ভবঘুরেকথা
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী

লাহিড়ী মহাশয়ের এক বরেণ্য বন্ধু ছিলেন ত্রৈলঙ্গ স্বামী। লোকে বলে তাঁর বয়স তিনশ বছরেরও বেশি। মহাযোগীদ্বয় প্রায়ই একত্র ধ্যানে বসতেন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী এতো বেশি সুপরিচিত আর তাঁর যশ এত সুদূরবিস্তৃত ছিল যে, তাঁর অলৌকিক ঘটনার সত্যতা সম্বন্ধে কেউ কোনো প্রশ্নই উত্থাপন করে না।

আজকে যদি যীশুখ্রিষ্ট পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলতে গিয়ে তাঁর দৈবশক্তি প্রদর্শন করতেন, তাহলে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হতো, ত্রৈলঙ্গ স্বামী বহু বৎসর পূর্বে কাশীর গলি দিয়ে হেঁটে যেতে, সেই রকমই উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন সেইসব সিদ্ধপুরুষদিগের মধ্যে একজন, যাঁরা ভারতবর্ষকে কালের গ্রাস হতে রক্ষা করে এসেছেন।

অনেক সময় ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে দেখা যেত তিনি কালকূট পান করছেন, তাতে তাঁর কখনোই কোনো কুফল হয়নি। হাজার হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে জনকতক এখনো বেঁচে, তাঁরা গঙ্গার জলের উপর ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে ভাসতে দেখেছেন। দিনের পর দিন তিনি জলের উপর বসে থাকতেন অথবা জলের তলায় বহুক্ষণ ধরে লুকিয়ে পরে থাকতেন।

কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটে প্রচণ্ড সূর্যকিরণে উত্তপ্ত প্রস্তরখণ্ডের উপর ত্রৈলঙ্গ স্বামী নিস্পন্দভাবে পরে রয়েছেন, এ অতি সাধারণ দৃশ্য ছিল। এই সকল অলৌকিক ক্রিয়াকলাপে তিনি মানুষকে এই শিক্ষাই দিতে চেয়েছেন যে, যোগীর জীবন শুধু অক্সিজেন বা কতকগুলি অবস্থাবিশেষ বা কোনো প্রকার সাবধানতার উপর নির্ভর করে না।

জলের উপরেই হোক আর জলের নিচেই হোক, কিম্বা উত্তপ্ত প্রস্তরখণ্ডের উপর তাঁর নিস্পন্দ উলঙ্গদেহ পরেই থাকুক, ত্রৈলঙ্গস্বামী প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরচৈতন্যের মধ্যেই সঞ্জীবিত; মৃত্যু তাঁকে স্পর্শও করতে পারে না। যোগীবর যে শুধু আধ্যাত্মিকতাতেই বিশাল মাপের ছিলেন তা নয়, তাঁর দেহটিও ছিল বিপুল।

হতাশ হয়ে পুলিশের লোকরা আবার তাঁকে জেল কুঠুরিতে ঢোকাল। এবার দরজার কাছে একজন প্রহরীও রাখা হল। কিন্তু হলে কি হবে? দৈবশক্তির কাছে আইন আবার হেরে গেল। আবার দেখা গেল, ত্রৈলঙ্গ স্বামী পরম ঔদাসীন্যে কারাগারের ছাদের উপর পদচারণ করে বেড়াচ্ছেন, কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। 

দেহের ওজন ছিল তিনশত পাউণ্ড অর্থাৎ আয়ুর প্রত্যেকটি বছরের দরুণ এক পাউণ্ড হিসাবে আর কি! আহার করতেন ক্বচিৎ কদাচিৎ; কাজেই দেহ কেমন করে যে এরূপ বিশাল হল, তা বাস্তবিকই রহস্যজনক। সিদ্ধযোগীরা স্বাস্থ্যের সাধারণ নিয়মকানুন সব উপেক্ষা করে চলতে পারেন, যদি কোনো বিশেষ কারণে তা করার দরকার হয়।

ঐ কারণ অতি সূক্ষ্ম, অতি গূঢ়, কেবল তিনি নিজেই জানেন। বড় বড় সাধুসন্তরা, যাঁদের মায়াস্বপ্ন টুঁটে গেছে আর এই বিশ্বজগতকে ঈশ্বরের মনের একটা পরিকল্পনা বলেই বোধ করেছে, তাঁরা শরীরকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাঁরা জানেন যে, দেহ আর কিছুই নয়, ঘনীভূত বা হিমায়িত শক্তির একটা কার্যসাধক আকার আর কি।

যদিও পদার্থবিজ্ঞানীরা আজকাল বুঝতে আরম্ভ করেছেন যে, জড়পদার্থ আসলে ঘনীভূত শক্তি মাত্র, পূর্ণজ্ঞানী যোগীরা কিন্তু জড়বস্তু নিয়ন্ত্রণ ব্যাপারে বহুদিন আগেই তত্ত্ব থেকে ব্যবহারের পারদর্শিতায় পৌঁছেছেন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী সর্বদাই সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় থাকতেন। এসব কারণে কাশীর পুলিশকেও তাঁকে নিয়ে দারুণ বিব্রত থাকতে হত।

দিগম্বর স্বামীজী স্বর্গোদ্যানে আদি নর আদমের মত তাঁর উলঙ্গ অবস্থা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। পুলিশ কিন্তু এবিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিল। একদিনকতো তারা তাঁকে জেলেই পুরে দিল। চারধারে গোলমাল শুরু হয়ে রেগল। কিছুক্ষণ বাদেই দেখা গেল, বিরাটবপু ত্রৈলঙ্গ স্বামী কারাগারের ছাদের উপর পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর কুঠুরিতে তখনো মজবুত তালাচাবি ঝুলছে। কি করে যে বেরুলেন, তা কেউই বলতে পারে না।

হতাশ হয়ে পুলিশের লোকরা আবার তাঁকে জেল কুঠুরিতে ঢোকাল। এবার দরজার কাছে একজন প্রহরীও রাখা হল। কিন্তু হলে কি হবে? দৈবশক্তির কাছে আইন আবার হেরে গেল। আবার দেখা গেল, ত্রৈলঙ্গ স্বামী পরম ঔদাসীন্যে কারাগারের ছাদের উপর পদচারণ করে বেড়াচ্ছেন, কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। বিচারের দেবতা অন্ধ; বিভ্রান্ত পুলিশের লোকরা তাঁকেই অনুসরণ করতে চাইল। ত্রৈলঙ্গ স্বামী সর্বদা মৌনব্রত অবলম্বন করে থাকতেন।

দেখ, যদি না আমার এ জ্ঞানটুকু থাকত যে, যেমন সৃষ্টির প্রতি অণুপরমাণুতে ঈশ্বর আছেন তেমনি আমার উদরের মধ্যেও আছেন, তাহলে এ চূণগোলা জল তো আমায় একেবারে সাবাড় করে দিত। এখন তো ভগবানের সূক্ষ্মবিচারের সম্বন্ধে তোমার কিছু ধারণা হল, আবার যেন অন্য কারোর সঙ্গে কোনরকম চালাকি করতে যেও না।

তাঁর সুডৌলমুখ আর বিরাট পিপার মত উদর থাকা সত্বেও, স্বামীজি কদাচিৎ আহার করতেন। হয়ত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপবাসে কাটাবার পর তাঁর ভক্তদের আনা কিছু ঘোল খেয়ে তিনি উপবাস ভঙ্গ করতেন। জনৈক অবিশ্বাসী ব্যক্তি একবার মনে করল যে ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে একটা ভণ্ড বা বুজরুক বলে প্রমাণ করে দেবে।

একটা বড় বালতিতে করে একবালতি কলিচূণগোলা এনে স্বামীজীর সামনে রেখে কপট ভক্তিসহকারে নিবেদন করল, প্রভু! আপনার জন্যে এই একটু ঘোল এনেছি, দয়া করে পান করুন। ত্রৈলঙ্গ স্বামী কিছুমাত্র ইতস্ততঃ না করেই অবিচলিতভাবে শেষ বিন্দুটি পর্যন্ত তা পান করে ফেললেন। মিনিট কয়েকের মধ্যে সেই দুষ্টলোকটি মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় গড়াগড়ি দিতে দিতে চেঁচাতে লাগল,

বাঁচান! স্বামীজি বাঁচান! আগুনে জ্বলে গেলাম! জ্বলে গেলাম। ভেতরে সব জ্বলে পুড়ে খাক্ হয়ে যাচ্ছে; এ দুষ্টু পরীক্ষা করে বড় অন্যায় করেছি, মাপ করুন স্বামীজি, এবারকার মতো মাপ করুন।

ত্রৈলঙ্গ স্বামী তাঁর মৌনব্রত ভঙ্গ করে তখন বললেন, ঠাট্টা করতে এসেছ, বোঝনি তো যে, যখন তুমি আমায় বিষ খেতে দিলে তখন তোমার জীবন আর আমার জীবন একসঙ্গে বাঁধা হয়ে গেল। দেখ, যদি না আমার এ জ্ঞানটুকু থাকত যে, যেমন সৃষ্টির প্রতি অণুপরমাণুতে ঈশ্বর আছেন তেমনি আমার উদরের মধ্যেও আছেন, তাহলে এ চূণগোলা জল তো আমায় একেবারে সাবাড় করে দিত।

