ভবঘুরেকথা
লালন বলে কুল পাবি না

-মূর্শেদূল মেরাজ

চাইলে আরো দুই একটা দিন থাকাই যেত। থাকবার কথাও ছিল। বাসনাও ছিল। কিন্তু এই কয়দিনে যা কিছু অর্জন। যা কিছু প্রাপ্তি। যা কিছু দেখাশোনা। যা কিছু বোঝাপড়া। যা কিছু হিসেব নিকেষ। সব যেন বড্ড বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতো বেশি বেশি আর নিতে পারছি না।

আমি সত্যি আর কুল পাচ্ছি না সাঁইজি। কুলহারা হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ। একবার ইচ্ছে হয় এইখানেই। এভাবেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেই। পরক্ষণেই ভাবি পকেটে পয়সা না থাকলে কি, এসব আদৌ লাগবে ভালো? আবার ভাবি টাকা-পয়সাই কি সব?

পকেটে টাকা-পয়সা নিয়ে এসে দূর থেকে দেখতে যা ভালো লাগে। খুব কাছ থেকে শূন্য পকেটে তা দেখতে কেমন! কে জানে। আমি কি পারবো তা কোনো দিন?? নাকি ছুটির দিনে মজা নিতে আসবো এমন করে বারবার?? নাকি এসব ঘটনাবলী কেবল থেকে যাবে স্মৃতিপটে। ভবিষ্যতে মজার অভিজ্ঞতা বলবার জন্য??

এই যেমন পাহাড়ে ঘুরতে যাই আমরা। সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরি। ছবি তুলি। ছবি শেয়ার করি। পাহাড়ি খাবার খাই। পাহাড়ি পোশাক পড়ি। সবই তো ছবি তুলে লোককে দেখাবার বাহানা মাত্র। নিজে উপভোগ আর করি কই? তবে পাহাড় যে একটা অন্যরকম অনুভূতি দেয় তা মিথ্যা নয়।

আমাকে বিদায় দিতে রাসু পাগলা এসেছিল পোড়াদাহ্ স্টেশন পর্যন্ত। ওকে বিদায় দিতে আমার চোখ যখন ছলছল করছিল। তখনো রাসু হাসছিল। উঁচু গলায় বলছিল, চা খাওয়াইয়া যা, বিস্কুট খাওয়া, চিপ্স খাওয়া, পাউরুটি কিনা দে…

কিন্তু পাহাড়ের মানুষের দু:খ-কষ্ট, আবেগ-অনুভূতি কি আমাদের দাগ কাটে? তাদের সংগ্রামটা কি আমরা দেখতে পাই? নাকি রাত্রিবেলায় অভিজাত একটা ঘুমানোর জায়গা পেলেই পাহাড়ে গিয়ে আমার মতো মানুষ খুশি? আর দিনের বেলায় পাহাড়ের মানুষগুলোর সাথে ছবি তুলে প্রমাণ করি আমিও তাদের মতোই।

ঐ যেমন মে মাস আসলেই আমরা সকলে শ্রমিক হয়ে যাই। নিজে শ্রমিক তা প্রমাণ করার জন্য নিত্য বছর নতুন নতুন স্ট্যাটাস খুঁজি সামাজিক মাধ্যমে দিবো বলে।

মানুষকে দেখাবার জন্য। এই সব সাজানো দুনিয়ার মানুষই আমি। আমি এর মাঝেই সুখ খুঁজি। আমার আশপাশের মানুষ এসবকেই সুখ ভাবে।

আর এসব না করলেই তারা ধরে নেয়, এমনকি আমিও তো ধরেই নিতাম কোন সমস্যা হয়েছে। আসলেই কি জীবন এমনতর কিছু? এসব প্রশ্নগুলো এই যাত্রায় আমাকে তীব্র ভাবে জাগিয়ে দিলো। শেষ পর্যন্ত আমি জীবন দা’র সাক্ষাৎ পেলাম না।

ট্রেনের ছুটে চলার শব্দে হয়তো আমার ভেতরের কান্নাটা কেউ টের পাচ্ছে না। হয়তো সেই শব্দ চিৎকার করে বললেও টের পাবে না কেউ। তারপরও সেই কান্নাটাকে কি অস্বীকার করার উপায় আছে আমার? কিভাবে যে গত সপ্তাহটা কেটে গেছে সেই হিসেব মেলা ভার।

ইচ্ছে হচ্ছিল আরো থাকি। কত জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। ইচ্ছেও ছিল। কিন্তু হলো না। অবশ্য আমিই ফিরতে চাইছিলাম। এই যাত্রায় যথেষ্ট হয়েছে। এক যাত্রায় আর কি কি চাই? কত কত মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হলো। হয়তো জীবনে আর তাদের সাথে দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হবে না।

জীবন দা’র মতো তাদের কয়জনকে আমি আজন্ম খুঁজে যাব তার হিসেবও জানি না। তাদের কাছ থেকে যা শুনলাম। যা দেখলাম। তার কতটা ধারণ করতে পারবো? আর এসব আমি কতটা বিশ্বাসেই বা পারবো?

কতটা আমি মানতে পারবো? কতটা আমি স্মরণে রাখতে পারবো? শুনতে যা মুগ্ধ করে তার কতটা বাস্তবে অঙ্কুরিত হয়ে ফুল ফোটে?

আমাকে বিদায় দিতে রাসু পাগলা এসেছিল পোড়াদাহ্ স্টেশন পর্যন্ত। ওকে বিদায় দিতে আমার চোখ যখন ছলছল করছিল। তখনো রাসু হাসছিল। উঁচু গলায় বলছিল, চা খাওয়াইয়া যা, বিস্কুট খাওয়া, চিপ্স খাওয়া, পাউরুটি কিনা দে…

বাজানের সাথে উনার আখড়ায় যাওয়ার কথা ছিল; যাওয়া হলো না। তবে অনুনয়-বিনয় করে উনার আখড়ার সাধুসঙ্গে যাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছেন। বলেছেন ফোন করে আবার স্মরণ করিয়ে দিবেন। আরো কত জন কত নিমন্ত্রণ করলো। শুধু আমিই কেবল কাউকে বলতে পারলাম না-

-ঢাকায় আসেন। আমার বাসায় আসেন। সঙ্গ করবো। আনন্দ হবে।

আমি ভালো করেই জানি সেটা কখনোই সম্ভব নয়। এমন বেশভূষার মানুষ আমার বাসায় প্রবেশ করলে সেই দিনই হয়তো আমার নিজেরই শেষ দিন হবে। এমন সব মানুষের সাথে আমার পরিচয় আছে জানলে পরিবার-পরিজন সকলেই ভিমড়ি খাবে।

আসলে সব ভালোবাসার যেমন প্রতিদান হয় না। আবার সবাই ভালোবাসার প্রতিদান দিতেও পারে না। আমার মতো অনেকেই হয়তো জন্মায়। যারা মনের গভীরে ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার কথা ভাবে। কিন্তু দিয়ে উঠতে পারে না।

নাহ্! আর ভাবতে পারছি না। সব কিছু অসহ্য লাগছে। মেনে নিতে কষ্ট হয়। অথচ মেনে নিতে হয়। কখনো কখনো মেনে নেয়াটা খারাপও লাগে না। উপভোগও করি। আসলে জীবন একক সিদ্ধান্তে চলে না। সময়ের পালাক্রমে তা পাল্টাতে থাকে।

অবশ্য প্রতিদানের বাহানা করতে হয় নিয়মিতই। এই যেমন বসকে খুশি রাখতে, ক্লাইন্টকে খুশি রাখতে, বৌ-শ্বাশুড়িকে খুশি রাখতে, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে খুশি রাখে প্রতিনিয়ত যা কিছু করে চলি। তার কয়টা মন থেকে? মনের গভীর বিশ্বাস থেকে?? অন্তরের অন্তস্থলের ভালোবাসা থেকে করি???

হিসেব কষলে এই যে নানান দিবসের বাহানায় উপহার দেয়ার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। তা লোক দেখানো আদিখ্যেতা ভিন্ন আর কিছু কি? এখন তো এমন হয় যে বেশিভাগ উপহার খুলেও দেখা হয় না। এক অনুষ্ঠানের এক জনের দেয়া উপহার অন্য অনুষ্ঠানে অন্যেকে গছিয়ে দেয়া হয়।

আসলে শহুরে জীবনে আমরা যা যা করি। তার বেশিভাগই আনন্দ থেকে করি না। করতে হয় বলে করি আর কি। ওরা দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছে। আমাদেরও খাওয়াতে হবে। আজ অমুক দিবস, তাই এই এই পদ রান্না করতে হবে। কাল উমুক পালা-পার্বন তাই এই এই পোশাক পরতে হবে।

অবশ্য এই সব সর্বনাশা কর্মকাণ্ড তো আমার মতো মার্কেটারটাই করেছে। বিজ্ঞাপিত করে করে মানুষের মাথা খেয়ে নেয়া হয়েছে। মানুষকে গলায় পারা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের কি কি করতে হবে। করতেই হবে। তা না করলে সে সভ্য সমাজে বসবাস অধিকার হারাবে।

এসব করতে গিয়ে, প্রাণের আনন্দগুলোকে আমরা অনেক অনেক দূরে রেখে এসেছি। আজ এই ট্রেনের ঝাকুনিতেই সেই সব মনে পারছে। অবশ্য সবচেয়ে খারাপ লাগছে এই ভেবে আবার সেই যান্ত্রিক-নিষ্ঠুর এক নিয়মতান্ত্রিক জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।

যদিও মেয়েটার কথা মনে পরছে। এই কয়দিন ওকে খুব মিস করেছি। বৌ-বাচ্চা এক অদ্ভুত বন্ধন। যার ভেতরে থাকলে মন কখনো না কখনো মুক্তির স্বাদ খোঁজে। আবার দূরে আসলে চরম ভাবে সেই ভাবে প্রবেশের ইচ্ছায় উন্মাদ হয়ে উঠতে চায় মন।

আসলে আমি যা ভাবছি এটা কি সামগ্রিক ভাবনা? সবাই এমনটাই ভাবে?? নাকি আমিই এমন ভাবছি??? আমি কি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছি?? মানে আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?? আমি কি আমার মাঝে পাগলামি প্রকাশ করছি? আমার ভাবনায় কি পাগলামি ঢুকে পরছে??

নাহ্! আর ভাবতে পারছি না। সব কিছু অসহ্য লাগছে। মেনে নিতে কষ্ট হয়। অথচ মেনে নিতে হয়। কখনো কখনো মেনে নেয়াটা খারাপও লাগে না। উপভোগও করি। আসলে জীবন একক সিদ্ধান্তে চলে না। সময়ের পালাক্রমে তা পাল্টাতে থাকে।

পুণ্যসেবার পর আজিজ ফকিরের কাছে যখন বিদায় নিতে গেলাম। তখন আজিজ ফকির সকলকে বিদায় দিয়ে পানের বাটা নিয়ে বসেছে। আমাকে এক খিলি পান এগিয়ে দিয়ে বললো, খান বাপ।

পান জিনিসটা দেখলেই আমার অসহ্য লাগে। মানুষ কেনো পান খায়। এমন বিশ্রী একটা জিনিস মানুষ কেমন করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে চলে। সেসবই ভেবেছি সব সময়। পিচ পিচ করে পিক ফেলে দেখলেই আমার গা গুলিয়ে উঠতো।

অথচ আমি খুব স্বাভাবিকভাবে আজিজ ফকিরের হাত থেকে পান নিয়ে মুখে পুরলাম। কিছুক্ষণ চাবানোর পরেই বুঝলাম। পান খাওয়াও একটা সাধনার ব্যাপার। এই জিনিসও শিখতে হয়। প্রথমবার পিক ফেলবার পর দেখলাম সবই পরে গেছে। মুখে অবশিষ্ট আর কিছুই নেই।

অথচ আজিজ ফকির চোখ মুদে কি আয়েশ করে পান চিবিয়েই যাচ্ছে। চিবিয়েই যাচ্ছে। আমিও বসে রয়েছি। মুগ্ধ হয়ে দেখছি এতোগুলো মানুষ, এতো কর্মযজ্ঞ। তার উপর এর আগে তিন দিন তিন রাতের লালনের সঙ্গ হলো। সব মিলিয়ে এখনো বাড়িতে কত কত মানুষ। কত কত কাজ।

যা কিছুর গন্ধ নিবেন সেখানেও তাই। আর যা কিছু খাবেন তা যেন শুদ্ধ হয় তার চিন্তাও মাথায় রাখতে হবে। তবে এই গুলা একদিনে যেমন হবে না। আবার কাল থেকে করবো এমন ভাবলেও হবে না। আজ এখন এই মুর্হূত থেকেই শুরু করতে হইবো।

বাড়ির সবই তারই তত্ত্ববধানে হচ্ছে। তারপরও তিনি কি পরিমাণ রিলেক্সড। যেন কোনো চাপ নেই। সমর্পন করলে কি এমন ভাবের উদয় হয়? নাকি এমন ভাবের জন্যই সেই অনন্ত সাধনা?

-বাপজান থাইক্ক্যা যান আরো কয়টা দিন। আজই যাইতে হইবো??

-সাঁইজি। যেতে তো মন চায় না। কিন্তু কি আর করবো বলেন। যেতে তো হয়ই। অনেকদিন তো হলো। এবার না গেলে আবার তো আসা হবে না।

-তাও ঠিক বাপ। মন যখন করছেন তখন আর আটকাবো না। তবে পহেলা কার্তিকের দাওয়াত কবুল করেন। সাঁইজির তিরোধানে চইল্লা আসবেন।

-আসার তো ইচ্ছে আছে সাঁইজি। দেখা যাক কি হয়।

-তাও ঠিক। কি হয় কে জানে। তারপরও ইচ্ছা রাখেন। স্বাধ্যের মধ্যে থাকলে ইচ্ছাই অর্ধেক কাজ আগায়া নেয় বাপ। তাই সুকাজে ইচ্ছাটা রাখতে হয়। এইটা হইলো নিয়তের মতো। মানে প্রতিজ্ঞাবন্ধ হওয়া। সু-মনে প্রতিজ্ঞা করলে। প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থে দেহ-মন চিত্ত কাজ করতে শুরু করে।

সাঁইজি বলছেন- “আপন মনের গুণে সকলি হয়।” তাই মনকে সহজ রাখতে হয় বাপ। মন জটিল হয়ে গেলে বিপদ। মন বিবাগী বাগ মানে নারে বাপ। মন বিবাগী বাগ মানে না।

-মনরে সহজ রাখবো কিভাবে?

-এ বড় কঠিন প্রশ্নরে বাপ। এর উত্তর সহজ কইরা বলা সহজ না। তবে সবচেয়ে সহজে বলতে হইলে তাহলে বলতে হইবো- শুদ্ধ চর্চাই দেহ-মনরে সহজ করে। এই ধরেন চেষ্টা নিতে হবে যা দেখবেন তার মাঝ থেকে শুদ্ধতার খুঁজে নিতে হবে।

কারণ আমরা চাইলেই তো আর সব শুদ্ধ জিনিস চোখের সামনে উপস্থিত হবে না। কিন্তু আমরা সকল কিছুর মাঝে চাইলে শুদ্ধতা খুঁজে নিতে পারি। তেমনি যা শুনবেন চেষ্টা করবেন তার মাঝ থেকে শুধু শুদ্ধটুকু গ্রহণ করতে। যা ছুঁয়ে দেখবেন। তাতেও চেষ্টা করবেন পারতে পক্ষে অশুদ্ধ কিছু ছুঁয়ে দেখবেন না।

যা কিছুর গন্ধ নিবেন সেখানেও তাই। আর যা কিছু খাবেন তা যেন শুদ্ধ হয় তার চিন্তাও মাথায় রাখতে হবে। তবে এই গুলা একদিনে যেমন হবে না। আবার কাল থেকে করবো এমন ভাবলেও হবে না। আজ এখন এই মুর্হূত থেকেই শুরু করতে হইবো।

তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে হতে শুরু হয়েই যাবে। তবে সব সময় যে হবে তাও না। তবে চেষ্টার চূড়ান্ত রাখতে হবে। চেষ্টায় কি না হয় বলেন? আসলে সর্বসময় নামাজে থাকতে হয়। মানে স্মরণে রাখতে হয়। দমে দমে তারে স্মরণ-নিজেরে স্মরণ-শুদ্ধতার স্মরণেই মন একমুখো হয়। শুদ্ধ হয়।

সাঁইজি বলছেন-

না পড়িলে দায়েমী নামাজ
সে কি রাজি হয়,
কোথায় খোদা কোথায় সেজদা
করি সদায়।।

বলেছে তার কালাম কিছু
আন্তা আবুদ ফান্তা রাহু,
বুঝিতে হয় বোঝ কেহ
দিন বয়ে যায়।।

এক আয়াতে কয় তাফাক্কারুন
বোঝ তাহার মানে কেমন,
কুলুর বলদের মতন
ঘুরার কাজ নয়।।

আধার ঘরা সাপ ধরা
সাপ নাই প্রত্যয় করা,
লালন তেমনি বুদ্ধিহারা
পাগলের প্রায়।।

খুঁজতে খুঁজতে বাজানকে পাওয়া গেল মাঠের চায়ের দোকানের সামনে। তিনি চলে যাচ্ছেন। আমাকে সাথে নিয়ে যাবেনই। মাও জোর করলো খুব। নিজ সন্তানকে একা মেলার মাঠে রেখে গেলে মায়ের মনে যেমন বেদনা হয়। তাদের দিকে তাকিয়ে সেই বেদনার রেশ পাওয়া গেলো।

অথচ কে বলতে বলবে, কয়দিন আগে আমাদের কোনো সাক্ষাৎ পরিচয়ই ছিল না। ভবিষ্যতে হবে কিনা তাও কেউ জানি না। পরের বার এসে অবশ্যই যাব এই কথা দিয়ে তবে ছুটি পাওয়া গেলো।

মালপত্র যখন ভ্যানে তোলা হচ্ছিল। তখন বাজান আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না কান্না কণ্ঠে বললো, বাজান ভুলত্রুটি হইছে ক্ষমা দিয়েন। আমরা মূর্খ মানুষ। কিছু মনে নিয়েন না।

আমারো গলা ধরে আসছিল। কিছুই বের হচ্ছিলো না মুখ দিয়ে। মা মাথা-পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করে কি সব বললেন। দোয়া করলেন হয়তো। ভ্যান এক সময় হারিয়ে গেলে বাঁকা রাস্তার মোড় ধরে। আমি চায়ের দোকানীকে বললাম আরেক কাপ চা দিতে।

চায়ের দোকানী বাবুল ভাই বললো,

-ভাই কি আজকেই চলে যাবেন? নাকি আছেন কয় দিন?

-আজ রাতে ট্রেন। আছি সন্ধ্যা পর্যন্ত।

-আপনারা আসলে ভালো লাগে বুঝলেন। আপনেরা আইসা কেমন মিশা যান সবার সাথে। আবার অনেকে আসে বুঝলেন। এমন ভাব নিয়া থাকে। কথাই কয় না। ব্যবহার খারাপ করে। দোকানি বইলা তুই-তুকারি করে। অবশ্য কারো কারো তুই-তুকারি খারাপ লাগে না।

পরিধি একটা আপাত পরিচিত পথ মনে হয় দীর্ঘ জীবন ধরে চলতে চলতে। কিন্তু বৃত্তের মাঝে এসে পরলে বিপদের শেষ নেই। এর কোথায় কেন্দ্র কে জানে। আর কোথায় পরিধি তাও আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বুঝে উঠারও উপায় থাকে না। কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিৎ? নাকি পরিধির দিকে ফিরে গেলেই ভালো?

মনে লাগে না। ভালো লাগে। আসলে মানুষের ব্যবহারে কিন্তু বোঝা যায় সে কোন পদের মানুষ। ঠিক না ভাই? নাকি ভুল বললাম??

-সবার ব্যবহার থেকে কি বোঝা যায়?

-তা অবশ্য ঠিকই বলছেন। চিটার বাটপারের ব্যবহারও ভালো। তারাও মিষ্ট ভাষায় কথা বলে। সত্যই বলছেন ভাইজান মানুষ চেনা সহজ না।

আসলেই মানুষ চেনা বড্ড কঠিন। এই আমাকেই তো আমি চিনি না। এই আমি যে কোন আমি কে জানে। আমিও যে মিশে গেছি বলে দোকানি বাবুল ভাই ভাবছে। আসলেই কি আমি মিশে গেছি? নাকি মিশে যাওয়ার অভিনয় করছি??

জীবন দা’কে খুঁজতে এসে, তার মতো করে দেখবো বলে কি এই মানুষগুলোর সাথে অভিনয় করছি না আমি? আমি নিজে কি দোকানিদের বা নিম্নবিত্ত মানুষকে তুই-তুকারি করি না? আমি যখন মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করি তখন তারা আমার সম্পর্কে কি ভাবে??

আবার এই আমিই যখন একটু ভালো ব্যবহার করি তখন বাবুল ভাইয়ের মতো মানুষরা বলে। আমার মতো মানুষ আসলে নাকি উনাদের ভালো লাগে। আমি কি এমন ভালো থাকতে পারবো? আমাকে মানুষ কি এমন করে মনে রাখবে?? যেখানে আমার একরত্তি অভিনয় থাকবে না।

আমি কি এমন আমি হয়ে উঠতে পারবো? যে আমি আমাকে শ্রদ্ধা করতে পারবো, ভক্তি করতে পারবো?

জীবন দা’র মতো মানুষরা আসলেই ফালতু। চরম ফালতু। তাদের সাথে জীবনে সাক্ষাৎ না হওয়াই ভালো। সাক্ষাৎ হলেই বিপদ। মহাবিপদ। তারা কালের চক্রে পরিধি ধরে দৌড়ে বেড়ানো মানুষকে বৃত্তের ভেতরে কেন্দ্রের কাছাকাছি এনে ছেড়ে দেয়।

পরিধি একটা আপাত পরিচিত পথ মনে হয় দীর্ঘ জীবন ধরে চলতে চলতে। কিন্তু বৃত্তের মাঝে এসে পরলে বিপদের শেষ নেই। এর কোথায় কেন্দ্র কে জানে। আর কোথায় পরিধি তাও আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বুঝে উঠারও উপায় থাকে না। কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিৎ? নাকি পরিধির দিকে ফিরে গেলেই ভালো?

উদ্ভট কিছু কথা বলে যখন নিশ্চিত জীবনকে ভেঙ্গে যারা খান খান করে দেয় কেউ তাকে কি ভরসা করা যায়? করা উচিৎ? জানি না কি বলবো। তবে এটুকু জানি আমি সেই রকম মানুষদেরই ক্রমাগত আমি প্রেমে পরে চলেছি। যদিও আমি জানি এই প্রেম সর্বনাশা। ভয়ঙ্করী। দশ নাম্বার বিপদ সংকেত।

আজিজ ফকির লালন সাঁইজির আরেকটা পদ আবৃত্তি করে শুনিয়েছিল। সেটা মনে পড়ে গেলে-

মন তোমার হল না দিশে।
এবার মানুষের করণ হবে কিসে।।

যখন আসবে যমের চেলা
ভেঙ্গে যাবে ভবের খেলা,
সেদিন হিসাব দিতে বিষম জ্বালা
ঘটবে শেষে।।

উজান ভেটেন দুটি পথ
ভক্তি মুক্তির করণ সেত,
তাতে যায় না জরামৃত
যমের ঘর সে।।

যে পরশে পরশ হবি
সে করণ আর কবে করবি,
সিরাজ সাঁই কয় লালন র’লি
ফাঁকে বসে।

সেই মা জননীকে আর খুঁজে পাইনি। ফোনও বন্ধ। তার দেয়া বিশাল সাইজের পুতুলটার একটা অংশ বাংকে রাখা নতুন কেনা ব্যাগের চেইন ভেদ করেও কিছুটা বের হয়ে আছে। গোলাপি রঙের তুলতুলতে অংশ দেখে বার বার মেয়েটার কথা মনে পরছে। কখন যে এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাবে। কখন যে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরবো।

একবার কিশোর বয়সে এক বয়সে বড় নারীর চরম প্রেমে পরে যাই। যদিও তা কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। তাকে দেখলে আজও বুকের মাঝে একটা চিনচিন ব্যথা জাগে। কত প্রেম এলো গেলো কিন্তু সেই প্রেমটা কখনোই কেনো যেন মলিন হলো না।

মাঝে মাঝে মনে হয় কারো কাছে কখনো প্রকাশ করা যায় না যে প্রেমের কথা; সেই প্রেম কখনো শেষ হয় না। এ কথা কতটা যৌক্তিক সকলের ক্ষেত্রে তা আমি জানি না। তবে আমার বেলায় তাই। জীবনে কতবার প্রেমে পরেছি। আর কতবার প্রেম করেছি সেই হিসেব করলে তালিকাটা নেহাত কম হবে না।

সব প্রেমেই সুখ-দু:খ-ব্যথা-বেদানা থাকে। কিন্তু কিছু কিছু প্রেম হয় চিরন্তন। যে প্রেমের কোনো হিসেব থাকে না। এখন মনে হচ্ছে সেই প্রেমে নতুন আরেকটা নাম যুক্ত হলো। যার নাম জীবন দা’। তিনিও আমাকে সেই নারীর মতোই আজীবন ভুগাবে।

একবার নির্দেশ মানার স্বভাব হয়ে গেলে মানুষের কি দশা হয় তাই আসলে মর্ডান টাইমস। মানে আধুনিকতা। মন না মানলেও যদি নির্দেশ তুমি মেনে নাও তাহলে তোমার যে দশা হবে তা দেখে নিবা। কাজে লাগবে। তুমি যে লাইনেই থাকো তা ভালোবেসে করতে হবে বুঝলা।

যাকে দেখলেও জ্বালা বাড়ে। না দেখলেও অন্তর কাঁদে।

ট্রেনের এসি কামরায় হকার উঠে না। ট্রেনের ক্যান্টিন বয়’রা বারবার এসে জানতে চায় কিছু লাগবে কিনা। তখন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মনে হচ্ছে। অথচ গত কয়দিন এই আমিই ভেবেছিলাম আমি মিশে গেছি তাদের সাথে। যাদের সম্পর্ক মাটির সাথে। অথচ ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে এসি কোচের টিকেটই কিনে ফেললাম।

আমরা আসলে পাল্টাতে পারি না সহজে। কেবল পাল্টানোর অভিনয় করি মাত্র। সকলের কথা বলতে পারি না। আমি আমার কথাটা বলতে পারি। আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে আমার পুরোটাই অভিনয়। কিছুই বাস্তব নয়। আবার কখন কখনো মনে হচ্ছে, আজন্ম যা করেছি তাই আসলে অভিনয়।

আর এই কয়টা দিনই আসলে আমি অভিনয় হীন ভাবে জীবন কাটালাম।

একবার ফ্রান্স থেকে এক প্রতিনিধি আসলো অফিসে। মার্কেটিং-এর নিউ আইডিয়া প্রশিক্ষণ দিবে বলে। দিন পনের প্রশিক্ষণ চললো। অনর্গল কত কি যে শিখালেন তার শেষ নেই।

শেষে একদিন জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, তুমি সর্বক্ষণ কি করে একই গতিতে জ্ঞান দিয়েই চলো… দিয়েই চলো…। একবারের জন্যও তোমাকে ক্লান্ত হতে দেখি না।

ও হেসে বলেছিল, আরে তুমি কি চার্লি চ্যাপলিনের ‘মর্ডান টাইমস’ দেখো নাই? সেই সময় হাসি হাসি মুখ করে ঘাড় নেড়ে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম সেসব আমি অনেক আগেই দেখে রেখেছি। কিন্তু আদতে দেখা হয় নাই।

তিনি হয়তো বুঝেছিলেন আমি মিথ্যা বলেছি। তাই আমার হ্যা-নাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো করেই বলতে শুরু করেছিলেন, “অবশ্যই সিনেমাটা দেখবে। না দেখে থাকলে অনেক বড় মিস করবা।

একবার নির্দেশ মানার স্বভাব হয়ে গেলে মানুষের কি দশা হয় তাই আসলে মর্ডান টাইমস। মানে আধুনিকতা। মন না মানলেও যদি নির্দেশ তুমি মেনে নাও তাহলে তোমার যে দশা হবে তা দেখে নিবা। কাজে লাগবে। তুমি যে লাইনেই থাকো তা ভালোবেসে করতে হবে বুঝলা।

নাইলে কেবল আমার মতো অভ্যাসের দাস হইবা। সারাক্ষণ কাজ করেই যাবা। করেই যাবা। কথা বলেই যাবা। বলেই যাবা। কিন্তু কি করে যাবা তা নিজেও জানবা না। হা হা হা।

প্রেমে না পরে যদি প্রেম করে যাও তাহলে তোমার দশা হবে পঙ্গপালের মতো। সকলে যা করে যায় তুমি তার প্রতিলিপি তৈরি করবা মাত্র। নতুন কিছু যেমন করতে পারবা না। তেমনি নিজেও তৃপ্ত হবা না। কেবল করে চলা আর করে চলা।”

সেদিন রাতে ফিরেই চলচ্চিত্রটা আমি দেখেছিলাম। তারপর আরো বার কয়েক। কিন্তু সেখানে চার্লি চ্যাপলিনের হাস্যরসই আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার অনবদ্য অভিনয়, হাস্যরস এইসবই।

কিন্তু আজ কোথায় জানি সেই সিনেমার কিছু কিছু বিষয় নিজের সাথে মিল পাচ্ছি। মনে প্রশ্ন জাগছে, আমি কার স্বার্থে! কাদের স্বার্থে!! কাদের জন্যে এই সব কর্ম করে চলেছি???

সে কি কেবল আমার ব্যক্তি সুখের জন্য?? নাকি আমি যা করে চলেছি জীবন ধারণের জন্য। যা আমাকে দিয়ে করিয়ে নেয়া হচ্ছে একটা সুখি জীবন পাবো বলে এই মূলা ঝুলিয়ে; তা একটা অলিক স্বপ্ন মাত্র। আসলে এসবের পেছনে আছে ভিন্ন ব্যাখ্যা??

তবে জীবনকে আমি নতুন রূপে দেখবার যে সুযোগ পেয়েছি বা পেলাম তাকে আমি হারাতে চাই না। সেই সাথে অস্বীকার করতে চাই না আমার দায়িত্ব কর্তব্যও। তাই এটাই ভেবে নেয়া ভালো এই উদ্বিগ্নতা যিনি দিয়েছেন তিনিই এর সমাধান দিবেন।

কিছু মানুষের চাহিদা পূরণের পুতুল রূপে কি আমরা আমাদের জীবনের সকল সময় বিক্রি করে দিচ্ছি? হয়ে উঠছি দাস? হয়তো এখন আর পায়ে শিকড় পরিয়ে রাখা হয় না। কথায় কথায় চাবুক মারা হয় না। সে সবের বদলে চাহিদার ফর্দ ধরিয়ে দিয়া হয়েছে হাতে হাতে।

সেই ক্রমাগত বাড়তে থাকা চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে আমরা নিজেরাই গলায় শৃঙ্খলের শেকল চাপিয়ে ইঁদুর দৌড়ে ছুটছি। দামী দামী ঘর-বাড়ি-দালানকোঠা, গাড়ি-ধনসম্পত্তি, রেস্তোরা, বিলাশী খাবারদাবার, হাই সোসাইটির সাথে চলাচলের সুবিধাকে আমরা জীবন ভেবে বসে আছি???

আসলে কি এটাই জীবন?? নাকি এটা সভ্যতার মরণ ফাঁদ? যে ফাঁদে নিশ্চিত অধ:পতন জেনেও আমরা তার দিকেই পতঙ্গের মতো এগিয়ে চলেছি?? সভ্যতা কি আমাদের জীবনের দিকে নিজে যাচ্ছে?? নাকি জীবন বিমুখ করছে??? আমি বা আমরা কি আসলে সভ্যতার গিনিপিগ??

আমাদের দিয়ে। আমাদের চিন্তা চেতনাকে নিয়ে সভ্যতা কি পাশা খেলছে?? নাহ্ আর ভাবতে পারছি না আমি পাগল হয়ে যাব। নিজেকে এখন নিয়মের মূলা ঝুলানো আধুনিতার ফাঁদে আটকে পরা চার্লি চ্যাপলিনের মতোই মনে হচ্ছে।

আমি যেন পরিষ্কার সেই ফাঁদের ফাঁকিগুলো দেখতে পাচ্ছি। কোন কোন মুলো আমার চারপাশে ঝুলছে তা এখন যেন স্পষ্ট। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমি সেসব বুঝেও চার্লির মতো সেই জ্বাল ভেদ করে ছুটে বেড়িয়া পরার চেষ্টায় ছুটছি না। আমি ক্রমশ সেই ফাঁদের ভেতরে প্রবেশের পথ খুঁজছি।

জীবন দা আপনি আমাকে এ কোন পরীক্ষায় ফেললেন। আমি কোনোদিন আপনাকে ক্ষমা করতে পারবো কিনা জানি না। তবে ভালোবাসতে পারবো এটা নিশ্চিত। আমি জানি আমার জায়গা থেকে এসব কিছু ভাবা বেশ মুশকিল। মহা মুশকিল।

তবে জীবনকে আমি নতুন রূপে দেখবার যে সুযোগ পেয়েছি বা পেলাম তাকে আমি হারাতে চাই না। সেই সাথে অস্বীকার করতে চাই না আমার দায়িত্ব কর্তব্যও। তাই এটাই ভেবে নেয়া ভালো এই উদ্বিগ্নতা যিনি দিয়েছেন তিনিই এর সমাধান দিবেন।

যেখানে আমি আমার নিজস্বতাকে প্রকাশ করতে পারবো। প্রতিমুর্হূতে অভিনয় করতে হবে না। মানুষকে মিথ্যে খুশি করবার জন্য রাশি রাশি প্রলোভন, মিথ্যা বলতে হবে না। আমিও ছুটে চলবো না অযাচিত চাহিদার ফর্দ ধরে ধরে।

এমন একটা জীবন আমার চাই-ই চাই যেখানে প্রেমই হবে মূক্ষ্য। প্রেমই হবে ধর্ম। যে প্রেম হবে সর্বজীবে।

শেষ কথা-

‘লালন বলে কুল পাবি না’ ধারাবাহিক রচনার অগ্নি ফিরে চলেছে শহরের দিকে। শেষ পাতে তার ভাব ও ভাবনাকে দেখে আতকে উঠবার তেমন কিছু নেই। চূড়ান্ত আবেগের চলচ্চিত্র দেখে যেমন আমরা মোহিত হয়ে অনেক কিছু ভাবি। অনেক কিছু করবো বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।

তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় সাময়িক। সময় কেটে গেলে সেই আবেগও কেটে যায়। হয়তো সকলের মতো অগ্নির এই আবেগও সাময়িক উত্তেজনা মাত্র। একটা দীর্ঘ ঘুম। হট সাওয়ার আর চিরচেনা বিলাশের জীবনে প্রবেশ করলেই সব ভুলে খাবে।

তখন রূপকথা মনে হবে গত সাতদিনের ঘটনা। সেসব নেহায়ৎ ছুটির দিনের বিনোদন মনে হবে। ভুলে যেতে চাইবে রাসু পাগলার মতো মানুষগুলোকে। কালেভদ্রে সেইসব কথা মনে পরলে নিজেকে চিন্তাকে ঘুরিয়ে নিবে ভিন্ন পথে। তাদের কেউ কেউ ফোন করলে হয়তো ধরবেই না।

এভাবেই একদিন জীবন দা’ও হয়তো হারিয়ে যাবে জীবন থেকে। যেভাবে আমরা অনেক কিছুকে ভুলে প্রতিদিন ক্রমাগত বাড়তে থাকা চাহিদার ফর্দ ধরেই হেঁটে চলি। তাতে কতটা অগ্রসর হই-কতটা পিছিয়ে পরি সে হয়তো ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই কখনো কখনো অগ্নি হয়ে উঠি।

সেই সুপ্ত আগুনটা আমাদের সকলের মাঝেই হয়তো জ্বলে উঠে। ইচ্ছে হয় এই অচলায়তন ভেঙে বেড়িয়ে প্রমাণ করে দেই জীবন এমন নয়। সভ্যতার মানে এমন হতে পারে না। সভ্যতা মানে শুদ্ধতা। সভ্যতা মানে নয় লোক দেখানো প্রতিলিপি তৈরি করা।

অগ্নি কি করবে। বা আমরা কে কি করবো। কি সিদ্ধান্ত নিবো। সে সব আমরা কেউ জানি না। সে সব জানা আমাদের সাধারণের কর্মও নয়। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভবিষ্যতে হয় তার জন্য। সাধুগুরুপাগল সর্বচরণে ভক্তি রেখে এই যাত্রা এখানেই সমাপ্তি। জয় হোক। জয়গুরু।।

এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে।
যেদিন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান
জাতি গোত্র নাহি রবে।।

শোনায়ে লোভের ও বুলি
নেবে না কাঁধের ঝুলি,
ইতর আতরাফ ও বলি
দূরে ঠেলে নাহি দেবে।।

আমির ফকির হয়ে এক ঠাঁই
সবার পাওনা পাবে সবাই,
আশরাফ বলিয়া রেহাই
ভবে কেহ নাহি পাবে।।

ধর্ম কুল গোত্র জাতি
তুলবে না গো কেহ জিকির,
কেঁদে বলে লালন ফকির
কেবা দেখায়ে দেবে।।

(সমাপ্ত)

<<লালন বলে কুল পাবি না: এক

.…………………………………………..
আরো পড়ুন:
সিজন : এক
লালন বলে কুল পাবি না: এক
লালন বলে কুল পাবি না: দুই
লালন বলে কুল পাবি না: তিন
লালন বলে কুল পাবি না: চার
লালন বলে কুল পাবি না: পাঁচ
লালন বলে কুল পাবি না: ছয়
লালন বলে কুল পাবি না: সাত
লালন বলে কুল পাবি না: আট

সিজন : দুই
লালন বলে কুল পাবি না: এক
লালন বলে কুল পাবি না: দুই

লালন বলে কুল পাবি না: তিন
লালন বলে কুল পাবি না: চার
লালন বলে কুল পাবি না: পাঁচ
লালন বলে কুল পাবি না: ছয়
লালন বলে কুল পাবি না: সাত
লালন বলে কুল পাবি না: আট

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!