ভবঘুরেকথা
জালাল উদ্দিন খাঁ

জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-২

-রব নেওয়াজ খোকন

জালাল উদ্দীন খাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

মহাকালের মহাপুরুষ জালাল উদ্দিন খাঁ তৎকালীন পূর্ব-ময়মনসিংহ অর্থাৎ বর্তমান নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আসদহাটি গ্রামে ১৮৯৪ সালে ২৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সদর উদ্দীন খাঁ ও মাতা মতলবজান। সদর উদ্দীন খাঁ পুত্রসন্তানের নাম রাখেন জালাল উদ্দীন খাঁ।

বিখ্যাত সূফীসাধক, তিনশো ষাট আউলিয়ার প্রতিনিধি হযরত শাহজালাল (র) এর নামানুসারে নিজ সন্তানের নাম রাখেন তিনি। ছেলে বড় হয়ে যেন সূফীসাধক হয়। সাধনার জাদু দিয়ে অধরাকে ধরাই যেন হয় তার জীবনের ব্রত। ছেলেকে সুফীসাধক হিসেবে দেখাই যেন তাঁর মনের সুপ্তত বাসনা। সন্তানের নামকরণের মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি স্পষ্টতা পায়।

অবশ্য এ বাসনার পেছনে পারিবারিক একটি বিশেষ ঐতিহাসিক কারণও থাকতে পারে। জানা যায়, সদর উদ্দীন খাঁর সপ্তম পূর্বপুরুষ ছিলেন শচীন্দ্র শর্মা। সনাতন ধর্মাবলম্বী সুপ্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিলেন তিনি। মদনপুরের শাহ্ সুলতান কমরউদ্দীন (র) এর মাজারের পার্শ্ববর্তী মনাং গ্রামে ছিল তাঁর বাড়ি।

একদিন তিনি দূরারোগ্য কঠিন এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। কোন চিকিৎসায়ই আরোগ্য হতে পারছিলেন না। অবশেষে পাশের গ্রাম তেতুলিয়ায় এক পীরের শরণাপন্ন হন।

সৈয়দ খোয়াজ ওরফে বুড়াপীর নামে খ্যাত এ পীরের পানিপড়া খেয়ে রোগমুক্ত হন শচীন্দ্র শর্মা। এ ঘটনায় ঘটে সামাজিক বিপত্তি। মুসলমানের হাতের পানি পড়া খাওয়ার অপরাধে ব্রাহ্মণ-সমাজ তাঁকে সমাজচ্যুত করে। অসহায় শচীন্দ্র শর্মা নিজ গ্রাম ছেড়ে তেতুলিয়া গ্রামে আশ্রয় নেন এবং ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। আসদহাটি গ্রামেই বিয়ে করেন সদর উদ্দীন খাঁ। তিনি সাতজন পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। মহামারি-ব্যাধি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ছয় সন্তানের মৃত্যু হয়। সৌভাগ্যবশত একমাত্র পুত্র জালাল উদ্দীন খাঁ বেঁচে গিয়েছিলেন।

নব্য মুসলিম হলেও তিনি শ্রম ও মেধা খাটিয়ে অল্পদিনেই অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছান। তাঁর নতুন নাম হয় সুলতান উদ্দীন খাঁ। তাঁরই বংশপরম্পরায় সপ্তম উত্তরপুরুষ হিসেবে জন্ম হয় সদর উদ্দীন খাঁর।

বুড়াপীরের আধ্যাত্মিক শক্তির বলে পূর্বপুরুষের রোগমুক্তির বিষয়টি হয়ত সদর উদ্দীন খাঁর মনে সূফীবাদী চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়ে থাকবে। যে চিন্তার বীজ তিনি নিজ সন্তান জালাল উদ্দীন খাঁর মাঝেও বপনের চেষ্টা করেন। হয়ত চেয়েছিলেন, খোয়াজ পীরের উত্তর সাধক হিসেবে গড়ে উঠুক জালাল। সর্বোপরি সদর উদ্দীন খাঁ ছিলেন সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালেখি করতেন এবং সমাজের প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সদর উদ্দীন খাঁকে জানতে তাঁর সম্পর্কে আরেকটু আলোকপাত করা দরকার। তিনি দারিদ্র্যমুক্ত স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবারে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও আসদহাঁটি গ্রামের নিঃসন্তান মামা তাঁকে শিশু বয়সে দত্তক নেন।

সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। আসদহাটি গ্রামেই বিয়ে করেন সদর উদ্দীন খাঁ। তিনি সাতজন পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। মহামারি-ব্যাধি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ছয় সন্তানের মৃত্যু হয়। সৌভাগ্যবশত একমাত্র পুত্র জালাল উদ্দীন খাঁ বেঁচে গিয়েছিলেন।

পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী মরমিবাদের ভাব-আবহে বেড়ে ওঠেন কিশোর জালাল। নেত্রকোণার একটি মাদ্রাসায় পাঠশালার প্রথম পাঠ শুরু করলেও কিছুদিন পর তিনি শহরের দত্ত হাইস্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানেও বেশিদন স্থায়ী হননি। সর্বশেষ কেন্দুয়ার জয়হরি স্প্রাই উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে সেখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।

স্কুলের পাঠ অধ্যয়নের পাশাপাশি চলে সংগীত ও তত্ত্বসাধনা। তবে স্কুলের পাঠ ক্রমশ মুখ্যতা হারিয়ে গৌণ হয়ে ওঠে। কিশোর জালাল পূর্বধলার খালিশপুরের অধিবাসি, অগ্রজ সাধক, মিরাশ উদ্দীনের (১৮৬১-১৯৫৪) অনুপ্রেরণাও পেয়েছিলেন।

বিভিন্ন এলাকায় তাঁর ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যা সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে যায়। অল্প বয়স্ক কিশোর বাউলের তত্ত্বজ্ঞানের দখলদারিত্ব তখনকার বাউলজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বয়সে অগ্রজরাও তাঁর অনুগামী হয়ে ওঠে। অনুজরা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণে উদগ্রীব হয়ে ওঠে।

ওঁনার পরিপূর্ণ বাউলের অবয়বে আত্মপ্রকাশ ঘটে কিশোর বয়সেই। তিনি বাউল সাধক রশিদ উদ্দীনের বাড়িতেও আসা-যাওয়া করতেন। তবে রশিদ উদ্দীনের সাথে জালাল উদ্দীন খাঁর গুরু-শিষ্য সম্পর্কের যে প্রচারণাটি প্রচলিত আছে, সেটি সম্পূর্ণ ভুল ও বানোয়াট। কারণ, কিশোর বয়সে সমভাবাপন্ন হিসেবে এ দু’জন মানুষের পরিচয়।

রশিদ উদ্দীন ছিলেন জালালের মাত্র বছর পাঁচেকের বড়। এ বয়সে গুরু-শিষ্যের ধারণাটি অবান্তর। জালাল উদ্দীন খাঁর প্রকৃত উদ্দীপক ছিলেন মাওলানা মিরাশ উদ্দীন। এমন কি রশিদ উদ্দীন, উকিল মুন্সী তথা এ অঞ্চলের সমসাময়িক অন্যান্য সকল বাউলই বয়োজ্যেষ্ঠ মিরাশ উদ্দীনের বাড়িতে তখন আসা-যাওয়া করতেন।

মিরাশ উদ্দীন ছিলেন তৎকালীন বাউল সাধকদের মধ্যে সর্বাধিক গুণীজন। নেত্রকোণার বাউল গবেষকদের লেখায় দূর্ভাগ্যবশত মিরাশ উদ্দীনের অবদান অনুপস্থিত রয়ে গেছে।

জালাল এসব গুণী বাউলদের সাথে বিভিন্ন আসরে মালজোরা গানে অংশগ্রহণ করতেন। বুদ্ধি, মেধা ও শ্রমের একাগ্রতায় অল্পদিনের মধ্যে বাউল জগতে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পরে। দার্শনিক যৌক্তিকতায় সমৃদ্ধ রচনাশক্তি দেখে অন্যান্য বাউলরা বিষ্মিত হন।

বিভিন্ন এলাকায় তাঁর ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যা সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে যায়। অল্প বয়স্ক কিশোর বাউলের তত্ত্বজ্ঞানের দখলদারিত্ব তখনকার বাউলজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বয়সে অগ্রজরাও তাঁর অনুগামী হয়ে ওঠে। অনুজরা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণে উদগ্রীব হয়ে ওঠে।

দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের পরপরই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে। আপাদমস্তক বাউলের প্রতিরূপ নিয়ে দিকে দিকে প্রতিনিধিত্ব কায়েম করেন তিনি। নিজ বাড়িতেই প্রতিদিন বসত বাউলগানের আসর। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসে বিভিন্ন বয়সের বাউলরা।

সাধকের শেষ বয়সে এ মিলনমেলা আরোও জমজমাট হয়ে ওঠে। বাউল উকিল মুন্সি, আব্দুস সাত্তার, শাহ আব্দুল করিম, দুলু খাঁ, জংবাহাদুর, রাধারমন, কবি রওশন ইজদানী, আবেদ আলী, ইশ্রাইল, মজিদ তালুকদারসহ শতশত বাউলের পূণ্যভূমিতে পরিণত হয় সাধক জালাল উদ্দীন খাঁর বাড়ি।

জনাব ফারুক সাধক সম্পর্কে আরো জানান, “মাছ ধরার নেশাটা ছিল দাদার অত্যন্ত বেশি। তিনি বড়শি কিংবা জাল ফেলে মাছ ধরায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। অনেক সময় লেখার খাতাটাও সঙ্গে থাকত। মাছ ধরার ফাঁকেফাঁকে লিখতেনও।”

তাঁর যোগ্য উত্তরসুরি, বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ, পৌত্র গোলাম ফারুক খানের ভাষ্যমতে, শেষ বয়সে তিনি বহু বাউলের নমস্য হয়ে উঠেছিলেন। জালাল উদ্দীন খাঁর সমকালীন বাউল বিষয়ক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে এসব সঠিক তথ্য তাঁর মাধ্যমেই জানা সম্ভব হয়। তিনি আরো জানান, বহু দূরদূরান্ত থেকে তখন প্রতিদিন প্রচুর বাবরিঅলা লোক আসত বাড়িতে।

তাঁদের উদ্ভট চেহারা, লম্বা এলোচুল, বেশ-ভূষণ দেখে বাড়ির ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ভয়ে দৌঁড়ে পালাত। দাদা তখন নাতিদের কাছে ডেকে অভয় দিয়ে বলতেন, ‘ওদের ভয় পাবার কোন কারণ নেই, ওরা আমাদের মতোই মানুষ, সৃষ্টিকর্তার খোঁজে ওরা গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী।’

দাদার অভয়বাণীতে তখন নাতিদের গলা ভিজত। গোলাম ফারুক খান জানান, “গুরুগম্ভীর আধ্যাত্মিক সাধক হলেও দাদা ছিলেন বেশ মজার মানুষ। তিনি আমাদের নিয়ে বেশ মজা করতেন। পীঠ পেতে দিতেন, আর আমরা দাদার পীঠে চড়ে ঘোড়ায় চড়ার আনন্দ উপভোগ করতাম। সংসার বিরাগী হলেও তিনি আমাদের পড়াশোনার খবর নিতেন, তাগিদ দিতেন ও শাসন করতেন।”

জনাব ফারুক সাধক সম্পর্কে আরো জানান, “মাছ ধরার নেশাটা ছিল দাদার অত্যন্ত বেশি। তিনি বড়শি কিংবা জাল ফেলে মাছ ধরায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। অনেক সময় লেখার খাতাটাও সঙ্গে থাকত। মাছ ধরার ফাঁকেফাঁকে লিখতেনও।”

জালাল উদ্দীন খাঁ ছিলেন একজন সংসারধর্মী বাউল। সন্ন্যাসীর বেশে মাঝে-মধ্যে গৃহত্যাগী হতেন বটে। নিখোঁজ হয়েও আত্মগোপন করে থাকতেন মাসাধিক কাল। কিন্তু সহসাই পাগলের মত ছুটে আসতেন পরিবারের প্রিয়জনদের কাছে। সেদিক বিবেচনায় তাঁকে সন্ন্যাসী ও সংসারী উভয় প্রকৃতির সাধক বলাই বেশি যৌক্তিক।

তিনি সিংহের গাঁও গ্রামের হাসমত আলী তালুকদারের একমাত্র কন্যা ইয়াকুতুন্নেছার সাথে প্রথম পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং সিংহের গাঁও গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আমৃত্যু তিনি সেই গ্রামেই বসবাস করে গেছেন।

জালাল-পত্নী ইয়াকুতুন্নেছা একমাত্র পুত্র খান মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম ও কন্যা করিমুন্নেছাকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তখন সাধকের বয়স মাত্র ঊনত্রিশ। তাঁর এ নববয়সের বেগবান যৌবন ও একাকিত্বের পুনর্বাসনের জন্য আবারো বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। তবে বিষ্ময়ের ব্যাপার হল তাঁর পরিণয়ের ধারা দ্বিতীয় বিয়ের মধ্যে সীমিত থাকেনি।

এর ক্রমধারা অবিরত গতিতে চলতে থাকে। তাঁর বিয়ের প্রকৃত সংখ্যা যে কত এর সঠিক হিসেব কারোরই জানা নেই। জীবনীকার আজিজুল হকের মতে ‘দেড় ডজন।’

পৌত্র গোলাম মোর্শেদ খান তাঁর লেখায় বলেছেন, “দাদা মোট কতোবার দার পরিগ্রহ করেছেন এর সঠিক সংখ্যাটা আমার জানা নেই। একেকজনের মুখে একেক রকম শুনেছি। সংখ্যাটা ভয়াবহ রকম স্ফীত বলে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি।” কবির সর্বশেষ পত্নীর নাম ছিল, শামছুন্নাহার। তাঁকে সংসারে রেখেই কবি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

