ভবঘুরেকথা
শ্রীশ্রীমৎ লব চন্দ্র পাল গুরু মহারাজ

শ্রীশ্রীমৎ লব চন্দ্র পাল গুরু মহারাজ

লব চন্দ্র পালের জন্ম

বর্তমান কুমিল্লা জেলার বেগমাবাদ গ্রামে ১২৮৯ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখ শনিবার শ্রীশ্রী লব চন্দ্র পাল ধরাধামে অবতীর্ণ হন। তাঁর পিতা কাশীনাথ পাল ও মাতা মতিরাণী পাল। তিনি পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান ছিলেন। শিশুকালেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।

লব চন্দ্র পালের শিক্ষাজীবন

মাতুলালয় কাঠালিয়া গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা আরম্ভ করেন। তিনি প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী ছিলেন। নিম্ন-প্রাইমারী পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। ইব্রাহিমপুর স্কুল হতে মধ্য বাংলা পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সাথে পাস করে বৃত্তি লাভ করেন।

১৩০৯ বঙ্গাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি লাভ করেন। তারপর তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে আই.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এবং কলেজের অধ্যাপকগণ তাঁর বিদ্যাবত্তার জন্য তাঁকে স্বর্ণপদক পুরস্কার দেন। পরবর্তীতে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ থেকেই কৃতিত্বের সাথে বি.এ পাশ করেন।

লব চন্দ্র পালের পেশাগত জীবন

বিএ পাশ করার পর শ্রী কর্তামহারাজ নরসিংদীর নিকটবর্তী সাটিরপাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। অতঃপর নবীনগর উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে এসিস্ট্যান্ট শিক্ষকের পদে দুই বছরের অধিককাল শিক্ষকতা করেন।

তারপর ইব্রাহিমপুর হাই স্কুলে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে ন্যূনাধিক দুই বছর শিক্ষকতা করেন। তারপর উজানচর স্কুল কর্তৃপক্ষের আহ্বানে তিনি উজানচর স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে শিক্ষকতা করেন। প্রধান শিক্ষকের পদ নিলে সাধন ভজনের ক্ষতি হবে চিন্তা করে তিনি সহকারী শিক্ষক পদেই শিক্ষকতা করতেন।

লব চন্দ্র পালের বৈবাহিক জীবন

শ্রীশ্রী কর্তা মহারাজ ২২ বছর বয়সে কৃষ্ণনগর নিবাসী ডেঙ্গর চন্দ্র পাল মহাশয় এর জ্যেষ্ঠা কন্যা শ্রীমতী চপলা সুন্দরী পালের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এক বছর না যেতেই শ্রীমতী চপলা সুন্দরী পরলোক গমন করেন। অতপরঃ ঢাকা জেলার হাইরমারা গ্রামের রুহিদাস পাল মহাশয়ের প্রথমা কন্যাকে দ্বিতীয় পত্নীরূপে গ্রহণ করেন।

অল্পকালের মধ্যেই দ্বিতীয় পত্নী নিঃসন্তান অবস্থায় দেহ ত্যাগ করেন।

“স্ত্রী ও পুরুষের যোগ সকলের মূল”।

“একাকী সাধনের ইচ্ছা অর্দ্ধযোগমাত্র”।

এই তত্ত্বের চিন্তা করেই শ্রীশ্রী কর্তা মহারাজ দ্বিতীয় পত্নীর কনিষ্ঠা ভগ্নিকে তৃতীয় পত্নীর রূপে গ্রহণ করেন।

সরোজ, মনোজ ও বাসন্তীর অপরিণত বয়সেই তৃতীয় পত্নীও পরলোক গমন করেন। তৃতীয় সহধর্মিনীর মৃত্যুর পর শ্রীশ্রী কর্তা মহারাজ দয়াময়ের প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে ১৩৫০ বাংলার ২৫ আষাঢ় শনিবার কৃষ্ণনগর মিশন বাড়ীতে সর্ব্বধর্ম্ম মতে শ্রী মনোরমা নন্দীকে বিবাহ করেন এবং সস্ত্রীক সাধন ভজনে ব্রতী হন।

লব চন্দ্র পালের ধর্ম্মজীবন

শ্রীশ্রীমৎ লব চন্দ্র পাল তাঁর মাসতুত ভাই গুরুদয়াল পাল ও তাঁর শিক্ষাগুরু শ্রী কৈলাস চন্দ্র পালের নিকটেই তিনি ধর্ম্মজীবনের তত্ত্ব জেনেছিলেন। তাঁদের মুখেই তিনি দয়াময় নামের শক্তির কথা শ্রবণ করেন। ইব্রাহিমপুর মধ্য বাংলা স্কুলে পড়াকালীন সময়েই তিনি শ্রীশ্রী আনন্দ মহারাজের দর্শন লাভ করেছিলেন।

নবীনগর স্কুলের বোর্ডিং-এ থাকাকালীন একদিন তিনি তাঁর অবস্থা জানিয়ে শ্রীমৎ আনন্দ স্বামীজীকে পত্র লিখেন। পত্রোত্তরে মহারাজ আনন্দ স্বামী তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জানিয়ে দেন এবং এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বৃত্তি পাবেন মর্মেও জানান। একই সঙ্গে একটি নামও জপ করতে দেন।

ইহাই তাঁর গুরুকরণ। শ্রী আনন্দকেই তিনি গুরু হিসেবে বরণ করেন এবং জীবনের একমাত্র অবলম্বন মনে করেন।

স্কুলে অধ্যয়নকালে বিদ্যাভ্যাস এবং ধর্ম্ম সাধনা নিয়েই তিনি জীবন পথে অগ্রসর হতে থাকেন। অহোরাত্র বিদ্যানুশীলন এবং সাধনায় ব্যাপৃত থাকতেন। এভাবেই তাঁর ধর্ম্মজীবনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ তাঁর গুরুদেব শ্রীমৎ আনন্দ স্বামী মহারাজের তিরোধান হলে তাঁর মধ্যে জ্ঞানের এক প্রবল আলোড়ন উপস্থিত হয়।

তিনি জ্ঞানের অনুসন্ধানে অস্থির হয়ে পড়েন। এক রাত্রিতে ইব্রাহিমপুর নিবাসী শ্রী আনন্দ চন্দ্র দে এর বাড়ীতে শ্রীমৎ মনোমোহন দত্তের সাথে দেখা হয়। পরদিন তিনি উপাসনা শেষ করে লব চন্দ্র পালকে জপ করার জন্য ‘নাম’ দিলেন এবং তাঁকে বললেন-

“তোমার ধর্ম্মজীবন লাভ হবে এ কথা ধ্রুব সত্য”।

তিনি তাঁকে ধর্ম্ম-উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করলেন। একদিন শ্রীমৎ মনোমোহন দত্ত মহাশয় মন্তব্য করলেন-

“দেখ লব গুরুতত্ত্ব, স্ত্রীতত্ত্ব ও পরলোক তত্ত্বের বিশেষ সাধন তোমার দ্বারাই উদ্ধার হবে”।

শ্রীমৎ মনোমোহন স্বামিজীকে পেয়েই তিনি রীতিমত সাধন ভজন করে ধর্ম্মের উন্নতির সোপানে আরোহন করেছিলেন। সাধন করেই তিনি ধর্ম্মের নিগূঢ় তত্ত্ব লাভ করেছিলেন। পরোপকার করাই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান ব্রত। তিনি সাধন বলে ধর্মজগতে উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিলেন।

লব চন্দ্র পালের পরলোক যাত্রা

১৩৬৬ বাংলা সনের ফাল্গুন মাসে শ্রীশ্রী কর্তা মহারাজ অরুন্ধতীনগর হতে ভোলাচং মিশন বাড়ীতে আগমন করেন। ইহাই বাংলাদেশে তাঁর শেষ ভ্রমণ। বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষ করেই শ্রীশ্রী কর্তা মহারাজ শেষ জীবনের ৫/৬ বছর অরুন্ধতীনগরে থেকেই সাধন সমরে প্রবৃত্ত ছিলেন।

তিনি জগতের হিতার্থে সকল কার্য্য সম্পন্ন করে ১৩৭৩ বঙ্গাব্দের ১৭ জ্যৈষ্ঠ মঙ্গলবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটে ভবলীলা সাঙ্গ করে ভক্তকূলকে চোখের জলে ভাসিয়ে জ্যোতির্ময় দেহ ধারণ করে পরলোকে জয়যাত্রা করেন।

পরদিন রাত্র ৯ টার সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অরুন্ধতীনগর অবস্থিত গোলটিলার ঠিক মধ্যস্থানে তাঁর পুতদেহ মহাসমারোহে সমাহিত করা হয়। শ্রীশ্রী লব চন্দ্র পাল কর্তামহারাজ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তিনি আজন্ম সাধক ছিলেন।

……………………….
পুন:প্রচারে বিনীত: ভবঘুরেকথা.কম

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………………..
আরো পড়ুন:
মাই ডিভাইন জার্নি : এক :: মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার
মাই ডিভাইন জার্নি : দুই :: কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়
মাই ডিভাইন জার্নি : তিন :: কোন মানুষের বাস কোন দলে
মাই ডিভাইন জার্নি : চার :: গুরু পদে মতি আমার কৈ হল
মাই ডিভাইন জার্নি : পাঁচ :: পাপীর ভাগ্যে এমন দিন কি আর হবে রে
মাই ডিভাইন জার্নি : ছয় :: সোনার মানুষ ভাসছে রসে
মাই ডিভাইন জার্নি : সাত :: ডুবে দেখ দেখি মন কীরূপ লীলাময়
মাই ডিভাইন জার্নি : আট :: আর কি হবে এমন জনম বসবো সাধুর মেলে
মাই ডিভাইন জার্নি : নয় :: কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি : দশ :: যে নাম স্মরণে যাবে জঠর যন্ত্রণা
মাই ডিভাইন জার্নি : এগারো :: ত্বরাও গুরু নিজগুণে
মাই ডিভাইন জার্নি : বারো :: তোমার দয়া বিনে চরণ সাধবো কি মতে
মাই ডিভাইন জার্নি : তেরো :: দাসের যোগ্য নই চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি :চৌদ্দ :: ভক্তি দাও হে যেন চরণ পাই

মাই ডিভাইন জার্নি: পনের:: ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই
মাই ডিভাইন জার্নি : ষোল:: ধর মানুষ রূপ নেহারে
মাই ডিভাইন জার্নি : সতের:: গুরুপদে ভক্তিহীন হয়ে
মাই ডিভাইন জার্নি : আঠার:: রাখিলেন সাঁই কূপজল করে
মাই ডিভাইন জার্নি :উনিশ :: আমি দাসের দাস যোগ্য নই
মাই ডিভাইন জার্নি : বিশ :: কোন মানুষের করি ভজনা
মাই ডিভাইন জার্নি : একুশ :: এসব দেখি কানার হাটবাজার

Related Articles

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • শ্রী শঙ্কর পাল , বৃহস্পতিবার ৯ জুন ২০২২ @ ৪:১৬ অপরাহ্ণ

    খুব ভাল লাগলো, এ নামটা ছোট্ট বেলায় শুনেছি, এতটা কখনো জানতে পারিনি। অসংখ্য সাধুবাদ জানাই।

    • ভবঘুরে , বৃহস্পতিবার ৯ জুন ২০২২ @ ৪:২২ অপরাহ্ণ

      জয়গুরু দাদা
      প্রেম ও ভক্তি নিবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!