ভবঘুরেকথা
সোহরাওয়ার্দি

সোহরাওয়ার্দির সাহিত্য

-মূর্শেদূল মেরাজ

সোহরাওয়ার্দি ফারসি ও আরবি ভাষায় ৫০টিরও বেশি বই লিখেছিলেন। তার ফারসিতে লেখা উল্লেখযোগ্য বই- হায়াকাল আননুর আসসুহরাওয়ার্দি (আলোর মিনার), পার্তুনামেহ (আলোকময়তা), রিসালেহ ফি হাকিকাতিল ইশক (প্রেমের বাস্তবতা), আক্বলে সোরখ্ (লাল-বুদ্ধিবৃত্তি), জামায়াতে সুফিয়ান (সুফিদের সঙ্গে একদিন),

তালুইহাত (ইশারা), আওয়াজে পারে জিব্রায়িল (জিব্রাইলের পাখার শব্দ), রিসালাত আততাইর (পাখির বই), সাফিরই সিমুরগ্ (সী-মোরগের ডাক) এবং বুস্তান আল কুলুব (হৃদয়ের বাগান) প্রভৃতি।

আরবি বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আতাতালউইহাত, মুকাওউমাত, মাশারি ওয়াল মুতাহ্হারাত এবং দর্শন বিষয়ক বই হিকমাত আল ইশরাক।

ফরাসি গবেষক লুই ম্যাসিনিওন সোহরাওয়ার্দির প্রাথমিক পর্যায়ের রচনা, অ্যারিস্টটলীয় ধারা সম্পর্কিত রচনা এবং ম্যাসিনিওন ইবনে সিনার দর্শন ও প্লেটোনিক দর্শনের প্রভাবিত লেখা এই তিন ভাগে সাজিয়েছেন।

হিকমাতুল ইশরাক (ইশরাকি দর্শন) বইটি তার অন্যতম প্রধান কীর্তি। বলা হয়, তার রচিত প্রকৃতি বিজ্ঞান, গণিত ও যুক্তিবিদ্যা লেখাগুলো আজও অপ্রকাশিত। অনেক পাণ্ডলিপিই খুঁজেও পাওয়া যায়নি।

সোহরাওয়ার্দি তার লেখায় প্রতীকি গল্প ও উপমা দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেছেন। এসবের মধ্য দিয়ে তিনি নাফসকে আলোকিত করে সৌভাগ্যের পর্যায়ে উপনীত করার কথা ব্যক্ত করেছেন।

ফরাসি গবেষক লুই ম্যাসিনিওন সোহরাওয়ার্দির প্রাথমিক পর্যায়ের রচনা, অ্যারিস্টটলীয় ধারা সম্পর্কিত রচনা এবং ম্যাসিনিওন ইবনে সিনার দর্শন ও প্লেটোনিক দর্শনের প্রভাবিত লেখা এই তিন ভাগে সাজিয়েছেন।

তবে গবেষকদের মতে, তাদের মতবাদ জানবার জন্যই ঈসমাইলি সিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন সোহরাওয়ার্দি। তিনি মূলত তার বক্তব্যকে স্পষ্ট করতে, প্রাচীন ইরানের প্রতীক, উপমা ও পৌরাণিক কাহিনীর সাহায্য নিয়েছেন। করেছেন ফারসি ছাড়াও বহু আরবি শব্দের ব্যবহার।

অন্যদিকে হেনরি কোরবিন সোহরাওয়ার্দির রচনাকে চার ভাগে আর সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছেন। অনেকে আবার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিকে করেছেন ছয় ভাগে বিভক্ত। তবে মোটা দাগে তার দর্শনভিত্তিক রচনা দুই ভাবে বিভক্ত। এর প্রথমটি তার ইশরাকি দর্শন সম্পর্কিত রচনা। আর দ্বিতীয়ভাগে অ্যারিস্টটলীয় বা মাশায়ি দর্শনের ব্যাখ্যামূলক রচনাসমূহ।

দ্বিতীয় ভাগে তার তার তত্ত্বীয় ও শিক্ষণ-বিষয়ক আত্তালুইহাত (ইশারা), আলমুশারে ওয়াআল মুতারেহাত (পথ ও পরিকল্পনা), আলমুকাওয়েমাত (প্রতিরোধ) এবং আল্ লামাহামাত (সাধারণ বিষয়াদি) বইগুলো উল্লেখযোগ্য। এ বইগুলোর প্রথমে অ্যারিস্টটলীয় বা মাশায়ি দর্শনের ব্যাখ্যা থাকলেও তাতে সোহরাওয়ার্দির স্বকীয়তা লক্ষ্যণীয়।

সোহরাওয়ার্দি তার দর্শনে আত্মিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে সাধনার কিছু গূঢ় রহস্যের পর্দা উন্মুক্তকরণ, ঈসমাইলি শিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ ও জরাথ্রুস্ত ধর্মকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার কারণে অনেকে তার মধ্যে ইসলাম-বিরোধী প্রবণতা ছিল বলে অভিযোগ করেন।

তবে গবেষকদের মতে, তাদের মতবাদ জানবার জন্যই ঈসমাইলি সিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন সোহরাওয়ার্দি। তিনি মূলত তার বক্তব্যকে স্পষ্ট করতে, প্রাচীন ইরানের প্রতীক, উপমা ও পৌরাণিক কাহিনীর সাহায্য নিয়েছেন। করেছেন ফারসি ছাড়াও বহু আরবি শব্দের ব্যবহার।

(চলবে…)

<<সোহরাওয়ার্দি: ইশরাকি দর্শন ।। সোহরাওয়ার্দি: জিব্রাইলের পালকের শব্দ>>

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………..
আরো পড়ুন:
সোহরাওয়ার্দি: জীবন ও কর্ম
সোহরাওয়ার্দি: ইশরাকি দর্শন
সোহরাওয়ার্দি: সাহিত্য
সোহরাওয়ার্দি: জিব্রাইলের পালকের শব্দ
সোহরাওয়ার্দি: উইপোকার আলাপচারিতা
সোহরাওয়ার্দি: প্রেমের বাস্তবতা
সোহরাওয়ার্দি: লাল বুদ্ধিবৃত্তি
সোহরাওয়ার্দি: সী-মোরগের দূত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!