ভবঘুরেকথা
স্বামী বিবেকানন্দ

স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি সঞ্চয়ন : তৃতীয় কিস্তি

১.
স্বামীজীকে প্রশ্ন করা হইল, ‘বুদ্ধের মত কি এই যে, বহুত্ব সত্য এবং একত্ব (আত্মা) মিথ্যা? আর হিন্দু (বেদ) মতে তো একত্বই সত্য, বহুত্ব মিথ্যা।’ স্বামীজী বলিলেনঃ হ্যাঁ, এবং এর সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস এবং আমি যাহা যোগ করেছি, তা এই যে, একই নিত্য বস্তু একই মনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অনুভূত হয়ে এক ও বহুরূপে প্রতিভাত হয়।

২.
একবার এক শিষ্যকে বলিলেন- মনে রাখিও জীবাত্মারই বিকাশের জন্য প্রকৃতি, প্রকৃতির জন্য জীবাত্মা নয়—ইহাই ভারতের শাশ্বত বাণী।

৩.
পৃথিবী আজ চায় এমন কুড়িজন নরনারী, যাহারা সামনের ঐ পথে সাহসভরে দাঁড়াইয়া বলিতে পারে যে, ভগবান্ ব্যতীত তাহাদের অন্য কোন সম্বল নাই। কে আসিবে? কেন, ইহাতে ভয় কি? যদি এটি সত্য হয়, তবে আর কিসের প্রয়োজন? আর যদি এটি সত্য না হয়, তবে আমাদের বাঁচিয়া কি লাভ?

৪.
আহা, পরমাত্মার স্বরূপ যিনি জানিয়াছেন, তাঁহার কাজ কতই না শান্ত! বাস্তবিকপক্ষে লোকের দৃষ্টি খুলিয়া দেওয়া ছাড়া তাঁহাদের অন্য কিছু করণীয় থাকে না। আর যাহা কিছু, তাহা আপনিই হইতে থাকে।

৫.
তিনি (শ্রীরামকৃষ্ণ) এক মহৎ জীবনযাপন করিয়াই তৃপ্ত ছিলেন এবং সেই জীবনের তাৎপর্য-নির্ণয়ের ভার দিয়া গিয়াছেন অপর সকলের উপর।

৬.
একজন শিষ্য কোন একটি বিষয়ে স্বামীজীকে সংসারের অভিজ্ঞতাসম্ভূত পরামর্শ দিলে স্বামীজী বিরক্তির সহিত বলিলেনঃ পরিকল্পনা আর পরিকল্পনা! এই জন্যই পাশ্চাত্যবাসীরা কখনও কোন ধর্মমত গঠন করিতে পারে না। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ কখনও পারিয়া থাকে, তবে তাহা কয়েকজন ক্যাথলিক সন্ন্যাসী মাত্র, যাহাদের পরিকল্পনা বলিতে কিছু ছিল না। পরিকল্পনাকারীদের দ্বারা কখনও ধর্মপ্রচার হয় নাই।

৭.
পাশ্চাত্যের সমাজ-জীবন দেখিতে একটি হাসির হুল্লোড়ের মত, কিন্তু একটু নীচেই উহা কান্নায় ভরা। ইহার শেষ হয় হতাশ ক্রন্দনে। কৌতুক উচ্ছলতা সবই সমাজের উপর উপর, বাস্তবিকপক্ষে ইহা বিষাদে পূর্ণ। এদেশে (ভারতে) আবার বাহিরে হয়তো নিরাপদ ও বিষাদ, কিন্তু ভিতরে গাম্ভীর্য, নিশ্চিন্ততা ও আনন্দ।

আমাদের একটি মতবাদ আছে—ঈশ্বর স্বয়ং লীলাচ্ছলে নিজেকে জীবজগতে রূপান্তরিত করিয়াছেন এবং এই সংসারে অবতারেরা লীলাচ্ছলে দেহধারণ করিয়া জীবন যাপন করেন। সবটাই লীলা, সবই খেলা। যীশু ক্রুশবিদ্ধ হইয়াছিলেন কেন? সেটাও সম্পূর্ণ খেলা। মানব জীবনের সম্বন্ধেও ঐ একই কথা। উহাও ঈশ্বরের সঙ্গে ক্রীড়ামাত্র। বল, ‘সবই লীলা, সবই খেলা।’ খেলা ছাড়া তুমিও আর কিছু কর কি?

৮.
আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়াছি যে, এক জীবনেই কেহ নেতা হইয়া উঠিতে পারে না। তাহাকে শক্তি লইয়াই জন্মাইতে হয়। কারণ সংগঠন বা পরিকল্পনা তেমন কষ্টসাধ্য নয়। নেতার পরীক্ষা—প্রকৃত পরীক্ষা হয় বিভিন্ন ব্যক্তিকে তাহাদের সাধারণ সহানুভূতির সূত্র ধরিয়া, সঙ্ঘবদ্ধ করিয়া রাখার ক্ষমতায়। চেষ্টা করিয়া নয়, অজ্ঞাতসারেই ইহা হইয়া থাকে।

৯.
প্লেটোর ভাববাদ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করিতে গিয়া স্বামীজী বলিলেন, ‘তাহা হইলে তোমরা দেখিতেই পাইতেছ যে, বড় বড় ভাবগুলির ক্ষীণতম বিকাশ এই-সব যাহা কিছু। ঐ ভাবগুলিই সত্য এবং সম্পূর্ণ। একটি আদর্শ ‘তুমি’ কোথাও আছে এবং সেইটি জীবনে রূপায়িত করার জন্যই এখানে তোমার যত চেষ্টা। চেষ্টা হয়তো অনেক দিক্‌ দিয়াই ত্রুটিপূর্ণ হইবে, তবু চেষ্টা করিয়া যাও। একদিন না একদিন সে আদর্শ রূপায়িত হইবে।’

১০.
জনৈক শিষ্যা নিজের ভাব ব্যক্ত করিয়া মন্তব্য করিলেন, ব্যক্তিগত মুক্তি—জীবন হইতে নিষ্কৃতি পাইবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অপেক্ষা যে-সকল উদ্দেশ্য সাধন করা আমি শ্রেষ্ঠ বলিয়া মনে করি, সেইগুলি সম্পাদন করার জন্য বারবার সংসারে ফিরিয়া আসা আমি ভাল বলিয়া মনে করি।

ইহাতে স্বামীজী তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিলেন, ‘ইহার কারণ তুমি উন্নতি করিবার ধারণার ঊর্ধ্বে উঠিতে পার না; কিন্তু কোন জিনিষই উন্নততর হয় না। ঐগুলি যেমন তেমনই থাকে। ঐগুলির রূপান্তর ঘটাইয়া শুধু আমরাই উন্নততর হই।’

১১.
আলমোড়াতে একজন বয়স্ক লোক স্বামীজীর নিকট আসিলেন। তাঁহার মুখে এমন একটা পরনির্ভরতার ভাব ছিল, যাহা দেখিলেই সহানুভূতি জাগে। তিনি কর্মবাদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন, ‘যাহারা নিজ কর্মদোষে দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার দেখিতে বাধ্য হয়, তাহাদের কর্তব্য কি?’

স্বামীজী ক্ষুব্ধ বিস্ময়ে তাঁহার দিকে ফিরিয়া বলিলেন, ‘কেন, সকলকে ঠেঙাইবে, আবার কি? এই কর্মবাদের মধ্যে তোমার নিজের অংশটা তুমি ভুলিয়া যাইতেছ। মাথা তুলিয়া দাঁড়াইবার—বিদ্রোহ করিবার অধিকার তোমার সব সময়ই আছে।’

১২.
একজন স্বামীজীকে প্রশ্ন করিলেন, ‘সত্যের জন্য কি মানুষের মৃত্যুকেও বরণ করা উচিত, অথবা গীতার শিক্ষা অনুসারে সর্বদা উদাসীন থাকিতে চেষ্টা করা উচিত?’ স্বামীজী ধীরে ধীরে অনেকক্ষণ থামিয়া থামিয়া বলিলেন, ‘আমি উদাসীন থাকার পক্ষপাতী।’ তারপর আবার বলিলেন, ‘এটি সন্ন্যাসীর জন্য; গৃহীদের পথ আত্মরক্ষা।’

১৩.
সবাই সুখ চায়—এ-কথা ভুল। প্রায় সমসংখ্যক লোক জন্মায় দুঃখকে বরণ করবার জন্য। এস, আমরা ভয়ঙ্করকে ভয়ঙ্কর হিসাবেই পূজা করি।

১৪.
আজ পর্যন্ত রামকৃষ্ণ পরমহংসই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সাহস করিয়া বলিতে পারিয়াছেনঃ ঠিক যে-ভাষায় অপরে কথা বলে ও যে-ভাষা বোঝে, তাহার সহিত সেই ভাষাতেই কথা বলা উচিত।

১৫.
নিজ জীবনে কালীকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করার পূর্বে তাঁহার সন্দেহ-বিজড়িত দিনগুলিকে লক্ষ্য করিয়া স্বামীজী বলিলেন, ‘কালী ও কালীর সর্বপ্রকার কার্যকলাপে আমি কতই না অবজ্ঞা করিয়াছি! আমার ছ বছরের মানসিক দ্বন্দ্বের কারণ ছিল এই যে, আমি তাঁহাকে মানিতাম না।

কিন্তু অবশেষে তাঁহাকে আমায় মানিতে হইয়াছে। রামকৃষ্ণ পরমহংস আমাকে তাঁহার কাছে সমর্পণ করিয়া গিয়াছেন এবং এখন আমার বিশ্বাস যে, সব কিছুতেই মা-কালী আমায় পরিচালিত করিতেছেন এবং তাঁহার যা ইচ্ছা, তাই আমার দ্বারা করাইয়া লইতেছেন।

তবু আমি কতদিনই না তাঁহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়াছি। আসল কথা এই, আমি যে শ্রীরামকৃষ্ণকে ভালবাসিতাম; তাহাই আমাকে ধরিয়া রাখিত। আমি তাঁহার অপূর্ব পবিত্রতা দেখিয়াছি। আমি তাঁহার আশ্চর্য ভালবাসা অনুভব করিয়াছি। তখনও পর্যন্ত তাঁহার মহত্ত্ব আমার নিকট প্রতিভাত হয় নাই।

পরে যখন আমি তাঁহার কাছে নিজেকে সমর্পণ করিয়া দিলাম, তখন ঐ ভাব আসিয়াছিল। তাহার পূর্বে আমি তাঁহাকে বিকৃতমস্তিষ্ক একটি শিশু বলিয়া ভাবিতাম, মনে করিতাম—এই জন্যই তিনি সর্বদা অলৌকিক দৃশ্য প্রভৃতি দেখেন। এগুলি আমি ঘৃণা করিতাম।

তারপর আমাকেও মা-কালী মানিতে হইল। না, যে কারণে আমাকে মানিতে হইল, তাহা একটি গোপন রহস্য, এবং উহা আমার মৃত্যুর সঙ্গেই লুপ্ত হইবে। সে-সময় আমার খুবই ভাগ্য বিপর্যয় চলিতেছিল। … ইহা আমার জীবনে এক সুযোগ হিসাবে আসিয়াছিল। মা (কালী) আমাকে তাঁহার ক্রীতদাস করিয়া লইলেন।

এই কথাই বলিয়াছিলাম, ‘আমি তোমার দাস।’ রামকৃষ্ণ পরমহংসই আমাকে তাঁহার চরণে অর্পণ করিয়াছিলেন। অদ্ভুত ব্যাপার! এই ঘটনার পর তিনি মাত্র দুই বছর জীবিত ছিলেন এবং ঐ কালের অধিকাংশ সময়ই অসুস্থ ছিলেন। ছয় মাসের মধ্যেই তাঁর স্বাস্থ্য এবং লাবণ্য নষ্ট হইয়া যায়।

তোমরা জান, গুরু নানকও এই রকম এমন একজন শিষ্যের খোঁজ করিয়াছিলেন, যাঁহাকে তিনি তাঁহার শক্তির উত্তরাধিকারী করিয়া যাইতে পারেন। তিনি তাঁহার পরিবারবর্গের কাহাকেও উপযুক্ত মনে করিলেন না। তাঁহার সন্তানসন্ততিরা তাঁহার কাছে অত্যন্ত অযোগ্য বলিয়া মনে হইল। তারপর তিনি এক বালকের সন্ধান পাইলেন, তাহাকে ঐ শক্তি দিলেন, এবং দেহত্যাগের জন্য প্রস্তুত হইলেন।

তোমরা বলিতেছ, ভবিষ্যতে রামকৃষ্ণ পরমহংসকে কালীর অবতার বলা হইবে কি? হাঁ, আমিও মনে করি, কালী তাঁহার কার্য সম্পাদনের জন্য শ্রীরামকৃষ্ণের দেহযন্ত্র পরিচালিত করিয়াছিলেন। দেখ, আমার পক্ষে ইহা বিশ্বাস না করিয়া উপায় নাই যে, কোথাও এমন এক বিরাট শক্তি নিশ্চয় আছেন, যিনি নিজেকে কখনও কখনও নারীরূপে কল্পনা করেন এবং তাঁহাকে লোকে ‘কালী’ এবং ‘মা’ বলিয়া ডাকে।

আমি ব্রহ্মেও বিশ্বাস করি। আর আসল ব্যাপারটা কি সব সময় ঠিক ঐরূপই নয়? … যেমন সংখ্যাতীত জীবকোষের সমষ্টিতেই ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়, যেমন একটি নয়—বহু মস্তিষ্ক-কোষের সমবায়ে চৈতন্যের উৎপত্তি হয়, ঠিক তেমনি নয় কি? একত্ব মানেই বৈচিত্র্য। ইহাও ঠিক সেইরকম। ব্রহ্ম সম্বন্ধেই বা ভিন্ন ব্যবস্থা কেন? ব্রহ্মই আছেন, তিনিই একমাত্র সত্তা, কিন্তু তবু তিনিই আবার বহু দেবতাও হইয়াছেন।

১৬.
যতই বয়স বাড়িতেছে, ততই মনে হয়, বীরত্বের উপরই সব কিছু নির্ভর করে। ইহাই আমার নূতন বাণী।

