ভবঘুরেকথা
সোহরাওয়ার্দি

সোহরাওয়ার্দির জিব্রাইলের পালকের শব্দ

-মূর্শেদূল মেরাজ

সোহরাওয়ার্দির ‘জিব্রাইলের পালকের শব্দ’

ডক্টর জাবিউল্লাহ সাফা ‘ইরানের সাহিত্য ও ভাষার ইতিহাস’ বইতে সোহরাওয়ার্দির ‘জিব্রাইলের পালকের শব্দ’ বই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘প্রতীক ও উপমাশ্রিত এ বই সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় প্রশ্ন-উত্তরের আঙ্গিকে রচিত। অস্পষ্ট এসব শব্দের কোনো কোনোটি প্রথাগত আধ্যাত্মিক প্রেমময় বার্তার প্রতীক। আবার কোনো কোনোটি সোহরাওয়ার্দির নিজস্ব উদ্ভাবন যা প্রাচীন সুফি-সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া যায় না।’

ধর্মান্ধদের দৃষ্টি এড়াতে ‘জিব্রাইলের পালকের শব্দ’ বইটি রূপক আকারে বহু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই বইটি তার আধ্যাত্মিক উর্ধ্বজগৎ অবলোকনেরই প্রকাশ। ধর্মান্ধরা জ্ঞানী খাজা আবু আলী ফারমাদি সম্পর্কে যে অশোভন কথা বলে বেড়াচ্ছিল এ বই তারই জবাব স্বরূপ।

জনৈক ধর্মান্ধ ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, বিশেষ কোনো শব্দকে ও পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভূত সকল কিছুকেই কি অনেক বিশেষ পোশাকধারীর মতো জিব্রাইলের পালকের শব্দ মনে করেন?

আবু আলী ফারমাদি জবাবে বললেন, ‘আপনি নিজেও জিব্রাইলের পালকের শব্দের অন্যতম।’

লোকটি উপহাস করে বললো, ‘এসব কথা অর্থহীন প্রলাপ মাত্র।’

সত্য-সন্ধানী সোহরাওয়ার্দি খোলা প্রান্তরের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে পরেন। পথে দেখা হয় দশজন জ্ঞানীর সাথে। যাদের অগাধ বুদ্ধিমত্তা তাকে একই সাথে মুগ্ধ ও ভীত-বিহ্বল করে। তিনি তাদের একে একে প্রশ্ন করেন, সৃষ্টি রহস্য, স্রষ্টাপ্রেম-সাধনার স্তর, আকাশের গঠন, একাকীত্বের জগৎ ও সে জগতের স্মৃতি সম্পর্কে।

সোহরাওয়ার্দি তার ‘জিব্রাইলের পালকের শব্দ’ গ্রন্থের শুরুতে সেই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে শুরু করছেন এভাবে- ‘সেই শব্দের যথাযথ ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্য এই বই লেখা রচনা করছি। যোগ্যতা থাকলে এই বই থেকে আপনি তা বুঝতে পারবেন।’

সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর কাহিনীর আকারে উত্তম পুরুষ হিসেবে রচিত বইটির কাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে আলোকিত দর্শনের জ্ঞানীদের নিয়ে আলোচনা। এই জ্ঞানী আদৌতে সোহরাওয়ার্দি স্বয়ং। গল্পে তিনি একটি দরবারে প্রবেশ করেন যার দু’টি দরজা। একটি দরজা দিয়ে শহরে আর অপরটি দিয়ে উন্মুক্ত প্রান্তরে যাওয়া যায়।

সত্য-সন্ধানী সোহরাওয়ার্দি খোলা প্রান্তরের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে পরেন। পথে দেখা হয় দশজন জ্ঞানীর সাথে। যাদের অগাধ বুদ্ধিমত্তা তাকে একই সাথে মুগ্ধ ও ভীত-বিহ্বল করে। তিনি তাদের একে একে প্রশ্ন করেন, সৃষ্টি রহস্য, স্রষ্টাপ্রেম-সাধনার স্তর, আকাশের গঠন, একাকীত্বের জগৎ ও সে জগতের স্মৃতি সম্পর্কে।

