-মূর্শেদূল মেরাজ
গুরুচাঁদ পাগলের হাতে তামাক দিয়ে ধান কাটা শুরু করতে না করতে আবার পাগল ডেকে তামাক সাজিয়ে দিতে বলতে লাগলো। গুরুচাঁদ যতবার ধান কাটতে যায় গোলক পাগল ততবারই তামাক খাবার বায়না করে। গুরুচাঁদ তামাক সাজিয়ে দেয় আর একটু একটু করে ধৈর্য হারাতে থাকে।
মাঠে যাবার পর বহু সময় হয়ে গেলেও তামাক সাজানোর জন্য তার ধান কাটা একটুও এগোয়নি। গোলক পাগলতো ধান কাটতে নামেই নি; উপরন্তু গুরুচাঁদও তার তামাক খাবার বায়না মেটাতে গিয়ে ধান কাটার ফুরসত পায় নি। গুরুচাঁদ শেষে রেগে গিয়ে বাড়ি গিয়ে হরিচাঁদ ঠাকুরের কাছে নালিশ জানালেন।
হরিচাঁদ ঠাকুর বললেন, “গুরুচাঁদ তুমি একটা পাগলকে নিয়ে মাঠে ধান কাটতে গিয়ে তার জ্বালাতন সইতে না পেরে আমার কাছে এসেছ নালিশ করতে। এরপর যখন লক্ষ লক্ষ পাগল আসবে। তারা এর থেকে অধিক জ্বালাবে আর আমি থাকব না। তখন তুমি সে জ্বালা সইবে কীভাবে?
অধৈর্য না হয়ে মাঠে গিয়ে দেখো পাগল কী কাণ্ড ঘটিয়েছে। গুরুচাঁদ পিতার কথা শুনে মাঠে গিয়ে দেখলেন এটুকু সময়ে গোলক পাগল মাঠের সব ধান কেটে ফেলেছেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর বুঝলেন যে গোলক পাগল তাকে ধান কাটতে দেবে না তাই সে ঐরূপ পাগলামী করেছে।
আসলে পাগলের লীলাই এমনই। তার যেরূপ প্রকাশিত তার নিরানব্বই ভাগই আবরণে ঢাকা। সেই আবরণ সরিয়ে দেখতে না পারলে পাগলের সত্যরূপের ছিটেফোটাও অনুধাবন করা যায় না। তাই ভবা পাগলা বলছেন-
আমার নিতাই চাঁদের দরবারে,
আমার গৌর চাঁদের বাজারে,
এক মন যার সেই যেতে পারে
আবার দু’মন হলে পরবি ফেঁড়ে
ওরে পারবি না পারে যেতে।।
চার দশে চল্লিশ সেরে মন,
আরে রতি মাশা কম হলে, নেয় না মহাজন
বলি আরেক হাকিম বসে আছে,
রোজে রাধা রানী পার করে।।
আরে কাঁঠুরিয়া মানিক চিনে না
চিনির বলদ বয় যে চিনির স্বাদ তো পেল না।
যেমন স্বর্ণকারে সোনে চিনে
আবার নেয় সেথায় পরখ করে।।
যে জন চাকা গুড়ের ভিত্তি জানে না
ওলার আশ বাঁধবি কি করে,
ভবা পাগলার রসের তত্ত্ব, জীবে জানবে কি করে।
এক মন যার সেই যেতে পারে।।
তবে পাগলের মধ্যে সকলেই যে ভাবের পাগল তা কিন্তু নয়। অনেক জালি পাগলও মিশে থাকে আসল পাগলের মাঝে। অনেক অপরাধী বেশভূষা পাল্টে পাগল হয়ে পরিচয় গোপন করে থাকে। আবার গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সকেও দেখেছি পাগল সেজে পাগলদের মাঝে মিশে থাকতে।
এতে তারা অনেকের মাঝে, কাছাকাছি, পাশাপাশি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সাধারণত মানুষ পাগলদের বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। তাই পাগলের পাগলামী দেখে মুগ্ধ হলেই হবে না। গভীরে গিয়ে বুঝতে হবে কে ভাবের পাগল আর কে সাজের পাগল।
আবার এ কথাও তো ঠিক নামের পাশে পাগল থাকলেই কেউ বড় পাগল। আর নামের পাশে পাগল না থাকলেই কেউ উচ্চকটির পাগল নয় তা তো নয়। ফকির লালন সাঁইজির পাগলামির চূড়ান্ত দেখেছেন চৈতন্য মহাপ্রভু, নিত্যানন্দ, অদ্বৈত আচার্যের মধ্যে।
আবার সকলকেই সাজের পাগল বলে সন্দেহ করতে থাকলে ভাবের পাগলকে খুঁজে পাওয়াও যায় না। আসলে এই পথটাই এমন, এখানে প্রেমের মধ্যে জল ঢুকে গেলে বিপদ, মহাবিপদ। অশুদ্ধ প্রেমে শুদ্ধ সাধককে, শুদ্ধ পাগলকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অতি ভক্তিতেও ঠকতে হয়। তাই সাধু সাবধান।
দেশ বিদেশের বহু সাধক পাগল তত্ত্বে জীবন পরিচালনা করলেও নামের পাশে পাগল উপাধি সকলে ধারণ করতে পারেন নি। তারা পরিচিত হয়েছেন নানা উপাধিতে। ভূষিত হয়েছেন নানা খেতাবে। তারপরও অগনতি সাধক পরিচিত পাগল নামে।
আবার এ কথাও তো ঠিক নামের পাশে পাগল থাকলেই কেউ বড় পাগল। আর নামের পাশে পাগল না থাকলেই কেউ উচ্চকটির পাগল নয় তা তো নয়। ফকির লালন সাঁইজির পাগলামির চূড়ান্ত দেখেছেন চৈতন্য মহাপ্রভু, নিত্যানন্দ, অদ্বৈত আচার্যের মধ্যে।
আবার পাগলের মহিমা ও বাংলার পাগলের তালিকা নিয়ে আব্দুর রশিদ সরকার লিখেছেন-
পাগল মরলে বাতি জ্বলে
মুন্সি মরলে জ্বলে না,
এই মানুষে আল্লা থাকে
মোল্লারা তা জানে না।।
মুন্সি মরলে বেহেস্তে যাবে
পাগল মরলে অমর হবে,
তরিকার বাতি জ্বালাবে
যে বাতির জোত কমে না।।
লেংটা পাগল কেষা পাগল
অথুলীতে ফজর পাগল,
গোলাপ নগর সলেমান শা
আল্লার এস্কে দেওয়ানা।।
আফাজ পাগল বাঠুইমুরী
পাঁচা ফকির খরার চরী,
ভাকলার পাগলি দুলি বুড়ি
ধামরাইর পাগলি বরকত মা।।
লেংটা আফাজ গালিমপুরী
গোলাম মাওলা বৈরাবরি,
খলিল চানঁকে স্মরণ করি
গড়পাড়ায় যার ঠিকানা।।
বাঘা থানায় বাঘা পীর
নুরুল্লাপুরে শানাল ফকির,
ঝিঁটকাতে রশিদ ফকির
তাসাউফের ঠিকানা।।
আখাউরাতে কেল্লা শাহ্
কুষ্টিয়াতে লালন শাহ্,
পারিলে হয় ইব্রাহিম শাহ্
তরিকতের নিশানা।।
ঝিটকার দরবেশ আল্লাবাজান
জয়মন্টপে হয় ডেংগর চাঁন,
ভান্ডারের গোলাম রহমনা
পাগল এরা সব জনা।।
বৈরাবরের খালেক চাঁন
সুরেশ্বরের মওলানাজান,
ঘোড়াশালের কাজী এমরান
মেছাল যাহার মেলে না।।
বাগদাদে পীর মহিউদ্দিন
আজমিরে খাজা মইনুদ্দিন,
দিল্লিতে রয় নিজামুদ্দিন
চিনেও কেন চেন না।।
কুকুর হটির জালালউদ্দিন
পয়লাতে পীর কসিমুদ্দিন,
নকীব বাড়ির একলাসউদ্দিন
আল্লাহর প্রেমে দেওয়ানা।।
সব পাগলের বাবার বাবা
সিলেটে শাহজালাল বাবা,
হাইকোটে সরফুদ্দিন বাবা
পাগল এরা সব জনা।।
বাহার শাহ্ হয় বাবু বাজার
মাক্কু শাহ্ জেলখানায় মাজার,
মিরপুর হয় শাহ্ আলী বাবা
