-আর্য সারথী
আমি কি করিব স্তব তোমার সৃজন সব
জল স্থল স্থাবর আকাশ।
সত্ত্ব রজঃ তমোগুণে মনোরূপা মনে মনে
সৃজন পালন হেতু নাশ।।
……….
তুমি গো পুরুষ নারী তুমি কাল সহচরী
সনাতনী সবাকার মাতা।
ফণীন্দ্র সহস্রমুখে স্তবন করিল যাকে
যার গুণ অগোচর ধাতা।।
……….
সুমতি কুমতি যত তোমার মাথায় সেত
চারিবেদে তোমার মহিমা।
মহামায়া মহামন্ত্র সকলি তোমার তন্ত্র
ত্রিলোক না পারে সীমা।।
-কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ
মনস্+আ দিয়ে হয় মনসা। অর্থাৎ মন-মননের সম্পর্ক এখানে প্রধান। তিনি মন থেকে উৎপন্না বা মনোজাতা। বিধাতার নারীরূপী সৃষ্টি হিসেবে তাঁকে ব্যাখ্যা করা যায় না, যাকে পুরুষ গড়ে তুলেছে সৌন্দর্যের তিল দিয়ে তিলোত্তমা হিসেবে। তাছাড়া কবিরা বসে বসে সোনার উপমাসূত্রে তাঁর বসন বুনেছেন এমনও নয়।
তবে তাঁকে কেন্দ্র করে বাসনার প্রদীপ্ত শিখা অনির্বাণ হয়ে বঙ্গের জল-মাটি-হাওয়া থেকে সমগ্র বিশ্ব-চরাচরে ছড়িয়ে পড়েছে এটা অসত্য নয়। তিনি চেতনার ক্যানভাসে কল্পনার তুলিতে আঁকা মানবী ; যাঁকে আদর করে চৈতন্যময়ী ডাকতে দ্বিধা নেই।
তবে তিনি নিজেই চৈতন্য একথা স্বীকার করে নিতে হবে। তিনি একইসাথে চৈতন্য ও চৈতন্যময়ী। ফলে চেতনার ক্যানভাস, কল্পনার তুলি আর চিত্রলেখা মানবী সবই আসলে একই মনসার ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ।
মহাদেব জমিতে চাষ করেন, সেচের ব্যবস্থা করেন, পার্বতীর সাথে সংসার করেন আবার এসবের মধ্যে থেকেই নিজের পারমার্থিক কাজকর্ম চালিয়ে যান। সোজা কথায়, বঙ্গের কাণ্ডারী বা দয়াল মহাদেব মানুষ। মনসা শিবের ঔরসে জন্মেছেন, তবে তিনি অযোনিসম্ভবা । মানুষ বাপের মেয়ে মনসা ‘মানবী’ না হয়ে যায় না।
সর্পদের মা, চন্দ্রবদনা, সুন্দর কান্তি বিশিষ্টা, হংসবাহিনী, উদারস্বভাবা, লোহিতবসনা, সর্বদা সর্ব অভিষ্ট প্রদায়িনী, সহাস্য বদনা, কণক মণিমুক্তা প্রবালাদির অলঙ্কার ধারিনী, অষ্ট নাগ পরিবৃতা, উন্নত কুচযুগল সম্পন্না, সর্পিণী, ইচ্ছা মাত্র রূপ ধারিণী দেবী হিসেবে বন্দনা করা হয় মনসাকে।
বুঝতেই পারছি এখানে অনেক বাড়তি কিছু আছে। কারণ কল্পনা ছাড়া তাঁকে মানস দেউলে সযতনে প্রতিষ্ঠিত করা কষ্টসাধ্য।
এত কিছুর পরও তিনি মানবী! শেষকালে কিনা মানবীর বিগ্রহের অর্চনা! এটা কি তবে পৌত্তলিকতার সীমাকে ছাড়িয়ে গেল? নাকি, বিমূর্ত প্রেমের বহিঃপ্রকাশের জায়গা থেকে এই দুরূহ দার্শনিক প্রশ্নের মীমাংসা করতে হবে?
এর মীমাংসা যদি করতে হয় তবে ‘মানবী’-তেই দৃষ্টিপাত করতে হবে। এ কথা ভুলে গেলে চলবে কেন যে, মনসাকে দেবতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় নি মহাদেবের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও।
মহাদেব মানুষ হওয়ার সাধনা করছেন। বঙ্গের মহাদেব সিক্স প্যাকওয়ালা বডি বিল্ডার নন কিংবা আইন হিসেবে বস্তা বস্তা শাস্ত্রীয় জ্ঞান চাপিয়ে দেওয়ার লোক নন। তিনি হলেন দয়াল। তিনি সহজ মানুষ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, সহজ হতে চেষ্টা করেন।
মহাদেব জমিতে চাষ করেন, সেচের ব্যবস্থা করেন, পার্বতীর সাথে সংসার করেন আবার এসবের মধ্যে থেকেই নিজের পারমার্থিক কাজকর্ম চালিয়ে যান। সোজা কথায়, বঙ্গের কাণ্ডারী বা দয়াল মহাদেব মানুষ। মনসা শিবের ঔরসে জন্মেছেন, তবে তিনি অযোনিসম্ভবা । মানুষ বাপের মেয়ে মনসা ‘মানবী’ না হয়ে যায় না।
(চলবে…)
<<মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -ছয় ।। মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -দুই>>
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………
আরো পড়ুন:
মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -এক
মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -দুই
মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -তিন
মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -চার
মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -পাঁচ
মনসা: ভাবচর্চার অদেখা দিক -ছয়