উপাসনা
-লুৎফর রহমান
একটা পূর্ণাঙ্গ, সুন্দর দুয়ে প্রেমময় মহাশক্তি সৃষ্টির প্রতি স্তরে কাজ করছে। ঐ শক্তি থেকে মানবচিত্ত প্রেরণা ও শক্তি লাভ করে। ঐ শক্তি মানুষ্য জ্ঞানের উৎস। উপাসনা এই উন্নত মহাশক্তির কাছে চিত্তের প্রণতি, ভক্তি ও বশ্যতা।
উপাসনাহীন জীবন অপবিত্র। যে জীবন দিবা-রাত্রি কোনো সময় প্রভুর অনন্ত প্রেমের কথা স্মরণ করে না- সে জীবন এক অফুরন্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত থাকে। কিন্তু যেভাবে মুসলমান জাতি বর্তমানে উপাসনার অভিনয় করে থাকেন- তা নিরর্থক।
আল্লাহই মানুষের শক্তি ও প্রেরণার উৎস। মুসলিম জীবনে শক্তি ও প্রেরণা নেই তার জীবনে কোনো পরম ভরসা ও নির্ভরতা নেই। একটি মৌখিক বিশ্বাস সে করে মাত্র। জাতি হিসেবে তার যে সর্বনাশকর ক্ষতি হচ্ছে, তার মীমাংসা কোনো কালে হবে না।
আত্মার সঙ্গে যে উপাসনার যোগ নেই তাকে কোনো মতে উপাসনা বলা চলে না। প্রভুর সম্মুখে আত্মার পরম নিরর্ভরতা পরম অনুতাপের অবস্থা; হৃদয়ের বিগলিত অবস্থার নাম উপাসনা। আবৃত্তি কখনও উপাসনা নয়।
প্রভুর পথে অন্যান্য জাতির তুলনায় মুসলমান জাতি হিসেবে প্রত্যহ পঞ্চাশ মাইল পিছিয়ে পড়ছে। তার আধ্যাত্মিক অগ্রগতি নাই। এ ক্ষতি কোনোকালে পূরণ হবে না। কেউ কি প্রাণকে ফেলে দেহের পূজা করে। প্রাণহীন দেহের মূল্য কী? অথচ মোহবশত অনেকে দেহের পূজা করে। তোমাদেরও মোহ জন্মেছে। বোঝ না।
ভাষার অর্থের প্রতি লক্ষ্য কর। না, শুধু আরবি ভাষাকে সম্মান কর। অক্ষর কি ভক্তির যোগ্য? এমন যে পূজিত রাজার শরীর, যা জীবনে কত যত্নে, কত সুখে পালিত হচ্ছে, প্রাণহীন হলে তাও দুর্গন্ধ এবং ঘৃণিত হয়ে উঠে- সে শরীর কেউ ঘরে রাখে না। যখন অর্থবোধ হয় না- তখন আরবি ভাষার কোনো মূল্য নেই।
তোমরা শুধু মোহবশত ভাষাকে ভালবাসো- এ তো পৌত্তলিকতা। তোমরা তো পৌত্তলিক। অন্তরে যদি ভাব না থাকে, অনুভূতি না থাকে, তবে আল্লাহ্ তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করতে পারেন না- কারণ অন্তরে তোমার কোনো ভাব বা অনুভূতি নেই।
ভাষা তো মানুষের তৈরি- ভাব মানবচিত্তে প্রথমে জাগে, মানুষ নিজেদের প্রস্তুত ভাষায় তাই প্রকাশ করে। যে চিত্তে ভাব নেই, অনুভূতি নেই, তার ওষ্ঠের ভাষা আল্লাহ্ বোঝেন না। আল্লাহর কাছে তা পৌঁছে না। কী তুমি চাও, তা নিজেই জান না- আল্লাহ্ তোমায় কী দেবেন?
না বুঝে প্রার্থনার ভঙ্গি করা, কোরান পড়া মহাপাপ। এই মহাপাপে মুসলমান জাতির সর্বনাশ হয়েছে, তার সমস্ত উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। মুসলমান নরনারী ধর্মহীন, আল্লাহ্হীন, শক্তিহীন জীবনের সর্বকল্যাণ আশীর্বাদ হতে সে বঞ্চিত। তার জীবন ভয়াবহ অন্ধকারে ভরা, ঘোর অশান্তিতে পূর্ণ আগুনে সে পুড়ে মরে।
আল্লাহই মানুষের শক্তি ও প্রেরণার উৎস। মুসলিম জীবনে শক্তি ও প্রেরণা নেই তার জীবনে কোনো পরম ভরসা ও নির্ভরতা নেই। একটি মৌখিক বিশ্বাস সে করে মাত্র। জাতি হিসেবে তার যে সর্বনাশকর ক্ষতি হচ্ছে, তার মীমাংসা কোনো কালে হবে না।
শুক্রবারে আমাদের সাপ্তাহিক উপাসনার দিন, প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মসজিদে অধীনস্থ অধিবাসীদের চাদা দ্বারা প্রতিপালিত সুশিক্ষিত একজন গ্রাজুয়েট ইমাম সমবেত ব্যক্তিগণকে যাতে ধর্মভাবে মুগ্ধ এবং প্রতি সপ্তাহে সকলের আত্মাকে উন্নততর করে গড়ে তুলতে পারেন, তার চেষ্টা করা একান্ত আবশ্যক।
প্রার্থনা সবসময় স্বরচিত ও মাতৃভাষায় হওয়া উচিত। দু-একটি মাত্র আল্লাহর কালাম সমাজের ঐক্য রক্ষার জন্য প্রার্থনায় ব্যবহার কর, বাকি সমস্তই আপন আত্মার রচিত কথা হওয়া উচিত। আল্লাহর কালাম অর্থাৎ কোরান পুনঃপুনঃ বুঝে পাঠ করলেই আত্মার প্রার্থনাকালে ভাষা আপনা থেকেই আসবে। আল্লাহর গ্রন্থের রস গ্রহণ করে নিজের রক্ত মাংসের অংশ করে ফেল।
Bengal Educational Conference The All Indian Muslim League-এর মতো অবিলম্বে (আমাদের যখন কোনো আমীর নেই তখন জাতিকেই আমীরের আসন গ্রহণ করতে হবে) ধর্ম সম্বন্ধে কী আমাদের কর্তব্য তা নির্ধারণের জন্য পণ্ডিতমণ্ডলীকে নিয়ে একটা (Bengal Religious Conference) নামে সভা গঠিত হওয়া উচিত।
দীর্ঘ লম্বা-চওড়া বিশ-তিরিশ রাকাত (দুই প্রণতিতে এক রাকাত) নামাজ বাদ দিয়ে ঈমামের (Priest) ধর্মভাব-উদ্দীপক, প্রেম ও ভক্তিধারবর্ধক দীর্ঘ বক্তৃতা (Sermon) হওয়া অতি আবশ্যক। প্রার্থনায় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হওয়া কোনোমতে অন্যায় নয়। প্রচলিত প্রার্থনার ভাষা গান ছাড়া আর কী? সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট ব্যক্তিকেই ইমাম বলা হয়।
প্রত্যেক মহাজীবনের অন্তরালে প্রার্থনা আছে। মোস্তফা-কামাল-পাশা নিজের বলে জাতীয় জীবনে একটা পরিবর্তন এনেছেন এরূপ মনে করা বড়ই ভুল, অথচ একটা মূল্যহীন বাঙালি মুসলমান তাকে অধার্মিক বলতে একটু দ্বিধাবোধ করে না। প্রার্থনা প্রত্যেক মহাজীবনের পশ্চাতে থেকে তার জীবনের সমস্ত শক্তির রস গোপনে সরবরাহ করে। বাইরের লোক তা অনুভব না করতে পারলেও একথা মিথ্যা নয়।
শুক্রবারে আমাদের সাপ্তাহিক উপাসনার দিন, প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মসজিদে অধীনস্থ অধিবাসীদের চাদা দ্বারা প্রতিপালিত সুশিক্ষিত একজন গ্রাজুয়েট ইমাম সমবেত ব্যক্তিগণকে যাতে ধর্মভাবে মুগ্ধ এবং প্রতি সপ্তাহে সকলের আত্মাকে উন্নততর করে গড়ে তুলতে পারেন, তার চেষ্টা করা একান্ত আবশ্যক। কেউ যেন উপাসনায় এসে না বলে- ”তাড়াতাড়ি সেরে ফেলুন”। তার নাম কি উপাসনা? ছি!
……………………
মহা জীবন -লুৎফর রহমান।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা