স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
১৮১.
জীবনে সহজতা এলেই মানবতা বা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। সহজতা ছাড়া মনুষ্যত্ব লাখ হয় না আর মনুষ্যত্ববিহীন জীবনে আধ্যাত্মিকতারও প্রকাশ ঘটে না।
১৮২.
একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠ হয়ে গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সহিত নির্জনে একান্তে বসে সাধন-ভজন বা যোগাভ্যাস করবে। তাহলে অচিরেই চিত্ত নির্মল হবে এবং মন বশে আসবে।
১৮৩.
সবাই জীবিত কিন্তু জাগ্রত নয়। তাই সাধনার উদ্দেশ্যই হল আত্ম-চৈতন্যকে জাগ্রত করা। সুপ্ত ঈশ্বরত্বকে জাগিয়ে তোলাই ধর্ম-জীবনের লক্ষ্য এবং মানব-জীবনের আদর্শ।
১৮৪.
টোটকা, জড়িবুটি, যাদু দিয়ে মানুষের স্বভাব চরিত্র কখনোই পরিবর্তন করা যায় না। স্বভাব চরিত্রের পরিবর্তনের জন্য চিন্তার পরিবর্তন দরকার। সৎ সান্নিধ্যে চিন্তা আসে।
১৮৫.
শ্রদ্ধাযুক্ত হৃদয়ে এবং বিবেকাযুক্ত বুদ্ধিতে দেখলে, দেখবে এই জগতে সেই একই পরমেশ্বর অনন্ত ভাব নিয়ে, অনন্ত রূপ এককথায় অনন্ত বৈচিত্র্যে প্রকাশিত হয়ে আছেন।
১৮৬.
মহাপুরুষ প্রমাদমুক্ত। তিনি যা বলেন তা অনুসরণ করলে মঙ্গল হয়। মহাবুদ্ধিমান ব্যক্তিও বিপত্তিকালে প্রমাদগ্রস্ত হয়ে পরেন। তাই বলা হয়েছে- ‘মহাজনো যেন গত: স পন্থা:’।
১৮৭.
ভারতের শ্রেষ্ঠতা অধ্যাত্মে। ভারতের মূল সুর অধ্যাত্ম। ‘বল বল বল সবে শত বীনা বেণু রবে, ভারত আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’- অধ্যাত্ম দ্বারাই তা লাভ করবে।
১৮৮.
নিন্দা বা সমালোচনা দ্বারা কোন ব্যক্তিকে দোষমুক্ত করা যায় না। বরং তার ভিতর যে গুণগুলী বিদ্যমান- সেগুলির উল্লেখ করে তাকে উৎসাহ ও প্রেরণা দ্বারা জাগ্রত করতে হবে।
১৮৯.
হৃদয়ের স্পর্শ ছাড়া হৃদয় সুন্দর হয় না। চরিত্রের স্পর্শ ছাড়া চরিত্র গড়ে ওঠে না। তাই সুস্থ, সুন্দর, আনন্দময় জীবন ফিরে পেতে হলে জীবিকার নয়, চাই জীবনের অন্বেষণ।
১৯০.
অজ্ঞানতা থেকে আসে অহং; আর অহং থেকে আসে অস্মিতা। অস্মিতা থেকে উদয় হয় আসক্তি, আসক্তি থেকে আসে অত্যাসক্তি। অত্যাসক্তি থেকে উদয় হয় ঈর্ষা এবং ক্রোধ।
১৯১.
সমস্ত দম্ভ এবং অহংকার ব্যক্তিকে হীন এবং বিবৃতভাবাসম্পন্ন করে তোলে। …সকলে হীন আর আমি শ্রেষ্ঠ এইরূপ অহংকার কাটিয়ে আত্মবোধ কর। অকারণে ভলোবাস।
১৯২.
ফলাকাঙ্খা না করে যে কর্ম হয়, তাই হয়ে যায় যোগ আর ফলাকাঙ্খা নিয়ে যে কর্ম, তাই হয়ে যায় ভোগ। ভোগে ভোগান্তি, যোগে শান্তি। ফলের জন্য নয়, ঈশ্বরের জন্য কর্ম কর।
১৯৩.
