ভবঘুরেকথা
রামানুজ

ভক্তজ্ঞানী ধর্মপ্রচারক দার্শনিক রামানুজ

আজ থেকে হাজার বছর আগে শ্রীপেরুমপুদুর-এ জন্ম হয়েছিল কেশব সোমখাজী নামক এক ব্রাহ্মণের পুত্র ‘লক্ষ্মণ’-এর, উত্তরকালে যাঁর নাম হয় আচার্য রামানুজ। এই ১০১৭ খ্রিস্টাব্দেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহাপণ্ডিত আল বিরুনি ভারতে এসে লিখতে শুরু করেন তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ তারিক-আল-হিন্দ।

একশো কুড়ি বছর বেঁচেছিলেন এই ভক্তজ্ঞানী ধর্মপ্রচারক দার্শনিক। সারা বিশ্বে ২০১৭ সালে রামানুজের জন্মের সহস্রাব্দ উদযাপিত হয়েছে। বিশেষত দক্ষিণ ভারতে, যেখানে তামিলনাড়ুর ‘আয়েঙ্গার’ নামধারী বৈষ্ণব বৈদিকরা আজও নিজেদের রামানুজ প্রবর্তিত ‘শ্রী’ সম্প্রদায়ের অনুগামী বলে মনে করেন। ‘সম্প্রদায়’ শুনলেই কলকাতার বাঙালি ‘সাম্প্রদায়িকতা’র ভয়ে আঁতকে ওঠেন।

অথচ সংগীতের ঘরানা- পাশ্চাত্য দর্শনে ‘স্কুল অব থট’- চিন্তার পরম্পরার মতো ‘সম্প্রদায়’ একটা ট্র্যাডিশনের আবহমানতারই পবিত্র নাম। ঠিক যে রকম সুস্থ ন্যায়পরায়ণ গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে গেলে জীবনের সর্বস্তরে যে সামূহিক বিচার-আচরণের নীতি মানতে হয়, তাকেই বলে ‘পলিটিক্স’ (গায়ত্রী স্পিভাক যার বাংলা করেন ‘পৌরধর্ম’)

অথচ বাংলার সব থেকে সমর্পিতপ্রাণ পলিটিক্যাল নেতৃবৃন্দই ‘পলিটিক্স করা’ কথাটিকে একটা চরম গালি হিসেবে অন্যদের বিষয়ে প্রয়োগ করেন, তেমনই ঈশ্বর দর্শনের জন্য অথবা নিরীশ্বর সাংখ্য মতেও ‘আমি কে’ অথবা ‘আমি কেউ না’-এই সমাধিজ জ্ঞান লাভ করতে গেলেও সাধনা করতে হয় একটা না একটা ‘সম্প্রদায়’-ধারা অবলম্বনে। ‘সম্প্রদায়’ তাই ধর্মীয় গোঁড়ামির একটা সংকীর্ণ গলিপথের নাম নয়।

অদ্বৈতবাদী শংকরপন্থীরা যেমন দশনামী সম্প্রদায়, যার মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ, তোতাপুরীর কথা মনে রেখে রামকৃষ্ণ মিশনকেও অন্তর্ভুক্ত করে রেখে গিয়েছেন, ঠিক তেমনই রামানুজপন্থী শ্রীসম্প্রদায়ও বিশিষ্টাদ্বৈতদর্শন অবলম্বন করে ‘বড়্‌গলঈ’, ‘তেঙ্গলঈ’- এই দুই ধারায় প্রায় ন’শো বছর ধরে আজও প্রবর্তিত মন্দিরে মন্দিরে, আশ্রমে আশ্রমে এবং গৃহে গৃহে।

যাঁরা বাঁদরের বাচ্চার মতো নিজের পুরুষকার দিয়ে নারায়ণ-মা’এর পেট ধরে ঝুলে থাকতে চান তাঁরা বড়্‌গলঈ। যাঁরা শরণাগত হয়ে নারায়ণ-মা’এর মুখে ধরা বেড়ালের বাচ্চার মতো ঈশ্বর-নির্ভর হয়ে সব ভার ভগবানে সমর্পণ করে ভক্তির সাধনা করেন, তাঁরা তেঙ্গলঈ। এই দুই উপ-সম্প্রদায়ের কপালের তিলকও একটু আলাদা ধরনের।

