ভবঘুরেকথা
মা মারিয়াম

মা মারিয়াম :: পর্ব-১

-মাসফিক মাহমুদ

এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এক রহস্যের লীলাভূমি। এই রহস্যলীলার অন্যতম রহস্য হলো ধর্ম। আর এই ধর্মের মাঝে কতশত রহস্যে মোড়া চরিত্র যে লুকায়িত আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রায় হাজার পাঁচেকের মতো ধর্ম জড়িয়ে আছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে।

এর মাঝে বেশ কয়েকটি ধর্ম রাজত্ব করছে জগৎ জুড়ে। তার মধ্যে- ইসলাম, হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ ধর্ম অন্যতম। আর এই সকল ধর্ম বিশ্বাসে যে কয়জন নারী চরিত্র সবচেয়ে রহস্যের চাদরে নিজেকে মুড়ে রেখেছেন তাদের অন্যতম হলেন ‘মা মারিয়াম’ বা ‘মা মেরী’।

মা মারিয়াম সম্পর্কে বলতে গেলে প্রধানত দুটি আসমানী কিতাবের উপর ভিত্তি করেই বলতে হয়। এর একটি আসমানী কিতাব ইঞ্জিল (বাইবেল) নািজল হয়েছিল তারই গর্ভজাত সন্তান ঈশার উপর। অন্যটি সর্বশেষ আসমানী কিতাব কোরআন। যা নবী হযরত মুহাম্মদের উপর নাজিল হয়েছিল।

তবে এই রহস্যে মোড়া নারী সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানা যায় না। যতটা জানা তার কতটা বাস্তাব আর কতটা কল্পকাহিনী তা আলাদা করা সহজ নয়। কারণ বাইবেলের দুটি সংস্কারণ অর্থাৎ আদি ও নতুন বাইবেল এবং কুরআন ছাড়াও অসংখ্য উপকথা ছড়িয়ে আছে মা মেরী বা হয়রত মারিয়ামকে ঘিরে। যে নারী ঈশা নবী বা যীশুকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন।

যার পুত্র যীশুখ্রিস্ট জগৎ মুক্তির বাণী প্রচার করেছেন। যার প্রচারিত খ্রিস্টধর্মের অনুসারী জগৎ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত্যের ভিত্তিতে এবং এই দুই পবিত্র আসমানী কিতাবের উপর সম্মানপূর্বক মা মারিয়াম সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টাই এই লেখা ‘মা মারিয়াম’।

যেদিন হান্নার প্রসব বেদনা শুরু হয়; সেদিন পুরো জেরুজালেম নগরীসহ বাদশাহ হেরড ঈশার আগমনী বার্তায় সিংহাসন হারাবার ভয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। ইহুদীরাও তাদের ধর্ম ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকায় উদ্বিগ্ন ছিল। ইয়াসাকার (সুলেমান গির্জার ইহুদী পাদ্রী) বাইরে তুমুল হট্টগোল শুনে নিজেই নিজের কাছে বলতে লাগলেন।

যতদূর জানা যায়, মারিয়ামের পিতা ইমরান ছিলেন তৎকালীন যুগে বনী ইসরাঈলের ইমাম এবং তার মাতা হান্না ছিলেন ধর্মপ্রাণ নারী। হান্না একদিন দেখতে পান, একটা গাছে মা পাখি বাচ্চাকে খাবার খাওয়াচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তার মাঝে মাতৃত্বভাব জেগে ওঠে।

তৎক্ষণাৎ তিনি বলেন, ‘হে সৃষ্টিকর্তা! যদি আমার গর্ভে কোন সন্তান আসে, তবে আমি তাকে বাইতুল মুকাদ্দাসের সেবায় নিয়োজিত করব।’ স্রষ্টা তার দোয়া কবুল করলেন। ষাট বছর বয়সে তিনি গর্ভবতী হলেন। মারিয়াম যখন তার মা’র গর্ভে তখন তার পিতা দেহত্যাগ করেন।

সেসময় জেরুজালেমের সিংহাসনে অসীন ছিলেন ইহুদি বাদশাহ হেরড। রোমান সেনার সাহায্যে জেরুজালেমে আধিপত্য বিস্তার করে তিনি সিংহাসনে বসেছিলেন। সেসময় সর্বত্র প্রচারিত ছিল এক স্বর্গীয় শিশুর জন্ম হবে অচিরেই। আর তার অনুগত হবে সমস্ত রাজ্যের মানুষ।

এই ভবিষ্যত বাণীর খবরে বাদশাহ হেরড সকল সময় অস্থির থাকতেন। কোথাও সন্তান জন্মালেই তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন। কখন সেই দেব শিশু ঈশা আসবে? কখন তার হাত থেকে রাজ্য চলে যায়? এই ভয় সব সময় তাকে তাড়িয়ে বেড়াত।

যেদিন হান্নার প্রসব বেদনা শুরু হয়; সেদিন পুরো জেরুজালেম নগরীসহ বাদশাহ হেরড ঈশার আগমনী বার্তায় সিংহাসন হারাবার ভয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। ইহুদীরাও তাদের ধর্ম ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকায় উদ্বিগ্ন ছিল। ইয়াসাকার (সুলেমান গির্জার ইহুদী পাদ্রী) বাইরে তুমুল হট্টগোল শুনে নিজেই নিজের কাছে বলতে লাগলেন।

আজ রাতে ঈশার (ত্রাণ কর্তা) মাতার জন্ম হবে ইমরানের (বায়তুল মুকাদ্দাসের ইমাম) ঘরে (যখন ইমরান পয়গম্বর হিসেবে দাবি করেছিল, সবসময় তিনি আশমানী বার্তার কথা বলতেন। তিনি নিজ সন্তান ঈশাকে বনী ইসরাইলদের মুক্তিদাতা হিসেবে অভিহিত করত)।

এমন সময় সবাই শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পেল। সবাই সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া জানাল। এক শিষ্য ঘোড়া নিয়ে ছুটে গেল যাকারিয়্যাকে সংবাদটা দিতে। ঐদিকে জেরুজালেমে বাইতুল মুকাদ্দাসের সামনে বেশকিছু লোকের জমায়েত দেখে ইমরানের উত্তরাধিকারীরা ভাবল, পাদ্রীরা কোন ষড়যন্ত্র করছে।

তার কাছে এক ভক্ত দৌড়ে এসে বলল, আপনি হট্টগোল শুনতে পাচ্ছেন? ইয়াসাকার বললেন, হ্যাঁ সবার আগেই শুনতে পাই। ইয়াসাকার জমায়েত হওয়া মানুষদের বললেন, আমার কথা শোন, এই গির্জার পাদ্রীরা বহু বছর বহু দিন ও বহু রাত ধরে অপেক্ষায় আছে ঈশার আগমনের।

আমরা দিন-রাত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছি যেন ঈশা আমাদের যুগে আর্বিভূত হন। প্রার্থনা করি ঈশ্বর যেন ঈশা মসীহকে ইহুদিদের ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রেরণ করেন।

ভিড়ের থেকে কেউ কেউ বলতে লগলো, যে শিশুটি আসছে সেই কি তাহলে ঈশা মসীহ? তখন ইয়াসাকার সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ঈশার আগমনের কোন আলামত দেখতে পাচ্ছি না; তার আগমনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের আলামত দেখা যাওয়ার কথা।

যেটা আমরা সুলাইমান গির্জার (বাইতুল মুকাদ্দাস) পাদ্রীরা সবার আগে জানতে পারব। তোমাদের মধ্যে যারা মুমিনবান্দা তারাও বুঝতে পারবে।

সর্বত্র যখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পরছিল। সবাই বলাবলি করছিল, আজ রাতেই ঈশা আসছেন। আজ তাদের মুক্তির রাত। অন্যদিকে যেকোন ষড়যন্ত্র রুখতে বাদশাহ হেরড রক্ষীদের বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করলেন।

এবং একজন খাস রক্ষীকে ডেকে বললেন, তুমি জালিলে শহরে যাকারিয়্যার বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়ে মিশে যাবে এবং নজর রাখবে যে ঐ শিশুপুত্র যেন কোনভাবে বাঁচতে না পারে।

অন্যদিকে লোকজন হান্নার শিশুর জন্মের অপেক্ষা করছে। হান্না মানৎ করেছিলেন, যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তাকে বাইতুল মুকাদ্দাসের সেবায় দান করবেন। হান্না তখন তীব্র প্রসব বেদনায় কাতর। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তার মৃত্যু হতে পারে ভেবে তিনি যাকারিয়্যাকে তার মানতের কথা স্মরণ করিয়ে দিল।

এমন সময় সবাই শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পেল। সবাই সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া জানাল। এক শিষ্য ঘোড়া নিয়ে ছুটে গেল যাকারিয়্যাকে সংবাদটা দিতে। ঐদিকে জেরুজালেমে বাইতুল মুকাদ্দাসের সামনে বেশকিছু লোকের জমায়েত দেখে ইমরানের উত্তরাধিকারীরা ভাবল, পাদ্রীরা কোন ষড়যন্ত্র করছে।

যাকারিয়্যা সবাইকে শান্ত হয়ে ধৈর্য ধরতে এবং তার আদেশ না আসা পর্যন্ত সংযত থাকতে বলল। তিনি বললেন, কোন রক্তপাতই উত্তম নয়। আমাদের জানা উচিৎ শান্তি হচ্ছে উত্তমপথ। অস্ত্রের মধ্যে মজলুমের আর্তনাদ শোনা যায়। নিজের ভিতর নিজে মূলে প্রবেশ কর। সত্য ও ভালবাসা দিয়ে নিজেকে তৈরি কর। হৃদয় স্বচ্ছ হলেই নিজেকে বেহেশতের দিকে নিয়ে যেতে পারবে।

ঈশা দুনিয়াতে এসেছেন এমন খবর পাওয়ার পরও যাকারিয়্যা সংবাদ দাতাকে আবারো জিজ্ঞাসা করল, তিনি কি সত্যিই এসেছেন? তখন সংবাদ দাতা বলল, আমি নিজ কানে শিশুর কান্নার শব্দ শুনেছি। যাকারিয়্যা ভাবলেন মসীহ এসেছেন।

এমন একজন মা যার রক্তে মাংশের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ইমান থাকবে। এই সেই পুণ্যবতী কন্যা! এর গর্ভেই ঈশা জন্মগ্রহণ করবে। এই সেই মহতী নারী, বনী ইসরাইলদের চিন্তাভাবনার চাইতেও মহান। এই কন্যা সন্তানকে খুব সাবধানে রাখতে বললেন। কেই যদি এসব কথা জানতে পারে তবে তাদের হাত থেকে বাঁচান কঠিন হবে।

যাকারিয়্যা জালিলে শহরে আসলে সুলেমান গির্জার পাদ্রী বললেন, পয়গম্বরের আগমন নিয়ে কেন তিনি ভুল ভবিষ্যত বাণী করলেন সেজন্য তাঁকেই সবাইকে নিন্দার জবাব দিতে হবে। যাকারিয়্যা ঘরের ভিতর যেয়ে দেখলেন ইমরান ও হান্নার ঘরে কন্যা সন্তান জন্মেছে।

কন্যা সন্তান জন্মেছে বলে সবাই যখন বিভিন্ন কটু কথায় ব্যস্ত। তখন যাকারিয়্যা বললেন, কেন তোমরা স্রষ্টার রহমত সম্পর্কে বাজে ধারণা করছ? তোমরা সবাই যাও। যাকে যা উত্তর দেওয়ার আমিই উত্তর দেবো।

ওদিকে ইয়াসাকার সন্তান জন্মের কথা শুনে বললেন, যে শিশু দুনিয়ার এসেছে সে কন্যা নয় তো! বাদশাহ্ হেরডও কন্যা শিশুর জন্মের কথা শুনে খুশি হয়ে রক্ষীদের বললেন, বিশৃঙ্খলাকারীদের জানিয়ে দাও তারা যে মসীহের আপেক্ষায় ছিল, সে একজন কন্যা সন্তান।

কন্যা সন্তান জন্মদানের পর সৃষ্টিকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন, হে আমার রব! আমার সমস্ত কিছু দিয়ে চেয়েছি, আমার সন্তানকে তোমার পবিত্র ঘরের সেবায় পাঠাব। কিন্তু এখন কি করব? তখন যাকারিয়্যা বললেন, ইমরান কি তোমাকে বলেনি যে একটি পুত্র সন্তান আসবে?

যে অন্ধ, বধির ও বোবাদের সুস্থ করবে এবং মৃতদের স্রষ্টার রহমতে জীবিত করবে?, ইমরানের ভবিষ্যত বাণী যদি বিশ্লেষণ করি তবে এটাই প্রতিফলিত হয়, তাই না?

খোদার পয়গম্বররা কখনো নিজে থেকে কিছু বলেন না। তারা ওহির মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্ত হন। সে তোমাকে মিথ্যা বলেনি। ঐ পুত্র মহান হবে। ঐ মহান পুত্রের জন্য একজন পবিত্র মাকে দুনিয়ায় পাঠান দরকার ছিল। এমনকি তোমার মত দাদীর চাইতেও পুণ্যবতী।

এমন একজন মা যার রক্তে মাংশের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ইমান থাকবে। এই সেই পুণ্যবতী কন্যা! এর গর্ভেই ঈশা জন্মগ্রহণ করবে। এই সেই মহতী নারী, বনী ইসরাইলদের চিন্তাভাবনার চাইতেও মহান। এই কন্যা সন্তানকে খুব সাবধানে রাখতে বললেন। কেই যদি এসব কথা জানতে পারে তবে তাদের হাত থেকে বাঁচান কঠিন হবে।

হান্নার গর্ভে কন্যা সন্তান জন্মের পর যাকারিয়্যাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পরতে হয়। লোকজন তাকে ভণ্ড পয়গম্বর বলে ডাকতে শুরু করে। কেন তোমরা স্রষ্টার এ সামান্য পরীক্ষায় হতাশ হচ্ছো? আমরা তার মুখাপেক্ষী, তিনি নন।

হান্নার কোলে কন্যাটির আগমনেও হেকমত রয়েছে। তার কোন কথারই কোন গুরুত্ব না দিয়ে, সবাই বলতে লাগলো, আপনি যদি সত্যি পয়গম্বর হয়ে থাকেন তাহলে অলৌকিক কোনো কাণ্ড দেখান।

হট্টগোলের মাঝে যাকারিয়্যা উপস্থিত হয়ে হান্নাকে বলল, আল্লাহ্ তোমার নাজরানা কবুল করেছে। আল্লাহ্ তোমাকে আর তোমার কন্যাকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছেন। মারিয়ামকে কোলে তুলে নাও। সেবা করার উপযুক্ত বয়স পর্যন্ত লালন কর।

তিনি বললেন, আমি সুলাইমানের পবিত্র আঙ্গিনা থেকে মৌজেজা এনে দিলেও তোমরা বিশ্বাস করবে না। তোমরা বলবে এটা নিছক যাদু। তিনি দোয়া করতে লাগলেন, হে স্রষ্টা! তোমার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দাও।

অন্যদিকে হান্না দোয়া করছিলেন, এই মহামূল্যবান নেয়ামত দান করার জন্য আপনার নিকট লক্ষ কোটি শুকরিয়া। হে প্রভু, শহরের সকল মানুষ আমাদের ত্যাগ করেছে। আমরা একা হয়ে পরেছি। তবুও আমি আমার ওয়াদা পূরণ করব। জানি না সবাই তাকে গ্রহণ করবে কিনা? তাকে ভালবাসবে কিনা? আমি আমার কন্যার নাম রাখছি মারিয়াম; আপনার সেবাদানকারী।

যাকারিয়্যার ওপর ওহী নাজিল হল, বলা হল মহান আল্লাহর দরবারে মারিয়ামের মাতার মানত কবুল হয়েছে; মারিয়াম ও তার আশপাশ থেকে শয়তানের প্ররোচনা দূর হয়েছে।

হান্না তার কন্যা সন্তানকে নিয়ে জেরুজালেম পৌঁছানোর পর সেখানকার লোকজন তাকে তিরস্কার করে বলতে লাগল, তুমি কেন তোমার মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছ? হান্না বলল, আমি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার খোদার সাথে সেটা পালন করতে এসেছি!

আমি আমার কন্যার নাম রেখেছি মারিয়াম। এ কথা শুনে গির্জার পাদ্রীরা আরো রাগান্বিত হয়ে বলতে লাগল, এখানে নারীদের প্রবেশ হারাম আর তুমি বলছে এ কন্যা গির্জার সেবাদানকারী?

হট্টগোলের মাঝে যাকারিয়্যা উপস্থিত হয়ে হান্নাকে বলল, আল্লাহ্ তোমার নাজরানা কবুল করেছে। আল্লাহ্ তোমাকে আর তোমার কন্যাকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছেন। মারিয়ামকে কোলে তুলে নাও। সেবা করার উপযুক্ত বয়স পর্যন্ত লালন কর।

এভাবে বছর পাঁচেক পার হয়ে যায়। মারিয়াম বেড়ে উঠতে থাকে যাকারিয়্যার শিক্ষা আর মার স্নেহে। একদিন সীমান্তের পাহাড়ে বসে শিশু মারিয়াম যাকারিয়্যাকে জিজ্ঞাসা করল, খোদা কি আমাকে কবুল করবে? যাকারিয়্যা বলল, শিশু বয়সে তিনি একদিন একজন ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখেছিলেন।

সব শুনে হেরড পাদ্রী ইসাকারকে কাছে নিয়ে বললেন, মেয়েটি গির্জার সেবাদানকারী হিসেবে যাক। কারণ যদি মেয়েটি গোত্রের মাঝে থাকে তাহলে সেটি তোমাদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। সে গির্জায় থাকলে তোমরা কোন প্রতিরক্ষা ছাড়াই তাকে মোকাবেলা করতে পারবে।

তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি কে? তিনি মাথা নিচু করে ছিল এবং ইশারা দিয়ে আমাকে চুপ থাকতে বললেন, আমি বললাম ভুল কিছু জিজ্ঞাসা করেছি? তিনি বললেন না। তিনি বললেন, প্রশ্ন উত্তর বাচ্চাদের বয়স কমিয়ে দেয়। কিন্তু জান্নাতে যেতে হলে কখনও কখনও বাচ্চা বয়সে ফিরে যেতে হয়।

মারিয়াম বলল, আপনার স্বপ্নে দেখা মানুষটাকে চিনতে পেরেছিলেন? যাকারিয়্যা বললেন, হ্যাঁ তিনি স্বয়ং ঈশা মসীহ।

মারিয়ামকে সেবাদানকারী হিসেবে গ্রহণ করতে গির্জার পাদ্রীরা অস্বীকার করলে, হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। তখন যাকারিয়্যা বলেন, এর একটি সমাধান আছে। মারিয়ামের জন্য পাদ্রীদের কাছ থেকে আলাদা একটি কক্ষ তৈরি করব। আল্লাহর কাছে ছেলে এবং মেয়ের রুহ সমান। যদি সে নেককার হয় তবে আরো মর্যাদার।

এদিকে ইহুদি পাদ্রীরা মারিয়ামের মা হান্নার কাছে তাদের খানদানের মহিলাদের পাঠাবার জন্য চিন্তা করলেন। যেন তারা হান্নাকে বুঝাতে পারে আর মারিয়ামকে সেবাদানকারী হিসেবে না পাঠায়।

কেউ কোন সিন্ধান্ত নিতে না পারায়, ইয়াসাকারসহ গির্জার পাদ্রীরা বাদশাহ হেরডের কাছে যায়। হেরডকে তারা জানায় শিশু মারিয়ামকে যাকারিয়্যা গির্জার সেবাদানকারী হিসেবে পাঠাতে চায়।

কিছু পাদ্রীরাও তার পক্ষে রয়েছে। তবে সর্ব্বসম্মতিক্রমে এ সিন্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন। হেরড বললেন, এই কি সেই কন্যা? যে ঈশা মসীহের জায়গায় আগমন করেছে? সে আমাকেও একবার কাপিঁয়ে দিয়েছিল!

সব শুনে হেরড পাদ্রী ইসাকারকে কাছে নিয়ে বললেন, মেয়েটি গির্জার সেবাদানকারী হিসেবে যাক। কারণ যদি মেয়েটি গোত্রের মাঝে থাকে তাহলে সেটি তোমাদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। সে গির্জায় থাকলে তোমরা কোন প্রতিরক্ষা ছাড়াই তাকে মোকাবেলা করতে পারবে।

বাদশাহ হেরডের পরামর্শ নিয়ে ইয়াসাকার তার সঙ্গীদের নিয়ে গির্জার মজলিস কক্ষে হিলাল (সম্মানিত ব্যাক্তি) এর সভাপতিত্বে সভা ডাকলেন এবং সভায় উপস্থিত শিক্ষানবীশ পাদ্রী ও সিদ্দিকিয়ারা (গির্জার সম্মানিত লোক) ভেবেছিল ইয়াসাকার মারিয়ামকে গির্জায় প্রবেশের অনুমতি দিবেন না।

কিন্তু ইয়াসাকার তার ও বাদশাহ হেরডের বিস্তারিত কথোপকোথন গোপন রেখে বললেন, এই পরিস্থিতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রয়োজন। কাফের ও মুনাফেকদের থেকে রক্ষার জন্য আমি মারিয়ামকে জেরুজালেমের গির্জার সেবাদানকারী হিসেবে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করছি।

(চলবে…)

……………………….
আরো পড়ুন-
মা মারিয়াম : পর্ব-১
মা মারিয়াম : পর্ব-২
মা মারিয়াম : পর্ব-৩
মা মারিয়াম : পর্ব-৪

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………..
আরো পড়ুন:
মা সারদা দেবী
প্রজ্ঞাপারমিতা শ্রীশ্রীমা সারদা
বহুরূপিনী বিশ্বজননী সারদামণি
মা মনোমোহিনী
শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে সপ্তসাধিকা
মাতৃময়ী তিনরূপ
মা আনন্দময়ী
আনন্দময়ী মায়ের কথা
ভারত উপাসিকা নিবেদিতা
রাসমণি
নিরাহারা যোগিনী মায়ের সন্ধানে
পূণ্যশীলা মাতা কাশীমণি দেবীর সাক্ষাৎকার
আনন্দময়ী মা
মা মারিয়াম :: পর্ব-১
মা মারিয়াম :: পর্ব-২
মা মারিয়াম :: পর্ব-৩
মা মারিয়াম :: পর্ব-৪
মীরার কথা
অলৌকিক চরিত্র মাদার তেরেসা
মা আনন্দময়ীর কথা
বৈষ্ণব সাধিকা যশোদা মাঈ
আম্মার সঙ্গলাভ
শ্রীশ্রী সাধিকা মাতা
জগৎ জননী ফাতেমা-১
জগৎ জননী ফাতেমা-২
জগৎ জননী ফাতেমা-৩
জগৎ জননী ফাতেমা-৪
জগৎ জননী ফাতেমা-৫
জগৎ জননী ফাতেমা-৬
জগৎ জননী ফাতেমা-৭
জগৎ জননী ফাতেমা-৮
জগৎ জননী ফাতেমা-৯
জগৎ জননী ফাতেমা-১০
জগৎ জননী ফাতেমা-১১
জগৎ জননী ফাতেমা-১২

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!