মওলা মহলের বার্ষিক শুভ সাধুসঙ্গ ও পাগল মেলা’২২
সাঁঈ সাঁঈ হক মওলা পাগল দয়াময়।
সাধু গুরু পাগল সর্ব চরণে পাপীর মস্তক দণ্ডপাত।।
“মওলা মহলের ছয় বছর পূর্তি ও চতুর্থ সাধুসঙ্গ”
প্রিয় সুধী,
প্রতিবারের মত এবারও সাঁঈ সাঁঈ মওলা পাগল স্মরণে পাগলের আখড়াবাড়ি ‘মওলা মহল’-এ বার্ষিক সাধুসঙ্গ ও পাগল মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ ফকির লালন সাঁঈজির মানবতার জয়গানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রইলো প্রেমোভক্তিপূর্ণ নিমন্ত্রণ। সাধু ফকির দরবেশ পাগল ভক্ত আশেকানের পদধূলিতে বিশ্ব মওলার ‘মওলা মহল’ হয়ে উঠুক মানবতা ও প্রেমের তীর্থভূমি।।
সকলে সাদরে নিমন্ত্রিত।
বিনীতা
অধীন দাসী
রুমানা পাগলী
মওলা মহল
প্রয়োজনে-
০১৭১১৫৭৯৪৭৪
০১৭০৮৬৫৫৬৮৯
তারিখ-
৯ ও ১০ জানুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ।
২৪ ও ২৫ পৌষ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
রবি ও সোমবার।
সাধুসঙ্গ-
শনিবার অধিবাস
রবিবার পূণ্যসেবা।
স্থান-
মওলা মহল আখড়াবাড়ি
ওয়ার্ড নম্বর-১ (রেলস্টেশনের পশ্চিম পার্শ্ব)
আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।
যাতায়াত-
-ঢাকা থেকে-
বাস সার্ভিস (যমুনা সেতু দিয়ে)
ঢাকা শহরের গাবতলী, কল্যাণপুর ও সায়দাবাদ থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী যে কোনো বাসে করে রওনা দিলেই হবে। নামতে হবে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা স্টেশনে। আলমডাঙ্গা স্টেশনে নেমে ‘মওলা মহল আখড়াবাড়ি’-এর কথা বললে সকলে চিনিয়ে দেবে। স্টেশনের কাছাকাছি তাই বিশেষ ঝামেলা পোহাতে হবে না।
ট্রেন সার্ভিস
ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্র এক্সপ্রেসে যাওয়া যায় আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা। সুন্দরবন এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল সোয়া আটটায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ। আর চিত্রা এক্সপ্রেস সোমবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকার কমলাপুর থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
প্রসঙ্গ পাগল মেলা ও মওলা পাগল
ফকিরকুলের শিরোমণি ফকির লালন সাঁইজির ধামে মওলা পাগল দেহত্যাগেরও চার-পাঁচ বছর আগে বলেছিল ‘মওলা মহল’-এর কথা। তারপর অনেক চড়াই উতড়াই পাড়ি দিয়ে আলমডাঙ্গা স্টেশনের পাশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ‘মওলা মহল’। যাত্রাটা সহজ ছিল না মোটেও।
সাঁঈ সাঁঈ হক মওলা পাগল দয়াময়ের কৃপায় রুমানা আফরোজ এই দরবার চালিয়ে আসছেন মওলার নামে। পাগল মেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধুদের সঙ্গ যেটা বিধান অনুযায়ী চব্বিশ ঘণ্টায় করা হয়। অধিবাস থেকে পুন্যসেবা পর্যন্ত চারটা সেবা আছে। সেবা-ভক্তি-প্রেমের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শেষ হয়ে যায়।
পাগল মেলাও একই আঙ্গিকেই হয়। যেহেতু আমার মওলা লালন সাঁইজির সিঁড়ির সাধক। প্রথমে সাধক, খেলাফত, ফকির হয়ে পাগল রূপ নিলেন। আমি মওলাকে পেয়েছি লালন ধরেই। আমার যতটুকু জ্ঞান-বিবেক। আমি তাঁর মাধ্যমেই লালনকে চিনেছি।
