সত্য প্রচার
-লুৎফর রহমান
কতকগুলো উড়ে বেহারা আমাদের বাড়িতে থাকে। তাদের মাঝে যারা ধার্মিক তারা প্রভাতে এবং সন্ধ্যায় সূর্যকে মাটিতে মাথা রেখে প্রণাম করে। মানব-জীবনের এই অপমান আমি দেখেছি এবং দুঃখ পেয়েছি। দরিদ্রদেরকে বড়বাবুর সম্মুখে ভীত বন্দির মতো হাত জোড় করে মাথা নত করে দাঁড়াতে দেখে মনে গোপনে অশ্রু ফেলেছি।
বুড়ো মানুষকে একটা পৈতাধারী অকালকুষ্মণ্ড ব্রাহ্মণ বালকের পদধূলি মাথায় নিতে দেখে মনে বেদনার ঝড় বয়েছে। মানব-জীবনের এই নিদারুণ অপমানের সম্মুখে মুসলমান
জাতি কি দায়ী নয়? তার ধর্ম কি শুধু রোজা-নামাজ?
যদি কোথাও গান-পাউডার থাকে তবে তাতে আগুন ধরিয়ে দাও, জীবন ওর সার্থক হোক! গন্ধে ভরা মানুষের চিত্তকুসুম ফুটিয়ে তোলো- এই হচ্ছে ভক্তের সাধনা। মানব জীবন সার্থক হোক। অন্ধকারে তাকে বিনষ্ট হতে দিও না। ওর মতো ক্ষতি আর নেই। মানুষকে এইভাবে প্রেম কর। বাইরে মানব সমাজে, পথেঘাটে, রাস্তায় ঈশ্বরের বন্দনা গীত গাও। শুধু মসজিদ ঘরে নয়। নিজের মুক্তির চিন্তায় নয়।
সর্বদা ঈশ্বরের গৌরব প্রচার কর। টিকিধারী, মুসলিম ভ্রাতাকে দেখে আমি ভয় পাই- যারা বলদের পিঠে চড়ে এক লম্ফে বেহেস্তের দরজায় উপস্থিত হতে চায়। যারা কোরবানি করে স্বর্গে যেতে চায়। যারা উচ্চকণ্ঠে কথা বলে এবং হঠাৎ মানুষকে কাফের বলে গালি দেয়।
তোমার যা কিছু ছিল, তাও যে বিনষ্ট হয়ে গেল। মুসলিম নরনারী অজ্ঞানতায় গভীর অন্ধকারে মরে গেল। কেউ দেখল না। সাংবাদিক গ্রাহক বৃদ্ধি করবার কাজে ব্যস্ত, ব্যবসায়ে লাভ বাড়াবার চিন্তায় মশগুল, পুস্তক প্রকাশক পুস্তকের কাটতির জন্যে চিন্তান্বিত, চাকুরে প্রমোশনের জন্যে ব্যাকুল- মানুষের বোর্ডের সভাপতি হবার জন্য কী উৎসাহ!
প্রভুর সত্য সর্বত্র প্রচার কর- পাপের আগুন চারিদিকে জ্বলে উঠেছে- ও দৃশ্য দেখা যায় না। হায় মুসলমান! তুমি এখনও ঘরের মধ্যে বসে আছ? এই কি তোমার ‘জেহাদ’ (পাপের সঙ্গে যুদ্ধ)? কেমন করে তোমরা ঈশ্বরের এত অগৌরব সহ্য কর?
অর্থের ভাণ্ডার খুলে দাও, প্রভুর রাজ্য বিস্তারে তোমার ধন-ভাণ্ডার লুটিয়ে দাও, নিজেকে, পুত্রদেরকে এবং আপন বংশকে প্রভুর পথে বিলিয়ে দাও। আল্লাহর পদতলে এইভাবে বলি হও এবং ধন্য। হও। মানব জাতি ধর্মের নামে কত অন্ধকারে পড়ে আছে। শত শত বছর অতিবাহিত হয়ে গেল, এখনও জগতে পৌত্তলিকতা রইল।
এই কি তোমাদের নবী-প্রীতি! দরুদ পাঠের ফল! প্রতিদিন প্রভুর প্রচারের নামে মাত্র একটি পয়সাই দান কর। দানের বেলা তোমরা কঠিন এবং কৃপণ। শুধু কোরান পড়াতেই সহজ! কারণ তাতে পয়সা লাগে না এবং সমাজের নিমন্ত্রণ পাওয়া যায়। তাতে হৃদয়ের রক্ত ব্যয় হয় না।
বালক! তুমি প্রভুর প্রচারের জন্য ১৫ দিনে একটি পয়সা দান কর। নারী! তুমি তোমার প্রভুর প্রচারের জন্য তোমার স্বতন্ত্র উপায়লব্ধ পয়সা থেকে মাসে মাত্র একআনা দান কর। দিকে দিকে ইসলামের বিজয়বার্তা প্রচার হোক। জগতের অন্ধকার দূর হোক- এই হচ্ছে তোমার বড় উপাসনা।
চিরদিন কী ধর্ম-সাধনায় সর্ব নিম্নস্তরে পড়ে থাকবে? গভীর ধর্ম-জীবনের প্রচ্ছন্ন আহ্বান তোমার চিত্তে প্রতিধ্বনি তুলবে না? মানব সমাজ থেকে দিনের মধ্যে পাঁচবার মুখে আল্লাহর জয়ধ্বনি দিকে দিকে পাঠিয়ে দাও। কাজেও কি প্রভুকে প্রচার করবে না?
দেখ দেখি, পরজাতীয়রা প্রভুর প্রচারে নিজেদের জীবন কীভাবে উৎসর্গ করেছেন? হায়! তুমি কি অন্ধকারে ঘরের মধ্যেই বসে থাকবে? পরজাতীয়দের কাজ কী বিস্ময় উৎপাদক নয়! সমস্ত জগৎ যে তারাই অধিকার করল। হায়! কী করলে তোমরা? তোমার যে সর্বনাশ হয়ে গেল। ওরে পরাজিত, লাঞ্ছিত!
তোমার যা কিছু ছিল, তাও যে বিনষ্ট হয়ে গেল। মুসলিম নরনারী অজ্ঞানতায় গভীর অন্ধকারে মরে গেল। কেউ দেখল না। সাংবাদিক গ্রাহক বৃদ্ধি করবার কাজে ব্যস্ত, ব্যবসায়ে লাভ বাড়াবার চিন্তায় মশগুল, পুস্তক প্রকাশক পুস্তকের কাটতির জন্যে চিন্তান্বিত, চাকুরে প্রমোশনের জন্যে ব্যাকুল- মানুষের বোর্ডের সভাপতি হবার জন্য কী উৎসাহ!
প্রভুকে প্রচার করবার কথা কেউ ভাবল না? কূপমণ্ডুকেরা বলে- প্রভু নিজেকে নিজে প্রচার করছেন! হ্যাঁ ঠিক। ঠিক প্রভু নিজের সৃষ্টি নিজে ধ্বংস করে নিজের মহিমায় নিজে বিভোর থাকবেন। তোমাদের কোনো দরকার নেই। তোমাদের কিছু করবার নেই। তোমরা নিষ্কর্মা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাক।
প্রভুকে প্রচার কর, সর্বত্র আল্লাহর বাণী বহন কর। পতিতাকে, পাপী ও পথহারাকে সত্যের পথে আহ্বান কর। এই কাজে তোমরা প্রত্যেকেই দান কর। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানে তোমাদের ভাণ্ডার অফুরন্ত ধনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। যশ, প্রশংসা, স্বার্থ সকল আশা ত্যাগ করে প্রভুকে প্রচার কর।
উত্তম দাস তোমরা! মানুষের কাছে প্রভুর দাবি কী?-মহাজীবনের কাজ কী? প্রভুকে প্রচার করবে- তার বাণী মানুষের দুয়ারে দুয়ারে নেবে- এই তাঁর দাবি তোমার কাছে। মুসলমানদের জীবন শুধু জাগতিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য নয়। তোমরা কি কাফেরদের জীবন আদর্শ করেছ?