মেধাবী রামানুজের অল্প বয়সেই বিয়ে-থা হয়ে গিয়েছিল। শংকরাচার্যের মতো তিনি অল্প বয়সেই ব্রহ্মচর্য থেকে সন্ন্যাসে উত্তীর্ণ হননি। দীর্ঘকাল গার্হস্থ্য ধর্ম পালন করবার পর তিনি প্রথমে অদ্বৈতবাদী গুরু যাদবপ্রকাশের কাছে প্রায় দশ বছর ধরে বেদবেদান্ত এবং বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্র অধ্যয়ন করেন। এক দিকে যেমন তাঁর পত্নীর সঙ্গে খটাখটি লেগেই থাকত (যেমন থাকত প্লেটোর গুরু গ্রিক দর্শনের মহাচার্য কুদর্শন সক্রেতিস-এর),

অন্য দিকে গুরু যাদবপ্রকাশের সঙ্গেও তাঁর থেকে বেশি প্রতিভাশালী ছাত্র রামানুজের খটাখটি লেগে থাকত। উপনিষদের একটি শ্লোকের আক্ষরিক ব্যাখ্যা করেছিলেন যাদবপ্রকাশ, সেই ব্যাখ্যায় ভগবানের আরক্তিম চোখের সঙ্গে বাঁদরের রক্তিম পশ্চাৎভাগের তুলনাতে ব্যথিত হয়ে রামানুজ সবিনয়ে অন্য ব্যাখ্যা দিয়ে ‘কপি’ শব্দের ‘সূর্য’ মানে করেছিলেন।

আর সূর্য উঠলে যা বিকশিত হয় সেই পদ্মের রক্তিম আভার তুলনায় ভগবানের চোখের বর্ণনাই উপনিষদের অভিপ্রেত বলে দাবি করেছিলেন। যাদবপ্রকাশ নাকি এর পর ছলনা করে রামানুজকে জলে ডুবিয়ে মারারও চেষ্টা করেন। যাই হোক, অতঃপর মহাপূর্ণাচার্য নামে একজন বিষ্ণুভক্ত মহাপুরুষ রামানুজকে বলেন প্রাচীনতম দার্শনিক যামুনাচার্যের কথা।

মহাপূর্ণাচার্য তাঁকে উপদেশ দিলেন এক জন বিষ্ণুভক্ত আচার্য গোষ্ঠীপূর্ণের কাছ থেকে পরমপাবন অতি গোপন নারায়ণের মন্ত্র জেনে নিতে। গোষ্ঠীপূর্ণ সতেরো বার রামানুজকে ফিরিয়ে দিলেন। শেষে আঠারোতম প্রয়াসে যখন রামানুজের কানে কানে এই গুহ্যাতিগুহ্য দুর্লভ মন্ত্র বললেন, তখন তাঁকে দিয়ে শপথ করিয়ে নিলেন যে তিনি দ্বিতীয় কাউকে এই মন্ত্র কখনও বলবেন না, কারণ অতি মহাপাপীও এই মন্ত্র জপ করলে মুক্তি লাভ করে।

যামুনাচার্যও ছিলেন অতি তার্কিক। ‘আত্মসিদ্ধি’, ‘ঈশ্বরসিদ্ধি’, ‘সংবিৎসিদ্ধি’, ‘আগমপ্রামাণ্য’ ইত্যাদি তাঁর রচিত বইগুলি দশম শতাব্দী থেকে একুশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় দর্শনের অবশ্যপাঠ্য টেক্সটবুক হয়ে মর্যাদা পাচ্ছে। আসলে রামানুজ সম্প্রদায়ের আদিগুরু এই যামুনাচার্য। কিশোর বয়সে এক দাম্ভিক রাজপুরোহিতকে তর্কে পরাস্ত করেছিলেন বলে তাঁর নাম হয়েছিল ‘আল-বন্দার’ (তামিল ভাষায় যার মানে ‘এই এসে জয় করবে!’)।

সমস্ত দম্ভ-দর্প-অভিমান ত্যাগ করে ‘দীন হীন অনন্যশরণ’ হয়ে ঠাকুরের চরণে আশ্রয় নেওয়ার চিরস্মরণীয় স্তোত্র তাঁর রচিত ‘আল-বন্দার স্তোত্র’, যার থেকে দু-তিনটি ছত্র প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা আবৃত্তি করাতেন আমার ঠাকুর শ্রীশ্রীসীতারামদাস ওংকারনাথ।

‘আমি ধর্মনিষ্ঠ নই, আমি নিজেকেও জানি না, আমার তোমার চরণে কোনও ভক্তিও নেই, আমার সন্বল বলতে কিছুই নেই, আর তুমি ছাড়া কোনও গতি নেই বলে তোমার পাদমূলে আমি শরণ নিলাম। এমন কোনও নিন্দিত কাজ নেই যা আমি হাজার বার করিনি, আজ বিপাকে পড়ে তোমার সামনে, হে মুকুন্দ, আমি কাঁদছি।’