জালাল উদ্দীন খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণের ব্যপারে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে বহু প্রচার মাধ্যমে তাঁর গুরু হিসেবে রশিদ উদ্দীন তথা আরোও কয়েকজন সাধকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আমি নিজেও প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী কয়েকটি লেখায় তা বর্ণনা করেছি। এসবই বানোয়াট তথ্য যা পূর্বে উল্লেখ করেছি।

গোলাম ফারুক খানের মতে, তাঁর সূনির্দিষ্ট গুরুর বিষয়টি অজানা। তিনি অনেকটা স্বয়ংজাত সাধক হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। তবে অগ্রজদের সান্নিধ্য ও অনুপ্রেরণা তাঁকে বাউল সাধনায় ব্রতী হতে সাহায্য করছিল। যেমন, একতারা হাতে তিনি প্রায়ই গোবর্ধন সাধুর কাছে ছুটে যেতেন। গোবর্ধন সাধু তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগাতেন।

তিনি প্রায় সহস্রাধিক গীতিকবিতার রচয়িতা। তাঁর জীবদ্দশায় চার খণ্ডের ‘জালাল-গীতিকা’ গ্রন্থে ৬৩০টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘জালাল-গীতিকা’ পঞ্চম খণ্ড। সে খণ্ডে গানের সংখ্যা ৭২টি। সর্বমোট ৭০২টি গান নিয়ে ২০০৫ সালের মার্চে প্রকাশিত হয় ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’।

স্থানীয় গোমেজ আলী ফকিরের সান্নিধ্যও তাঁকে বাউল সাধনায় ব্রতী হতে সাহায্য করে। সিলেটের বিথঙ্গল আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ সাধুর তাত্ত্বিক সান্নিধ্যও তিনি লাভ করছিলেন বলে জানা যায়। কারো কারো মতে, জালাল উদ্দীন খাঁ রামকৃষ্ণ সাধুর ভাবশিষ্য ছিলেন।

তবে চট্টগ্রামের আকুবদণ্ডি গ্রামের পীর সৈয়দ আব্দুল কুদ্দুস মাওলানা সাহেবের হাত ধরে বাইয়্যাত গ্রহণ করেছিলেন তিনি। জানা যায়, সাধকের পারিবারিক বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারণে তিনি মাওলানা সাহেবের শরণাপন্ন হন এবং তাঁর দোয়ায় বিপর্যয় থেকে সেরে উঠেন।

পরিশেষে তাঁর প্রতি মুগ্ধ হয়ে বাইয়্যাত গ্রহণ করেন। আব্দুল কুদ্দুস মৌলানা পরিপূর্ণ সাধক রূপে আত্মপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁর ভাবাদর্শের আলোকেও নিজস্ব দর্শনের প্রচার করেছেন জালাল।

তিনি প্রায় সহস্রাধিক গীতিকবিতার রচয়িতা। তাঁর জীবদ্দশায় চার খণ্ডের ‘জালাল-গীতিকা’ গ্রন্থে ৬৩০টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘জালাল-গীতিকা’ পঞ্চম খণ্ড। সে খণ্ডে গানের সংখ্যা ৭২টি। সর্বমোট ৭০২টি গান নিয়ে ২০০৫ সালের মার্চে প্রকাশিত হয় ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’।

তাছাড়া” বিশ্ব রহস্য” নামে একটি প্রবন্ধগ্রন্থও প্রকাশ করেন। ১৯৭২ সালে ৩১ জুলাই, দুই পুত্র তিন কন্যা, এবং স্ত্রী শামছুন্নাহার বেগমকে রেখে দেহত্যাগ করেন এই গুণী সাধক। নিজ গ্রামের বাড়ীর আঙ্গিনায় তার মাজার অবস্থিত। প্রয়াত মরমী বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খাঁ স্মরণে প্রতি বছর সেখানে জমে ওঠে বাউলমেলা।

(চলবে)

জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-৩>>

…………………………………………….
আরো পড়ুন-
জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-১
জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-২
জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-৩
জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-৪
জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-৫
জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-৬
জালাল উদ্দীন খাঁর তত্ত্বদর্শন : পর্ব-৭

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………..
আরও পড়ুন-
সাধক ভবা পাগলা
শাহ্ আব্দুল করিম : জীবনী ও গান
সাধক রাধারমণ দত্ত
মহর্ষি মনোমোহন ও মলয়া সঙ্গীত
মোহন চাঁন বাউল
হাসন রাজা: বাংলার এক রাজর্ষি বাউলের মর্মপাঠ: এক
হাসন রাজা: বাংলার এক রাজর্ষি বাউলের মর্মপাঠ: দুই
হাসন রাজা: বাংলার এক রাজর্ষি বাউলের মর্মপাঠ: তিন

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • romanmiah778@gmail.com , মঙ্গলবার ২৮ জুন ২০২২ @ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

    nine

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!