এখন তো ভগবানের সূক্ষ্মবিচারের সম্বন্ধে তোমার কিছু ধারণা হল, আবার যেন অন্য কারোর সঙ্গে কোনরকম চালাকি করতে যেও না।

তৈলঙ্গ স্বামীর সদুপদেশে চৈতন্যোৎপাদন হতে লোকটা আস্তে আস্তে চুপি চুপি সরে পরলো। এই যে যন্ত্রণাভোগের স্থানপরিবর্তন, এটা স্বামীজীর কোনো প্রকার ইচ্ছাপ্রসূত যে তা নয়; এ হচ্ছে ভগবানের অমোঘ বিচার, যাতে করে সৃষ্টির সুদূরতম গ্রহও পরিচালিত হয়। ত্রৈলঙ্গ স্বামীর মতো যাঁদের ব্রক্ষজ্ঞানলাভ হয়েছে তাঁদের জন্য ঈশ্বরের অমোঘ বিধি অবিলম্বে কার্যে পরিণত হয়।

তাঁরা তাঁদের সাধনপথের প্রতিবন্ধক যে অহংভাব, তা বহুদিন আগেই দূর করতে পেরেছেন। এই যে স্বয়ংক্রিয় ন্যায়ের বিধান, তার প্রতিফলন কোন্ ধার দিয়ে আর কিভাবে যে আসে তা কেউ বলতে পারে না, (যেমন এই ত্রৈলঙ্গ স্বামী আর তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টাকারী সেই দুষ্টু লোকটার বেলায় ঘটল); তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারলে মানুষের অন্যায় অবিচারের প্রতি আমাদের তাৎক্ষণিক ক্রোধের কিছুটা উপশম হয় বই কি! যীশুখ্রিষ্ট বলেছিলেন, প্রতিশোধ লওয়া আমারই কাজ; আমি প্রতিফল দেব। মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষমতা আর সামান্য উপায়ের আর প্রয়োজন কিসের?

জগৎসংসারই ঠিক এর হিসেবনিকেশ করে তার নিশ্চয় প্রতিফল দেবে। অজ্ঞানীমনে ভগবানের বিচার, প্রেম, সর্বদর্শিতা, অমরত্বে সবের সম্ভাবনার কথা অবজ্ঞা করেই উড়িয়ে দেওয়া হয়। মনে হয়, শাস্ত্রের ও সব ফাঁকা আওয়াজ, অমূলক কল্পনা।

এই রকম অবিবেচকের মত যাদের ধারণা, এতবড় বিশ্বপ্রকৃতির বিরাট ব্যাপারেও যাদের মনে কোন ভয়ের সঞ্চার করে না, তাদের জীবন ঘটনা পরস্পরায় এমন একটি বিপরীত ঘটনার সৃষ্টি করে যে, তাতে করে তাদের শেষপর্যন্ত জ্ঞানান্বেষণে বাধ্য করে। জেরুসালেমে যিশুখ্রিস্টের বিজয় অভিযানের সময় ভগবৎবিধির সর্বশক্তিমত্তার বিষয় তিনি উল্লেখ করেছেন।

যোগীশ্রেষ্ঠ ত্রৈলঙ্গ স্বামীর অসীম কৃপা একবার আমার সেজমামার উপর বর্ষিত হয়েছিল। সেজমামা একদিন দেখলেন যে স্বামীজি ভক্তপরিবেষ্টিত হয়ে কাশীর গঙ্গার ঘাটে বসে আছেন। তিনি কোনরকমে পাশ কাটিয়ে ত্রৈলঙ্গ স্বামীর পদপ্রান্তে উপস্থিত হয়ে, ভক্তিভরে পাদস্পর্শ করে প্রণাম করলেন। প্রণাম করে উঠতেই দেখলেন যে, তাঁর বহুদিনের এক পুরাতন ব্যাধি একদম সেরে গেছে!

তাঁর শিষ্যবর্গ আর বিরাট জনতা যখন আনন্দে চিৎকার করে বলছিল, স্বর্গে শান্তি প্রতিষ্ঠিত, ভগবানের মহিমা অপার, কয়েকজন ফ্যারিসী তখন একে অগৌরবের দৃশ্য বলে প্রতিবাদ করল। তারা আপত্তি করে বলল, প্রভু, আপনার শিষ্যদের তিরস্কার করুন।

যীশুখ্রিষ্ট উত্তর দিলেন, যদি তাঁর শিষ্যদের চুপ করান হয়, তাহলে পাথরেরা তক্ষুণি চিৎকার করে উঠবে। ফ্যারিসীদের প্রতি এইরূপ তিরস্কারে যীশুখ্রিষ্ট এটাই দেখাতে চেয়েছিলেন যে, ভগবানের বিচার কোনো রূপক কল্পনামাত্র নয়; আর শান্তস্বভাবের লোক, যদি তার জিভ উপড়েও ফেলা যায়, তাহলেও সে এই বিশ্ববিধানের মূল, সৃষ্টির আদিশক্তি থেকে সে তার বাক্ শক্তি আর আত্মরক্ষার শক্তি ফিরে পাবে, কেউ তা রুখতে পারবে না।

যীশুখ্রিষ্ট বলতে লাগলেন, ভগবৎপরায়ণ লোকদের তোমরা চুপ করিয়ে দিতে চাও? তাহলে তোমরা তো ঈশ্বরের কণ্ঠরোধও করতে পার, যাঁর মহিমা, যাঁর সর্বব্যাপিত্ব, এমনকি প্রস্তর পর্যন্ত কীর্তন করে চলেছে। তোমরা কি চাও যে স্বর্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্বন্ধে লোকে একত্রিত হয়ে উৎসব করবে না? আর লক্ষ লক্ষ লোক মিলে তারা কেবল পৃথিবীতে যুদ্ধের সময় একত্রিত হোক, এই পরামর্শ দেবে?

তাহলে ওহে ফ্যারিসীগণ, তোমরা পৃথিবীর ভেতটাকেই উল্টে ফেলার জন্যে যাবতীয় আয়োজন কর। কারণ কি জান? এই সব সাধুস্বভাব লোকেরাই শুধু নয়, তাঁর এই সৃষ্টির মধ্যে দৈব সঙ্গতির সাক্ষীস্বরূপ প্রস্তর, মৃত্তিকা, জল, বায়ু, অগ্নি, সবই তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।

যোগীশ্রেষ্ঠ ত্রৈলঙ্গ স্বামীর অসীম কৃপা একবার আমার সেজমামার উপর বর্ষিত হয়েছিল। সেজমামা একদিন দেখলেন যে স্বামীজি ভক্তপরিবেষ্টিত হয়ে কাশীর গঙ্গার ঘাটে বসে আছেন। তিনি কোনরকমে পাশ কাটিয়ে ত্রৈলঙ্গ স্বামীর পদপ্রান্তে উপস্থিত হয়ে, ভক্তিভরে পাদস্পর্শ করে প্রণাম করলেন। প্রণাম করে উঠতেই দেখলেন যে, তাঁর বহুদিনের এক পুরাতন ব্যাধি একদম সেরে গেছে!

(ত্রৈলঙ্গ স্বামী এবং অন্যান্য মহাপুরুষগণের জীবনকথা যীশুখ্রিস্টের এই বাণীটিকে স্মরণ করায়, বিশ্বাসীরাই এইসব নিদর্শন দেখতে পাবে; আমার নামে (অর্থাৎ ক্রিস্টচৈতন্য লাভ হলে) তারা শয়তানকে দূর করতে পারবে; তাদের মুখে আসবে নূতন বাণী; তারা সর্পকে জয় করতে পারবে। আর তারা যদি কোন কলকূটও পান করে, তাহলে ঐ কলকূটও তাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না।

তারা ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির উপর হস্তস্পর্শ করলেই তারা আরোগ্যলাভ করবে। জানা গেছে যে, ত্রৈলঙ্গ স্বামীর এখন একমাত্র জীবিতা শিষ্যা হচ্ছেন শঙ্করী মায়ী জীউ।

চেহারায় বার্ধক্যের বিশেষ কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। চুল কাল, দাঁতগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার, আর আদম্য শক্তি ও উৎসাহ এখনো তাঁর বজায় আছে। এখন তিনি মেলা বা ঐ জাতীয় কোন ধর্মোৎসবের সময় মাঝে মাঝে তাঁর নির্জনবাস হতে বেরিয়ে আসেন।

ইনি তাঁর এক শিষ্যের কন্যা, শৈশব থেকেই স্বামীজীর কাছে শিক্ষা পান! হিমালয়পর্বতে বদরীনাথ, কেদারনাথ, অমরনাথ, পশুপতিনাথ প্রভৃতিস্থানের বিভিন্ন গুহায় প্রায় চল্লিশ বছর তিনি অতিবাহিত করেন। ব্রহ্মচারিণী শঙ্করীমায়ী ১৮২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এখন তাঁর বয়স একশত বছরের উপর। চেহারায় বার্ধক্যের বিশেষ কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।

