-মূর্শেদূল মেরাজ
সোহরাওয়ার্দির সী-মোরগের দূত
ইবনে সিনা, আত্তার, গাজ্জালিও মতো সোহরাওয়ার্দি রূপক অর্থে সী-মোরগ প্রতীকটি ব্যবহার করলেও তা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র। সোহরাওয়ার্দির মতে, হুদহুদ পাখি বিশেষ শিক্ষার আলোকে সী-মোরগে পরিণত হতে পারে।
এরজন্য হুদহুদ পাখিকে নিজের লম্বা ঠোঁট দিয়ে নিজেরই পালক ও পাখা উপড়ে ফেলে বসন্তকালে নীড় ছেড়ে কুহেকাফ পাহাড়ে যেতে হবে। নিজের ওপর এক হাজার বছর ধরে কুহেকাফ পাহাড়ের ছায়া পড়তে দিতে হবে। এভাবেই হুদহুদ পরিণত হবে সী-মোরগে। তবে স্রষ্টাপ্রেমীদের কাছে এই এক হাজার বছর কেবল একটি সকালের সমান।
এই পূর্ণতার পথের যাত্রা মোটেও সহজ নয় তবে তা অসম্ভবও নয়। সে নীড় ছেড়ে নিজের পাখা ও পালক উপড়ে ফেলে রওনা করে সফরে। অর্থাৎ পাপমুক্ত হয়ে সকল বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে স্রষ্টার সন্ধানে তারই প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে অভিসারে যাত্রা করা। হুদহুদ আসলে সেই স্রষ্টা প্রেমিকেরই প্রতীকি রূপ।
আলোকিত মনের অধিকারীরা হৃদয়ের অন্ধকারময় শীতকালরূপী নাফসের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে; স্রষ্টাপ্রেমের আলোকিত জগতে অর্থাৎ পরিবর্তনের ও প্রস্ফুটনের ঋতু বসন্তঋতুতে পৌঁছে।
সফর শেষে হুদহুদ সী-মোরগে রূপন্তরিত হয়ে। অর্থাৎ সে পূর্ণতা পায়। মানুষ তেমনি সাধনার পথ পাড়ি দিতে পারলে পূর্ণ মানব হয়ে উঠতে পারে। তার জন্য তাকে জ্ঞান-তাত্ত্বিক চিন্তাধারার মাধ্যমে সাধনায় এগিয়ে যেতে হয় স্রষ্টাপ্রেমের গভীরতার মধ্য দিয়ে।
(সমাপ্ত)
………………………..
আরো পড়ুন:
সোহরাওয়ার্দি: জীবন ও কর্ম
সোহরাওয়ার্দি: ইশরাকি দর্শন
সোহরাওয়ার্দি: সাহিত্য
সোহরাওয়ার্দি: জিব্রাইলের পালকের শব্দ
সোহরাওয়ার্দি: উইপোকার আলাপচারিতা
সোহরাওয়ার্দি: প্রেমের বাস্তবতা
সোহরাওয়ার্দি: লাল বুদ্ধিবৃত্তি
সোহরাওয়ার্দি: সী-মোরগের দূত