এ বিশ্বের সব কিছুই জিব্রাইলের পালকের আওয়াজ থেকে উদ্ভুত। আর তার কথা বা শব্দ থেকেই মানুষের জন্ম। আর সেই স্রষ্টার নামের মাধ্যমে মানুষ পূর্ণতা অর্জন করে এবং নিজের মূল সত্তা ফিরে পায়। মূলত রূপক সাহিত্যের এ বইটির মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দি স্রষ্টা দর্শনের আধ্যাত্মিক যাত্রার বিষয়টিই ব্যক্ত করেছেন।

মূলত এভাবেই চলতে থাকা প্রশ্ন-উত্তরের মধ্য দিয়ে সোহরাওয়ার্দি তার ইশরাকি দর্শনের মূলতত্ত্ব ও স্রষ্টাপ্রেমের পথিক হওয়ার কৌশল বর্ণনা করেন।

এক পর্যায়ে তিনি সেই জ্ঞানী দার্শনিকের কাছে ‘ইসমে আযম’ অর্থাৎ স্রষ্টার সবচেয়ে গূঢ় নাম জানতে চান। তখন তাকে এক বিশেষ ধরনের বাক্য শেখানো হয়। ডক্টর সাইয়্যেদ হুসাইন নাসরের মতে, বাক্যটি হচ্ছে ‘জাফার’ নামক গোপন সূত্রাবলী।

এরপর বলা হয়েছে, স্রষ্টা ‘ফেরেশতাকুল’ জাতীয় শব্দের পর তার চেয়েও আরো বড় কিছু শব্দ সৃষ্টি করেছেন। ‘মানুষ’ও হচ্ছে স্রষ্টার পক্ষ থেকে আসা একটি শব্দ। আর যা জিব্রাইলের একটি শব্দ। সেই জিব্রাইলের ডানা আকাশ ও ভূ-মণ্ডলে বিস্তৃত।

এই বিশ্ব জগৎ আদৌতে ছায়ার জগৎ। পাশ্চাত্য হচ্ছে জিব্রাইলের বাম ডানা পাখার ছায়া। আর প্রাচ্য হচ্ছে তার ডান পাখার প্রতিফলন। বেহেশতি আলোর জগৎ মূলত ‘প্রাচ্য’।

এ বিশ্বের সব কিছুই জিব্রাইলের পালকের আওয়াজ থেকে উদ্ভুত। আর তার কথা বা শব্দ থেকেই মানুষের জন্ম। আর সেই স্রষ্টার নামের মাধ্যমে মানুষ পূর্ণতা অর্জন করে এবং নিজের মূল সত্তা ফিরে পায়। মূলত রূপক সাহিত্যের এ বইটির মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দি স্রষ্টা দর্শনের আধ্যাত্মিক যাত্রার বিষয়টিই ব্যক্ত করেছেন।

(চলবে…)

<<সোহরাওয়ার্দি: ইশরাকি দর্শন।। সোহরাওয়ার্দি: জিব্রাইলের পালকের শব্দ>>

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………..
আরো পড়ুন:
সোহরাওয়ার্দি: জীবন ও কর্ম
সোহরাওয়ার্দি: ইশরাকি দর্শন
সোহরাওয়ার্দি: সাহিত্য
সোহরাওয়ার্দি: জিব্রাইলের পালকের শব্দ
সোহরাওয়ার্দি: উইপোকার আলাপচারিতা
সোহরাওয়ার্দি: প্রেমের বাস্তবতা
সোহরাওয়ার্দি: লাল বুদ্ধিবৃত্তি
সোহরাওয়ার্দি: সী-মোরগের দূত

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!