চুল কাল, দাঁতগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার, আর আদম্য শক্তি ও উৎসাহ এখনো তাঁর বজায় আছে। এখন তিনি মেলা বা ঐ জাতীয় কোন ধর্মোৎসবের সময় মাঝে মাঝে তাঁর নির্জনবাস হতে বেরিয়ে আসেন।

শঙ্করী মায়ী জিউ লাহিড়ী মহাশয়ের কাছে প্রায়ই আসতেন। তিনি একবার বলেছিলেন যে, একদিন কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরে যখন তিনি লাহিড়ী মহাশয়ের কাছে বসেছিলেন, তখন লাহিড়ী মহাশয়ের গুরু বাবাজী মহারাজ নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করে উভয়ের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন।

তিনি স্মৃতি রোমন্থন করে বললেন, অমর মহাগুরু তখন একটি ভিজে কাপড় পরেছিলেন। মনে হল, যেন তিনি এইমাত্র নদী থেকে স্নান করে আসছেন। কতকগুলি উপদেশ দিয়ে তিনি আমায় আশীর্বাদ করেন। বারাণসীতে কোনো এক উপলক্ষ্যে একবার ত্রৈলঙ্গ স্বামী তাঁর স্বাভাবিক মৌনব্রত পরিত্যাগ করে প্রকাশ্যে লাহিড়ী মহাশয়কে মহাসমাদরে অভ্যর্থনা করেন। তাঁর এক শিষ্য এতে আপত্তি জানালেন।

শিষ্যটি বললেন, গুরুদেব, আপনি সন্ন্যাসী, সংসার ত্যাগ করেছেন; আপনি কেন একজন গৃহীকে এ রকম সম্মান দেখাবেন? ত্রৈলঙ্গ স্বামী তাকে বললেন, বেটা, লাহিড়ী মহাশয় হচ্ছেন মায়ের আদুরে ছেলে; মা তাঁকে যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকবেন। সাংসারিক লোক হিসাবে কর্তব্যপালন করতে করতে তিনি সেই পূর্নব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছেন, যা পাবার জন্যে আমি লেংটিটাও অবধি ত্যাগ করে এসেছি, বুঝলে?

…………………….
সূত্র:
যোগী-কথামৃত (Autobiography of a Yogi)
শ্রী শ্রী পরমহংস যোগানন্দ বিরচিত পূজনীয় ও পরমারাধ্য আমার গুরুদেব শ্রী শ্রী স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর গিরি মহারাজের শ্রীকরকমলে অর্পিত।
মৎপ্রণীত ইংরাজী ‘অটোবায়োগ্রাফি অফ্ এ যোগী’র বঙ্গানুবাদে শ্রীমান ইন্দ্রনাথ শেঠের স্বেচ্ছা প্রণোদিত প্রয়াস ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ ও আশির্বাদ জানাই। -শ্রী শ্রীপরমহংস যোগানন্দ
পুণঃপ্রচারে বিনীত, প্রণয় সেন

…………………………
আরও পড়ুন-
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী

লোকনাথ বাবার বাল্যসখা বেণীবাধব ব্রহ্মচারী : পর্ব এক
লোকনাথ বাবার বাল্যসখা বেণীবাধব ব্রহ্মচারী : পর্ব দুই
লোকনাথ বাবার বাল্যসখা বেণীবাধব ব্রহ্মচারী : পর্ব তিন
বিজয়কৃষ্ণ
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী
ত্রৈলঙ্গ স্বামীর কিছু কথা

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………………
আরও পড়ুন-
যোগীবর শ্যমাচরণ লাহিড়ী মহাশয়
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী
ত্রৈলঙ্গ স্বামীর কিছু কথা
গাঁধীজিকে ক্রিয়াযোগে দীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি
তারা মায়ের আদরের দুলাল ‘বামাক্ষেপা’
মহর্ষি মহেশ যোগীর কথা
স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরের দর্শনলাভ : যোগী-কথামৃত থেকে
‘বাবাজী’ আধুনিক ভারতের মহাযোগী
বিনিদ্র সাধু
রামদাস বাবাজী
সীতারাম
তারাপীঠের ‘বামদেব’
বহুবর্ষজীবি শ্রীশ্রী বরফানী দাদাজি
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: এক
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: এক
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!