হবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ ও আতঙ্কবাদ থেকে মুক্তি লাভ করতে না পারলে। কখনই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।

<<দোজখ

……………………………
পুনপ্রচারে বিনীত: আবুতালেব পলাশ আল্লী
মা শাহে সেতারার রওজা বা দরবার শরিফ
খুলনা, বাংলাদেশ।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………
আরও পড়ুন-
দোজখ
নফসের সংযম
স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির আবির্ভাব
মোরাকাবা-মোশাহেদা
নফসের পঞ্চস্তর
তরিকায় নামাজ রোজা
তরিকায় জাকাত
দেহতত্ত্বে লতিফা ও চক্র ভেদ
সাধনার ধারা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!