ভবঘুরেকথা

দোজখ

-আবুতালেব পলাশ আল্লী

বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করার পর তাহতাচ্ছারা নামক কাঁদামাটি দিয়ে আল্লাহ্ দোজখকে সৃষ্টি করলেন। হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস বলেন- ‘ছারা নামক একটি বিশালাকৃতি পাথরের নীচে দোজখকে স্থাপন করা হয়েছে। তত্ত্বাবধানে মালিক নামক এক ফেরেশতাকে সর্দার পদে নিযুক্ত করেছেন।’

দোজখ মোট সাতটি- জাহির, জাহান্নাম, সাকার, সাঈর, লাজা, হাবিয়া ও হুতামা।

হজরত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ফেরেশতা জিব্রাইল নবীজীকে দোজখ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা শোনাচ্ছিলেন তখন সমস্ত জগৎ ব্যাপী একটি শব্দ শোনা গেল। পৃথিবী থরথর করে কেঁপে উঠল। সেই শব্দ শুনে নবীজীর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে জিব্রাইল! তুমি কী বলতে পার কিসের আওয়াজ শোনা গেল?

জিব্রাইল বললেন, ‘আদমকে সৃষ্টির ৭০ হাজার বছর আগে একটি পাথর সৃষ্টি করে দোজখের এক কিনারায় রাখা হয়েছিল। পাথরটির ওজন প্রায় ৭০ হাজার মন। পাথরটি ৭০ হাজার বছর আগে গড়িয়ে হাবিয়া দোজখে পরে। এইমাত্র সেই পাথরটি হাবিয়া দোজখের নিম্নদেশ স্পর্শ করল।

জিব্রাইল দোজখের কথা করিলো বর্ণন-

পাপি বান্দার সাজা হবে দোজখের আগুন
বলেন নবীজী বলেন শুনোরে মানুষ শুন,
মানুষ হইয়া মানুষ যদি মানুষ করে খুন
বড়ো কঠিন সাজা হবে অতি যে ভয়াল।।

বুঝিতে পারিবে না সেদিন দোজখের কি হাল
আগুনে জ্বালিয়ে মশান পুরবে ইস্তানোন,
সাজার উপর সাজা দিবে অতি যে ভয়াল
চিনেতে পারবে না কেহ কেবা আপন।।

সেদিন কেবা কার পর
আগুনে জিঞ্জিরা দিয়া দিবে,
হাতে পায়ে টানা, পলকে পলকে
গলে ভাঙ্গবে এই দেহখানা।।

সুদখোর ঘুষখোর, জেনাকারী
যারা দোজখের ভিতরে কেঁপে উঠবে তারা,
ব্যভিচারী অত্যচারী করবে যারে যার
মিথ্যাবাদী, অহঙ্গকারী লুটেরা বেঈমান।।

দোজখের আগুনে পুইরা হইবে খান খান
এতিমরে ঠকাইয়া যে ভরছে নিজের ঘর,
পরকে আপন বানাইয়া আপনদের করছে পর
মা বাবার লও নাই খবর দুনিয়ার ভিতর।।

হিংসা, নিন্দা নিয়া হইলা দুনিয়ায় মুক্ত
মুখেতে আসে নাই যাদের দয়াল নামের তথ্য,
তাদের জন্য করছে দয়াল এমন সাজার শর্ত
যেমন কর্ম তেমনি ফল করবেন দয়াল সাঁই।।
অপরোধ অনুষারে।।

নবীজী জিব্রাইলের কাছে জানতে চাইলেন কোন শ্রেণীর লোক কোন দোজখে থাকবে। উত্তরে জিব্রাইল বললো-

১. হাবিয়া দোজখে যাবে মোনাফেকরা
২. জাহান্নামে যাবে আল্লাহকে অস্বীকারকারী-শরিককারী।
৩. সাকার দোজখে যাবে অগ্নি উপাসকরা।
৪. লাজা দোজখে যাবে ইমান আনা সত্ত্বেও যারা শয়তানের তাবেদারী করে।
৫. হুতামা দোজখে যাবে সুদখোর, ঘুষখোর ও পাপীরা।
৬. সাঈর দোজখে যাবে মূর্তি পূজারীরা।
৭. জাহিম দোজখে যাবে নবীবীর গুনাহগার উম্মতরা।

আবু হোরায়রা এক হাদিসে বলেন- সাধারণ অবস্থার আগুনকে এক হাজার বছর ধরে তেজ বৃদ্ধি করতে করতে যখন লাল বর্ণ হল। আবার সেই লাল আগুনকে এক হাজার বছর ধরে তেজ বৃদ্ধি করলে রং হবে কালো। এই কালো আগুনই থাকবে দোজখে।

এর হাকিকত বিশাল। তা শুধু জ্ঞানীরাই অনুধাবন করতে পারবে। কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নামীরা ইবলিশকে দোষারোপ করবে। বলবে, হে আল্লাহ! আমরা শয়তানের ধোকায় পড়ে তোমাকে ভুলে গেছি। তোমার অলীদের অনুসরণ করিনি।

তখন ইবলিশকে ডাকা হবে, তখন আমি বলবো হে মানবরা তোমরা কি আমাকে দেখেছ? মানবরা বলবে, না! আমরাতো তোমাকে দেখিনি। তখন আমি বলবো, তবে কেনো তোমরা আমাকে দোষ দিচ্ছ? আল্লাহ কি তোমাদের, আমার কথা শুনতে নিষেধ করেন নি?

আল্লাহ কি বলেনি? আমার কথা শুনলে জাহান্নামী হবে! আল্লাহ তার ওয়াদা রেখেছে, আমার কথা শোনার কারণে তোমরা এখন জাহান্নামী। তোমাকে বিতাড়িত করা আমার কাজ ছিল। তুমি আল্লাহকে ভালোবাসনি, ভালোবেসেছো আমিত্বের শয়তানকে।

নফসের সংযম>>

……………………………
পুনপ্রচারে বিনীত: আবুতালেব পলাশ আল্লী
মা শাহে সেতারার রওজা বা দরবার শরিফ
খুলনা, বাংলাদেশ।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………
আরও পড়ুন-
দোজখ
নফসের সংযম
স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির আবির্ভাব
মোরাকাবা-মোশাহেদা
নফসের পঞ্চস্তর
তরিকায় নামাজ রোজা
তরিকায় জাকাত
দেহতত্ত্বে লতিফা ও চক্র ভেদ
সাধনার ধারা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!