১৭.
‘কোন কোন সমাজে নরমাংস-ভোজন স্বাভাবিক জীবন-যাত্রার অঙ্গীভূত’—ইওরোপে এই মতের উল্লেখ শুনিয়া স্বামীজী মন্তব্য করিলেনঃ এটা কি সত্য নয় যে, যুদ্ধে হিংসার বশবর্তী হইয়া বা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ছাড়া কোন জাতিই কখনও নরমাংস ভোজন করে না? তোমরা কি ইহা বুঝিতে পার না? সমাজবদ্ধ প্রাণীদের ইহা রীতি নয়, কারণ ইহাতে সমাজ-জীবনের মূলোচ্ছেদ হইবে।

১৮.
মৃত্যু বা কালীকে উপাসনা করিতে সাহস পায় কয়জন? এস, আমরা মৃত্যুর উপাসনা করি। আমরা যেন ভীষণকে ভীষণ জানিয়াই আলিঙ্গন করি—তাহাকে যেন কোমলতর হইতে অনুরোধ না করি, আমরা যেন দুঃখের জন্যই দুঃখকে বরণ করি।

১৯.
পাঁচ-শ বছর নীতির অনুশাসন, পাঁচ-শ বছর মূর্তিপূজা এবং পাঁচ-শ বছর তন্ত্রের প্রাধান্য—বৌদ্ধধর্মের এই তিনটি যুগ। তোমরা যেন কখনও না ভাব যে, ভারতে বৌদ্ধধর্ম নামে এমন কোন ধর্মমত ছিল, যাহার স্বতন্ত্র ধরনের মন্দির, পুরোহিত প্রভৃতি ছিল; এ-রকম কোন কিছুই ছিল না।

বৌদ্ধধর্ম সব সময়ই হিন্দুধর্মের অঙ্গীভূত ছিল। কেবল কোন এক সময়ে বুদ্ধের প্রভাব বিশেষ প্রবল হইয়াছিল, এবং তাহার ফলে সমস্ত জাতিতে সন্ন্যাসের প্রাধান্য ঘটিয়াছিল।

২০.
যাঁহারা প্রাচীনপন্থী, তাঁহাদের দৃষ্টিতে আদর্শ বলিতে শুধু আত্মসমর্পণই বুঝায়। কিন্তু তোমাদের আদর্শ হইল সংগ্রাম। ফলে জীবনকে উপভোগ করি আমরাই, তোমরা কখনই পার না। তোমরা সব সময় আরও ভাল কিছুর জন্য তোমাদের জীবনকে পরিবর্তিত করিতে সচেষ্ট, কিন্তু ঈপ্সিত পরিবর্তনের লক্ষ ভাগের এক ভাগ সাধিত হওয়ার আগেই তোমরা মরিয়া যাও।

পাশ্চাত্যের আদর্শ হইল—কোন কিছু করা এবং প্রাচ্যের আদর্শ হইল—সহ্য করা। ‘করা’ এবং ‘সহ্য করা’—এই দুইয়ের অপূর্ব সমন্বয়েই পূর্ণ জীবন গড়িয়া উঠিবে, কিন্তু তাহা কখনও সম্ভব নয়।

আমাদের সমাজে এটা স্বীকৃত সিদ্ধান্ত যে, মানুষের সব আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ হওয়া সম্ভব নয়। সেজন্যই আমাদের জীবন অনেক বিধি-নিষেধের অধীন। এগুলি সৌন্দর্যহীন মনে হইলেও ইহা শক্তি ও আলোকপ্রদ।

আমাদের সমাজের উদারপন্থীরা সমাজের শুধু কুৎসিত দিকটা দেখিয়া ইহাকে দূরে বর্জন করিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু তাহার পরিবর্তে যাহা প্রবর্তন করিলেন, তাহা তেমনি খারাপ। তারপর নূতন প্রথাগুলির শক্তি লাভ করিতে পুরাতন প্রথাগুলির মতই দীর্ঘ সময় লাগিবে।

পরিবর্তন করিলেই ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হয় না, বরং উহা দুর্বল ও পরিবর্তনের অধীন হইয়া পড়ে। তবে আমাদের সব সময়েই গ্রহণ করিবার জন্য প্রস্তুত থাকিতে হইবে।

নিজস্ব করিয়া লওয়ার মধ্য দিয়াই ইচ্ছাশক্তি দৃঢ়তর হয়। আর পৃথিবীতে ইচ্ছাশক্তিই একমাত্র বস্তু, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আমরা ইহার প্রশংসা করিয়া থাকি। সতীদাহ-প্রথায় সতীগণ সকলের প্রশংসা অর্জন করেন, যেহেতু এই প্রথার ভিতর দিয়া দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি প্রকাশ পায়।