যামুনাচার্যের এই ভক্তি ও শরণাগতির দর্শন রামানুজের মনে শংকরাচার্যের ‘আমিই ব্রহ্ম, জগৎ মিথ্যা’-র থেকে অনেক বেশি সাড়া জাগানো। আসলে রামানুজ ছিলেন ভক্তি ও ভালবাসার প্রতিমা।

যামুনাচার্যেরই অলক্ষ্য (গুরু মহাপূর্ণাচার্যের প্রত্যক্ষ আদেশে) রামানুজ শংকরমতকে খণ্ডন করে ব্রহ্মসূত্রের ‘শ্রীভাষ্য’ লিখলেন বটে, কিন্তু তাঁর মন পড়ে রইল কাঞ্চীর জাগ্রত বিষ্ণুমূর্তি বরদরাজের সেবায়, পরবর্তী জীবনে অনন্তশয্যায় শয়ান মন্দির-নগরী শ্রীরঙ্গমের অধিষ্ঠাতা ‘রঙ্গনাথজি’র পাদপদ্মে।

মহাপূর্ণাচার্য তাঁকে উপদেশ দিলেন এক জন বিষ্ণুভক্ত আচার্য গোষ্ঠীপূর্ণের কাছ থেকে পরমপাবন অতি গোপন নারায়ণের মন্ত্র জেনে নিতে। গোষ্ঠীপূর্ণ সতেরো বার রামানুজকে ফিরিয়ে দিলেন। শেষে আঠারোতম প্রয়াসে যখন রামানুজের কানে কানে এই গুহ্যাতিগুহ্য দুর্লভ মন্ত্র বললেন, তখন তাঁকে দিয়ে শপথ করিয়ে নিলেন যে তিনি দ্বিতীয় কাউকে এই মন্ত্র কখনও বলবেন না, কারণ অতি মহাপাপীও এই মন্ত্র জপ করলে মুক্তি লাভ করে।

এই শূদ্রবর্ণীয় জন্মসিদ্ধ আড়বার শঠকোপের প্রেম-ভক্তির ধারা, পাঞ্চরাত্র আগমের (বৈষ্ণবতন্ত্র) ভগবানের মূর্তিকেই ‘অর্চাবতার’ অর্থাৎ সাক্ষাৎ চিন্ময় বিগ্রহ বলে নানা উপচারে আরাধনা ও সেবা করার ধারা, আর ব্রহ্মসূত্রের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী ব্যাখ্যার ধারা- এই তিন ধারা মিলিয়ে রামানুজাচার্যের দর্শন। ইউরোপ, আমেরিকায় ইদানীং বারুখ স্পিনোজার দর্শনের পুনরুদ্ধার ও নতুন চর্চা চলছে।

রামানুজ মন্ত্র পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে চারিদিকে চেয়ে দেখলেন, সংসারের দুঃখ-দহনে ঝলসে মরছে শত শত নরনারী। জাতিবর্ণনির্বিশেষে স্থানীয় সব মানুষজনকে ডেকে তিনি একটা মন্দির চত্বরে জড়ো করে, মন্দিরের সিঁড়ির ওপর থেকে চিৎকার করে সেই আট অক্ষরের মহামন্ত্র শুনিয়ে দিলেন।

ব্যাপার শুনে গুরু গোষ্ঠীপূর্ণ ক্রোধে জ্বলে উঠে রামানুজকে ভর্ৎসনা করে বললেন, ‘এ তুমি কী করলে?’ রামানুজ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমি একা অনন্ত নরক-যন্ত্রণা ভোগ করবার বিনিময়ে যদি এত সহস্র নরনারী সংসার-যাতনা থেকে মুক্তি পায় তা হলে আমি তাতে সানন্দে রাজি আছি। তাই আমি আপনার আজ্ঞা লঙ্ঘন করেছি।’

যামুনাচার্যেরও আগে অবৈদিক দ্রাবিড়দেশীয় কৃষ্ণভক্তির ট্র্যাডিশন ছিল, যার আদিতে ছিলেন নাম্মাড়বার বা শঠকোপস্বামী। জাতিতে শূদ্র। অলৌকিক শিশু আজন্ম নিরাহার নির্জল উপবাসী হয়ে তেঁতুল গাছের তলায় নারায়ণের ধ্যানে সমাহিত ছিলেন দশ-বারো বছর। আজও রামানুজের বিষ্ণুমন্দিরে গেলে রুপোর একটি টুপির মতো জিনিস দিয়ে মাথায় আশীর্বাদ করা হয়।

তার নাম ‘শঠকোপ’। এই শঠকোস্বামী তথা নাম্মাড়বারের দিব্য-প্রবন্ধ এক হাজারটি কবিতা ‘তিরুবায়মোড়ি’-দ্রাবিড়বেদ নামে তামিল ভক্তিসাহিত্যের মুকুটমণি হয়ে আছে।

এই শূদ্রবর্ণীয় জন্মসিদ্ধ আড়বার শঠকোপের প্রেম-ভক্তির ধারা, পাঞ্চরাত্র আগমের (বৈষ্ণবতন্ত্র) ভগবানের মূর্তিকেই ‘অর্চাবতার’ অর্থাৎ সাক্ষাৎ চিন্ময় বিগ্রহ বলে নানা উপচারে আরাধনা ও সেবা করার ধারা, আর ব্রহ্মসূত্রের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী ব্যাখ্যার ধারা- এই তিন ধারা মিলিয়ে রামানুজাচার্যের দর্শন। ইউরোপ, আমেরিকায় ইদানীং বারুখ স্পিনোজার দর্শনের পুনরুদ্ধার ও নতুন চর্চা চলছে।

স্পিনোজা যে রকম চেতন জীবন এবং অচেতন জড় জগৎকে ব্রহ্মের (তাঁর ভাষায় স্বতঃসত্তাবান ‘দ্রব্য’- সাবস্ট্যান্স)-এর গুণ হিসেবে প্রমাণ করেছেন, ঠিক সেই রকমই, কেবল স্পিনোজার পাঁচশো বছর আগে, রামানুজাচার্য আমাদের মতো সচেতন আত্মাগুলি আর আমাদের শরীর ও মাটি-পাথর-জল-আগুনের জড় জগৎ- এই চিৎ আর অচিৎ-এর বিশেষণে বিশিষ্ট অদ্বিতীয় একমাত্র স্বতন্ত্র সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান সর্বব্যাপী নারায়ণকেই ব্রহ্ম বলে মেনেছেন।

কেবল শংকরের ব্রহ্ম নির্গুণ, নিরাকার; রামানুজের ব্রহ্ম সগুণ, সাকার। শংকরের কাছে জগৎটা (অন্তত পারমার্থিক বা ‘আলটিমেট’ দৃষ্টিতে) মিথ্যা, মায়া। রামানুজের কাছে জগৎটা শুধু সত্য নয়, ব্রহ্ম-নারায়ণের শরীর।

তা হলে বিচার-বিতর্কের দিক থেকে রামানুজের দর্শন শংকরের থেকে কোনও অংশে কম তুখড় নয়। যে অজ্ঞান, অবিদ্যা বা মায়ার দ্বারা ব্রহ্ম-দড়িকে আমরা জগৎ-সাপ মনে করে ভুল করছি, সেই মায়াটা থাকে কোথায়? অখণ্ড বিশুদ্ধ ব্রহ্মচৈতন্যেও তার স্থান নেই। আবার সেই মায়ারই সৃষ্টি জীবচৈতন্য- তা-ও হতে পারে না মায়ার আশ্রয়। মায়াকে আশ্রয় করেই জীব হয়েছে, সেই জীবকে আশ্রয় করে মায়া থাকলে পরস্পরাশ্রয় দোষ ঘটে।

তা হলে ‘আমি কে’- এই প্রশ্নের উত্তর কী দাঁড়াল? রামানুজ বলবেন মাটিজলআগুনবাতাসআকাশে তৈরি আমার শরীরটা আমি নই। আমি এই শরীরের ভেতরে থাকা সূক্ষ্ম (জ্যামিতির বিন্দুর মতো স্থানিক ব্যাপ্তিশূন্য) অণুপরিমাণ চিৎকণা। আমার সঙ্গে জগতের একমাত্র পরমসত্তার কী সম্বন্ধ?

চারটি সম্বন্ধ। পরমপুরুষোত্তম পূর্ণ-আমি তাঁর অংশ, তরঙ্গ যেমন সমুদ্রের। ব্রহ্ম হলেন বিশেষ্য দ্রব্য, আমি হলাম তাঁর বিশেষণ-গুণ। ঈশ্বর/ব্রহ্ম/বিষ্ণু হলেন আত্মা, আর আমার আত্মাটিও তাঁর শরীর। চতুর্থ সম্পর্কটিই সব থেকে মধুর এবং শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয়, ‘তিনি ঈশ্বর হলেন প্রভু-কর্তা, আমি তাঁর দাস-কিংকর।’ এই সব ক’টি মিলিয়ে পারিভাষিক অর্থে ব্রহ্ম হলেন ‘শেষী’, জীব তাঁর ‘শেষ’।

পরমহংসের প্রিয়তম যুবা নরেন্দ্রনাথ দত্তের লজিকাল মস্তিষ্কের ঝোঁক ছিল নিরাকার অদ্বৈত মতের দিকে, যে মতের সংক্ষিপ্তসার হল ‘ব্রহ্ম নির্গুণ এবং সত্য। জগৎ মিথ্যা এবং মায়া। জীব আর ব্রহ্মে কোনও ভেদ নেই।’ কিন্তু ১৮৮৫-র ১১ মার্চ সন্ধেবেলায় দক্ষিণেশ্বরে অবতারবাদে অবিশ্বাসী নরেন্দ্রনাথকে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস বোঝাচ্ছেন: ‘শংকর যা বুঝিয়েছেন তা-ও আছে। আবার রামানুজের বিশিষ্টদ্বৈতবাদও আছে।’

ইংরেজি ফিলসফি পড়া নরেন্দ্র জিজ্ঞাসা করছেন, ‘বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ কী? (উদ্বোধন প্রকাশনীর ‘কথামৃত’ বইয়ের ৮৯৭ পৃষ্ঠায়) কবি শ্রীরামকৃষ্ণ জীবজগৎবিশিষ্ট ব্রহ্ম যেন একটি পুরো বেল ফল, যার শুধু শাঁস (শুদ্ধ চৈতন্যটুকু) নয়, বিচি, খোল, সব মিলিয়েই সত্য মানতে হয়, তা-ই বোঝাচ্ছেন। আধুনিক পশ্চিমী ভাষায় রামানুজের দর্শন রিয়ালিজম বা বাস্তববাদ, এবং সাধনা ও জীবনচর্যার বিষয়ে ভক্তি ও শরণাগতির ভাবাবেগপ্রধান।

তা হলে বিচার-বিতর্কের দিক থেকে রামানুজের দর্শন শংকরের থেকে কোনও অংশে কম তুখড় নয়। যে অজ্ঞান, অবিদ্যা বা মায়ার দ্বারা ব্রহ্ম-দড়িকে আমরা জগৎ-সাপ মনে করে ভুল করছি, সেই মায়াটা থাকে কোথায়? অখণ্ড বিশুদ্ধ ব্রহ্মচৈতন্যেও তার স্থান নেই। আবার সেই মায়ারই সৃষ্টি জীবচৈতন্য- তা-ও হতে পারে না মায়ার আশ্রয়। মায়াকে আশ্রয় করেই জীব হয়েছে, সেই জীবকে আশ্রয় করে মায়া থাকলে পরস্পরাশ্রয় দোষ ঘটে।

এই ‘আশ্রয়-অনুপপত্তি’ ছাড়াও, ‘স্বরূপ-অনুপপত্তি’, ‘প্রমাণ-অনুপপত্তি’, ‘অনির্বচনীয়তা-অনুপপত্তি’, ‘তিরোধান-অনুপপত্তি’, ‘নিবর্তক-অনুপপত্তি’ আর ‘নিবৃত্তি-অনুপপত্তি’-এই সাতখানা তির মেরে রামানুজ শংকরের মায়াবাদকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিলেন।

আজও পর্যন্ত সেই তাত্ত্বিক বিতর্কের উত্তর-প্রত্যুত্তর চলছে ভারতীয় দার্শনিক মহলে। এই কলকাতারই উপকণ্ঠে খড়দহ ‘বলরামধর্মসোপান’-এ রামানুজের শ্রীভাষ্যের বাংলা অনুবাদ কিনতে পাওয়া যায়। ইংরেজিতেও আলাদা করে এই সাত-অনুপপত্তির ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রকাশিত আছে।

যদি রামানুজাচার্যের এই দার্শনিক বিতর্কে অনুৎসাহী কেউ শুধু ‘আমি কে’ এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করবার জন্য প্রেরণা পেতে চান, তা হলে রামানুজের ভগবদ্গীতা ভাষ্যের ইংরেজি বা বাংলা অনুবাদে বিশেষত দ্বিতীয় আর ত্রয়োদশ অধ্যায় পড়লে বেশ স্পষ্টভাবে অন্তত তাঁর মতটা বুঝতে পারবেন। বেদান্তসূত্রের শ্রীভাষ্যের মঙ্গলাচরণে রামানুজ যে অপূর্ব কবিতা লিখেছেন, বাংলায় তার অনুবাদ করে, হাজার বছর আগে আবির্ভূত এই আচার্যের স্মরণ শেষ করছি-

অখিল ভুবন জন্ম-স্থিতি-লয় এই সব যাঁর খেলা শুধু,
মানব বা পশুপাখি, যে তাঁর শরণ নেয় বিনম্র হৃদয়ে-
তাদের রক্ষণই যাঁর একমাত্র ব্রত, সেই ব্রহ্মনারায়ণে
সেই বেদশীর্ষভাগে দীপ্তজ্যোতির্ময়
শ্রীলক্ষ্মীনিলয়ে হয় ভক্তির ঐশ্বর্য যেন আমার অক্ষয়।

সেবার গরুড়-মহোৎসব উপলক্ষে গরুড়স্কন্ধে সমাসীন রঙ্গনাথজীকে নিয়ে বাদ্যসহ বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে বিরাট শোভাযাত্রা বার হয়েছে। অগণিত নরনারীর ভিড়ে পথ পরিপূর্ণ। শিষ্যগণসহ রামানুজ পথ অতিক্রম করতে সহসা এক জায়গায় দেখলেন, এক বলিষ্ঠ যুবক তাঁর পার্শ্ববর্তিনী রূপলাবণ্যবতী এক তরুনীর মাথার উপর এক হাতে ছাতা ধরে আছে আর অন্য হাতে একটি পাখা দিয়ে বাতাস করছে।

তা দেখে অনেকে উপহাস করছে। যুবকটির দৃষ্টি তরুণীটির মুখের উপর নিবদ্ধ। রামানুজেরও সেদিকে দৃষ্টি পড়তে তিনি যুবকটিকে ডাকিয়ে আনিয়ে বললেন, ‘তুমি ঐ যুবতীর মধ্যে এমন কি মহান বস্তু পেয়েছ যার জন্য সব লজ্জা ভয় ত্যাগ করে এমন উপহাসাস্পদ কাজ করছ?’

যুবকটি সরলভাবে বলল, ‘যুবতীটি তার বিবাহিতা পত্নী নয়, প্রেমিকা। কিন্তু সারা বিশ্বের মধ্যে যত সুন্দর ও আনন্দময় বস্তু আছে, তার থেকে তার প্রেমিকার পদ্মের মতো চোখ দুটি প্রিয় তার কাছে। তাই সেই চোখের দিকে সব ভুলে সব সময় তাকিয়ে থাকতে চায়।’ জানা যায়, তার নাম ধনুদাস আর তার প্রেমিকার নাম হেমাম্বা।

রামানুজ তখন বললেন, ‘আমি যদি ওর থেকেও সুন্দর তর চোখ দেখাতে পারি?’

যুবক বলল, ‘তা পারবেন না। যদি পারেন, তাহলে তার কাছেই নিজেকে বিকিয়ে দেব।’

রামানুজ যুবকটিকে সেইদিন সন্ধ্যায় আরতির সময় রঙ্গনাথজীর মন্দিরে নিয়ে গেলেন। সেদিন বিগ্রহমূর্তির সর্বাঙ্গে এমন দিব্যদ্যুতি আগে কখনো দেখা যায়নি। এমন অপরূপ সৌন্দর্যের মাধুরিমায় কখনো এমনভাবে সমৃদ্ধ হয়নি তাঁর নয়ন পদ্মদুটি। সঙ্গে সঙ্গে সে নয়নপদ্মের অমোঘ অপার্থিব আকর্ষণে চিরতরে বাঁধা পরে গেল ধনুদাস।

এক অপ্রকৃত আনন্দানুভূতির উন্মাদনায় রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল তার দেহ। এক মর্ত্য মানবীর প্রতি তাঁর প্রেম ঈশ্বরপ্রেমে পরিণত হল এক মুহূর্তে। ধনুদাস তখনই আচার্য রামানুজের শিষ্যত্ব গ্রহণ করল। প্রেমিকাকে নিয়ে এলো তাঁর চরণাশ্রয়ে। মঠের নিকট এক কুটির নির্মাণ করে প্রেমিক-প্রেমিকা তাতে বাস করে সাধনা করে যেতে লাগলো।

রামানুজ-শিষ্যগণ আড়াল থেকে প্রেমিক প্রেমিকার এইসব কথাবার্তা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। তারা ফিরে গিয়ে আচার্যকে এইসব কথা জানালে আচার্য হেসে বললেন, ‘তোমরা সেদিন সামান্য বস্ত্রাঞ্চল ছেঁড়ার জন্য ঝগড়া করেছিলে আর ভক্ত ধনুদাস ও হেমাম্বা তাদের সর্বস্ব হারাতে না পেরে মনস্তাপে জ্বলে পুড়ে মরছে। এবার বিচার করে দেখো প্রকৃত বৈরাগ্যবান সাধক কারা।’

অল্পদিনের মধ্যেই তারা প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল গুরু রামানুজের। তাদের প্রতি আচার্যের এই কৃপা মঠের কয়েকজন ব্রাহ্মণ শিষ্য ভালো চোখে দেখতে পারেননি। তাই এক অদ্ভুত লীলাভিনয়ের দ্বারা তাদের শিক্ষা দিলেন আচার্য।

সেদিন নিশীথ রাত্রিতে মঠের শিষ্যগণ সকলে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পরলে রামানুজ প্রত্যেকের কাপড়ের আঁচল থেকে একটা করে অংশ ছিড়ে নিলেন। পরদিন সকালে উঠে শিষ্যগণ একে অন্যকে দোষারোপ করতে লাগল। এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া বেধে গেল। অবশেষে গুরুর হস্তক্ষেপে তারা শান্ত হলো।

এরপর একদিন রাত্রিতে সেই শিষ্যদের ডেকে আচার্য বললেন, ‘আমি ধনুদাসকে ডেকে কথাবার্তার ছলে এখানে বসিয়ে রাখব। সেই সুযোগে তোমরা তার ঘরে গিয়ে তার ঘুমন্ত প্রেমিকার গয়নাগুলি খুলে নিয়ে আসবে। এতে তাদের কি প্রতিক্রিয়া হয় তা লক্ষ্য করবে।

হেমাম্বা তখন পাশ ফিরে শুয়ে থাকায় শিষ্যরা এক পাশের গয়নাগুলি খুলে নিল। হেমাম্বা তখন জেগে ছিল। সে স্বেচ্ছায় তার অন্য পাশের গয়নাগুলি দেবার জন্য পাশ ফিরতেই শিষ্যেরা ভয়ে চলে গেল। ধনুদাস ফিরে এলে হেমাম্বা একথা জানালো তাকে।

ধনুদাস তাকে রেগে গিয়ে বলল, ‘কেন তুমি পাশ ফিরতে গেলে? ভগবানের চরণে আত্মসমর্পণ করে তুমি নিশ্চল হয়ে শুয়ে থাকলে তোমাকে ঘুমন্ত ভেবে তাঁরা তোমার সব গয়নাগুলিই খুলে নিতেন। আমার অঙ্গ, আমার অলংকার,  আমি দান করবো, এই আত্মাভিমান তোমার এখনও যায়নি। তাই বিষয়বিষ্ঠা, কাঞ্চন বহনের ভার থেকে নিষ্কৃতিলাভের সুযোগ পেয়েও তা হারালে।’

রামানুজ-শিষ্যগণ আড়াল থেকে প্রেমিক প্রেমিকার এইসব কথাবার্তা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। তারা ফিরে গিয়ে আচার্যকে এইসব কথা জানালে আচার্য হেসে বললেন, ‘তোমরা সেদিন সামান্য বস্ত্রাঞ্চল ছেঁড়ার জন্য ঝগড়া করেছিলে আর ভক্ত ধনুদাস ও হেমাম্বা তাদের সর্বস্ব হারাতে না পেরে মনস্তাপে জ্বলে পুড়ে মরছে। এবার বিচার করে দেখো প্রকৃত বৈরাগ্যবান সাধক কারা।’

তাই চোখ হচ্ছে জীবের পরম শত্রু। এই শত্রুর হাত থেকে আমায় বাঁচিয়ে প্রকৃত বন্ধুর কাজই করেছ তোমরা। শ্রীরঙ্গনাথ তোমাদের মঙ্গল করুন।’

চোল রাজ্যের রাজা কৃমিকন্ঠ ছিলেন গোঁড়া শৈব উপাসক। তিনি ছিলেন চরম বৈষ্ণববিদ্বেষী। সারা দক্ষিণাত্যে রামানুজের খ্যাতি প্রতিপত্তি বেড়ে যাওয়ায় চোলরাজ শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। তিনি ভাবলেন, রামানুজ জীবিত থাকলে শৈবমত কখনই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে না। তাই রামানুজের প্রাণনাশের অভিসন্ধি করে তাঁকে রাজ্যসভায় ডেকে পাঠালেন।

শ্রীরঙ্গম মঠের ভক্তগণ চোলরাজের দুরভিসন্ধির কথা বুঝতে পেরে আচার্য রামানুজকে যেতে দিতে চাইলেন না। তখন ভক্ত প্রধান কু্রেশ এসে আচার্যকে বললেন, জীবকল্যাণের জন্য আপনাকে বাঁচতে হবে। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে আপনাকে ঠেলে দিতে পারব না। আপনার কাষায় বস্ত্র পরে আমি সেখানে গিয়ে রামানুজ বলে পরিচয় দেব।