তোমরা যাদেরকে কাফের বল, তারাই তো ঈশ্বরের ধর্মে দীক্ষা পেয়েছে, তোমরাই তো হয়েছ কাফের! খ্রিষ্টান সাধু সুন্দর সিং তিব্বতে উপস্থিত হলে সেখানকার ধর্মযাজকেরা তাঁকে জীবিত অবস্থায় এক কূপের ভিতর ফেলে দেয়।
কয়েক বছর আগে কলকাতা T.M.C.A হলে তাঁর নিজ মুখে শুনেছিলাম, তিনি বললেন; কূপে ফেলে দিয়ে তারা আমাকে মাটিচাপা দিয়ে গেল। বাঁচবার আর কোনো আশা ছিল না। আমি নিরুপায় হয়ে প্রার্থনা করতে লাগলাম।
তিন দিন পর ঠিক পাশ দিয়ে আর একটি কূপ খনিত হল, তারপর কারা যেন সেই গভীর অন্ধকার পাতাল থেকে আমাকে উদ্ধার করল। তারা কে তা আমি জানি নে। ঈশ্বর আমাকে এইভাবে রক্ষা করলেন। পরজাতীয়দের প্রতি যদি আল্লাহ্ এত অধিক দয়ালু হন, তবে আল্লাহকে প্রচারের পথে তিনি তোমাদের প্রতি কত অধিক দয়ালু হবেন।
ইউরোপে খাজা কামালুদ্দীন ইসলাম প্রচার করছেন, তাতে ইউরোপে এক লাখ লোক এই ধর্মের সমাচার পেয়েছেন। অনেক সম্ভ্রান্ত ইংরাজ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের দীর্ঘ তালিকা দেওয়া এখানে অনাবশ্যক। শুধু এইটুকু বল্লে হবে- মঙ্গলের বাণী, ঈশ্বরের বাণী, সত্য ও উন্নত ধর্ম জীবনের সুসংবাদ তোমরা আপন দেশে সর্বত্র নিয়ে যাও। নইলে আল্লাহর কাছে মানুষের পাপের জন্য তোমরা দায়ী হবে।
প্রভুকে প্রচার করতে হবে, তোমরা আমার এই কথাকে পণ্ডিতের পাণ্ডিত্য মনে করো না। এই হচ্ছে মানুষের প্রতি আল্লাহর চিরকালের আদেশ। কেউ ঈশ্বরের বাণী শোনে, কেউ শোনে না। আমি শুনেছি তোমাদেরকে বল্লাম। তোমরা গ্রাহ্য কর এবং বিশ্বাস কর!
প্রভুকে প্রচার কর, সর্বত্র আল্লাহর বাণী বহন কর। পতিতাকে, পাপী ও পথহারাকে সত্যের পথে আহ্বান কর। এই কাজে তোমরা প্রত্যেকেই দান কর। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানে তোমাদের ভাণ্ডার অফুরন্ত ধনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। যশ, প্রশংসা, স্বার্থ সকল আশা ত্যাগ করে প্রভুকে প্রচার কর।
সত্য প্রচারের পথে কখনও অসহিষ্ণু হয়ো না- নিঃস্বার্থভাবে মানুষের মঙ্গল করে যাও, তাদেরকে মহৎ জীবনের বাণী শোনাও, কাউকে বলবার দরকার নেই- তোমরা আমাদের ধর্ম গ্রহণ কর।
<<আত্মীয়-বান্ধব ।। নিষ্পাপ জীবন>>
……………………
মহা জীবন -লুৎফর রহমান।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা