লালন কার? : প্রথম কিস্তি
-মূর্শেদূল মেরাজ
‘ফকির লালন সাঁই’-এই শব্দত্রয়ের মাঝে আদৌ কি কোনো নামের অস্তিত্ব আছে? নাকি এ সবই প্রেম-ভালোবাসা-ভক্তির উপাধীমালা? নাকি কেবলই বিনয়-জ্ঞান-প্রজ্ঞা?? নাকি ভরসা-শ্রদ্ধা-আশ্রয়???
‘ফকির’, ‘লালন’, ‘সাঁই’ বা ‘সাঁইজি’ ইত্যাদি ইত্যাদি শব্দকে নানাভাবে নানাজনে নানাযুগে বিশ্লেষণ করেছেন বা করবার চেষ্টা করে চলেছেন। অনেকেই এ সম্পর্কে তাদের নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন এসবের অর্থ অনন্ত-অসীম-অশেষ।
শব্দ দিয়ে এর প্রকাশ এখানেই শেষ। এর বাইরে এর আর কোনো অর্থ প্রকাশের কোনো ভাষা নেই। এরপর কেবলই উপলব্ধির বিষয়। যে অনুভবের উপলব্ধি করার সক্ষমতা অর্জন করে সেই এর অর্থের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। বাকিরা পরে থাকে গুণবাচক কিছু শব্দের গণ্ডিতে।
ফকির লালন এমনই রহস্যাবৃত একজন, যাঁকে বুঝতে গেলে গোলকধাঁধায় পরতে হয় প্রতি পরতে পরতে। আর একবার এই জাতাকলের ঘুর্ণিপাকে পরে গেলে আর উপায় নেই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো কেবল তলানির দিকেই যাত্রা অব্যাহত রাখতে হয়। ডুব সাঁতারে বুঝতে হয় এর ভাব।
তবে নানামুনি নানাভাবে চেষ্টা করেছেন বা করে চলেছেন সেই নামের অর্থ উদ্ধার করতে। সেটি অবশ্য এক হিসেবে মন্দ নয়। নানাজন নানাভাবে দেখবার-জানবার-বুঝবার চেষ্টা করলে, তবেই না পথের হদিস মিলবে। কে বলতে পারে হয়তো নামের সূত্র ধরে পাওয়া যেতে পারে তাঁর মত-পথের প্রবেশ পথের দিশা।
তাঁর মতো মহাত্মাকে এক কথায় বুঝে ফেলার মতো শুদ্ধতা অর্জন না করলে; তাকে বোঝা যাবেই বা কেনো। তিনিই বা ধরা দেবেন কেনো। শুদ্ধ পাত্রেই তো শুদ্ধতা বিরাজ করে। অশুদ্ধ পাত্রে তো মধুও বিষ হয়ে যায়। তাই প্রজ্ঞাবান সিদ্ধমানুষরা বলেন, তাঁকে বুঝতে গেলে শুদ্ধ দেহ-মন-চৈতন্য আবশ্যক।
তারপরও সকলেই সকল জায়গা থেকে নিজের নিজের মতো করে লালনকে বুঝবার-জানবার চেষ্টা করে চলেছে। তাঁকে বুঝবার জন্য যত প্রচেষ্টা হয়েছে বা হচ্ছে তাকে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে দেখতে গেলে মোটা দাগে ভাগে ভাগ করতে পারি। অবশ্য এসবেরও প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিরাজ করে।
আবার অন্যদিকে শুদ্ধ-অশুদ্ধের অর্থও তো এক জায়গায় বিরাজ করে না। তাও তো পরিবর্তনশীল। সাঁইজি স্বয়ং বলেছেন- ‘এই দেশে যা পাপ গণ্য, অন্য দেশে পুণ্য তাই-পাপ পুণ্যের কথা আমি, কারে বা শুধাই।’ তাই সহজভাবে বলতে গেলে, ফকির লালনের মতো মানুষকে বোঝার চেষ্টা করা একটা চলমান প্রকৃয়া।
যাতে প্রতিনিয়ত নিজেকে সংশোধন-পরিমার্জন-পরিবর্তনের মানুষিকতার পাশাপাশি সকল প্রেমের মত-পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ভক্তিপূর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই। প্রেমভাবে দেখবার-জানবার-শুনবার-বুঝবার বোধ জাগ্রত না হলে তাকে বোঝা অসম্ভব।
যাদের কাছে লালন ফকির শুধুই একজন গীতিকার বা বাউল তাদের কাছে লালনের ব্যাখ্যা অনেকটাই সহজ। যারা লালনকে সাহিত্যের বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বা শিল্পের বিচারে বিবেচনা করতে চায়। তারাও শব্দের গাঁথুনিতে একটা ভিত্তি দাঁড় করাতে পারে।
কিন্তু যাদের কাছে ফকির লালন আরাধ্য-উপাস্য। তাদের কাছে লালন ফকির চির রহস্যময় এক চরিত্র। তাঁকে যত বোঝা যায় ততই তার রহস্য বাড়তে শুরু করে। যত কাছে যাওয়া যায় ততই তাঁর ব্যাপ্তি বাড়তে শুরু করে। যিঁনি কেবল জ্ঞানে নয় ভক্তি-বিনয় ও প্রেমে ধরা দেন।
তারপরও সকলেই সকল জায়গা থেকে নিজের নিজের মতো করে লালনকে বুঝবার-জানবার চেষ্টা করে চলেছে। তাঁকে বুঝবার জন্য যত প্রচেষ্টা হয়েছে বা হচ্ছে তাকে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে দেখতে গেলে মোটা দাগে ভাগে ভাগ করতে পারি। অবশ্য এসবেরও প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিরাজ করে।
তারপরও এই প্রধান ছয়টি ভাগ ভাগের কথা বলতে গেলে বলতে হয়-
প্রথমশ্রেণী হলেন- সাধককুল। যারা গুরু-শিষ্য পরম্পরার ধারাবাহিকতায় দীক্ষা পর্বের ভেতর দিয়ে সাঁইজির মতাদর্শকে জীবন দিয়ে যাপন করেন। খেলাফত প্রাপ্ত হয়ে পরম্পরা অব্যাহত রাখেন।
দ্বিতীয়শ্রেণী হলেন- ভক্তকুল। যারা ফকির লালনকে ভালোবাসে। ভালোবেসে তাঁকে সন্ধান করতে চায়। খুঁজে বেড়ায় লালন ফকিরকে। সন্ধান করে গুরুর। গুরুর কাছ থেকে নিতে চায় সেই জ্ঞান।
তৃতীয়শ্রেণী হলেন- অনুরাগীকুল। যারা লোক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে লালনকে মূল্যায়ন করেন। মূলত তারা লোক সংস্কৃতি ও লালন ফকিরের গানকে পছন্দ করেন। লালনের শব্দের গাঁথুনি, সুরের মূর্ছনা তাদের আন্দোলিত করে।
চতুর্থশ্রেণী হলেন- পণ্ডিতকুল। যারা বিভিন্ন দর্শনের সাথে লালনের দর্শনকে মিলিয়ে দেখবার প্রয়াস করেন। লালন কি বলবার চেষ্টা করেছেন তার শাব্দিক ও ভাব অর্থ নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করেন।
পঞ্চমশ্রেণী হলেন- গবেষককুল। যারা মূলত নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য লালনকে নানাভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।
ষষ্ঠশ্রেণী হলেন- শিল্পী ও যন্ত্রীকুল। যারা মূলত লালন ফকিরের পদকে গানরূপে প্রকাশ করে থাকেন নিজস্ব ঢং-এ।
এই প্রধান ছয় ভাগের বাইরেও আরো অনেকেই আছেন। যাদের মধ্যে জীবিকার তাগিদে লালনকে নিয়ে লিখেন-ভাবেন-বলেন এমন অনেকে আছেন। তাদের অনেকে পারিপার্শ্বিক বা জীবিকার কারণে লালন ফকিরকে মেনে নিলেও মনে নিতে পারেন না।
আবার অনেকে আছেন যারা লালনকে ঠিক পছন্দ বা সহ্য করতে পারেন না; তবে তার গানকে আবার অস্বীকারও করতে পারে না। অনেকে আবার নিজের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে লালন পথকে গ্রহণ করার দিকে অগ্রসর হন।
অনেকে ব্যক্তিগত কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার জন্যও এ পথে আস্তানা গাড়েন। অনেকে আস্তানা করে চালিয়ে যান নিজস্ব দোকানপাট-ব্যবসা-বাণিজ্য। এর বাইরেও অনেকে আছেন যারা কোনো কারণ ছাড়াই লালনকে ভালোবাসেন।
লালন ফকিরের মত-পথকে ভালোবাসেন। খুঁজে বেড়ান লালন চর্চার শুদ্ধধারা। এছাড়াও অনেক শ্রেণী আছে সেই সব বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না এ যাত্রায়। এই যাত্রায় উপরোক্ত ছয়শ্রেণী নিয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক-
লালন ফকিরের সাধককুল-
মূলত সাধককুলই ফকির লালনকে ও তাঁর মতাদর্শকে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় বহমানতার কাজটি করে চলেছেন। সামাজিক-রাষ্ট্রিয়-গোষ্ঠিগত-শ্রেণীগত বহুবিধ চাপ-তাপের মধ্যে দিয়েও তারা ফকির লালনের মতাদর্শকে টিকিয়ে রাখবার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আর এই সব পারিপার্শ্বিক ষড়যন্ত্রের জাতাকলে পরে কখনো তাদের পাল্টাতে হয়েছে কায়দাকানুন। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকবার কৌশল নিতে গিয়ে হতে হয়েছে কৌসুলী। কখনো বা জোর করে কিছু কিছু বিষয় তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে ক্ষমতার অপশাসন।
কখনো কখনো শুদ্ধতার চর্চাকে ধরে রাখতে গিয়ে একঘরা হয়ে যাওয়ার বা একা হয়ে পরার আতঙ্কে অনেকে অনেক সামাজিক বিধি বলবদ করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেক সময় বাধ্য করাও হয়েছে। আবার সময়ের প্রেক্ষিতে জল-আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু পরিবর্তনও প্রবেশ করেছে।
অনেকে আবার শিষ্য-ভক্ত-অনুসারী ধরে রাখবার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। লালনের ধারায় যুক্ত করেছেন অনেক বিধিবিধান। যাতে করে ভক্তকুল আসক্ত হয়। চারপাশে ঘিরে রাখে।
এই এসব রসের আলোচনা শুনলে অনেক সময়ই মনে হয়, তা আসলে শিষ্য ধরার ফাঁদ মাত্র। নয়তো যে সকল কথা একান্ত দীর্ঘদিনের দীক্ষাধারী শিষ্যদের মাঝে যারা গুরুকর্ম করে তাদের সাথে একান্তে আলোচনার বিষয়। তা কেনো প্রকাশ্যে সকলের মাঝে সর্বসাধারণে আলোচনা করবে।
এই সব নানাবিধ পরিবর্তন-সংযোজন-বিয়োজনের মধ্যে দিয়ে বর্তমানে যে ধারাটি সাধককুলের মধ্যে প্রচলিত তা কতটা ফকির লালনের মতাদর্শ, কতটা আরোপিত তা নিয়ে প্রশ্ন দিন দিনই প্রকট হচ্ছে। কারণ যে মহাত্মা লালন মুক্তির কথা বলেছেন। উদার চর্চার কথা বলেছেন। সর্ব মানুষের মতকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
সেই মতপথেও অনেক সাধককুলের রীতিনীতিতে কট্টরবাদীতা দেখতে পাওয়া যায়। যে লালন ফকিরের মতাদর্শে উদার নীতির কথা বার বার এসেছে। সেখানে আজ অনেক ঘরেই সাধনার ধারা একটিতে এনে, এটিকেই একমাত্র ধারা বলে নির্দিষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
অনেকে আবার বেশভূষাকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন। অনেকে আবার গুরুত্ব দেন চালচলনকে। অনেকে সংগীতকে। কিন্তু জ্ঞানের বিকাশের পথকে প্রসারিত করার চেষ্টা সেভাবে আজ আর চোখে পরে না। কারণ যারা প্রকৃত জ্ঞান সাধক তারা নিজেকে আড়ালে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
গুটিকয়েক প্রজ্ঞাবান জ্ঞান সাধক লালনকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য প্রকাশ্যে জ্ঞানের কথা বলেন। তবে তাদের শুদ্ধতার চর্চা দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়। কিন্তু নিজের অশুদ্ধতাকে শুদ্ধ করতে হবে এই ভেবে তাদের কাছে বেশি ভিড়তে চান না।
অন্যদিকে কিছু সাধুগুরু আছেন যারা প্রকাশ্যে জ্ঞানের আলোচনা করেন বটে। তবে তাদের উদ্দেশ্য থাকে ভিন্ন। তারা মূলত এমন সব আলোচনা করেন যাতে মানুষ তাদের প্রতি মুগ্ধ হয়। তাদের আলোচনার মূল আলোচনার বিষয়বস্তু থাকে রসাত্মক।
এই এসব রসের আলোচনা শুনলে অনেক সময়ই মনে হয়, তা আসলে শিষ্য ধরার ফাঁদ মাত্র। নয়তো যে সকল কথা একান্ত দীর্ঘদিনের দীক্ষাধারী শিষ্যদের মাঝে যারা গুরুকর্ম করে তাদের সাথে একান্তে আলোচনার বিষয়। তা কেনো প্রকাশ্যে সকলের মাঝে সর্বসাধারণে আলোচনা করবে।
কিন্তু দু:খের সাথে লক্ষ্য করতে হয় অনেক সাধুগুরুও সর্বজনের সামনে লালনের ভাব গানকে নির্দিষ্ট অর্থে বেঁধে দেয়ার প্রয়াশ করেন। এতে উপস্থিত উৎসাহী অনেকে অনেক কিছু জানতে পারছেন বলে ভাবলেও। লালন ফকিরের ভাব গানে যে ভাবনার অবাধ গতিমায়তা তা থমকে যায় বলে আমার মনে হয়।
এসব প্রকাশ্যে আলোচনার যথার্থতা আমি অন্তত খুঁজে পাই না। আমার ধারণা ও বিশ্বাস এতে সাধারণের কাছে ফকির লালন সম্পর্কে ধারণা তো উন্নত হয়ই না। বরঞ্চ কিছু সুবিধাবাদী লোকজন তাদের গুপ্ত বাসনা চরিতার্থ করার অভিলাষে এই পথে ঢুকে পরে পথটাকে নষ্ট করার সুযোগ পায়।
আবার অনেকে তন্ত্র বা বৈষ্ণবের ক্ষয়িষ্ণু ধারাকেই লালনের একমাত্র ধারা বলে প্রচারের তীব্র চেষ্টায় রত। তাদের অনেকের মধ্যে লালন চর্চার আলোকিত দিকটা তুলে ধরার চেয়ে লালন ফকিরকে কুক্ষিগত করার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
প্রকৃত সাধুগুরুরা সাধারণত বিশেষ বিশেষ ক্ষণে, বিশেষ বিশেষ ভক্ত-শিষ্য-অনুসারীদের উপস্থিতিতে বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে ফকির লালনের পদের বিশেষ অর্থ ব্যক্ত করে থাকেন। তবে তা সর্বজনের জন্য নয় কখনোই। কারণ ভাব পদের অর্থ নির্দিষ্ট নয়। তাই দেশ-কাল-পাত্র ভেদে সেই অর্থ বলতে হয়। তারা তাই করেন।
কিন্তু দু:খের সাথে লক্ষ্য করতে হয় অনেক সাধুগুরুও সর্বজনের সামনে লালনের ভাব গানকে নির্দিষ্ট অর্থে বেঁধে দেয়ার প্রয়াশ করেন। এতে উপস্থিত উৎসাহী অনেকে অনেক কিছু জানতে পারছেন বলে ভাবলেও। লালন ফকিরের ভাব গানে যে ভাবনার অবাধ গতিমায়তা তা থমকে যায় বলে আমার মনে হয়।
এতে জ্ঞান আর প্রজ্ঞাতে পৌঁছাতে পারে না। সুনির্দিষ্ট অর্থে জ্ঞান আবার গানে পরিণত নয়। এই কাজটিকে অনেকক্ষেত্রে লালনের পদ বিকৃত শব্দ ও সুরে যারা পরিবেশন করে তাদের মতোই সমান অপরাধ বলে মনে হয়।
তবে এতোকিছুর পরও ফকির লালনের শুদ্ধধারার চর্চা যে হচ্ছে না বা হয় না তা নয়। তাও হয়। অবশ্যই হয়। কিন্তু তা সংখ্যায় খুবই সামান্য।
কারণ শুদ্ধধারার চর্চায় চারপাশে ভীড় করে শিষ্য-ভক্ত-অনুরাগীকুল পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় না মিডিয়ার প্রচার প্রচারণা। পাওয়া যায় না বাড়তি মর্যাদা। যদিও ফকির এসবের ধার ধারবে না। এমনটাই বিধি।
লালন ফকিরের ভক্তকুল-
ভক্তকুলের মধ্যে আছে নানান বিভক্তি। সকলে যে ফকির লালনকে ভালোবেসে সমর্পিত হতে ভক্ত হন তাও নয়। অনেকেই ব্যক্তিগত নানা সমস্যা সমাধানে গুরু আশ্রিত হন। অনেকে আবার একজন গুরু থাকলে ভালো তাই গুরু ধরেন। অনেকে আবার বংশের ধারা গুরুবাদী বলে গুরু ধরেন।
অনেকে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গুরুর চরণে ঠাঁই চান। অনেকে ব্যক্তিগত কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতেও গুরুমুখী হন। আবার সব কিছু ছাপিয়ে কেবল গুরুভক্তিতেও অনেকে গুরুর আশ্রয়ে যান। অনেকে ফকির লালনকে অনুসন্ধান করতে করতে গুরুর চরণে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
অনেকে আবার গুরুরূপ দেখে বিমোহিত হয়ে গুরুবাদী হয়ে উঠেন। কেউ কেউ আবার একবারে ভিন্ন একটা পরিবেশ-পরিস্থিতি বা সমাজ ব্যবস্থা থেকে এসে গুরুবাদীদের জীবনযাত্রা দেখে প্রেমে পরে যান। নিজেও হয়ে উঠেন তার অংশ।
(চলবে…)
…………………………..
আরো পড়ুন:
লালন কার? : প্রথম কিস্তি
লালন কার? : দ্বিতীয় কিস্তি
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………..
আরো পড়ুন:
মাই ডিভাইন জার্নি : এক :: মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার
মাই ডিভাইন জার্নি : দুই :: কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়
মাই ডিভাইন জার্নি : তিন :: কোন মানুষের বাস কোন দলে
মাই ডিভাইন জার্নি : চার :: গুরু পদে মতি আমার কৈ হল
মাই ডিভাইন জার্নি : পাঁচ :: পাপীর ভাগ্যে এমন দিন কি আর হবে রে
মাই ডিভাইন জার্নি : ছয় :: সোনার মানুষ ভাসছে রসে
মাই ডিভাইন জার্নি : সাত :: ডুবে দেখ দেখি মন কীরূপ লীলাময়
মাই ডিভাইন জার্নি : আট :: আর কি হবে এমন জনম বসবো সাধুর মেলে
মাই ডিভাইন জার্নি : নয় :: কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি : দশ :: যে নাম স্মরণে যাবে জঠর যন্ত্রণা
মাই ডিভাইন জার্নি : এগারো :: ত্বরাও গুরু নিজগুণে
মাই ডিভাইন জার্নি : বারো :: তোমার দয়া বিনে চরণ সাধবো কি মতে
মাই ডিভাইন জার্নি : তেরো :: দাসের যোগ্য নই চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি :চৌদ্দ :: ভক্তি দাও হে যেন চরণ পাই
মাই ডিভাইন জার্নি: পনের:: ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই
মাই ডিভাইন জার্নি : ষোল:: ধর মানুষ রূপ নেহারে
মাই ডিভাইন জার্নি : সতের:: গুরুপদে ভক্তিহীন হয়ে
মাই ডিভাইন জার্নি : আঠার:: রাখিলেন সাঁই কূপজল করে
মাই ডিভাইন জার্নি :উনিশ :: আমি দাসের দাস যোগ্য নই
মাই ডিভাইন জার্নি : বিশ :: কোন মানুষের করি ভজনা
মাই ডিভাইন জার্নি : একুশ :: এসব দেখি কানার হাটবাজার