আম্মার সঙ্গলাভ
-ড সৌরভ মণ্ডল
ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক জগতে দক্ষিণ ভারতীয় সাধিকা শ্রীশ্রী মাতা অমৃতানন্দময়ী ওরফে আম্মার কথা জানেন না এমন ব্যক্তি খুব কমই আছেন। কে নেই তাঁর অনুগামীর মধ্যে, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধেয় শ্রী এপিজে আব্দুল কালাম, বর্তমান রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ, বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি, বিভিন্ন রাজের মুখ্যমন্ত্রী, বিভিন্ন অভিনেতা অভিনেত্রীবৃন্দ প্রভৃতি।
একদিকে যেমন সমাজে উচ্চ স্থানীয়দের ভিড় অন্যদিকে হতদরিদ্র ব্যক্তিও তাঁর কাছে সমান স্নেহের ও আদরের। দেশে ও বিদেশে তাঁর অজস্র অনুগামী। আমার বেশ কয়েকবার তাঁর সহিত সাক্ষাতের ও আশীর্বাদ লাভের সৌভাগ্য হয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের কেরল রাজ্যের পরয়কাডাভূ গ্রামে ইডামান্নেল নামে একটি পরিবারে ১৯৫৭ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মাতা অমৃতানন্দময়ী। তাঁর পিতা সুগুনানন্দ ছিলেন পেশায় মৎস্যজীবী। তাঁর মাতা দয়মন্তী দেবী তাঁর নাম দেন সুধামণি।
বাল্যকালেই তিনি আপন মনে রচনা করতেন অপূর্ব সব ভজন। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথেই তার মধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু হয় আধ্যাত্মিক ভাবাবেগ। অপূর্ব সব শ্রীকৃষ্ণ ভজন সংগীত রচনা করতে শুরু করেন।
ভগবদুপলব্ধির দিব্য আনন্দে স্নাত হওয়ার পর দক্ষিণ ভারতের ঐ প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু হয় তার অনুগামীদের আগমন। লক্ষ লক্ষ ভক্তদের আগমনের ফলে তাঁর কথা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয়নি।
সেই সকল সংগীত গাইতে গাইতে তার মধ্যে প্রকাশ পেত এক অপূর্ব ভাবাবেশ। কখনও কখনও বাহ্য জগৎ বিস্মৃত হয়ে স্থান কাল ভুলে শুরু করতেন নৃত্য।
সংসারের দারিদ্র্যের কারণে প্রথাগত শিক্ষায় তিনি বেশিদূর এগোতে পারেন নি। পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তাঁকে নিকট আত্মীয়ের গৃহে দাসী বৃত্তি অবলম্বন করতে হয়। ১৬ বৎসর বয়সে তিনি আপন গৃহের গৃহস্থালির কাজের সাথে সাথে কাপড় সেলাইও করতেন।
এই সময় তাঁর বিবাহ নিয়ে পিতা ও মাতার নিকট হতে তাকে অনেক লাঞ্ছিত হতে হয়। এই লাঞ্ছনা তাঁকে অধিকতর শ্রীকৃষ্ণ ধ্যানে মগ্ন থাকতে সাহায্য করেছিল। সেই সময় তিনি বহু দিব্যদর্শনে বিভোর থাকতেন। কিন্তু সবটাই ছিল গোপনে।
১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরের এক সন্ধ্যায় প্রথম তার দিব্যভাব সর্ব সমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পরে। সকল গ্রামবাসী লক্ষ্য করেন তাঁর দেহের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও গোপালের দিব্য প্রকাশ। এই সময় বহু অলৌকিক ঘটনার প্রকাশ ঘটে।
যারা প্রথম প্রথম তাঁকে অবিশ্বাস করেছিলেন পরে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারেন। শ্রী কৃষ্ণভাবের সাথেই তাঁর দেবী ভাবের সূচনা হয়। অর্থাৎ মাতৃভাবে তাঁর শরীর ও মন মগ্ন হয়।
পরবর্তীকালে এই কৃষ্ণমূর্তি ও দেবী ভাব রূপান্তরিত হয় প্রণব ধ্যানে। এই প্রণব ধ্যানে মগ্ন হয়ে তিনি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যান সমাধির অতল তলে।
ভগবদুপলব্ধির দিব্য আনন্দে স্নাত হওয়ার পর দক্ষিণ ভারতের ঐ প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু হয় তার অনুগামীদের আগমন। লক্ষ লক্ষ ভক্তদের আগমনের ফলে তাঁর কথা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয়নি।