পুরায় মনের বাসনা।।
উত্তর টাঙ্গাইল ফাইল্লা বাবা
করটিয়া জান শাহ্ বাবা,
এনায়েতপুরে ইউনুস বাবা
পাগল রশিদের আজিমপুরে ঠিকানা।।
ভবা পাগলা, পাগল বিজয়, পাগলা কানাই, গণেশ পাগল, গোলক পাগল, পাগল চাঁন, গৌর পাগল, লেংটা পাগল, কেষা পাগল, ফজর পাগল আরো কত শত সাধক, সাধক শিল্পী যে নামের সাথে পাগল জুড়ে দিয়েছে সানন্দে তার হিসেব মেলা ভার। পাগল বিজয় তার এক গানে বলেছেন-
“অনেক দিনের পাগল আমি
ঘুড়ে বেড়াই তার তালাসে,
শতকে একটা সত্য কথা
শুনলে আবার মরায় হাসে।।”
যেখানে কাউকে পাগল বললে আমরা রেগে যাই। সেখানে সগৌরবে মহান সাধকরা পাগল নাম জুড়ে দিয়ে হয়েছে মহান।
আমার দেখা আরেক ভাবের পাগলের নাম না বললেই নয়। তিনি হলেন মওলা পাগল। প্রথম তাকে দেখেছিলাম সাঁইজির ধামে। তার সাথে সেই ভাবের কথা, আলাপ-আলোচনা না হলেও দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। কুশলাদি বিনিময় হয়েছে। তার পাগলামি দেখেছি। মুগ্ধ হয়েছি।
একবার মাইক্রোফোন হাতে পেলে সে আর ছাড়তো না। একের পর এক সাঁইজির পদ করেই চলতো। তাকে থামায় সাধ্য কার। অনেকে যারা তাকে চিনতো না। তারা নানান কথা বলতো। মাইক কেড়ে নিতে চাইতো। কিন্তু মওলাকে যারা চিনতো তারা সেই দু:সাহস করতো না।
বহু আখড়া, আশ্রম, ধামে পাগলার জন্য ছিল উন্মুক্ত দ্বার। সেখানে অনেকের জন্য অনেক বিধি নিষেধ থাকলেও পাগলাকে কিছু বলা হতো না। আসলে যারা তার সেই ভাব দেখেছে তারাই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। মনে ধরেছে। সকলে তা পারে না। পারবেও না।
ফেনীতে ছিল পাগলা মিয়া। এক কাহিনীতে জানা যায়, একবার চৈত্র মাসে পাগলা মিয়া এসে তাঁর মাকে মাছ ধরার ‘চাই’ দিতে বল্লেন। মা বুঝতে পারলেন না মাঠ ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে পাগলা মাছ পাবে কোথায়। তবু মা ‘চাই’ বের করে দিলো।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হঠাৎ করে গাছে ঝুলতে থাকা বিচিত্র ঘর, বিচিত্র সব জিনিসপত্রের সমাহার চোখে পরলেই আমরা বুঝে যেতাম মওলা ঢাকায় চলে এসেছে। এবার পাগরামি হবে শহরে। পাগলা নাড়িয়ে দিয়ে যাবে সভ্যতার ঠুনকো গরিমা।
পাগলের কথা যখন বলছি তখন আরেক পাগলের নাম না করলেই নয়। যদিও সকল পাগলের নাম উল্লেখ করা তো আর একটা লেখায় সম্ভব না। তাই অতি পরিচিত পাগলদের একটু ছুঁয়ে দেখবার চেষ্টা মাত্র। এক সময়কার ঢাকা কাঁপানো সেই পাগলার নাম ‘নূরা পাগলা’।
জন্ম নোয়াখালিতে হলেও পরবর্তীতে তিনি যশোরে আস্তানা করেন। তবে নূরা পাগলা মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচয় পায় ঢাকার হাইকোর্টে অবস্থানের সময়। হাইকোর্টে তার আস্তানা ঘিরে পাগলের মেলা জমতো তখন।
হাইকোর্টের বিশাল বটগাছের নিচে দেখা মিলতো দেশ-বিদেশের নানান পাগলের। শহরের পপ শিল্পীরা ভিড় করতো তার আস্তানায়। তাকে ঘিরে প্রচলিত আছে নানান কল্প-কাহিনী। অনেকে তার সাথে জুড়ে দেন ষাটের দশকের হিপ্পি আন্দোলনের প্রতিবাদের বাংলার রূপ হিসেবে।
পত্রিকার শিরোনামও হয়েছেন বেশ কয়েকবার। দেশ জুড়ে এখনো ছড়িয়ে আছে তার অগনিত ভক্ত। শহর দাপিয়ে বেড়াতেন একসময় নূরা পাগলা।
ফেনীতে ছিল পাগলা মিয়া। এক কাহিনীতে জানা যায়, একবার চৈত্র মাসে পাগলা মিয়া এসে তাঁর মাকে মাছ ধরার ‘চাই’ দিতে বল্লেন। মা বুঝতে পারলেন না মাঠ ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে পাগলা মাছ পাবে কোথায়। তবু মা ‘চাই’ বের করে দিলো।
মা, তোমাকে ইঁচা মাছ খাওয়াবো’ এই বলে পাগলা বিশাল এক গাছের উপরে চাইটি বেঁধে রাখলো। লোকজন এসব পাগলামী দেখে হাসাহাসি করতে লাগলো। কয়দিন পর এসে তার মাকে আবার বললো, ‘মা ঘরের চালে উঠ, না হলে বাঁচবা না’।
তখন হঠাৎ করে দেশে বিরাট বন্যা শুরু হলো। তখন এতই পানি হলো যে, পাগলা গাছে যে মাছ ধরার চাই বেঁধে ছিল সে চাইও ডুবে গেলো। চৈত্র মাসে সাধারণতঃ বন্যা হয় না। কিন্তু এই পাগলের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে তিনি তা আগে ভাগেই পূর্বাভাষ পেয়েছিলেন।
পানি নেমে গেলে পাগলা গাছ থেকে চাই নামিয়ে আনলো। আর সবাই দেখলো ‘ইঁচা’ মাছে চাই ভরে আছে। পাগলার কারামতিতে সকলে তার ভক্ত হতে লাগলো। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মজলো পাগলের প্রেমে।
কিন্তু পাগল হওয়া সামান্যের কাজ নয়। সে পথ দীর্ঘ ত্যাগ, তপস্যা আর সাধনার। গায়ে জল না লাগালে, পোশাক না পাল্টালে, মাথায় তেল না দিলেই কেউ পাগল হয়ে উঠতে পারে না। মনে রাখতে হবে আধ্যাত্মবাদের পাগল মস্তিষ্কবিকৃত কেউ নন। তারা মজনু, আসিক, প্রেমে মাতোয়ারা, দিওয়ানা। মহর্ষি মনোমোহন দত্ত বলেন-
শুন বলি পাগলের চেলা।
পাগল হওয়া নয় সামান্য, দেবের মান্য পাগল ভোলা।।
এক পাগল হয় নারদ ঋষি, বীনা বাজায় দিবানিশি,
আর এক পাগল বাজায় বাঁশি, বাসা করছে কদমতলা।।
আর এক পাগল হয় হনুমান, রামরূপে ধরেছে ধ্যান,
বক্ষ চিড়ে দেখাইল নাম, ছিড়িল মুকুতার মালা।।
আর এক পাগল গৌরহরি, ডোর কৌপীন ধারণ করি,
হরি হলে বলছে হরি, স্কন্ধে নিয়ে ভিক্ষার ঝুলা।।
(যদি) পাগল হওয়া ভালো লাগে, মন পাগলারে ধরগে আগে,
ঐ পাগল তার সঙ্গে থাকে, সব পাগলামী যাহার খেলা।।
মনোমোহন তার স্বভাবেতে, পারল না সে পাগল হতে,
কামিনী কাঞ্চন হাতে, লাগাইল পাগলের তালা।।
অন্য পদে মনোমোহন বলছেন-
পাগল, পাগল, সবাই পাগল,
আমার কেন পাগল খোটা!
দিল-দরিয়ার ডুব্ দিয়ে দেখ্
পাগল বিনে ভাল কেটা।।
কেউবা ধনে, কেউবা মানে,
কেউবা পাগল ভাবের টানে,
কেউবা পাগল ঘরের কোণে
ভে’বে মনে এইটা ঐটা।।
কেউবা রূপে কেউবা রসে,
কেউবা পাগল ভালবেসে
কোন পাগল কাঁদে হাসে,
ঐ পাগলামী বড় ঘটা।।
সবে বলে পাগল পাগল;
পাগলামী কি গাছেরি ফল;
তুচ্ছ করি আসল নকল
সমান সকল তিতা মিঠা।।
যার হইছে, সে আসল পাগল,
তা’বিনে আর নকল সকল;
কলের বেকল ঘুরছে কেবল,
বেন্ধে জটা দিয়ে ফোঁটা।।
হইতে গিয়ে ঐ সে পাগল,
মনোমোহনের গে’ছে সকল,
বাকী আছে গাছের বাকল
ছেলের হাতে খে’তে ইটা।।
তবু যদি ভাগ্যফলে,
দয়া করে ঐ পাগলে,
ফাঁকি দিতে পারি কালে,
নইলে কেবল মাথা কোটা।।
একবার দৌলতদিয়া স্টেশনে এক পিলে চমকে দেয়া এক বিশালদেহী পর্বতের মতো পাগলের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। চায়ে ডুবিয়ে বনরুটি খেতে খেতে বলেছিল, “শোন পাগল সাজবি না, পাগল হবি। পাগল হইলে মজাই মজা। খালি মজা।”
‘তা কেমনে পাগল হবো’ আমার এই কথার উত্তরে পাগল আমার দিকে তাকায় হাসি হাসি ভাবটা মুছে ফেলে ভেজা ভেজা চোখে বলে উঠলো, “পাগল হওয়ন যায় নারে, পাগল হইয়া যায়। পাগল কইরা ফেলায়।”
হয়তো তাই পাগলের সঙ্গ নিলে পাগল হইতেই হয়। না হলে তাকে আবিষ্কার করা যায় না। আর এই আবিস্কারের নেশাতেই মানুষ পাগল হয়। পাগলের প্রেমে পড়ে। তাই ফকির লালন বলেছেন বুঝে শুনে মজতে। বরেছেন-
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে।
তিন পাগলে হলো মেলা নদেয় এসে।।
একটা পাগলামি করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে যেয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে ধূলার মাঝে।।
একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলা ফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে।।
পাগলের নামটি এমন
বলিতে ফকির লালন হয় ত্বরায় সে
চৈতে নিতে অদ্বৈ পাগল নাম ধরেছে।।
(সমাপ্ত)
……………………………….
স্থিরচিত্র: মূর্শেদূল মেরাজ
……………………………….
আরো পড়ুন:
সঙ্গে যাবি পাগল হবি: পর্ব-এক
সঙ্গে যাবি পাগল হবি: পর্ব-দুই
সঙ্গে যাবি পাগল হবি: পর্ব-তিন
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….