বৃহৎ শব্দের মন প্রত্যয় করে হয় ব্রাহ্মণ। বিশাল হৃদয় এবং অনন্ত প্রশস্ত মন না হলে বিরাট কোন কিছুরই ধারণা করা সম্ভব হয় না। সংকীর্ণ মন বৃহৎ-এর চিন্তা করতে পারে না।
১৯৪.
জীবনে সত্য পালনের প্রতিজ্ঞা লও। সুচিন্তা, শুভকাজ কর এবং সত্য বল। সাধুসঙ্গ করে যাও। এগুলোই সদাচার। কেবল সদাচারের মধ্য দিয়েই সত্যকে বোধ করা যায়।
১৯৫.
কোনো জিনিসের ভাসা-ভাসা জ্ঞান ভালো নয় কারণ এর ফলে তর্ক-বিতর্ক বা বিরোধ হতে পারে। কিন্তু পাকা ধারণাযুক্ত ব্যক্তি কখনই নিজেকে বিতর্কে বা বিরোধে জড়ায় না।
১৯৬.
প্রকৃত প্রেম মনুষ্যত্বকে ব্যাপ্ত করে। প্রেম প্রতিদান চায় না- সেবা করেই সুখী। যোগ্য-অযোগ্য বিচারও প্রেম করে না। একমাত্র এই প্রেমই মানবের সমস্ত জ্বালা জুড়াতে পারে।
১৯৭.
মস্তিষ্কের যে কোষগুলি ডরমেন্ট থাকে- যার জন্য জাগতিক রহস্যসমূহ মানুষের কাছে ধরা পড়ে না- সেই কোষগুলি জাগ্রত করতে হলে ব্রহ্মচর্য ও সংযমের একান্ত প্রয়োজন।
১৯৮.
শরণাগতি তিন প্রকার। প্রথম প্রকার হলো- ‘আমি তোমার’। দ্বিতীয় প্রকার হলো- ‘তুমি আমার’ আর তৃতীয় প্রকার হলো- ‘তুমি ও আমি এক’। এইগুলি পর্যায়ক্রমে উন্মেষ হয়ে থাকে।
১৯৯.
ধর্ম করতে গিয়ে বা ধার্মিক সাজতে গিয়ে মানব তার মনুষ্যত্বটাই হারিয়ে ফেলেছে। মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্বলাভ আর মনুষ্যত্বের মধ্য হতে মহামানবের আবির্ভাব হোক।
২০০.
শ্রেণী, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী আদি নিয়ে যে ভেদ এবং বাদ-বিবাদ তা কেবল সংকীর্ণ, স্বার্থবুদ্ধি ও বিকৃত মনেরই প্রতিক্রিয়া। ঈশ্বরের সৃষ্টিতে কোন ভেদ নেই, আছে কেবল বিবিধতা।
২০১.
মূর্তিকে মাধ্যম করে মানুষ পরমেশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা, ভাব, ভক্তি প্রকাশ করে থাকে, পরিণামে সে প্রতীকের পার হয়ে নির্গুণ নিরাকারকে বোধে বোধ করতে সচেষ্ট হয়।
২০২.
আত্মবিস্মৃত স্বার্থ সচেতন অন্ত:করণে প্রেমানুভূতি হয় না। ভেদাভেদ ক্লেদযুক্ত অন্ত:করণে পরমপ্রেমরস অনাস্বাদিত। নিস্কপট সহজ অন্ত:করণেই পরম প্রেমরস অনুভূত হয়।
২০৩.
আহার-বিহারে অসংযত হলে, অসংযম করলে, সদাচারী না হলে- মনের দিক থেকে চিন্তার বিস্তার ও সুষ্ঠু চিন্তা না থাকলে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেবেই- রিয়্যাকশন হবে দেহে ও মনে।
২০৪.
সঙ্কট থেকে আসে হতাশা, হতাশা থেকে আসে বিক্ষোভ আর ঐ বিক্ষোভ রূপ নেয় বিদ্রোহ বা বিপ্লবে। কুশল নেতৃত্ব পেলে ঘটে বিপ্লব। বিদ্রোহ ধ্বংসাত্মক। আর বিপ্লব সৃজনাত্মক।
২০৫.
মহাপুরুষদের দেখিয়ে দেওয়া পথকে অনুসরণ করে মানব পুন: মহানতা প্রাপ্ত করুক, ক্রমোন্নতির ধারা পুনরায় বলিষ্ঠ হোক এবং মানব আত্মভাবে সমাসীন হোক- এটাই আমার ইচ্ছা।
২০৬.
মানুষের প্রথম শিক্ষা হল মানুষকে ভালোবাসা। প্রেমহীন মানব জগতের বড় দুর্ঘটনা। প্রেমের মধ্যে দিয়ে আসে দেবতা, মহামানব আর কামের মধ্যে দিয়ে আসে দানব, অসহজ পশুভাব।
২০৭.
ঈশ্বরের প্রতি অনুরাগ এলে সকল কর্মফল ধুয়ে মুছে যায়। তুলোর পাহাড় পুড়িয়ে দেবার জন্য পাহাড় প্রমাণ আগুনের দরকার হয় না, একটা ফুলকিই যথেষ্ট। ঈশ্বর অনুরাগই ঐ ফুলকি।
২০৮.
যিনি বিষয়বুদ্ধি বর্জিত ঈশ্বর বা ভগবৎ প্রেমে একান্ত বিভোর, তিনিই যথার্থ বাউল। এককথায় জাত-পাত-শ্রেণী-সম্প্রদায় ইত্যাদি সংকীর্ণতার বহু ঊর্ধ্বে বাউল বা বাউলভাব।
২০৯.
অবতার কথাটা এসেছে অবতরণ থেকে, ব্রহ্ম যখন চতুর্দশ কলায় অবতীর্ণ হন, তখন তাঁকে বলা হয় অবতার। আর যে শরীরে ভগবৎশক্তির প্রকাশ ঘটে সেই শরীরধারীকে বলা হয় ভগবান।
২১০.
কারো দোষ দেখে তার নিন্দা বা সমালোচনা না করে ভালবাসা ও প্রেমের দ্বারা তার মহান ভাবকে জাগ্রত করে দাও। শ্রেষ্ঠ ও সৎ কর্মে তাকে অনুপ্রাণিত কর- শুভ উৎসাহ ও সৎ প্রেরণা দাও।
২১১.
শরীরে বল না থাকলে তখন আর সাধন হয় না- তখন ভজন। ভজনের দ্বারা চিত্তশুদ্ধি হয়। আত্মসাক্ষাৎকার তো হয় না। ফলে সাধন করতে হবে আর সাধন কতে হলে সাধন-সমরে নামতে হবে।
২১২.
বিবেক যেন মাণিক্যের আলো আর বুদ্ধি প্রদীপের। ঝড়, জল প্রতিকূলতায় প্রদীপ নিভে যায় কিন্তু মাণিক্যের আলোয় কিছু হয় না। বিপত্তিকালে বুদ্ধি কাজ করে না, কিন্তু বিবেক কাজ করে যায়।
২১৩.
দুটো উপায়ে মনকে বশে আনা যায়, একটি হচ্ছে অভ্যাস আর একটি হচ্ছে বৈরাগ্য। অভ্যাস করতে করতে অর্থাৎ ধ্যান-জপ ইত্যাদিতে মন বশে আসে আর বৈরাগ্যের উদয় হলে মন শান্ত হয়।
২১৪.
ভালো করার ইচ্ছা থাকলেই ভালো করা যায় না যদি শ্রদ্ধাযুক্ত হৃদয় আর বিবেকযুক্ত বুদ্ধি না হয়। অনেকে পৃথিবীর কল্যাণ করতে চেয়েছে, কিন্তু শ্রদ্ধা-বিবেকের অভাবে বিপরীত ফল ফলেছে।
২১৫.
কেবলমাত্র সাধুসঙ্গেই বিবেক জেগে ওঠে। একটা জ্বলন্ত প্রদীপই পারে অসংখ্য অন্য প্রদীপকে জ্বালাতে। সাধু হলেন সেই আলোকবর্তিকা যাঁর জাগ্রত বিবেকের স্পর্শে অপরের বিবেক জেগে ওঠে।
২১৬.
গভীর তপস্যার সঙ্গে ঈশ্বর-প্রণিধান কর। গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে ধ্যানাভ্যাস করতে থাক। তুচ্ছ অনিত্য বিষয়ভোগ করবার নিমিত্ত তুমি নও। তোমার ভিতরের এই মহাশক্তিকে ঊর্ধ্বমুখী কর।
২১৭.
স্ত্রীজাতি মাত্রই ভোগভূমি এটা না ভেবে সাক্ষাৎ জগদম্বা ভাবতে হবে। অপমান, অমর্যাদা ও অনাচার না করে এ পথ হতে বিরত হতে হবে। কারণ মানবজাতিকে একমাত্র নারীজাতি রক্ষা করতে হবে।
২১৮.
সৃষ্টিতে বহুর ভিতর বৈচিত্র্য রয়েছে, কিন্তু বিরোধ নেই। সর্বদাই প্রকৃতিতে বৈচিত্র্যের মধ্যে সমন্বয়ের সুর বেজে চলেছে। সর্বদা স্মরণ রাখবে সবকিছু সেই চৈতন্যের প্রকাশ। সবকিছুর মূলে সেই পরমতত্ত্ব।
২১৯.
যারা মরুভূমিতে থাকে, তারাও মরীচিকা দেখে। কিন্তু ওগুলি তারা মরীচিকা বা মিথ্যা বলেই জানে এবং ওর জন্য বিভ্রান্ত হয় না। এইরূপ আত্মজ্ঞানী পুরুষগণ রিপু বা অবিদ্যার দ্বারা বিন্দুমাত্র ভ্রমাচ্ছন্ন হয় না।
২১০.
অনিত্য লাভের জন্য যা করা হয় তা প্রেম। আর নিত্যবস্তু লাভের জন্য যা করা হয় তাই শ্রেয়। সাধারণ জীবসকল প্রেয়কে চেয়েই দু:খ দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে আবার সে শ্রেয় অভিলাষী হলেই তার শান্তিলাভ হবে।
২১১.
যতদিন মানব অন্ত:করণে পূর্ণ আনন্দের স্ফুরণ না করিতেছে, ততদিন তাহার তৃপ্তি হইবে না। আর এই অতৃপ্ততার জন্যই তৃষ্ণার আবর্তনে বারংবার তাহাকে সংস্কার এবং ভাবানুযায়ী স্থূল শরীর ধারণ করিতে হইবে।
২১২.
রাগ-রাগিণী যতই সাধা হোক না কেন ওস্তাদ গাইয়ে যেমন মূল বা বাদী সুরটি থেকে কখনও বিচ্যুত হন না তেমনি ওস্তাদ সাধক বা বাহাদুর তারাই, যারা সদাসর্বদা ‘মায়া’কে ছেড়ে ‘মা’কে আশ্রয় করে থাকেন।
২১৩.
পৃথিবীতে সব সময় সত্যের জয় হয় ও অসত্য পরাজিত হয়। কিন্তু অসত্য বেশি আদর পায়, সম্মান পায়, পূজা পায়- শেষে পরাজিত হয়। সত্যের পথে বাঁধা হয়, বিঘ্ন হয়, অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়-শেষে জয় হয়।
২১৪.
স্থণস্থায়ী বিষয়কে নিয়ে অহংকার করলে বা তার প্রতি আসক্ত হলে পরিণামে মানুষকে দু:খ পেতে হয়। এইজন্য অহংকারের মোড় ঘুরিয়ে দিতে হয়। অর্থাৎ অহংকার যদি করতেই হয় তবে তাঁর নাম নিয়ে অহংকার করবি।
২১৫.
পূর্ব হতেই তোমার মধ্যে যে পূর্ণতা রয়েছে তার বিকাশ হওয়াকেই বলে অধ্যাত্ম। অপূর্ণ সীমিত পশু চেতনা হতে অখণ্ড ভগবৎ চেতনায় উত্তরণই হলো আধ্যাত্মিক রহস্য। আর ঐ বিকাশের প্রকাশ হয় জ্ঞানে, প্রেমে ও সেবায়।
২১৬.
প্রথম অবস্থায় একটু নির্জন বা প্রলোভন শূন্য স্থানের প্রয়োজন। কিন্তু যাঁহাদের স্বরূপবোধ হইয়াছে, তাঁহাতের আর বি প্রয়োজন এ সকলের? তাহাদের অন্তরে ভোগাবেগ না থাকায় কিছুতেই আসক্তি বা চঞ্চলতা প্রকাশ পায় না।
২১৭.