তখন আমার একটি ছোট্ট শিশুর মতো অবস্থা। আমার বেশ কিছুক্ষণ লেগেছিল ঐ ভাবের রেশ কাটতে। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে আম্মা আমাকে একটি তুলসীর মালাও আশীর্বাদ স্বরূপ উপহার দেন।
কেরলের কোল্লম নামক স্থানে তৈরি হয় মাতা অমৃতানন্দময়ী মিশন ট্রাস্ট। বর্তমানে তার শাখা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ও বিদেশের বহু স্থানে স্থাপিত হয়। বর্তমানে বিদেশেও তাঁর অনুগামী সংখ্যা কম নয়।
সাধুসঙ্গ ও সৎসঙ্গের নেশায় মত্ত মনের টানে বেশ কয়েকবার তাঁর সাক্ষাতের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। প্রথমবার তাঁর ন্যায় পবিত্র আত্মার সাক্ষাতের কথা আজও স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করছে। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
তিনি সকলকেই আপন সন্তান স্নেহে আপন বক্ষে টানিয়া নেন ও আদর করতে থাকেন। ঠিক তেমনি আমি নিকটে যাওয়া মাত্রই আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং সন্তান জ্ঞানে ও মাতৃস্নেহে আদর করতে শুরু করেন। তাঁর শরীরের স্পর্শ মাত্রই আমার মধ্যে এক অদ্ভূত ভাবের উদয় হয়।
আমিও কোন আজানা কারনে আপন মাতৃ জ্ঞানে তাঁকে জড়িয়ে ধরি। তারপরই আমার মধ্যে ঘটে যায় এক অদ্ভুত বিষয়। আমার মনে হয় আমি মহাশূন্যে ভাসছি। তার বক্ষ মাঝে আমার সমস্ত শরীরের ভার যেন কোথায় হারিয়ে গেছে।
তারপর আমি জ্ঞান হারাই অর্থাৎ বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হই (জানি না ওনার ন্যায় পবিত্র আত্মার স্পর্শে সেই মূহুর্তে আমার সাধনলব্ধ অনুভূতির বহিপ্রকাশ ঘটেছিল কিনা ওই আবস্থাটা)। কতক্ষণ ছিলাম ঐ অবস্থায় তা খেয়াল নেই। হঠাৎই অনুভব হয় কেউ আমার দুই গালে বার বার চুম্বন করছে।
চোখ চেয়ে দেখি আম্মা নিজেই আমার দুই অধরে মাতৃ স্নেহে বার বার চুম্বন করছেন। আর বার বার বলছেন, ‘আমার সোনা ছেলে, আমার সোনা ছেলে।’ সে এক অবিস্মরনীয় অবস্থা। তারপর আম্মা নিজ হাতে একটি রুদ্রাক্ষের মালা আমায় পরিয়ে দেন ও কিছু প্রসাদী লজেন্স খেতে দেন।
তখন আমার একটি ছোট্ট শিশুর মতো অবস্থা। আমার বেশ কিছুক্ষণ লেগেছিল ঐ ভাবের রেশ কাটতে। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে আম্মা আমাকে একটি তুলসীর মালাও আশীর্বাদ স্বরূপ উপহার দেন।
যাঁরাই তাঁর দর্শন করেছেন ও স্নেহের আদরে সু-স্নাত হয়েছেন প্রত্যেকেই তাঁর দিব্য আশীর্বাদ লাভে ধন্য হয়ে গিয়েছেন।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………..
আরো পড়ুন:
মা সারদা দেবী
প্রজ্ঞাপারমিতা শ্রীশ্রীমা সারদা
বহুরূপিনী বিশ্বজননী সারদামণি
মা মনোমোহিনী
শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে সপ্তসাধিকা
মাতৃময়ী তিনরূপ
মা আনন্দময়ী
আনন্দময়ী মায়ের কথা
ভারত উপাসিকা নিবেদিতা
রাসমণি
নিরাহারা যোগিনী মায়ের সন্ধানে
পূণ্যশীলা মাতা কাশীমণি দেবীর সাক্ষাৎকার
আনন্দময়ী মা
মা মারিয়াম :: পর্ব-১
মা মারিয়াম :: পর্ব-২
মা মারিয়াম :: পর্ব-৩
মা মারিয়াম :: পর্ব-৪
মীরার কথা
অলৌকিক চরিত্র মাদার তেরেসা
মা আনন্দময়ীর কথা
বৈষ্ণব সাধিকা যশোদা মাঈ
আম্মার সঙ্গলাভ
শ্রীশ্রী সাধিকা মাতা
জগৎ জননী ফাতেমা-১
জগৎ জননী ফাতেমা-২
জগৎ জননী ফাতেমা-৩
জগৎ জননী ফাতেমা-৪
জগৎ জননী ফাতেমা-৫
জগৎ জননী ফাতেমা-৬
জগৎ জননী ফাতেমা-৭
জগৎ জননী ফাতেমা-৮
জগৎ জননী ফাতেমা-৯
জগৎ জননী ফাতেমা-১০
জগৎ জননী ফাতেমা-১১
জগৎ জননী ফাতেমা-১২