আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
-লুৎফর রহমান
যাদের হৃদয় অনুন্নত, তারা কি পথের ভিখারী রাণাপ্রতাপ এবং সর্বহারা ইমাম হোসেনের জীবনের মূল্য বুঝতে পারে? আজ তেরশত বৎসর ধরে মুসলিম জগতে কারবালা প্রান্তরের যুদ্ধ মহররম উৎসব নামে সুসম্পন্ন হচ্ছে। বাঙালি মুসলমান সমাজ সেই মুসলিম জগতের একটি অংশ।
তারা সবাই নবীর ভক্ত- নবীর নামে দরুদ পড়েন, ইমাম হোসেনের জন্য শোকাশ্রু ফেলেন, মহররমের রোজা করেন- কিন্তু সত্যি কি তারা মহামান্য প্রিয়তম ইমাম হোসেনের জীবনের মূল্য অনুভব করেছেন? কিছু না, কিছু না। যদি করতেন, তা হলে তারা স্বাধীনতার মূল্য বুঝতেন।
রাণাপ্রতাপের ভাই মণিসিংহ সম্রাট আকবরের মন্ত্রী হয়ে কত সুখেই না জীবন কাটাচ্ছিলেন। অন্যদিকে মহাপ্রাণ প্রতাপ পাহাড়ে পাহাড়ে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ঘাসের রুটি খেয়ে স্বাধীনতার গৌরব রক্ষা করেছেন। এই মহাপুরুষদ্বয়ের জীবনের মূল্য মুসলমান বোঝেন কি?
বাঙালি মুসলমানের কাছে একটা সাব-ডেপুটির পদ কত আকাঙিক্ষত বস্তু। একটা দারোগার কাজ পাওয়া তার পক্ষে কতবড় ভাগ্যের কথা- মন্ত্রীত্ব পাওয়া তো দূরের কথা।
এজিদ বল্লেন- হোসেন একটুখানি বশ্যতা স্বীকার করলেই আমি তাকে মহাসম্মানে, সুখ ও সম্পদের আসনে বসাব। একটুখানি সে নত হোক।
ইমাম; নবী- দৌহিত্র ইমাম হোসেন সত্য ও ন্যায়ের মর্যাদা অস্বীকার করে জীবন, সম্পদ ও সম্মান চান নি। আপন জীবনের, আপন বংশের এবং আপন ভক্ত আত্মীয় বন্ধুগণের হৃদয়-রক্ত দিয়ে মরুভূমির প্রতি বালুকণাকে স্বর্গের পুষ্পগন্ধে সুরভিত করে তুলেছিলেন- জেনে-শুনে মৃত্যুর হলাহল অমৃত বোধে আকণ্ঠ পান করলেন।
এই জীবন বলি, এই কোরবানিই তাঁর কাছে গৌরবের মৃত্যু। হায় মুসলমান জাতি তোমরা কারবালার মহামৃত্যুর মূল্য বুঝবে কি? কারবালার যুদ্ধে শুধু পুরুষ নয়- নারীও আপন হৃদয়-রক্ত দিয়ে ইমামের স্বাধীনতা বোধের পূজা করেছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শোণিতপণ অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন।
রাণাপ্রতাপ পরাজিত হয়েও অনেক বিজয়ী সেনাপতির চাইতে শ্রেষ্ঠ, প্রতাপের মহাত্যাগের দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত বিরল। স্বাধীনতার পূজারী জগতের আর কে? যে জাতির মধ্যে এমন মানুষ জন্মেছেন, সে জাতি মানুষের সম্মান ও আত্মীয়তার যোগ্য।
স্বাধীনতার পূজা শুধু পুরুষকে দিয়ে হবে না নারীও চাই। পতনের সুগভীর গুহায় পড়ে মুসলিম নারী সমাজের শক্তি না হয়ে তাকে টেনে অন্ধকারের অতল তলে নামাচ্ছে। স্বাধীনতার মহাপূজারী মহাবীর রাণার পরী স্বামীর পশ্চাৎ পথে পথে ঘুরেছেন।
মহাজীবনের পরম ভক্ত এই মহিষী নারীর সম্মান জগতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেবশিশুগুলো ঘাসের রুটি খেয়ে স্বাধীনতার উপাসক পিতার পশ্চাৎ পশ্চাৎ হাসি মুখে ছুটেছেন। এসব জীবনের গৌরব সাধারণ মানুষ কি আত্মায় অনুভব করতে পারে?
ঈশ্বরের চরম স্পর্শ যারা আত্মার বেদিতে পেয়েছে তারাই জানেন স্বাধীনতার পূজা কেমন করে করতে হয়- ঈশ্বরের প্রকৃত কোরবানি কাকে বলে? বছর বছর মাংসের কাবাব খাওয়ার নাম কোরবানি নয়। জীবনের প্রতি কাজে প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে সর্বদুঃখ জয় করে সত্যের পূজা করে। এটাই মহামানুষের জীবনের চরম ও পরম উপাসনা।
রাণাকে এবং ইমামকে সে সময় অনেকেই বাতুল বলে উপহাস করেছিলেন আল্লাহর মহাদরবারে কিন্তু তাদের নাম সর্বোচ্চ স্তরে লিখিত হচ্ছিল। তাদের জীবনের দুঃখ বরণের এবং ত্যাগ স্বীকারের মূল্য প্রকৃত মানুষ ছাড়া কে আত্মায় অনুভব করতে পারে। উত্তর- কেউই না!
হোসেন মরণ বরণ করতেও সর্বত্র পূজিত। পৃথিবীর কোনো জাতির মধ্যে ইতিহাসের কোনো পৃষ্ঠায় অতীতে এবং বর্তমানে সত্য ও ন্যায়ের জন্য এমন স্বর্গীয় মরণ বরণের মহাদৃষ্টান্ত দেখা যায় না। আমরা কী এই মহাজনের অনুরাগী?
রাণাপ্রতাপ পরাজিত হয়েও অনেক বিজয়ী সেনাপতির চাইতে শ্রেষ্ঠ, প্রতাপের মহাত্যাগের দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত বিরল। স্বাধীনতার পূজারী জগতের আর কে? যে জাতির মধ্যে এমন মানুষ জন্মেছেন, সে জাতি মানুষের সম্মান ও আত্মীয়তার যোগ্য।
<<তীর্থ-মঙ্গল ।। মনুষ্য পূজা>>
……………………
মহা জীবন -লুৎফর রহমান।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা