ভবঘুরেকথা

মতুয়া সংগীত

মতুয়া দর্শনে সংগীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই দর্শন বুঝতে গেলে বুঝতে হবে ‘মতুয়া সংগীত’। মতুয়া দর্শনের সকল কথাই বর্ণিত হয়েছে ছন্দে ছন্দে। আর তার গীত হয়ে প্রচার হয়ে আসছে। হরিসভা আয়োজন করে যে সংগীত চলমান রয়েছে। সেই মতুয়া সংগীতকে পাঠকদের সামনে একসাথে তুলে ধরবার জন্যই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস-

খুলনা জেলার মধ্যে

মালসায় কবিগান খুলনা জেলার মধ্যে মালসা গ্রামেতে। জাগ্রত সে কালীমাতা বহু দিন হতে।। নাম করা কালীবাড়ী ছিল এ ধরায়। শত…

খড়িয়া গ্রামেতে ছিল

তারকচাঁদের পানসী তরীখড়িয়া গ্রামেতে ছিল নিবারণ নাম। তারকের শিষ্য সেই ভক্ত গুণধাম।। একদিন তারকের পদ ধরি কয়। শুন বাবা বলি…

লোহারগাতী বাড়ী যাদব

উভয় সংকট লোহারগাতী বাড়ী যাদব চন্দ্র ঢালী। তারকের প্রিয় ভক্ত জানিত সকলি।। গুরুপদে ভক্তি করি হরিগুণ গায়। মাঝে মাঝে সে…

সর্পকে করিয়া মুক্তি

তারকের কাতলী গমন ও আশ্চয্য লীলা সর্পকে করিয়া মুক্তি চলে তিন জন। ধীরে ধীরে করিলেন কাতলী গমন।। ভাবে গদ গদ…

ভাবিয়া অন্তরে

তারক চাঁদ ও সর্প কথা হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ভাবিয়া অন্তরে। আশ্চর্য্য ঘটনা এক জানাব সবারে।। জয়পুর বাস করে কবি রসরাজ। হরিভক্ত…

দীননাথ শ্রীহরি ভজন

গুরু শিষ্য অভেদ মধু আর দীননাথ শ্রীহরি ভজন। হরি বোলে হইল যবে এই তিন জন।। তারকেরে গুরু করি খেল তার…

হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ভাবিয়া

মধুসূধন সরকারের উপাখ্যান হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ভাবিয়া হৃদয়। লিখিতে কলম ধরি করিনু আশায়।। তারক চাঁদের কথা বরিব বর্ণন। আশ্চর্য্য ঘটনা এক…

ফাঁসি থেকে মুক্তি

জজের পুত্র লাভ তারকের কৃপালাভ ফাঁসি থেকে মুক্তি পেয়ে করিল গমন। পথে যেতে সেই মতি ভাবে মনে মন।। জজের কাছেতে…

হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ

মতির ফাঁশি মুক্তি হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ। হরিভক্ত গুণ কথা করিব বর্ণন।। কালিয়া থানার মধ্যে রায়পুর গ্রাম। সেই গ্রামে বাস…

লাল চন্দ্র পুর গ্রাম

ভক্তের  বাধ্য হরিচাঁদলাল চন্দ্র পুর গ্রাম খুলনা জেলায়।কবিগান হবে সেথা জানিল সবায়।।কালীকৃষ্ণ নামে এক জমিদার ছিল।তার বাড়ী কবিগান বন্দোবস্ত হল।।তারক গোঁসাই এল গান গাহিবার।মথুর নামেতে এল অন্য সরকার।।দুই দলে হবে সেথা কাব্য আলোচনা।দলে দলে সবে এল শুনিতে বাসনা।।বহু লোক এলা তথা গান শুনিবারে।দুই দল উঠিলেন কবির আসরে।।ভবানী বিষয় আর আগমনী হয়।সখী সংবাদ কবি যে হয়ে গেল সায়।।তারপর পাঁচালীতে গেল দুই জন।গান শুনে আনন্দিত সবাকার মন।।মথুর সাজিল গিয়ে কেশব কাশ্মীরী।তারকেরে সাজাইল শ্রীগৌরাঙ্গ হরি।।কেশব কাশ্মীরী শেষে কহিতে লাগিল।তুমি নাকি ভগবান লোকে তাই বলে।।তুমি যদি ভগবান বলি যে তোমায়।হরি নামে মাতোয়ারা সকল সময়।।দু’টি কথা বলি তোমা শুন দিয়া মন।বৃন্দাবনে তুমি যবে করিলে ভ্রমণ।।হরি নামে মাতোয়ারা ঝরে দু’টি আখি।হেন কালে দুই হাতে পড়ে দুই পাখী।।শুক আর সারী এই পাখী দুইজন।দুই শ্লোক বলে তারা কিসের কারণ।।শ্লোক দু’টি বল আজি এ সবার মাঝ।তবে আমি বুঝে লব তুমি রসরাজ।।শ্লোকের অর্থ কিবা বল ভগবান।প্রাণ ভরে শুনে আমি জুড়াইব কান।।তারপর শ্রী তারক আসরেতে যায়।শ্লোকের অর্থ কিবা খুঁজিয়া না পায়।।ধামা চাপা দিয়ে বলে তারক গোঁসাই।হরি নামে মাতোয়ারা শুনিতে না পাই।।তারপর সে মথুর আসরেতে যায়।ব্যাঙ্গ করে তারকেরে কত যে কি কয়।।তাই শুনে সে তারক বাহিরেতে গেল।নয়নের জলে বক্ষ ভাসিতে লাগিল।।নির্জনে বাসিয়া কবি ভাবে মনে মন।কোথা প্রভু হরিচাঁদ কি করি এখন।।তোমার আদেশ নিয়া কবিগান গাই।তোমার কৃপায় কোথা পরাজয় নাই।।এবে তুমি বলে দাও কি হবে উপায়।তোমার নামের বুঝি হয় পরাজয়।।সাধন না জানি প্রভু ভজন না জানি।এ বিপদে রক্ষা কর হরি গুণমণি।।তুমি যারে রক্ষা কর ওগো দয়াময়।তার কভু নাহি হয় হেন পরাজয়।।মহাভাব উথলিয়া আখি দু’টি ঝরে।ওড়াকান্দি থেকে হরি জানিল অন্তরে।।ভক্তের লাগিয়া আজি হরি দয়াময়।কাগজেতে শ্লোক লিখে বাতাসে ভাসায়।।বাতাসেতে ভেসে ভেসে সে কাগজ খানি।তারকের মস্তকেতে পড়িল অমনি।।তাই দেখে সে তারক কাগজ ধরিল।দুই শ্লোক লেখা আছে দেখিতে পাইল।।মনে মনে ভাবিতেছে কবি রসরাজ।ভক্ত বাঞ্ছাকল্পতরু তার এই কাজ।।তখনি তারক চন্দ্র আসরেতে যায়।শোক দু’টি ব্যাখ্যা করি সবারে জানায়।।কবির খোলায় যত শ্রোতাগণ ছিল।আনন্দেতে আত্মহারা প্রেমেতে ভাসিল।।(শ্লোকের অর্থ)যাহার সৌন্দর্য দেখে ললনা ভুলিল।স্ত্তম্ভবিধায়িনী রাধা প্রেমেতে মজিল।।যেই প্রভু গোবর্ধন করিল ধারণ।তাই দেখে জনগণ আনন্দিত মন।।বিশ্বজন হিত লাগি মদন মোহন।বিশ্বের মঙ্গল করে সেই কৃষ্ণধন।।শ্রীরাধার প্রেম আর নত্তন কীর্তন।শ্রীকৃষ্ণের করিলেন চিত্ত আকর্ষণ।।এত বলি শ্রীতারকে ব্যাখ্যা যে করিল।শ্রোতাগণ সুখী হয়ে আনন্দে ভাসিল।।জয় জয় ধ্বনি ওঠে আকাশ ভেদিয়া।রমাগণে উলুধ্বনি দিলেন আসিয়া।।গান শেষে সে তারক বাহিরেতে এল।শত শত শ্রোতাগণ চরণে পড়িল।।তারকের জয়গান করিতে করিতে।শ্রোতাগণ চলে গেল যে যার বাটিতে।।গান শেষে সব দল বিদায় হইল।যার যার দেশে সবে গমন করিল।।তারপর সে তারক ওড়াকান্দি যায়।প্রণাম করিল গিয়ে ঠাকুরের পায়।।কেন্দে কেন্দে সে তারক বলিল বচন।সেই শ্লোকের কথা কহিল তখন।।তারকের কথা শুনে হরিচাঁদ কয়।ভক্ত বাঞ্ছা পুরাইতে আসি এ ধরায়।।তোর পরাজয় দেখে শ্লোক লিখিয়া।পবনের কাছে আমি দেই পাঠাইয়া।।হেন বাক্য হরিচাঁদ যখন বলিল।তারক চরণে পড়ে কান্দিতে লাগিল।।তারকের কান্না দেখে বলে দয়াময়।আশীর্বাদ দিয়ে তারে করিল বিদায়।।কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা বেশী নাই।হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।
error: Content is protected !!