ভবঘুরেকথা
ব্রাহ্মসামাজ

বিবাহ ও তাহার আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠান

ব্রাহ্মসমাজে বিবাহের আদর্শ এই যে একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও একটি পূর্ণবয়স্কা নারী স্ব-ইচ্ছায় পরস্পরকে আজীবনের সঙ্গী বলিয়া নির্ব্বাচন করিবেন। অভিভাবকগণের অনুমোদন ও পাত্রপাত্রীর পরস্পর মনোনয়ন, উভয়ের সম্মিলন হইলেই বিবাহ অনুষ্ঠন অধিকতর আনন্দের কারণ হয়।

হিন্দ বিবাহের ভার এই যে কন্যার অভিভাবক বরকে কন্যা ‘সম্প্রদান’ করেন। বর প্রথমত: কন্যা-সম্প্রদাতকে সম্প্রদান করিতে অনুজ্ঞা করেন, ও পরে এইরূপে সম্প্রদত্ত কন্যাকে গ্রহণ করেন।

কন্যার অভিভাবক কর্তৃক এইরূপ কন্যা সম্প্রদানে ও বর কর্তৃক সেই সম্প্রদত্ত কন্যার গ্রহণ্ হিন্দু বিবাহ ‘বিবাহ’ বলিয়া সিদ্ধ হয়।

ব্রাহ্মসমাজে বিবাহের ভাব অন্য রূপ। তাহাতে বর ও কন্যা স্ব-ইচ্ছায় উপস্থিত বন্ধুদিগের সমক্ষে পরস্পরকে পতিপত্নী রূপে গ্রহণ করেন। ইহাতেই ব্রাহ্ম বিবাহ সিদ্ধ হয়।

এই দুই প্রকার বিবাহের মৌলিক পার্থক্য বিস্মৃত হওয়া উচিত নয়। ব্রাহ্ম বিবাহে ‘ কন্যা সম্প্রদান’ বলিয়া কোন অংশ থাকিতে পারে না। ব্রাহ্ম বিবাহে কন্যাকর্ত্তা ও বরকর্ত্তা পাত্রী ও পাত্রকে বন্ধুগণের সমক্ষে উপস্থিত করিয়া দিতে পারেন মাত্র।

দুইটি পূর্ণবয়স্ক দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ঈশ্বরের দিকে চাহিয়া পরস্পরকে আজীবন সঙ্গীরূপে গ্রহণ করিতেছে, সমুদয় ভবিষ্যৎ জীবনের ভার ও দায়িত্ব ঈশ্বরের দিকে চাহিয়া তাহারই নিজ নিজ মন্তকে তুলিয়া লইতেছে-

এইরূপ একটি ব্যাপারকে যেরূপ গাম্ভীর্য্যের সহিত অনুষ্ঠানের আকার প্রদান করা উচিত হয়, ব্রাহ্ম বিবাহ অনুষ্ঠানে যেন সে গাম্ভীর্য্য সর্ব্বতোভাবে রক্ষিত হয় ; এ জন্য বর কন্যা ও অনুষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সকল ব্যক্তি যথোপযুক্ত উপায় এবং যথোপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করিবেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে পণপ্রথার দুষণীয়তা উল্লিখিত হইয়াছে। কিন্তু কেবল পণগ্রহণই দূষণীয় নয়। কন্যাপক্ষ অপেক্ষা বরপক্ষ অধিক সম্মানভাজন, এইরূপ ধারণা মনে মনে পোষণ করা এবং কন্যাপক্ষের নিকট হইতে বরপক্ষের সম্মান দাবী করা প্রভৃতিও ব্রাহ্মসমাজের আদর্শবিরুদ্ধ।

এই কারণে বিবাহের আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান ও আমোদ আহ্লাদ প্রাভৃতিকে বিবাহের উপাসনা হইতে কিঞ্চিৎ কাল-ব্যবধানে ঘটিতে দেওয়া উচিত এবং এই কারণে ব্রাহ্ম বিবাহে অধিক বাহ্যড়ম্বর ও বহুবিধ বাহ্য অনুষ্ঠান হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

বর ও কন্যার পরস্পর মোননয়নের পর বাগদান, বিবাহ দিনের পূর্ব্বে মাঙ্গল্য অনুষ্ঠান (আইবুড়ভাত বা অব্যূঢ়ান্ন), বিবাহের পরে বরের বাড়িতে বধুর সম্বর্দ্ধনা, প্রভৃতি ব্যাপারও বাহ্যড়ম্বর বহুল হওয়া উচিত নয়। ইহার প্রত্যেকটিতে উপযোগী মনের ভাব লইয়া সকলে ঈশ্বরের চরণে বসিবেন, ইহাই প্রধান কথা।

কোন কোন ব্রাহ্ম বিবাহ উপাসনা-মন্দিরে সম্পন্ন হয়। তাহাতে বিবাহের উপাসনার গাম্ভীর্য্য রক্ষা সহজ হয়।

কন্যার বাড়িতে বিবাহ হইলেও উভয় পক্ষ এক হইয়া বিবাহ অনুষ্ঠানটির সমুদায় ব্যবস্থায় ; পরিশ্রমের এবং সম্ভব হইলে ব্যয়েরও অংশ বহন করিলে ভাল হয়।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে পণপ্রথার দুষণীয়তা উল্লিখিত হইয়াছে। কিন্তু কেবল পণগ্রহণই দূষণীয় নয়। কন্যাপক্ষ অপেক্ষা বরপক্ষ অধিক সম্মানভাজন, এইরূপ ধারণা মনে মনে পোষণ করা এবং কন্যাপক্ষের নিকট হইতে বরপক্ষের সম্মান দাবী করা প্রভৃতিও ব্রাহ্মসমাজের আদর্শবিরুদ্ধ।

…………………………
ব্রাহ্মধর্ম্ম ও ব্রাহ্মসমাজ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………
আরও পড়ুন-
ব্রাহ্মসমাজ
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সভ্য হইবার যোগ্যতা
ব্রাহ্ম ধর্মের মূল সত্য
ব্রহ্ম মন্দিরের ট্রাস্টডিড
ব্রাহ্মধর্ম্মের মূল সত্য
আত্মা
মানুষের ভ্রাতৃত্ব
উপাসনা ও প্রার্থনা
শাস্ত্র
গুরু
মধ্যবর্ত্তী ও প্রেরিত
সুখ-দু:খ : দু:খবাদ ও আনন্দবাদ
পাপ ও পুণ্য
পুনর্জ্জন্ম
পরকাল
স্বর্গ ও নরক
ধর্ম্ম রক্ষা
পরিবারে পুরুষ ও নারীর অধিকার-সাম্য
ব্রাহ্মসমাজের প্রতি ব্রাহ্মদিগের কর্ত্তব্য
সমবেত উপাসনা
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ 
স্তুতি
বিবিধ অবস্থায় প্রার্থনা
নৈমিত্তিক অনুষ্ঠান
সন্তান জন্ম
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ
ধর্ম্মসাধন ব্রতে দীক্ষা
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ধর্ম্মদীক্ষা
বিবাহ ও তাহার আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠান
বিবাহের বাগদান
বিবাহ
মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া
শ্রাদ্ধ
গৃহ প্রবেশ
ব্রহ্ম ও ব্রহ্মের স্বরূপ
ব্রহ্ম ধ্যান
ব্রাহ্মধর্ম
সকলেই কি ব্রাহ্ম?
ব্রাহ্মোপসনা প্রচলন ও পদ্ধতি
আদি ব্রাহ্ম সমাজ ও “নব হিন্দু সম্প্রদায়”
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!