যিনি জ্ঞানী, যিনি সব জানছেন, দেখছেন, তিনি য কোন ঘটনা ঘটুক না কেন- নিরুদ্বগ্ন থাকেন- শান্ত থাকেন, কোন কিছুতেই আকুল বা ব্যাকুল হন না। তাঁর কোন কিছুতেই মোহ না থাকায় শোকগ্রস্তও হন না। এটাই রহস্য।
২১৮.
সাধনায় শুদ্ধ চিত্ত হলে- নির্মল হলে তুমি যেখানে যাবে সেখানেই ভালো লাগবে আর মন তথা চিত্ত মলযুক্ত বা অস্বচ্ছ হলেই রাগ, অভিমান, দ্বেষ, অশান্তিতে ভরে যায়, কোন জায়গায় গিয়ে শান্তি পাওয়া যায় না- ভালো লাগে না।
২১৯.
আত্মসাক্ষাৎকারের সাথে সাথেই দেশকালের বন্ধন চিরদিনের জন্য বিলীন হয়ে যায়। তখন ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান কোন কিছুই অজ্ঞাত থাকে না। তাই আত্মজ্ঞান বা আত্মবোধ হলে সংসারে কোন কিছুই অবিদিত থাকে না।
২২০.
তোমরা পরমেশ্বরের প্রিয় সন্তান। তোমাদের আত্মবিস্মৃতিই সমস্ত কিছু দু:খ-কষ্টের ও ক্লেশের কারণ। ঈশ্বরমিলনের সুমধুর স্মৃতির দ্বারা আপন বিস্মৃতি দূর করে স্বস্থিতি অর্জন কর এবং আপন স্বরূপকে বোধে বোধ কর।
২২১.
জীবনের যথার্থ আদর্শ হবেন একজন বোধিব্যক্তি যাঁকে অনুসরণ করে মানুষের জীবনের চরম উত্তরণ ঘটবে। শান্তি প্রাপ্ত হতে গেলে স্বভাবের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হবে। আর আনন্দপ্রাপ্তির মূলে নিজ স্বরূপকে জানতে হবে।
২২২.
পরনিন্দা পরচর্চা করো না, কারণ পরনিন্দায় অভিমান বাড়ে এবং চিত্তবিকার হয়। সাধনার লক্ষ্য হল অভিমানশূন্য ও বিকাররহিত হওয়া। সত্যে থাক- পবিত্র থাকো, শুদ্ধ থাকো, অচিরেই জীবনে আত্মসাক্ষাৎকার ঘটবে।
২২৩.
ভক্তিতে যেন মনোবৃত্তি ভেবো না, কারণ মনোবৃত্তি সতত থাকে না- তা পরবর্তনশীল। ভক্ত তো সদা ভগবানের সাথে যুক্ত থাকেন- খেতে, শুতে, বসতে, উঠতে সব অবস্থায়। এজন্য ভক্তি মনোবৃত্তি নয়। ভক্তি হল রাগাত্মিকা সংস্কার।
২২৪.
আবেগের আধিক্য যেন স্নায়বিক বিকারে পৌঁছে না দেয় মানবকে। কারণ স্নায়বিক বিকার একটি মানসিক রোগের লক্ষণ। যেটা মানবের চিত্তের বলিষ্ঠতা নষ্ট করে এবং যার ফলে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেয়ে মননশক্তি ও বিচার শক্তি ক্ষুন্ন হয়।
২২৫.
মনে কোর না ঐ উঁচু আকাশে স্বর্গলোক। এই লোকেই সবলোক আর এই দেহভাণ্ডেই রয়েছে ব্রহ্মাণ্ড। মানুষের ক্ষূদ্র দেহভাণ্ডে পা থেকে নাভি পর্যন্ত পাতাললোক, নাভি থেকে বক্ষ পর্যন্ত মর্তলোক, কণ্ঠ থেকে তালু পর্যন্ত স্বর্গলোক।
………………………………………….
আরো পড়ুন:
স্বামী পরমানন্দের বাণী: এক
স্বামী পরমানন্দের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: তিন
স্বামী পরমানন্দের বাণী: চার
স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
স্বামী পরমানন্দের বাণী: ছয়
……………….
আরও পড়ুন-
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়
……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার
গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….