ভবঘুরেকথা
ব্রাহ্মসামাজ

ব্রাহ্মধর্ম্মের মূল সত্য

ঈশ্বর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম্’; তিনি এক ও চিন্ময়। তাঁহার সমান বা অংশী কেহ নাই ; তাঁহার মূর্ত্তি কেহ নির্ম্মাণ করিতে পারে না। ঈশ্বর এক ও সমুদয় মানবমণ্ডলী পরস্পরের ভাই ভগিনী- ইহাই ব্রাহ্মের মূর মন্ত্র।

ঈশ্বর

ঈশ্বর ইচ্ছা করিলেন, তাহাতেই এই বিচিত্র জগৎ সৃষ্টি হইল ; তিনি ইচ্ছা করিলেন, তাহাতেই প্রাণী ও মনুষ্য উৎপন্ন হইল।

উপকরণ ও সহায়তা ব্যতীত ইচ্ছা মাত্রে যাহা হয়, তাহাকে সৃষ্টি বলে ; এবং উপকরণ ও সহায়তা লইয়া যাহা হয়, তাহাকে নির্ম্মাণ বলে। ঈশ্বর স্রষ্টা ; নির্ম্মাতা মাত্র নহেন।

ঈশ্বরের ইচ্ছায় ব্রহ্মাণ্ডে এই সৃষ্টিক্রিয়া নিত্য চলিতেছে। তাঁহার সৃষ্টির বিচিত্র প্রণালীকেই যুগে যুগে ‘মাধ্যাকর্ষণ’ প্রভৃতি নানা মহানিয়ম রূপে জড়বিজ্ঞান আবিস্কার করিতেছে ও প্রচার করিতেছে।

ঈশ্বর সত্যস্বরূপ। যাহা কিছু আছে ও যাহা কিছু ঘটিতেছে, সে সকলের মূল তিনি। এ সমুদয় তাঁহার ইচ্ছাতে উৎপন্ন হইয়াছে, এবং তাঁহার মধ্যে ও তাঁহার আশ্রয়ে অবস্থিত আছে। ও সমুদয়ই চঞ্চল ও ক্ষণস্থায়ী ; এ সমুদয়ই স্থানে ও কালে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ঈশ্বর নিত্য ; তিনি স্থান, কাল ও ঘটনার অতীত।

ঈশ্বর অনন্তস্বরূপ। তাঁহার সীমা নাই ; তিনি কোনও দেশে বা কালে আবদ্ধ নহেন। তাঁহার শক্তি অসীম। জ্ঞান, প্রেম, পুন্য প্রভৃতি সকল বিষয়েই তিনি অসীম। অপর যত কিছু দেখিতেছি, সকলেরই সীমা আছে ; বিস্তীর্ণ আকাশ এবং মহাসমুদ্র- ইহাদেরও সীমা আছে। কিন্তু তাঁহার সীমা নাই ; এ সমুদয় তাঁহারই শক্তির কার্য্য।

ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। ঈশ্বরের অংশ নাই, অবতার নাই। তাঁহার আর কাহারও সাহায্য লইবার প্রয়োজন নাই। কাহারও সঙ্গে তাঁহার আর কাহারও সাহায্য লইবার প্রয়োজন নাই। কাহারও সঙ্গে তাঁহার তুলনা হয় না। কোনও বস্তু তাঁহার এমন সদৃশ নয় যে, সে বস্তুকে তাঁহার উপমা বা প্রতিমা বলা যাইতে পারে।

ঈশ্বর নিরাকার ও নিরবয়ব। তাঁহার কোন বাহ্য আকৃতি বা অবয়ব নাই। তবে আমরা কেমন করিয়া জানি যে ঈশ্বর আছেন? আমাদের জ্ঞান প্রীতি ইচ্ছা প্রকৃতির কোন আকার নাই ; ঈশ্বরেরও কোন আকার নাই।

আমাদের জ্ঞান প্রীতি ইচ্ছা প্রভৃতি চিন্ময় বস্তু ; ঈশ্বরও তেমনি চিন্ময় পুরুষ। আমাদের জ্ঞান প্রীতি ইচ্ছা আমরা অন্তর দিয়া অনুভব করি ; তাই, এ সমুদয় যে সত্য, এ সমুদয় যে আছে, তাহা আমরা বিশ্বাস করি। সেইরূপ, জ্ঞান প্রীতি ও ইচ্ছা পালন দ্বারা ঈশ্বরকে অন্তরে জানা যায় ও অনুভব করা যায় ; তাই তিনি যে সত্য, তিনি যে আছেন, তাহা আমরা বিশ্বাস করি।

ঈশ্বর সর্ব্বব্যাপী। তিনি সকল স্থান ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তিনি সর্ব্বাশ্রয়। তাঁহা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া একটি তৃণও থাকিতে পারে না। তিনি আপনার মধ্যে সকলকে আশ্রয় দিয়া রক্ষা করিতেছেন। সর্ব্বদর্শী তাঁহা হইতে কিছূই গোপন রাখা যায় না। অন্ধকারময় স্থানেই হউক, জনশূন্য বনে কি প্রান্তরেই হউক, তাঁহার অগোচর কোথাও কিছুই নাই। যাহা করা যায়, যা ভাবা যায়, তিনি তাহার সমুদয়ই জানিতে পারেন।

ঈশ্বর অনন্তস্বরূপ। তাঁহার সীমা নাই ; তিনি কোনও দেশে বা কালে আবদ্ধ নহেন। তাঁহার শক্তি অসীম। জ্ঞান, প্রেম, পুন্য প্রভৃতি সকল বিষয়েই তিনি অসীম। অপর যত কিছু দেখিতেছি, সকলেরই সীমা আছে ; বিস্তীর্ণ আকাশ এবং মহাসমুদ্র- ইহাদেরও সীমা আছে। কিন্তু তাঁহার সীমা নাই ; এ সমুদয় তাঁহারই শক্তির কার্য্য।

মানুষের জীবনে দরিদ্রতার ক্লেশ, রোগের যাতনা প্রভৃতি যত দু:খ আছে, ঈশ্বরের নিকটে থাকিলে সবই দূর হয়। অন্য সকল প্রকার সুখই ক্ষণিক ; কিন্তু ঈশ্বর-সহবাসের যে আনন্দ, তাহা নিত্য, পূর্ণ এবং নির্ম্মল।

ঈশ্বর মঙ্গলস্বরূপ। তিনি কখনও কোনও অশুভকর কার্য্য করেন না। মঙ্গলই তাঁহার স্বভাব ; মঙ্গলই তাঁহার কার্য্য। দারিদ্র, দু:খ, রোগ, মৃত্যু প্রভৃতি যে-সকল ব্যাপারকে মানুষ অমঙ্গলকর বলিয়া মনে করে, তাহার মধ্যেও তাঁহার মঙ্গল অভিপ্রায় নিহিত থাকে। কখনও আমাদিগকে ধন, সুখ, স্বাস্থ্য, জীবন প্রভৃতি দান করাতে আমাদের মঙ্গল ; কখনও বা এ সকল না দেওয়াতে বা কাড়িয়া লওয়াতেই আমাদের মঙ্গল। যাহা মঙ্গল, তাহাই ঈশ্বর করেন।

ঈশ্বর করুণাময়। মাতৃগর্ভে জীবসকলের রক্ষা ও পোষণ তিনিই করেন। জীবকে পৃথিবীতে আনিবার পূর্ব্বে তিনিই তাহার খাদ্য সংগ্রহ করিয়া রাখেন। তিনিই পিতামাতার প্রাণে স্নেহ দান করেন। এ সবই তাঁহার করুণাময় চিহ্ন।

ঈশ্বর ন্যায়বান। তিনি পাপ পুণ্যের দণ্ড ও পুরস্কার বিধান করেন। তাঁহার বিচারে পক্ষপাতিতা নাই।

ঈশ্বর পুণ্যস্বরূপ ; পাপ তাঁহাতে সম্ভবে না। তিনি নির্ম্মল। তিনি পরমসুন্দর। জড় জগতে ও উন্নত মানবচরিত্রে যত সৌন্দর্য্য, সে স কলের উৎস তিনি।

ঈশ্বর আনন্দস্বরূপ। তাঁহাতে চির আনন্দ বিদ্যমান। ভালবাসিয়া ও আনন্দে তিনি বিশ্বসংসার রচনা করিয়াছেন। তাই তাঁহার কাছে থাকিলে আমরাও আনন্দে থাকি।

মানুষের জীবনে দরিদ্রতার ক্লেশ, রোগের যাতনা প্রভৃতি যত দু:খ আছে, ঈশ্বরের নিকটে থাকিলে সবই দূর হয়। অন্য সকল প্রকার সুখই ক্ষণিক ; কিন্তু ঈশ্বর-সহবাসের যে আনন্দ, তাহা নিত্য, পূর্ণ এবং নির্ম্মল।

…………………………
 ব্রাহ্মধর্ম্ম ও ব্রাহ্মসমাজ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………
আরও পড়ুন-
ব্রাহ্মসমাজ
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সভ্য হইবার যোগ্যতা
ব্রাহ্ম ধর্মের মূল সত্য
ব্রহ্ম মন্দিরের ট্রাস্টডিড
ব্রাহ্মধর্ম্মের মূল সত্য
আত্মা
মানুষের ভ্রাতৃত্ব
উপাসনা ও প্রার্থনা
শাস্ত্র
গুরু
মধ্যবর্ত্তী ও প্রেরিত
সুখ-দু:খ : দু:খবাদ ও আনন্দবাদ
পাপ ও পুণ্য
পুনর্জ্জন্ম
পরকাল
স্বর্গ ও নরক
ধর্ম্ম রক্ষা
পরিবারে পুরুষ ও নারীর অধিকার-সাম্য
ব্রাহ্মসমাজের প্রতি ব্রাহ্মদিগের কর্ত্তব্য
সমবেত উপাসনা
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ 
স্তুতি
বিবিধ অবস্থায় প্রার্থনা
নৈমিত্তিক অনুষ্ঠান
সন্তান জন্ম
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ
ধর্ম্মসাধন ব্রতে দীক্ষা
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ধর্ম্মদীক্ষা
বিবাহ ও তাহার আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠান
বিবাহের বাগদান
বিবাহ
মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া
শ্রাদ্ধ
গৃহ প্রবেশ
ব্রহ্ম ও ব্রহ্মের স্বরূপ
ব্রহ্ম ধ্যান
ব্রাহ্মধর্ম
সকলেই কি ব্রাহ্ম?
ব্রাহ্মোপসনা প্রচলন ও পদ্ধতি
আদি ব্রাহ্ম সমাজ ও “নব হিন্দু সম্প্রদায়”
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!