অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে গেল ভট্টাচার্য মশায়ের। ক’দিন ধরে বড় চঞ্চল হয়ে আছেন মহামহোপাধ্যায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ভট্টাচার্য। কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না তাঁর ইষ্টদেবীর রূপকল্পটি। করালবদনী শক্তিরূপা দেবী কালিকার শান্ত কোমল এক রূপের খোঁজে তিনি আকুল হয়ে উঠেছেন। বুঝতে পারছেন সাধারণ গৃহস্থের দেবীর প্রতি ভয়কে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন এক কল্যাণময় রূপের।
শক্তির উপাসনাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান কৃষ্ণানন্দ। কিন্তু কিছুতেই দেবীর সেই প্রার্থিত রূপটিকে ছুঁতে পারছিলেন না আগমবাগীশ। নিদ্রাহীন রাতে আসনে বসে ছটফট করেন। শক্তি উপাসনার আবিলতাহীন এক নতুন দিশা কি তাহলে অধরাই থেকে যাবে? কান মাথা গরম হয়ে ওঠে তাঁর। শেষরাতের দিকে কখন যেন চোখের পাতা জুড়ে গিয়েছিল বুঝতে পারেন নি।
কথিত রয়েছে, হঠাৎ এক দৈবকণ্ঠ বাজতে থাকে চরাচর জুড়ে। আধো ঘুম আধো জাগরণের দোলাচলে কৃষ্ণানন্দ শোনেন কে যেন বলছে, ভক্তের মধ্যেই থাকেন ভগবান। মিথ্যেই তাঁকে অন্যত্র খুঁজছ। একবার মাটির দিকে তাকাও প্রত্যয়ের দৃষ্টিতে। ভোরের প্রথম আলোয় খুঁজে পাবে তোমার আরাধ্যার দেবীরূপ। সেই নতুন রূপেই প্রতিষ্ঠা পাবেন দেবী কালিকা।
তিনি ঘুমে নাকি জাগরণে? ঠাহর করতে পারেন না আগমবাগীশ। কে বলল এসব কথা? কেউ তো নেই চারপাশে! তবে কি এই উপলব্ধি তাঁর অন্তরের? হেমন্তের ভোরে শিরশিরে হাওয়ায় তৃপ্তিতে ফের চোখ বুঝে ফেলেন ভট্টাচার্য মশাই। শরীরটা কেমন যেন আলগা হয়ে যায়। আর সংশয় নেই।
তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। জড়তা ঝেড়ে উঠে পড়লেন কৃষ্ণানন্দ। গোপপল্লি দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন গঙ্গার ঘাটের দিকে। হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ে এক গোপবধূ। গায়ের রঙ কালো। কিন্তু তাতে কী অপরূপ লাবণ্য। কর্মব্যস্ত বধূকে দেখে থমকে গেলেন কৃষ্ণানন্দ।
ডান পা সামনে বাড়িয়ে বাঁ হাতে একতাল গোবর নিয়ে ডান হাতে করে কুটিরের মাটির দেওয়ালে ছুঁড়ে প্রলেপ দিচ্ছে সেই শ্রীময়ী। একঢাল ঘন কালো চুল কোমর ছাপিয়ে হাঁটু ছুঁই ছুঁই। পরনে খাটো বস্ত্র।
কৃষ্ণানন্দ দাঁড়িয়ে পড়লেন। শেষরাতে শোনা কথাগুলো ফের বাজতে থাকল যেন। এমন সময়ে হঠাৎ পিছন ফিরে ভট্টাচার্য মশাইকে দেখে হতচকিত সেই বধূ। কৃষ্ণানন্দ তাকিয়ে দেখেন উজ্জ্বল দু’টি চোখে বড় মায়া। সারা মুখ পরিশ্রমের ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু। কপালের সিঁদুর ধেবড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে দুই ভ্রু জুড়ে।
প্রবল প্রতাপশালী মহামহোপাধ্যায় কৃষ্ণানন্দ বাগীশ ভট্টাচার্যকে দেখে বিব্রত বধূ নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতেই পরনের স্বল্পবাসটুকুও গেল খসে। দু’হাতে গোময়। লজ্জায় জিভ কাটলেন নিরুপায় রমণী। সব ভুলে গিয়ে সাধক কৃষ্ণানন্দ আপন মনের মাধুরী মিশায়ে দেখতে লাগলেন তাঁর ইষ্টদেবী কালিকার অধরা রূপটি।
দেবী ঘোর কৃষ্ণবর্ণা, আলুলায়িত কেশরাশি। গোবরের তাল ধরা ডান হাতে যেন বরাভয়ের মুদ্রা। বাঁ হাতে খড়্গ। জীবজগতের মঙ্গল এবং আসুরিক শক্তির বিনাশের জন্য যা সদা উদ্যত। দু’চোখে অপার করুণা। কপালে জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিঁদুর যেন তৃতীয় নয়ন।
মহাপণ্ডিত আগমবাগীশের মনে পড়তে লাগল ‘কালীতন্ত্রে’ দেবীর রূপের বর্ণনা-
করালবদনা ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম
কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালা বিভূষীতাম
সদ্যশ্ছিন্নশিরঃ খড়গ বামাবোর্ধ করামবুজাম
অভয়ং বরদাঞ্চৈব দক্ষিণাদ্ধোর্ধ পানিকাম।
ঘোর কাটতে যা দেরি। আর সময় নষ্ট করলেন না আগমবাগীশ। তৎপর হলেন কল্পনার দেবীমূর্তিকে রূপদান করতে। তন্ত্রে পারঙ্গম বিশেষ সাধনশক্তির আধিকারী আগমশাস্ত্রে সুপণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ এবার প্রস্তুত হলেন তাঁর দীর্ঘ দিনের সাধনার ফসল তন্ত্রসার এবং দেবী কালিকার নতুন উপাসনা পদ্ধতিকে সাধারণ গৃহস্থের ঘরে পৌঁছে দিতে।
ইতিহাস বলে এসবই ঘটেছিল শ্রীচৈতন্যের নিজের দেশ নবদ্বীপের মাটিতে। সময়টা ষোল শতকের প্রথমার্ধ। পৃথিবীর তাবৎ বৈষ্ণবকুলের কাছে পবিত্রতম তীর্থক্ষেত্র নবদ্বীপধাম।
পদাবলী কীর্তন, রাগানুগা ভক্তির দেশে চৈতন্যজন্মের কয়েক দশকের মধ্যেই জন্মালেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যার প্রভাবে বঙ্গদেশে শক্তি সাধনার ধারার আমূল বদল ঘটে গেল। তিনি মহাপণ্ডিত ও সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তিনি সমস্ত তন্ত্রের সার সংকলন করে রচনা করে ছিলেন “বৃহৎ তন্ত্রসার”।
শক্তির আরাধনাকে তিনিই প্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেন, কালীপুজোর রাতে যে দক্ষিণাকালীর পুজো ভক্তরা করে থাকেন, তার প্রবর্তন করেন আগমবাগীশ।
কারও কারও মতে, আগমবাগীশ চৈতন্যের সমসাময়িক। কারও মতে তাঁর জন্ম অনেক পরে। তবে চৈতন্যের সমসময়ে নবদ্বীপে শাক্তপুজোর প্রচলন ছিল। পঞ্চদশ শতকেই তান্ত্রিক দেবী বাসুলীর ভক্ত চণ্ডীদাস পদাবলি রচনা করেছিলেন। বৃন্দাবনদাস যক্ষ পুজোরও উল্লেখ করেছেন।
শক্তিরূপিনী দেবী পুজো অবশ্য তার অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। কালীর কথা রয়েছে অথর্ব বেদে। রয়েছে মহাভারতেও। তন্ত্রের গুরুতর প্রভাবও ছিল দশম শতাব্দীর আগে থেকেই। বৌদ্ধ বজ্রযানের প্রভাবও ছিল। সেই নানা ধর্মীয় দর্শনের টানাপড়েনের মধ্যে কালী ব্রাহ্মণ্য সংস্কারে ক্রমশ সর্বজনগ্রাহ্য এক দেবী হয়ে ওঠেন।
রাঘবভট্ট রচিত শারদা তিলকের টীকা, তারাতন্ত্র, তন্ত্রকৌমুদি, শক্তিসঙ্গম তন্ত্র, যোগিনীতন্ত্র, শ্যামারহস্য, শাক্তক্রম, তত্ত্বচিন্তামণি, তত্ত্বানন্দ তরঙ্গিণী বা ষটোকর্মোল্লাসের মতো প্রচলিত তন্ত্রগ্রন্থগুলি থেকে সারবস্তু নিয়ে কৃষ্ণানন্দ রচনা করেন ‘বৃহৎ তন্ত্রসার’। বলা হয় ১৭০টি তন্ত্রগ্রন্থের নির্যাস নিয়ে তিনি তন্ত্রসার সংকলন করেছিলেন।
মনে করা হয়, আগমবাগীশই সেই দেবীর রূপটি ফুটিয়ে তোলেন গৃহস্থের উপযুক্ত করে। সেই রূপে গোপবধূর কাহিনিটি জুড়ে গিয়েছে। কারও মতে ওই বধূ গোপপল্লীর নন, তথাকথিত নিম্নবর্ণের কেউ। তবে আদর্শ হিসেবে যে মূর্তি নির্মাণ করেন আগমবাগীশ, তাতে মিশেছিল সংস্কৃত সাহিত্যের ধ্রুপদি ঐতিহ্যের প্রকাশও।
আগমবাগীশের জন্মকাল নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও ইতিহাসবিদ দিনেশচন্দ্র সেনের মতটিই প্রামাণ্য বলে মনে করা হয়। সেই অনুসারে ১৬০৫ থেকে ১৬১০’র মধ্যে কৃষ্ণানন্দের জন্ম। এবং ১৬৩৪ থেকে ১৬৪৪’র মধ্যে তন্ত্রসার সংকলন করেন।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মনে করেন, রাঢ়দেশে তন্ত্রশাস্ত্র রচনাকারদের মধ্যে আগমবাগীশের রচনা সবচেয়ে মার্জিত। কৃষ্ণানন্দের রচনায় পঞ্চ ম’কারের কোনও উল্লেখ নেই। তাই এদেশে ওই গ্রন্থের কদর।
নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ পণ্ডিতবংশে জন্ম কৃষ্ণানন্দের। পিতা মহেশ্বর গৌড়াচার্য। মনে করা হয়, গৌড়াচার্যের ছয় সাত পুরুষ আগে কেউ নবদ্বীপে বিদ্যাচর্চার জন্য আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। গৌড়াচার্যের দুই পুত্র। বড় কৃষ্ণানন্দ শক্তির উপাসক। ছোট মাধবানন্দ পরম বৈষ্ণব।
চৈতন্যদেব অপ্রকট হওয়ার পর থেকে বৈষ্ণবধর্মে নানা আবিলতা দেখা দেয়। নষ্ট হয়ে যায় চৈতন্য প্রবর্তিত প্রগতিশীলতা। অন্য দিকে প্রবল হয়ে ওঠে তন্ত্রাচার। কিন্তু সেখানেও অশুভশক্তির চর্চা বেশি হতে থাকে। মারণ উচাটন বশীকরণের মতো বিষয়ের সঙ্গে তন্ত্র একাকার হয়ে যায়। তন্ত্র বা তান্ত্রিক মানেই ভয়।
নিরাশ্রয় সাধারণ মানুষ শক্তির আশ্রয়ে পৌঁছোতে পারছে না, সেই সময়ে মহাপণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ তন্ত্র সংস্কারে হাত দেন। উদ্দেশ্য ছিল তন্ত্রের বিভীষিকাময় দিকগুলি সরিয়ে গৃহীদের জন্য শক্তি সাধনার এক সহজিয়া পথ খোঁজা। যেখনে তন্ত্র কল্যাণময়, মঙ্গলদায়ক। এ জন্য তন্ত্র নিয়ে বিস্তর পড়াশুনো করেন কৃষ্ণানন্দ।
রাঘবভট্ট রচিত শারদা তিলকের টীকা, তারাতন্ত্র, তন্ত্রকৌমুদি, শক্তিসঙ্গম তন্ত্র, যোগিনীতন্ত্র, শ্যামারহস্য, শাক্তক্রম, তত্ত্বচিন্তামণি, তত্ত্বানন্দ তরঙ্গিণী বা ষটোকর্মোল্লাসের মতো প্রচলিত তন্ত্রগ্রন্থগুলি থেকে সারবস্তু নিয়ে কৃষ্ণানন্দ রচনা করেন ‘বৃহৎ তন্ত্রসার’। বলা হয় ১৭০টি তন্ত্রগ্রন্থের নির্যাস নিয়ে তিনি তন্ত্রসার সংকলন করেছিলেন।
এখনও নবদ্বীপের আগমেশ্বরী পাড়ায় আগমবাগীশের পঞ্চমুণ্ডীর আসনে তাঁর প্রচলিত পদ্ধতিতে কালী পুজো হয়ে চলেছে। বলা হয় এটিই নাকি প্রথম এবং প্রাচীনতম দক্ষিণা কালীর পুজো। পরবর্তী কালে আগমবাগীশ নির্দেশিত পথে কালী পুজো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
নবদ্বীপে আগমবাগীশের কালীপুজোর যাবতীয় আয়োজন হয় তাঁর মতো করেই। আগমবাগীশ প্রবর্তিত কিছু বিশেষ রীতি এই পূজোকে অন্য সব কালী পুজো থেকে আলাদা করেছে। কার্তিকের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমীতে খড়বাঁধা দিয়ে মূর্তি নির্মাণের সূচনা হয়।
একাদশীতে পাঁচপোয়া খড়ের বিশেষ ধরনের অবয়ব বিরাটাকার প্রতিমার বুকে স্থাপন করা হয়। অমাবস্যা লাগলে চক্ষুদান। একটা সময়ে পুজো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিসর্জন হত। এখন দুপুরের মধ্যেই বিসর্জন শেষ হয়।
……………………….
তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত – প্রণয় সেন
ছবি: কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীসের কল্পিত কালীমূর্তি
………………….
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………………….
আরও পড়ুন-
স্বামী অড়গড়ানন্দজী
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব
শিরডি সাই বাবা
পণ্ডিত মিশ্রীলাল মিশ্র
নীলাচলে মহাপ্রভুর অন্ত্যলীলার অন্যতম পার্ষদ ছিলেন রায় রামানন্দ
ভক্তজ্ঞানী ধর্মপ্রচারক দার্শনিক রামানুজ
সাধক ভোলানন্দ গিরি
ভক্ত লালাবাবু
লাটু মহারাজ শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্ভুত সৃষ্টি
কমলাকান্ত ভট্টাচার্য
ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন
পরিব্রাজকাচার্য্যবর শ্রীশ্রীমৎ দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেব
আর্যভট্ট কাহিনী – এক অজানা কথা
গিরিশচন্দ্র ঘোষ
কঠিয়াবাবা রামদাস
সাধু নাগ মহাশয়
লঘিমাসিদ্ধ সাধু’র কথা
ঋষি অরবিন্দ’র কথা
অরবিন্দ ঘোষ
মহাত্মাজির পুণ্যব্রত
দুই দেহধারী সাধু
যুগজাগরণে যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ
শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর
বাচস্পতি অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে
মুসলমানে রহিম বলে হিন্দু পড়ে রামনাম
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : প্রথম খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব: দ্বিতীয় খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : অন্তিম খণ্ড
মহামহোপাধ্যায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ
শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর
শ্রীশ্রী ঠাকুর সত্যানন্দদেব
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: এক
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: দুই
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: তিন
সাধক তুকারাম
সাধক তুলসীদাস: এক
সাধক তুলসীদাস: দুই
সাধক তুলসীদাস: তিন
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: এক
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: দুই
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: তিন