তপস্যা
-লুৎফর রহমান
কোনো অজ্ঞাত বিষয়কে জানবার ও পাবার জন্য আত্মার আন্তরিক সাধনার নাম তপস্যা। জগতের সমস্ত সুখ-সুবিধা ও সৃষ্টির পশ্চাতে মানুষের আন্তরিক বহু কালব্যাপী তপস্যা আছে। তপস্যা ছাড়া, সত্য উদ্ধারের সুকঠিন ব্রত ছাড়া, জগতের কোনো কল্যাণ-সাধন। সম্ভব নয়।
তপস্যার আন্তরিকতা, তন্ময়তা, আত্মার সুগভীর সুকঠিন বেদনা ব্যাকুলতা চাই। নইলে লক্ষ্যে পৌঁছা যায় না। হয়তো এক জীবনে কিছু হয় না। জীবনের পর জীবনে অসীম ত্যাগ দুঃখ ও সহিষ্ণু অন্বেষণ শেষে জয়যুক্ত হয়। চিকিৎসাশাস্ত্র, ঘরবাড়ি নির্মাণ বিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র, জগতের প্রত্যেক কল্যাণপ্রসূ শাস্ত্র মানুষের বহুযুগের তপস্যার ফল। বিনা তপস্যায় কোনোকিছু লাভ হয় না।
বহুঁকাল বিদ্যালাভের চেষ্টা ব্যতীত কেউ বিদ্বান হয় না। কোনো একটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র তৈরি একদিনে হয় নি! রেলগাড়ি, তার, উড়োজাহাজ, গ্রামোফোন সৃষ্টি, এ-কি দুই একদিনে হয়েছে?
সুখময়, চিন্তাভাবনাহীন, অন্বেষণহীন, ব্যাকুলতা ও চেষ্টাহীন জীবনে কোনো কল্যাণ লাভ হয়? মুসলমানের মধ্যে বর্তমানে কোনো তপস্যা আছে কি? মুসলিম জাতির পক্ষে এশিয়ায় ও ইউরোপে রাজত্ব স্থাপন কি সহজে সম্ভব হয়েছিল? নানা শাস্ত্রে তাদের কৃতিত্ব কি বহু তপস্যার ফল নয়? সে তপস্যা কই আমাদের এখন?
আত্মার দিক দিয়ে যেন আমরা মরে গেছি। জীবনের চিহ্ন মাত্র নেই। ধর্ম ব্যাপারটা যা নাকি একেবারেই আত্মার বিষয়, তা তো এখন হয়েছে শরীরের ও ওষ্ঠের ব্যায়াম মাত্র। আল্লাহকে পাবার তপস্যাই-বা আমাদের কই? জীবনের সর্ব পাপ লয় হয়ে ধীরে ধীরে উন্নততর আত্মিক অবস্থায় যাবার চেষ্টা আমাদের কই?
অতৃপ্তির হলাহল আকণ্ঠ পান না করলে কী মনুষ্য জীবনের মঙ্গল যাত্রা শুরু হয়। কোনো অসন্তোষ, কোনো অতৃপ্তি আমাদের নেই। যা আছি ভালোই আছি, আল্লাহ্ ভালোই রেখেছেন, এই হচ্ছে প্রভুর কাছে আমাদের সুতৃপ্তির উপাসনা।
মিথ্যা, মাদকতা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, লোভ প্রভৃতি পশু ভাবকে জয় করবার তপস্যা এসব জীবনের বড় কথা- তা তো আমাদের নেই। স্রোতের মুখে কাণ্ডারীহীন ভেলার মতো চলেছি ভেসে।
জীবনহীনতার এই যে লক্ষণ- এ বড় সহজ বিষয় নয়। এই অহিফেন অবসাদ হয়তো তাকে একেবারেই ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে। তার আস্ফালন ও গর্বের কোনো মূল্য নেই। জাতি হিসেবে জগতে তার অস্তিত্ব থাকবে না- থাকবে তার স্মৃতি, যেমন অতীতকালের ল্যাটিন ও গ্রিক জাতির কিংবা মুসলমান জাতি হবে জগতে গোলাম ও দাসের জাতি; কিংবা ইহুদিদের মতো- দেশহীন, জাতীয় সংঘবদ্ধতাবর্জিত জাতীয়তাবোধহীন জগতের পৃষ্ঠ হতে বিতাড়িত।
আল্লাহর শক্তি মানুষের ভিতর দিয়েই প্রকাশিত হয়। সেই ভাবময় জীবনময় সর্বশক্তির আধার সর্বকল্যাণের উৎস, আদি শক্তির তপস্যা কী? তার জীবন-মন্দিরে প্রবেশের পথ মুসলমানের জন্য রুদ্ধ হয়েছে। এ খুব নিরাশার কথা, কিন্তু খুব সত্য।
জীবনের কোনো কল্যাণকর বিষয়ে আমাদের তপস্যা নেই-তপস্যা আছে একটি জিনিসের দাসত্বের; পরপদ লেহনের, জাতিকে, সমাজকে, গ্রামকে, মানুষকে ভুলে আত্মসুখসর্বস্ব, পত্নী ও সন্তানসর্বস্ব জীবনের অনন্ত সম্ভাবনা বিস্মৃত চাকুরি জীবনের। ধি আমাদেরকে। বড়লোক হবার ব্যবসায়ে কৃতিত্ব লাভের, জাতির ভিতর মহাকাজ কারবার, পৃথিবী-বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক হবার, কবি ও দার্শনিক হবার, বুজর্গ ফকির হবার কোনো তপস্যা আমাদের নেই।
অতৃপ্তির হলাহল আকণ্ঠ পান না করলে কী মনুষ্য জীবনের মঙ্গল যাত্রা শুরু হয়। কোনো অসন্তোষ, কোনো অতৃপ্তি আমাদের নেই। যা আছি ভালোই আছি, আল্লাহ্ ভালোই রেখেছেন, এই হচ্ছে প্রভুর কাছে আমাদের সুতৃপ্তির উপাসনা।
কত নর-নারী… হায়! জীবনে এদের কারো তীর্থযাত্রা নেই। যে যেখানে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
……………………
মহা জীবন -লুৎফর রহমান।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা