সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
৪০.
নূতন বরষে পরম হরষে, কর সবে নামগান,
শয়নে স্বপনে নিদ্রা জাগরণে, তোল রে মধুর তান।।
৪১.
নামশ্রয়ীকে আমি বড় ভালোবাসি
তুই নাম ধরে থাক,
তাহলে তোকে আর কিছু
ভাবতে হবে না।।
৪২.
নাম কল্পতরুমূলে যাহা তুমি চাবে।
অবশ্যই প্রাণাধিক তাহাই লভিবে।।
নামরূপে অবতীর্ণ স্বয়ং ভগবান।
নামগানে নামদানে সঁপ মন প্রাণ।।
৪৩.
জগজ্জননী বাণী করিয়া করুনা
দেব রাষ্ট্রভাষা রূপে হও অবতীর্ণা।
অধম তনয়গণ যাচে বারবার
ভারতে সংস্কৃত ভাষা হউক প্রচার।।
৪৪.
নামরূপে অবতীর্ণ স্বয়ং ভগবান।
নাম গানে নাম দানে সঁপ মন প্রাণ।।
কায়মনোবাক্যে যদি চাহ ভগবান।
অকৃতি অধম হয়ে কর নাম গান।।
৪৫.
বৃন্দাবনে যেইজনে লইবে আশ্রয়,
পাপ তাপ দূরে যাবে হবে ভাবোদয়।
বৃন্দাবন ধাম আমি ত্যজিব না কভু,
আশ্বাসিতে ভক্ত দলে বলেছেন প্রভু।।
৪৬.
জপরে সাধরে নাম জপ অণুক্ষণ।
নাম তোরে এনে দিবে অনন্ত জীবন।।
হবিরে অজর তুই অমৃত অভয়।
উচ্চকণ্ঠে বল ওরে- জয় নাম জয়।।
৪৭.
কখন যাবার ডাক আসিবে তোমার-
স্থির নাই প্রিয়তম ভাব একবার।।
এবারের যাত্রা যেন বিফল না হয়।
দয়িত সতত গাও জয় গুরু জয়।।
৪৮.
সতত কররে নাম আনন্দিত মনে।
অক্লেশে বাঁধবি মোরে প্রেমের বন্ধনে।।
শুনাবো প্রণয়-কথা তোর কানে কানে।
‘বাধা রব’ দিবারাতি মিলন-বাঁধনে।।
৪৯.
দেখ ভবের চিড়িয়াখানা কেয়া মজাদার
কত সাজে কত ধাঁজে ঘুরছে সব এধার ওধার।।
বিড়াল কুকুর ছাগল ভেড়া, বাঘ সিংহ হাতি ঘোড়া,
গাধা গরু শোয়ার কাড়া অভাব নাইকো কোনোটার।।
সবাই আছে খাচায় বসে খাচ্ছে খোঁচা আচ্ছা ঠেসে
পাঁচের খোঁচা সইছে বসে পথ নাইকো পালাবার।।
৫০.
অনাহতে অনাহত নাদ পাবে তুমি।
আলোক মাঝারে ডুবে রবে দিবা-যামী।।
জপিতে জপিতে নাম পশ্যন্তী লভিবে।
ইষ্ট দরশন করি ধন্য হয়ে যাবে।।
খুলিবে সুষুম্নাদ্বার মন্ত্র হবে লয়।
প্রণব করিবে খেলা হয়ে নাদময়।।
শুনিতে শুনিতে নাদ পরাতে ডুবিবে।
মহাভাব লভি তুমি আপনা হারাবে।।
আনন্দ আনন্দ শুধু আনন্দ অপার।
জপ নাম গাও নাম নাম কর সার।।
নাম জপ ব্রত তুমি করহ গ্রহণ।
পাইবে অনিত্য মাঝে চির নিত্য ধন।।
অনুক্ষণ নাম জপে রজঃ তমঃ যাবে।
জ্ঞান সুখ সহ সত্ত্ব উদয় হইবে।।
সত্ত্ব আনি দিবে মন, মন আত্মারাম।
রাম রাম বল রাম দাস সীতারাম।।
-সুধারধারা
৫১.
যদি স্মরণ কীর্তনাদি সর্বপ্রকারে অশক্ত হয় তাহা হইলে কেবলমাত্র শ্রী ভগবানের নাম জপ সর্বদা করিবে। অনুক্ষণ প্রীতিযুক্ত হইয়া যিনি নামকীর্তন করেন, তাহার অতি শীঘ্র সাধুগণের আদৃতা শ্রীকৃষ্ণে ভক্তি উৎপন্ন হয়; এইরূপ প্রেমময়ী ভক্তি লাভপূর্বক সংসার ভেদ করত সত্বর পরমানন্দরূপিণী শান্তি লাভ করিয়া থাকেন। সর্বশাস্ত্র সমস্বরে বলিয়াছেন- কেবলমাত্র নাম গ্রহণের দ্বারাই জীব প্রেমময়ের সাক্ষাৎকার লাভে সমর্থ হয়।
চিদানন্দময় নাম গ্রহণ করিয়া থাকিলেই যা করিবার নামই করিয়া থাকেন, ভক্ত কে আর কিছুই করিতে হয় না। সেইজন্য মহর্ষি নারদ বলিয়াছেন- অন্য সাধন হইতে ভক্তিসাধন সুলভ। -শ্রী শ্রী নারদ ভক্তিসূত্র।
৫২.
পৃথিবীতে সবচেয়ে সার বস্তুই হলো আনন্দ। মানুষ আনন্দে জন্মে, আনন্দে বর্ধিত হয়ে পুনরায় আনন্দেই মিশে যায়। এই পৃথিবীতে কেবল আনন্দই আছে। কিন্তু তুমি এই আনন্দ দেখতে পাওনা কেনো? কারণ তুমি ক্রমান্বয়ে পাপে পূর্ণ থাকো। কি করে তুমি এই পাপ মুক্ত হবে? নাম গান কর। নাম গানই তোমার পাপ মুছে দেবে। নাম তোমার রক্ত, মাংস, মজ্জা ও অস্থিতে চিহ্নিত হয়ে যাবে।
তোমার শরীর নামময় হয়ে উঠবে এবং ইহা নামরূপ পদ্ম প্রস্ফুটিত করবে। তোমার সকল আকাঙ্খা দূরীভূত হবে এবং তোমার দেহ আধ্যাত্মিক হয়ে উঠবে। এইভাবে তুমি মুক্তি অর্জন করবে এবং স্বেচ্ছামৃত্যু লাভ করবে। সুতরাং তুমি অহরহ নাম গান করো। – মণিমালিকা
৫৩.
সমুদ্র নিস্তরঙ্গ হইলে স্নান করিব মনে করিয়া যদি কেহ সমুদ্রতীরে বসিয়া থাকে তাহার যেমন স্নান করা হয় না, তদ্রূপ সংসারের সুখ-দুঃখাদি তরঙ্গ শান্ত হইলে ভগবৎ ভজন অভিলাষকারীর ভগবৎ ভজন করা হয় না। যতদিন দেহ থাকিবে ততদিন একটি না একটি তরঙ্গ থাকিবেই; কাজেই সুখ-দুঃখাদির দিকে ভ্রূক্ষেপ না করিয়া সর্বদা ভগবানের নাম করা মানুষ মাত্রেরই কর্তব্য।
যাহা আইসে আসুক, যাহা হয় হউক, কখনো একটি শ্বাসও বৃথা না যায় এইরূপ দৃঢ়ভাবে যিনি সুখ-দুঃখদিকে উপেক্ষা করিয়া নাম লইয়া থাকিতে পারেন, তাহার শান্তি- সাম্রাজ্য অদূরে বর্তমান। সর্বদা নিরন্তর নাম লইয়া থাকিবার চেষ্টাই প্রকৃত পুরুষার্থ। ইহাই কলিযুগের সর্বশাস্ত্রসম্মত সমস্ত সাধুসম্মত সহজ সরল সুগম পথ। -শ্রী শ্রী নারদ ভক্তিসূত্র
৫৪.
একবার প্রপন্ন হয়ে ‘আমি তোমার’ বলে যে কেউ তোমার শরণ লয়, তাকে তুমি অভয় দাও। আমি যে অদ্যাপি প্রপন্ন হতে পারিনি! কতো রোগ শোক জ্বালা যন্ত্রণা অবাধে সহ্য করছি, তথাপি তোমার প্রপন্ন হতে পারলাম না। কত লোক দেহত্যাগ করলো- কত মৃতদেহ এই গঙ্গা দিয়ে ভেসে যেতে দেখলাম- কত মৃতদেহ শৃগাল কুক্কুরে ভোজন করছে দেখছি- তথাপি দেহাসক্তি গেল না!
আমাকে দেহত্যাগ করতে হবে, আমার সঙ্গে কিছুই যাবে না, বেশি কথা কি- ‘আমাকে মরতে হবে’- একথা দিনান্তে একবার মনেও হয় না! এর চেয়ে আশ্চর্য কি আছে! শরণাগত কে হয়- যে বিপন্ন। আমি মহাবিপন্ন হয়েও, আমি যে বিপন্ন একথা মনে করতে পারি না। বিপন্ন বোধ না থাকায় বিষাদ আসছে না, বিষাদের অভাবে একান্ত ভাবে শরণাপন্ন হতে পারছি না। তুমি আমাকে- আমি যে বিপন্ন- এ কথা বুঝিয়ে দাও।
-প্রপন্ন পথিক
৫৫.
কৃষ্ণকে ভুলিলেই জীব মায়ার দাস হইয়া চিরদিনের মতো বদ্ধ হইয়া যায়। তাই বলি কৃষ্ণকে ভুলিও না; কৃষ্ণকে পাবার প্রধান উপায় তার নাম করা, অহরহ তার নাম এ ডুবে থাকা। যে সুশীতল সলিলে সদাই মগ্ন আছে, প্রখর সূর্যকিরণ কখন কি তাহাকে স্পর্শ করিয়া কষ্ট দিতে পারে? পৃথিবীর সমস্ত জীব হা-হা করিলেও দারুণ উত্তাপ জলমগ্ন ব্যক্তির কিছুই করিতে পারে না।
কৃষ্ণ নাম ব্যতীত অন্য উপায় আছে কিনা জানিনা, তাই আমার প্রার্থনা সদাই এই নাম বলিতে থাকো। নাম করিতে করিতে প্রেম আসিবে,আর প্রেম আসিলেই সেই প্রেমের হরিকে পাইবে। যাদের ভজন সাধন আছে তারা পার হবার জন্য আর সেই কর্ণধারের খোশামোদ করিবে না। তারা দাম দিয়া পার হইয়া যায়, কিন্তু যাহারা ভজন সাধন বিহীন তাদের আর অন্য উপায় নাই, তাদের কর্তব্য সদাই দয়াময়ের নাম করা ও গুণ গাওয়া। অবশ্যই তিনি দয়া করবেন।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড)
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার>>
……………….
আরও পড়ুন-
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়
……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার
গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….