আপনি বরং শিষ্যদের নিয়ে এখনই দূর বনাঞ্চলে কোথাও চলে যান। কুরেশ রাজসভায় চলে যাবার পর রামানুজও সকলের অনুরোধে শিষ্যদের নিয়ে দূর বনে চলে গেলেন।

এদিকে চোলরাজা কুরেশকে রামানুজ মনে করে মনে করে ক্রোধে অগ্নিমূর্তি হয়ে বললেন, এই দুর্বৃত্তের উপযুক্ত দণ্ড মৃত্যু। কিন্তু এক সময়ে এ আমার বোনকে দুরারোগ্য ব্যাধির কবল থেকে বাঁচিয়েছিল। তাই এর দণ্ডবিধান হবে চির অন্ধত্ব। এর চোখদুটো শলাকা দিয়ে বিদ্ধ করে এখনই নষ্ট করে দাও। এ কথা শুনে ভয় না পেয়ে আনন্দিত হয়ে উঠলেন কুরেশ। তাঁর চোখ দুটির পরিবর্তে গুরুদেবের জীবন রক্ষা করতে পেরেছেন।

ঘাতক চোখদুটি নষ্ট করে দিলে কুরেশ রাজা সভাসদদের বললেন, ‘ওগো, তোমরা আমার পরম বন্ধু। জীবন দেহের নয়ন জৈববস্তু বলে তা কখনো পরপুরুষের সামনে পৌঁছতে পারে না, বরং তা মায়াময় জগৎ প্রপঞ্চের দিকেই মনকে টেনে রাখে। তাই চোখ হচ্ছে জীবের পরম শত্রু। এই শত্রুর হাত থেকে আমায় বাঁচিয়ে প্রকৃত বন্ধুর কাজই করেছ তোমরা। শ্রীরঙ্গনাথ তোমাদের মঙ্গল করুন।’

এইভাবে অন্ধ হয়ে শ্রীরঙ্গমে ফিরে এলেন কুরেশ। এর কিছুকাল পরেই অত্যাচারী উগ্র চোলরাজ এক দুরারোগ্য রোগে ভুগে মারা যান। আচার্য রামানুজ তখন যাদবাদ্রি নামে এক স্থানে অবস্থান করছিলেন। কুরেশ সেখানে গুরুদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে পরম স্নেহভরে উপরে আলিঙ্গন করলেন। অশ্রুবর্ষণ করতে করতে বললেন, বৎস, বরদরাজের কাছে নয়নদুটি ভিক্ষা চাও।

অচিরেই তা তুমি ফিরে পাবে। কিন্তু কুরেশ বিগ্রহের সম্মুখে রাজার আদেশে যে ব্যক্তি তাঁর চোখ নষ্ট করেছিল তার কল্যাণ ও তার গ্রামের কল্যাণ প্রার্থনা করেন‌। পরে অবশ্য গুরুর আদেশে বরদরাজের কাছে নয়নভিক্ষা করেন এবং তা ফিরে পান।

………………….
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………….
আরও পড়ুন-
স্বামী অড়গড়ানন্দজী
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব
শিরডি সাই বাবা
পণ্ডিত মিশ্রীলাল মিশ্র
নীলাচলে মহাপ্রভুর অন্ত্যলীলার অন্যতম পার্ষদ ছিলেন রায় রামানন্দ
ভক্তজ্ঞানী ধর্মপ্রচারক দার্শনিক রামানুজ
সাধক ভোলানন্দ গিরি
ভক্ত লালাবাবু
লাটু মহারাজ শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্ভুত সৃষ্টি
কমলাকান্ত ভট্টাচার্য
ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন
পরিব্রাজকাচার্য্যবর শ্রীশ্রীমৎ দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেব
আর্যভট্ট কাহিনী – এক অজানা কথা
গিরিশচন্দ্র ঘোষ
কঠিয়াবাবা রামদাস
সাধু নাগ মহাশয়
লঘিমাসিদ্ধ সাধু’র কথা
ঋষি অরবিন্দ’র কথা
অরবিন্দ ঘোষ
মহাত্মাজির পুণ্যব্রত
দুই দেহধারী সাধু
যুগজাগরণে যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ
শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর
বাচস্পতি অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে
মুসলমানে রহিম বলে হিন্দু পড়ে রামনাম
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : প্রথম খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব: দ্বিতীয় খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : অন্তিম খণ্ড
মহামহোপাধ্যায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ
শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর
শ্রীশ্রী ঠাকুর সত্যানন্দদেব
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: এক
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: দুই
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: তিন
সাধক তুকারাম
সাধক তুলসীদাস: এক
সাধক তুলসীদাস: দুই
সাধক তুলসীদাস: তিন
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: এক
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: দুই
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!