স্বার্থপরতা দূর করিবার জন্য চেষ্টা করিতে হইবে। জীবনে যখনই কোন ভুল করিয়াছি, তখনই দেখিয়াছি, তাহার মূল কারণ হইল আমি আমার স্বার্থবুদ্ধিকে উহার মধ্যে আনিয়াছিলাম। যেখানে আমার স্বার্থ ছিল না, সেখানে আমার সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত হইয়াছে।

স্বার্থবুদ্ধি না থাকিলে কোন ধর্মমতই গড়িয়া উঠিত না। মানুষের নিজের জন্য কোন কিছুর আকাঙ্ক্ষা না থাকিলে তোমরা কি মনে কর যে, তাঁহার এই-সব প্রার্থনা উপাসনা প্রভৃতি থাকিত? হয়তো বা কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য বা অপর কিছু দেখিয়া কখনও কখনও সামান্য একটু স্তুতি করিত, ইহা ছাড়া সে ঈশ্বরের কথা কখনও ভাবিত না। সর্বদা ভগবানের স্তুতি ও প্রার্থনায় রত থাকাই তো উচিত। কিন্তু হায়! আমরা যদি এই স্বার্থবুদ্ধি ছাড়িতে পারিতাম!

যুদ্ধ-বিগ্রহ অগ্রগতির লক্ষণ—এই কথা যখনই ভাব, তখনই তুমি সম্পূর্ণ ভুল কর। ব্যাপারটি মোটেই ঐ রকম নয়। অগ্রগতির লক্ষণ—গ্রহণশীলতা। কোন কিছুকে গ্রহণ করিয়া নিজস্ব করিয়া লওয়া হিন্দুধর্মের বিশেষত্ব। যুদ্ধ-বিগ্রহ লইয়া আমরা কখনও মাথা ঘামাইতাম না।

অবশ্য আমাদের নিজ বাসভূমি রক্ষার জন্য কখনও কখনও অস্ত্রধারণ করিয়া থাকিতে পারি, কিন্তু যুদ্ধকে নীতি হিসাবে কোনদিনই আমরা গ্রহণ করি নাই। প্রত্যেক জাতিকেই ইহা শিখিতে হইয়াছে। অতএব নবাগত জাতিগুলি কিছুদিন ঘুরপাক খাইতে থাকুক, অবশেষে সকলেই হিন্দুধর্মের (ভাবের) অঙ্গীভূত হইয়া পড়িবে।

২১.
কেবল মানুষ নয়, সমস্ত জীবাত্মার সমষ্টিই হইলেন সগুণ ঈশ্বর। সমষ্টির ইচ্ছাকে কিছুই রোধ করিতে পারে না। নিয়ম বলিতে আমরা যাহা বুঝি তাহা এই; ইহাকেই আমরা শিব, কালী বা অন্য নামে ব্যক্ত করি।

২২.
ভীষণের পূজা কর, মৃত্যুর উপাসনা কর। বাকী সবই বৃথা; সমস্ত চেষ্টাই বৃথা। ইহাই শেষ উপদেশ। কিন্তু ইহা কাপুরুষের এবং দুর্বলের মৃত্যুবরণ নয় বা আত্মহত্যাও নয়—ইহা শক্তিমান্ পুরুষের মৃত্যুবরণ, যিনি সব কিছুর অন্তরতম প্রদেশ খুঁজিয়া দেখিয়াছেন ও জানিয়াছেন যে, ইহা ছাড়া দ্বিতীয় কোন সত্য নাই।

২৩.
যাহারা তাহাদের কুসংস্কারগুলি আমাদের দেশবাসীর ঘাড়ে চাপাইবার চেষ্টা করে, তাহাদের সঙ্গে আমি একমত নই। মিশর তত্ত্ববিদগণের মিশরের প্রতি কৌতূহল পোষণ করার মত ভারতবর্ষ সম্বন্ধেও লোকের কৌতূহল পোষণ করা সহজ, কিন্তু উহা স্বার্থ-প্রণোদিত।

কেহ কেহ হয়তো প্রাচীন গ্রন্থে, গবেষণাগারে বা স্বপ্নে ভারতবর্ষকে যেমন দেখিয়াছেন, তাহাকে আবার সেইভাবে দেখিতে ইচ্ছা করেন। আমি সেই ভারতকেই আবার দেখিতে চাই, যে-ভারতে প্রাচীন যুগে যাহা কিছু শ্রেষ্ঠ ভাব ছিল, তাহার সহিত বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ ভাবগুলি স্বাভাবিকভাবে মিলিত হইয়াছে। এই নূতন অবস্থার সৃষ্টি ভিতর হইতেই হইবে, বাহির হইতে নয়।

সেজন্য আমি কেবল উপনিষদই প্রচার করি। তোমরা লক্ষ্য করিবে যে, আমি কখনও উপনিষদ্ ছাড়া অন্য কিছু আবৃত্তি করি না। আবার উপনিষদের যে-সব বাক্যে শক্তির কথা আছে, সেগুলিই বলি। শক্তি—এই একটি শব্দের মধ্যেই বেদ-বেদান্তের মর্মার্থ রহিয়াছে। বুদ্ধের বাণী ছিল অপ্রতিরোধ বা অহিংসা; কিন্তু আমার মতে, সেই অহিংসা শিক্ষা দেওয়ার জন্য শক্তির ভাব, একটি উন্নততর উপায়।

অহিংসার পিছনে আছে একটি ভয়ঙ্কর দুর্বলতা; দুর্বলতা হইতেই প্রতিরোধের ভাবটি আসে। আমি সমুদ্রের একটি জলকণিকার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ লইবার বা ইহাকে এড়াইবার কথা কখনও চিন্তা করি না। আমার নিকট ইহা কিছুই নয়, কিন্তু একটা মশার কাছে এটা বিপজ্জনক।

সব রকম হিংসার ব্যাপারেই এই একই কথা—শক্তি এবং নির্ভীকতা। আমার আদর্শ সেই মহাপুরুষ, যাঁহাকে লোকে সিপাহী বিদ্রোহের সময় হত্যা করিয়াছিল এবং যিনি বুকে ছুরিকাহত হইলে মৌন ভঙ্গ করিয়া বলিয়াছিলেন, ‘তুমিও তিনিই।’

তোমরা জিজ্ঞাসা করিতে পার—এই চিন্তাধারায় রামকৃষ্ণের স্থান কোথায়? তাঁহার ছিল অদ্ভুত জীবন, এক অত্যাশ্চর্য সাধনা, যাহা অজ্ঞাতসারে গড়িয়া উঠিয়াছিল। তিনি নিজেও তাহা জানিতেন না। তিনি ইংলণ্ড বা ইংলণ্ডবাসীদের সম্বন্ধে—তাহারা সমুদ্রপারের এক অদ্ভুত জাতি—এইটুকু ছাড়া আর কিছুই জানিতেন না।

কিন্তু তিনি এক মহৎ জীবন দেখাইয়া গিয়াছেন এবং আমি তাহার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করিতেছি। কোনদিন কাহারও একটি নিন্দাবাদ তিনি করেন নাই। একবার আমি আমাদের দেশের এক ব্যভিচারী সম্প্রদায়ের সমালোচনা করিতেছিলাম।

আমি তিন ঘণ্টা ধরিয়া বকিয়া গেলাম, কিন্তু তিনি শান্তভাবে সব শুনিলেন। আমার বলা শেষ হইলে বৃদ্ধ বলিলেন, ‘তাই না হয় হল, প্রত্যেক বাড়ীরই তো একটা খিড়কির দরজা থাকতে পারে; তা কে জানে?’

আজ পর্যন্ত যত ভারতীয় ধর্ম হইয়াছে, সেগুলির দোষ এই যে, ধর্মগুলিতে দুটি কথা স্থান পাইয়াছে—ত্যাগ ও মুক্তি। জগতে কেবল মুক্তিই চাই! গৃহীদের জন্য কি কিছুই বলিবার নাই? কিন্তু আমি গৃহীদের সাহায্য করিতে চাই। সকল আত্মাই কি সমগুণসম্পন্ন নয়? সকলেরই লক্ষ্য কি এক নয়? সুতরাং শিক্ষার মধ্য দিয়া জাতির ভিতর শক্তির স্ফুরণ হওয়া আবশ্যক।

২৪.
হিন্দুধর্মের সু-উচ্চ ভাবগুলি জনতার কাছে পৌঁছিয়া দিবার চেষ্টা হইতেই পুরাণগুলির উৎপত্তি। ভারতবর্ষে একজনই মাত্র এই প্রয়োজন অনুভব করিয়াছিলেন—তিনি শ্রীকৃষ্ণ, এবং সম্ভবতঃ তিনি মানবেতিহাসে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

এইরূপে এমন একটি ধর্মের উৎপত্তি হইল, যাহা ক্রমে বিষ্ণুর উপাসনাতে পর্যবসিত হয় এবং ঐ উপাসনাতে আমাদের জীবনরক্ষা ও সাংসারিক সুখ ভোগকেও ভগবান্‌ লাভের উপায়রূপে স্বীকার করা হইয়াছে। আমাদের দেশের শেষ ধর্ম-আন্দোলন হইল শ্রীচৈতন্যদেবের মতবাদ।

তোমাদের স্মরণ থাকিতে পারে, ঐ মতবাদেও ভোগের কথা আছে। অন্যদিকে জৈনধর্ম আবার আর একটি বিপরীত চরম ভাবের দৃষ্টান্ত। ইহাতে আত্ম- নিগ্রহের দ্বারা ধীরে ধীরে শরীর ধ্বংস করা হয়। অতএব তোমরা দেখিতে পাইতেছ, বৌদ্ধধর্ম হইল জৈনধর্মের এক সংস্কৃত রূপ এবং বুদ্ধ যে পাঁচজন তপস্বীর সঙ্গ ত্যাগ করিয়াছিলেন, তাহার প্রকৃত অর্থ ইহাই।