আমি প্রথম থেকেই সাঁইজির বিধানটাকে শ্রদ্ধা করি। আমি শুরু থেকেই যখন থেকে তেমন কিছুই জানতাম না। তখন থেকেই সাঁইজির বিধিবিধান মানবার চেষ্টা করতাম। সেই বিধিবিধান মেনে সাধুসঙ্গ তো চলবেই। পাশাপাশি পাগল যারা আসবে তাদের তো নিয়মে বাধা যাঁয় না।
তারা তো নিজেই নিয়ম সৃষ্টি করে। তাদের সাধুর কাতারে ফেললে উভয় পক্ষেরই বিপদ। সেবায় যে সব নিয়ম সঙ্গে মানতেই হয় তা পাগলদের পক্ষে মানিয়ে নেয়া শক্ত হয়ে যায়। পাগলকে বিধান দিয়ে আটকাতে গেলে তার প্রকৃত রূপ হারায়।
আবার সকালে বাল্যসেবায় যে বাচ্চাদের খাবার মানে মিষ্টি জাতিয় খাবার দেয়ার বিধান। তাও অনেক পাগল নিতে পারে না। অনেকে অসুস্থ থাকে। তাই বাল্য সেবাতেও অন্ন সেবার আয়োজন থাকে। যদি কেউ নিতে চায় তো নিতে পারে। সকলে তো পুন্যসেবা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না। সেটা তো হতে হতে বারোটা একটা।
আর আমার মওলা যেহেতু পাগল। তাই তার সঙ্গে পাগল তো আসবেই। হরেক রকম পাগল আসবে। বাবার তো পরিচিত শুধু দেশে নয়। বিশ্বব্যাপী। কোথা থেকে কোন পাগল আসবে তা বলা মুশকিল। তাই সাধুসঙ্গে সাধু যারা উপস্থিত হন তারা সাধুর নিয়ম মানবে।
আর পাগল যারা আসবে তাদের জন্য মওলা মহলে বিশেষ সেবার আয়োজন থাকে। তারা চাইলে সাধুর সেবাও নিতে পারে বা তারা তাদের মতো করে যখন তখন যেমন খুশি সেবা নিতে পারে। এই স্বাধীনতাটা পাগলদের প্রাপ্য। আমি তাই দেয়ার চেষ্টা করি।
আর আমি নিজেও ঘুরে দেখেছি অনেক সময় ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে যারা থাকে তাদের সময়মতো সেবা নেয়া হয় না। আমি যেহেতু সেবা দিতে ভালোবাসি। তাই আমার কাছে যখন যে আসে তখন সে যেন সেবা পায় সাধুসঙ্গেও সেই বিষয়টা নজরে রাখবার চেষ্টা করি।
অধিবাসের সেবার আয়োজন করতে করতে রাত বারোটা একটা হবেই। সন্ধ্যার রাখাল সেবায় মুড়ি জাতীয় শুকনা খাবার দেয়া হয়। কিন্তু যারা দূরদূরান্ত থেকে আসে তারাও যদি চায় তারা আগে সেবা নিবে। সেই আয়োজন থাকে পাগল মেলায়। সাধুদের জন্য সাধুসেবা তো থাকেই সাধু মতের নিয়ম মেনে।
আবার সকালে বাল্যসেবায় যে বাচ্চাদের খাবার মানে মিষ্টি জাতিয় খাবার দেয়ার বিধান। তাও অনেক পাগল নিতে পারে না। অনেকে অসুস্থ থাকে। তাই বাল্য সেবাতেও অন্ন সেবার আয়োজন থাকে। যদি কেউ নিতে চায় তো নিতে পারে। সকলে তো পুন্যসেবা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না। সেটা তো হতে হতে বারোটা একটা।
এইটুকুই আর কি। সাধুসঙ্গ আর পাগল মেলায় আহামরি কোনো পরিবর্তন আছে তা নয়। আসলে পরিবর্তন কিছুই না। সাধুগুরু যারা তারাও তো পাগলই। পাগল ছাড়া ঐ গুরুজ্ঞান-ঐ পরমজ্ঞান কেউ প্রাপ্ত হয় না।
এই আড়াল করায় এক একজন পাগলের এক এক রকম হাতিয়ার। এক এক পাগল এক এক রকম। কেউ জালালী পাগল, কেউ মজ্জুব পাগল। আমার বাবা ছিলেন জালালী পাগল। এক এক পাগল আসলে এক এক রকম। এগুলো আসলে তাদের একটা আবরণ।
আর আমার মওলাকে নিয়ে যদি কিছু বলতে হয়। তাহলে বলবো- আমি আমার সারাজীবনে যত সাধুগুরু দেখেছি। তারা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে একটু সুখ ভোগ করে। একটু সুখ তাদের হয়। একটু হলেও হয়। কিন্তু আমার পাগলকে নিয়ে এরকম কিছু আমি দেখি নি।
বাবা ওয়াইজ কুরোনি যেমন মাকে নিয়ে সারাজীবন বনেই কাটিয়ে দিলেন। এই লোকও সারাজীবন বনেই কাটিয়ে গেছেন। উনি শান্তিপুরে যাননি। এমনিতেও গরীবের ঘরে জন্ম হয়েছিল তাঁর। কাজ করেই জীবনটা পার করেছেন। ছোটবেলা থেকেই নানা চক্রান্তের স্বীকার হয়েছেন বারবার।
প্রভাবশালীদের নানা অভিযোগ-অনুযোগে নির্যাতিত হয়েছেন। তারপরও নিজ পরিবারের কর্তব্যে অবহেলা করেন নি। তার মাঝেই আজমপুর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিয়মিত টানা পয়ত্রিশ বছর গুরু বেহাল শাহ্ কাছে সংগীত ও যন্ত্রপাতির তালিম নেন। তিনি খালি পায়েই চলাচল করতেন।
আমার দাদা গুরু বেহাল সাঁইয়ের সাথে তিনি গানও করেতেন। পালাগান। পালাগানের শিল্পীরা যখন দাদাগুরুর কাছে হেরে বসে যেতেন। দাদার সাথে পালায় পারতেন না কেউ। দাদার কথার উত্তর দিতে পারতেন না কেউ। প্রতিপক্ষ বসে গেলে তখন সকলে বলতো এখন গুরু-শিষ্য পালা করো।
অর্থাৎ গুরুর বেহাল শাহ্ আর শিষ্য মওলা পাগলের পালা শুনতে চাইতো সকলে। এটা নাকি সকলে খুব উপভোগ করতো বলে আমি শুনেছি।
মজার বিষয় হলো যে গ্রামে নানা অপবাদে মওলাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি সেখানেই শুয়ে আছেন। যারা একসময় বিরোধীতা করেছিল। আজ তারা মওলার প্রেমে মেতেছে। মওলার ভক্তদের দেখভাল করে। আসলে সব পাগলই তো নিজেকে আড়াল করে রাখে।
এই আড়াল করায় এক একজন পাগলের এক এক রকম হাতিয়ার। এক এক পাগল এক এক রকম। কেউ জালালী পাগল, কেউ মজ্জুব পাগল। আমার বাবা ছিলেন জালালী পাগল। এক এক পাগল আসলে এক এক রকম। এগুলো আসলে তাদের একটা আবরণ।
এই তো এর বেশি কিছু না। সকলকে আমন্ত্রণ থাকলো। এসে দেখে যাও মওলা কেমন মহল সাজাইছে। সাঁঈ সাঁঈ হক মওলা পাগল দয়াময়।।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………..
আরো পড়ুন:
মাই ডিভাইন জার্নি : এক :: মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার
মাই ডিভাইন জার্নি : দুই :: কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়
মাই ডিভাইন জার্নি : তিন :: কোন মানুষের বাস কোন দলে
মাই ডিভাইন জার্নি : চার :: গুরু পদে মতি আমার কৈ হল
মাই ডিভাইন জার্নি : পাঁচ :: পাপীর ভাগ্যে এমন দিন কি আর হবে রে
মাই ডিভাইন জার্নি : ছয় :: সোনার মানুষ ভাসছে রসে
মাই ডিভাইন জার্নি : সাত :: ডুবে দেখ দেখি মন কীরূপ লীলাময়
মাই ডিভাইন জার্নি : আট :: আর কি হবে এমন জনম বসবো সাধুর মেলে
মাই ডিভাইন জার্নি : নয় :: কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি : দশ :: যে নাম স্মরণে যাবে জঠর যন্ত্রণা
মাই ডিভাইন জার্নি : এগারো :: ত্বরাও গুরু নিজগুণে
মাই ডিভাইন জার্নি : বারো :: তোমার দয়া বিনে চরণ সাধবো কি মতে
মাই ডিভাইন জার্নি : তেরো :: দাসের যোগ্য নই চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি :চৌদ্দ :: ভক্তি দাও হে যেন চরণ পাই
মাই ডিভাইন জার্নি: পনের:: ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই
মাই ডিভাইন জার্নি : ষোল:: ধর মানুষ রূপ নেহারে
মাই ডিভাইন জার্নি : সতের:: গুরুপদে ভক্তিহীন হয়ে
মাই ডিভাইন জার্নি : আঠার:: রাখিলেন সাঁই কূপজল করে
মাই ডিভাইন জার্নি :উনিশ :: আমি দাসের দাস যোগ্য নই
মাই ডিভাইন জার্নি : বিশ :: কোন মানুষের করি ভজনা
মাই ডিভাইন জার্নি : একুশ :: এসব দেখি কানার হাটবাজার