-মূর্শেদূল মেরাজ
(পূর্বে প্রকাশের পর…)
আজরাইল আল্লাহর আরশে যেয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনার এক বান্দা আমাকে বেলালের জান কবজ করতে না দিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে চাইছে। তার লাঠির এতই জোর যে যদি একটু ছোঁওয়াও আমার গায়ে লাগতো তাহলে আমি খণ্ড খণ্ড হয়ে যেতাম।’
উয়াইস করনি তখন সেজদা দিয়ে বেলালের আয়ু বৃদ্ধির জন্য বললে আল্লাহ বলেন, ‘এটা হবার নয়।’
উয়াইস করনি বললেন, ‘আপনি পাড়েন না, এমন কিছুই নাই। বেলালের আয়ু না বাড়ালে আমি সেজদা থেকে উঠবো না।’
আল্লাহ যখন দেখলেন উয়ইসের ভক্তির জোড়ে যে আরশ ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে তখন বলেন, ‘যাও আমি ৭ বছর আয়ু বৃদ্ধি করলাম।’
উয়াইস করনি তার শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে ৭ লিখে আল্লাহকে বললেন, ‘ঠিক আছে আপনি৭ বছর দিয়েছেন। আমি তার সাক্ষী হিসেবে ৭-এর সাথে একটা শূন্য লাগিয়ে দিলাম। এই ৭০ বছর হায়াত বেলালের জন্য কবুল করুন।’
পাগলে এই কীর্তি দেখে আল্লাহ বেজার হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হলে উয়াইস করনি আরও একটা শূন্য বসাতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ বলে উঠলেন, ‘আয়ু আর বাড়াস না নবী প্রেমিক, এর বেশি হলে আর শরিয়ত থাকে না।’ তখন ৭০ বছর হায়াতই আল্লাহর দরবারে কবুল হল।
হেফাজতকারী
নবীজী বলতেন, আমার সাহাবিদের মাঝে এমন একজন আছে যিনি শেষ বিচারের দিন সব বিশ্বাসীকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখেন।
সাহাবিরা নবীজীকে প্রশ্ন করতেন, ‘কে সেই ব্যক্তি? ‘
তিনি বলেন, ‘সে আল্লাহর বান্দা।’
সাহাবিরা বলেন, ‘আমরা সবাই তো আল্লাহর বান্দা। কিন্তু তার নাম কী?’
নবীজী বলেন, ‘উয়াইস।’
তারা আবার বলেন, ‘তিনি কোথায় থাকেন?’
উত্তরে প্রিয় নবী জানিয়েছিলেন, ‘ইয়েমেনে।’
সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘সে যদি আপনাকে ভালোবাসে, তাহলে আপনার সেবায় হাজির হন না কেন?’
নবীজী বলেন, ‘সে আমার দর্শন গ্রহণ করেছে এবং সে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত। শারীরিকভাবে তার এখানে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।’
মাতৃভক্তি
কথিত আছে, পিতার মৃত্যুর পর উয়াইস করনি ইবাদত আর মায়ের সেবা ভিন্ন আর কিছুতেই মন দেন নি। তিনি যেখানেই যেতেন নিজের অন্ধ মাকে ঘাড়ে বসিয়ে নিয়ে যেতেন। এক মুহূর্তের জন্য তার মাকে মাটিতে পা ফেলতে দিতেন না।
তার আশা ছিল প্রিয় নবীর সঙ্গে একবার দেখা করবেন। কিন্তু অন্ধ মায়ের সেবায় ব্যাঘাত হয় এই ভেবে নবীজীর সঙ্গে পর্যন্ত দেখা করতে যেতে পারেন নি।
নবীর পোশাক প্রাপ্তি
নবীজী প্রায়শই বলতেন, ইয়েমেনের দিক থেকে আল্লাহর রহমতের সুগন্ধি ভেসে আসছে। এই সুগন্ধি হল একটি পবিত্র হৃদয় মাত্র। …তোমরা জেনে রাখ, আমার এমন এক ভক্ত আছে, যিনি শেষ বিচারের দিনে রাবী ও মোজার গোত্রে ছাগপালের পশম সংখ্যা তুল্য আমার পাপী উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। যার নাম উয়াইস করনি।’
নবীজী তার সাহাবি হজরত ওমর ও হজরত আলীকে বললেন, ‘আমার গায়ের পোশাকটা আমার মৃত্যুর পর উয়াইস করনিকে পৌঁছে দিও। তাকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, তিনি যেন আমার উম্মতের গুনাহ মাপের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে।’
নবীজীর আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে হজরত ওমর, আলীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পরেন কুফার পথে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উয়াইস করনির সন্ধান পাওয়া গেল। তখন উয়াইস করনি নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষে অতিথিদের সালাম দিলেন।
ওমর তার নাম জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বললেন- আব্দুল্লাহ। তারপর বললেন- উয়াইস। ওমর তার হাত পরীক্ষা করে নবীজীর বর্ণনার সাথে মিল খুঁজে পেয়ে নিশ্চিত হলো। তার হাতে তুলে দিলেন নবীজীর জোব্বা বা পোশাক। তিনি যেন নবীজীর উম্মতের জন্য দোয়া করেন সে কথাও তাকে জানালেন।
উয়াইস করনি তাদের কথা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। নবীজী তার জন্য নিজের পোশাক পাঠিয়েছেন? তিনি ব্যাকুল হয়ে বললেন, ‘আপনারা ভাল করে খোঁজ নিন। সম্ভবতঃ তিনি অন্য কারো কথা বলেছেন।’
ওমর আর আলী তাকে আশ্বস্ত করলো, তারা নিশ্চিত হয়েছে তিনিই নবীজীর সেই উয়াইস করনি। তখন তিনি বললেন, ‘নবীজীর গুনাহগার উম্মতের মুক্তির জন্য দোয়া করার যোগ্যতা তো আপনাদেরই বেশী।’
(চলবে…)
……………….
আরো পড়ুন:
উয়াইস করনি পাগল: এক
উয়াইস করনি পাগল: দুই
উয়াইস করনি পাগল: তিন
……………..
তথ্যসূত্র
উইকিপিডিয়া সমূহ