একদিকে চরম কৃচ্ছ্রতা, অপরদিকে সম্ভোগ—এই সব বিভিন্ন স্তরের দৈহিক সাধনায় রত ধর্মসম্প্রদায়সমূহ ভারতবর্ষে প্রত্যেক যুগে একের পর এক আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। সেইসব যুগেই আবার এমন কতকগুলি দার্শনিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হইয়াছে, যাহাদের কেহবা ঈশ্বর-লাভের উপায়স্বরূপ ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়োজিত করিয়াছে আবার কেহবা উহার জন্যই ইন্দ্রিয়গুলিকে ধ্বংস করিতে উদ্যত।

এইভাবে দেখা যায়, হিন্দুধর্মের মধ্যে সর্বদাই যেন দুটি বিপরীত সর্পিলগতি সিঁড়ি (spiral staircase) একই অক্ষ-অবলম্বনে কখনও বা ঊর্ধ্বগামী, কখনও বা অধোগামী হইয়া পরস্পরের অভাব পূরণ করিয়া চলিয়াছেন।

হাঁ, বৈষ্ণবধর্মের মতে তুমি যাহা কিছু করিতেছ সবই ভাল, তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা, স্বামী এবং সন্তানের প্রতি এই যে তীব্র ভালবাসা, ইহার সবই ভাল। এগুলির সবই ঠিক, তুমি ভাবিতে পার যে, কৃষ্ণই তোমার সন্তান, আর সন্তানকে যখন কোন খাবার দাও, তখন যদি ভাবিতে পার যে, তুমি কৃষ্ণকেই খাওয়াইতেছে।

এই ছিল চৈতন্যের বাণী—‘সব ইন্দ্রিয় দিয়ে তুমি ঈশ্বরেরই পূজা কর।’ ইহার বিপরীত ভাব বেদান্তে বলা হইয়াছে—‘ইন্দ্রিয়কে সংযত কর, ইন্দ্রিয়কে প্রতিহত কর।’

আমার দৃষ্টিতে ভারত যেন নবযৌবনসম্পন্ন এক জীবন্ত প্রাণী বিশেষ, ইওরোপও যৌবনশালী এবং জীবন্ত। দুইটির কোনটিই তাহাদের উন্নতির এমন স্তরে আসিয়া পৌঁছায় নাই, যেখানে আমরা নির্বিবাদে তাহাদের সমাজের ব্যবস্থাগুলি সমালোচনা করিতে পারি। উভয়েই দুই বিরাট পরীক্ষার মধ্য দিয়া চলিতেছে। কোন পরীক্ষাই এখনও সম্পূর্ণ নয়।

ভারতে আমরা পাই সামাজিক সাম্যবাদ, যাহা অদ্বৈতের আধ্যাত্মিক ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত [প্রত্যেকের ভিতরে ব্রহ্ম বিরাজ করিতেছেন]। ইওরোপে সামাজিক দৃষ্টিতে তোমরা ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যবাদী, কিন্তু তোমাদের চিন্তাধারা যাহা দ্বৈতমূলক [ব্যক্তি-কল্যাণ চাহিলেও তোমরা সেই সঙ্গে সমাজ-কল্যাণ চাহিতেছ] অর্থাৎ আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে সাম্যবাদী।

অতএব দেখা যাইতেছে, একদিকে আছে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যবাদের বেড়া দেওয়া সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং অপরদিকে আছে সাম্যবাদের বেড়া দেওয়া ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যমূলক সমাজ।

এখন ভারতীয় পরীক্ষা যে-ধারায় চলিতেছে, ঠিক সেই ভাবেই চলিতে আমরা ইহাকে নিশ্চয়ই সাহায্য করিব। যে-সমস্ত আন্দোলন কোন বিষয়বস্তুকে ঠিক তাহারই দিক্‌ হইতে সাহায্য না করে, সেগুলি সেই হিসাবে ভাল নয়। উদাহরণ হিসাবে ইওরোপে বিবাহ করা এবং বিবাহ না করা—এই উভয় ব্যবস্থার প্রতিই আমি গভীর শ্রদ্ধাশীল।

ভুলিয়া যাইও না, মানুষের জীবনকে মহৎ এবং সম্পূর্ণ করিয়া তুলিতে গুণগুলি যতটা কাজে লাগে, দোষগুলি ঠিক ততটা লাগে। অতএব যদি ইহা প্রমাণিতও হয় যে, কোন জাতির চরিত্রে কেবল দোষই আছে, তবুও আমরা যেন ঐ জাতির বিশেষত্বকে একেবারে উড়াইয়া না দিই।

২৫.
তোমরা হয়তো বলিতে পার যে, প্রতিমা বস্তুতঃ ঈশ্বর। কিন্তু ভগবানকে শুধু প্রতিমা বলিয়া ভাবিও না (ভাবারূপ ভুলটি সর্বদাই এড়াইয়া চলিতে হইবে)।

২৬.
একবার হটেনটটদের জড়োপাসনাকে নিন্দা করার জন্য স্বামীজীকে অনুরোধ করা হইল। তিনি উত্তর দিলেন—জড়োপাসনা বলিতে কি বুঝায়, আমি জানি না। তখন একটি বিবরণ দিয়া তাঁহার সামনে একটি বীভৎস চিত্র অঙ্কিত করিয়া দেখান হইল, কিরূপে একই বস্তুকে পর্যায়ক্রমে পূজা, প্রহার এবং স্তবস্তুতি করা হয়। তিনি বলিয়া উঠিলেন, ‘আমিও তো এই রকম’।

কিছুটা বাদেই অবহেলিত এই লোকগুলির প্রতি তাহাদের অসাক্ষাতে এইরূপ অবিচারে ক্ষুব্ধ এবং উত্তেজিত হইয়া তিনি বলিতে লাগিলেন, ‘তোমরা কি বুঝিতে পারিতেছ না, তোমরা কি দেখিতেছ না যে, জড়োপাসনা বলিয়া কিছুই নাই?

দেখ, তোমাদের হৃদয় কঠিন হইয়া গিয়াছে, তাই তোমরা বুঝিতে পার না যে, শিশুরা যাহা করে, তাহাই ঠিক। শিশুরা সব কিছুকেই জীবন্ত দেখে। জ্ঞানী হইয়া আমরা শিশুর সেই দৃষ্টি হারাইয়া ফেলি। অবশেষে উচ্চতর জ্ঞানলাভ করিয়া আমরা আবার সেই দৃষ্টি ফিরিয়া পাই।

পাহাড়, কাঠ, গাছ এবং অন্যান্য সব কিছুর মধ্যেই সে একটা জীবন্ত শক্তি দেখে। আর ইহাদের পিছনে কি সত্যই একটা জীবন্ত শক্তি নাই? ইহা প্রতীকোপাসনা, জড়োপাসনা নয়। বুঝিলে কি? সুতরাং ভগবানের নামই সব—তোমরা কি ইহা বুঝ না?’

২৭.
একদিন তিনি সত্যভামের ত্যাগ সম্বন্ধে গল্পটি বলিতে গিয়া বলিলেন, কিভাবে একটুকরা পত্রের ওপর ‘কৃষ্ণ’ কথাটি লিখে দাঁড়িপাল্লায় নিয়ে এবং অপর দিকে কৃষ্ণকে বসিয়ে দেওয়ার ফলে দাঁড়িপাল্লা কৃষ্ণনামের দিকে নেমে গিয়াছিল। তিনি আবার বলিলেন, গোঁড়া হিন্দুদের কাছে শ্রুতিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ—সব কিছু।

এই জিনিষটি হচ্ছে পূর্ব থেকে অস্তিত্ববান্ একটি চিরন্তন ভাবের সামান্য বিকাশমাত্র। ঈশ্বর নিজেই এই অনন্ত মনে এই ভাবের একটি স্থূল প্রকাশ। তুমি যে ব্যক্তি, এর চেয়ে তোমার নাম অনন্তগুণ শ্রেষ্ঠ। ঈশ্বর অপেক্ষাও ঈশ্বরের নাম বড়। অতএব বাক্‌-সংযম কর।

২৮.
আমি গ্রীকদের দেবতা মানি না। কেননা তারা মানুষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেবল তাঁদেরই পূজা-উপাসনা করা উচিত, যাঁরা ঠিক আমাদেরই মত, কিন্তু আমাদের অপেক্ষা মহত্তর। আমার ও দেবতাদের মধ্যে যে ব্যবধান, তা গুণগত তারতম্য মাত্র।

স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি সঞ্চয়ন : চতুর্থ কিস্তি>>

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………..
আরও পড়ুন-
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী
স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি সঞ্চয়ন : প্রথম কিস্তি
স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি সঞ্চয়ন : দ্বিতীয় কিস্তি
স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি সঞ্চয়ন : তৃতীয় কিস্তি
স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি সঞ্চয়ন : চতুর্থ কিস্তি

……………….
আরও পড়ুন-
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার

গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: এক
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: এক
স্বামী পরমানন্দের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: তিন
স্বামী পরমানন্দের বাণী: চার
স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
স্বামী পরমানন্দের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়
শ্রী শ্রী কৈবল্যধাম সম্পর্কে
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ১ম খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ২য় খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ৩য় খন্ড
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: এক
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: দুই
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: তিন
সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেবের বাণী: চার

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!