ত্রিশ ধারা
এক ধারা-
১. ঠাকুর আউলচাঁদ মহাপ্রভু প্রবর্তিত কর্তাভজা সত্যধর্মের দীক্ষামন্ত্র ‘সত্যনাম’ মহামন্ত্রে যদি কোন ব্যক্তি দীক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করে তাহলে তাকে এক বাক্যে সত্যনামে দীক্ষা প্রদান করবে না। সত্যনাম গ্রহণেচ্ছু ব্যক্তিকে প্রথমে কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভ, মূলনীতি আদর্শ বিষয়ে অবগত করাবে।
এসব বিষয় অবগত হওয়ার পর সে যদি কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভের উপর পূর্ণ শ্রদ্ধা- ভক্তি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং ধর্মের মূল নীতি-আদর্শ-বিধি-নিষেধ যথাযথ ভাবে পালনের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়, তাহলে তাকে সত্যনামের মূলতত্ত্ব (‘জয় গুরু সত্য’) আংশিক নামে দীক্ষা প্রদান করবে।
তবে সে যদি স্ব-ধর্ম সৎ-আচরণ শুদ্ধভাবে যাজনের জন্য সচেষ্ট হয় তাহলে পরবর্তীতে তাকে অবশ্যই পূর্ণ সত্যনামে দীক্ষা প্রদান করবে। পূর্ণ সত্যনামে দীক্ষা গ্রহণের পূর্বেই যদি তার দীক্ষাগুরু মহাশয়ের দেহান্তর/দেশান্তর হয় তাহলে পরবর্তীতে তার পছন্দমত সত্যমতাশ্রিত যেকোন মহাশয়ের নিকট থেকে পূর্ণ সত্যনামে দীক্ষা গ্রহণ করতে কোন নিষেধ নেই।
কর্তাভজা সম্প্রদায়ভুক্ত পিতা-মাতার ঘরে জন্ম হলে জন্মসূত্রেই সে একজন কর্তাভজা। কর্তাভজা সম্প্রদায়ভুক্ত ঐরূপ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পূর্ণ সত্যনামে দীক্ষা প্রদানে কোন নিষেধ নেই। কর্তাভজা ধর্মের ভগবজ্জন সমাজব্যবস্থায় নববিবাহিত বর-বধুর সত্যনামে দীক্ষা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। (যদি বিবাহের পূর্বে সত্যনামে দীক্ষা গ্রহণ করে না থাকে)।
২. দীক্ষা প্রদানকারী মহাশয় (শুরুদেব) দীক্ষা গ্রহণকারী শিষ্য উভয়ে উপবাস থেকে পবিত্রভাবে বেলা দ্বি-প্রহরের পূর্বেই দীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সু-সম্পন্ন করবে।
৩. শিষ্য দীক্ষা গ্রহনান্তে মহাশয় কে যথা সম্ভব দক্ষিণা দান করবে, কর্তাভজা ধর্মে দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরু এক-ই জন, আত্মজ্ঞান পিপাসু ব্যক্তি অবশ্যই চৈতন্যজ্ঞান সম্পন্ন সদগুরুর নিকট থেকে দীক্ষা গ্রহণ করবে।
দুই ধারা-
১. কর্তাভজা ধর্ম পালন করতে হলে- কায়িক, মানষিক, বাচনিক, দেহ- মন- বাক্য এই তিনিটি বিষয়ে অবশ্যই সংযত হতে হবে।
২. কায়িক- দেহ দ্বারা কোন প্রাণীকে হিংসা করবে না।
মানষিক- একে অপরের বিরুদ্ধে-শঠতা-চাতুরী-কু-মন্ত্রণা থেকে- সম্পূর্ণ বিরত থাকবে এবং কারাে অনিষ্ঠ চিন্তা করবে না।
বাচনিক- সত্যমতাশ্রিত ব্যক্তি সদাসর্বদা সত্য কথা বলবে, মিথ্যা ভাষণ, কটুক্তি, পরনিন্দা অপ্রয়ােজনীয় বাক্য ব্যয় সর্বতােভাবে পরিত্যজ্য।
৩. এমন কোন কার্য করবে না যাতে দেহ- মন- বাক্য এই তিনটি ব্যভিচার দোষে পতিত হয়।
তিন ধারা-
১. সত্যমতাশ্রিত কোন ব্যক্তি পরস্ত্রী-অথবা পরপুরুষের সাথে হাসি-ঠাট্টা-উপহাস এবং অপ্রয়ােজনীয় বাক্যালাপ করবে না।
২. একজন পুরুষ অথবা নারী কখনও পরস্ত্রী বা পরপুরুষে আসক্ত হবে না। সত্যমতাশ্রিত একজন ভক্ত ব্যভিচার দোষ থেকে নিজেকে সদাসর্বদা মুক্ত রাখবে।
৩. সৎচরিত্র মানুষের মহৎ গুণ ও অমূল্য সম্পদ। অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে চরিত্র অর্জন করা যায় না, ব্যাভিচার ও চৌর্য বৃত্তির দ্বারা মানুষ চরিত্রহীন হয়, চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমতূল্য, সত্যমতাশ্রিত একজন ব্যক্তি অবশ্যই চরিত্রবান ও, মহৎগুণের অধিকারী/ অধিকারীনী হতে সচেষ্ট থাকবে।
চার ধারা-
১. মদ বা মাদক জাতীয় দ্রব্য পান-আহার এবং মাংস-ডিম ও উচ্ছিষ্ট ভােজন সর্বতােভাবে নিষিদ্ধ।
২. মাদক সেবনে মানুষ ক্রমান্বয়ে বিবেকহীন হয়ে অমানুষে পরিণত হয়। *মাংস-ডিম – প্রজনন ক্রিয়ায় যাদের মা-সন্তান জ্ঞান নেই তারাই পশু। সেইসব পশু-পাখীর মাংস-ডিম ভক্ষণ সাধন-ভজনের পথে বিশেষ অন্তরায়, এতে আত্মা ক্রমাস্বয়ে অবঃগতি প্রাপ্ত হয়।
উচ্ছিষ্ট -ভােজনের মাধ্যমে মারাত্মক আকারে সংক্রামক ব্যধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সত্যমতাশ্রিত একজন ভক্ত স্বপ্রােণদিত হয়ে নিজের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য কারাে দিবে না এবং কারাে উচ্ছিষ্ট ভোজন করবে না, এমন কি একজন মহাশয়ও পরােক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে স্বপ্রােণদিতহয়ে তার শিষ্যকেও উচ্ছিষ্ট ভােজন করাবে না। সত্যমতাশ্রিত একজন ভক্ত যখন যে দ্রব্য সেবা করবে তা মালিকের নামে নিবেদন করতঃ সেবা করবে।
৩. শুধুমাত্র মুখরােচক খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হয় ঐ জাতীয় পশু-পাখি গৃহে পালন করবে না, সত্যমতাশ্রিত ব্যক্তি ২/৩/৪ ধারামতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করলে ঐ ব্যক্তি ভগবজ্জন বলে বিবেচিত হবে না।
পাঁচ ধারা-
১. শুচিতা (পবিত্রতা) ধর্মের একটি বিশেষ অঙ্গ, তাই দেহ-মন-বাক্য সদাসর্বদা সাধ্যমত পবিত্রতা রক্ষায় স্বচেষ্ট থাকবে।
২. বিধিমত নাম স্মরণের সময়, মন্দির/উপাসনালয়ে প্রবেশের সময়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যােগদানের সময়, ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও কীর্তণের সময় এবং সাধু সেবার রন্ধন কার্যের সময় বিশেষ ভাবে পবিত্রতা রক্ষা করবে।
৩. দেহ-মন-বাক্য-অপবিত্র অবস্থায় কারাে প্রণাম করবে না এবং কারাে প্রণাম গ্রহণ করবে না।
ছয় ধারা-
১. কর্তাভজা ধর্মের যাবতীয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে নারী- পুরুষের সমান অধিকার।
২. যে স্ত্রীলােক সত্যমতের নীতি-আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বিধি-নিষেধ পালনে সচেষ্ট এবং ভক্ত ভাবাপন্ন- তার সাথে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান ও সত্যমত সংক্রান্ত আলাপ আলােচনায় কোন নিষেধ নাই।
৩. সত্যমতাশ্রিত কোন মহিলা যদি ২/৩/৪ ধারামতে শুদ্ধাচারী এবং কর্তাভজা ধর্ম বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞ হয় তাহলে ঐ মহিলা গুরুদেবের আজ্ঞাক্রমে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মহাশয়/দীক্ষাগুরু হতে পারবে এতে কোন নিষেধ নেই।
সাত ধারা-
১. ইহজাগতিক দৃষ্টিতে পিতা-মাতা-ই সর্বশ্রেষ্ঠ গুরু, সত্যমতাশ্রিত প্রত্যেক ব্যক্তি-ই-পিতা-মাতাকে সর্বাঙ্গীণ ভাবে সেবা যত্ন করবে, সন্তানের ব্যবহারে পিতা-মাতা সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করলে সন্তানের সকল আশা পূর্ণ হয় আর দুঃখ পেয়ে অভিশাপ দিলে সন্তানের অমঙ্গল হয়। সত্যমতাশ্রিত ভক্তগণ তার পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত: চিত্তে প্রত্যহ ভক্তিপূর্ণ প্রণাম করবে এবং তাদের অবাধ্য হবে না।
২. সন্তানের জাগতিক শান্তি ও পারমার্থিক মুক্তি উভয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া প্রত্যেক পিতা-মাতার নৈতিক দায়িত্ব। প্রত্যেক পিতা- মাতা তাদের সন্তানদের সু-শিক্ষায়-শিক্ষিত করে গড়ে তুলবে এবং সৎচরিত্রবান হওয়ার জন্য ধর্মীয় নীতি-আদর্শ অনুসরণ করার জন্য উপদেশ দিবে। তবে অজ্ঞতা অথবা অবজ্ঞা বশত: যদি কোন পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি ধর্মীয় নীতি-আদর্শ বিরুদ্ধ বা পারমার্থিক মুক্তি পথের অন্তরায় ঐ রূপ কোন নির্দেশ প্রদান করে তাহলে ঐ নির্দেশ পালন না করলেও সন্তানের কোন অপরাধ হবে না।
৩. পারমার্থিক জগতের দৃষ্টিতে দীক্ষাদাতা মহাশয়-ই সর্বশ্রেষ্ঠ গুরু। সত্যমতাশ্রিত ভক্তগণ গুরুদেবের শ্রীচরণ কমলে দেহ-মন সমর্পণ করতঃ বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে গুরুকে প্রণাম করবে।
তবে কোন মহাশয় (গুরুদেব) তার শিষ্য দ্বারা শারীরিক সেবা করাবে না এবং ধর্মীয় নীতি-আদর্শ বহির্ভুত কোন বাক্য প্রদান করবে না কারণ ইহা অতীব অনর্থের মূল। মহাশয় যদি স্ব-প্রণােদিত হয়ে ধর্মীয় নীতি আদর্শ বহির্ভূত কোন বাক্য দেয় তাহলে ঐ বাক্য পালন না করলেও শিষ্যের কোন অপরাধ হবে না।
আট ধারা-
১. প্রত্যহ ৪ বার (ব্রহ্মমুহূর্ত, মধ্যাহ্ন, সান্ধ্যকালীন-মধ্যরাত্রি) বিধিমত নাম স্মরণ ও প্রার্থনা কার্য সুসম্পন্ন করবে। নাম স্মরণের সময় দেহ-মন ও পরিধেয় বস্ত্রাদি অবশ্যই পবিত্র থাকতে হবে। নাম স্মরণের বিষয় সমূহ গুরুদেবের নিকট থেকে জেনে নেওয়া একান্ত আবশ্যক।
২. প্রত্যহ যদি ৪ বার বিধিমত নাম স্মরণ ও প্রার্থনা কার্য সুসম্পন্ন করা সম্ভব না হয় তাহলে দিনে অন্তত: ১বার নাম স্মরণ ও প্রার্থনা কার্য সম্পাদন করবে।
৩. যিনি পরিবারের কর্তা তিনি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণকেও স্ব-ধর্মের নীতি-আদর্শে গড়ে তুলবে, এটা তার নৈতিক দায়িত্ব।
নয় ধারা-
১. কর্তাভজা ধর্মে শুক্রবার অতীব পবিত্র এবং সমবেতভাবে উপাসনা-প্রার্থনার নির্দিষ্ট দিন, সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগনের নিকট এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালনীয়।
২. সত্যমতাশ্রিত ভক্তগণ শুক্রবারের ব্রহ্মমুহুর্ত হতে অষ্টপ্রহর নিরামিষ দ্রব্য পান-আহার করবে, তবে উপবাসের কোন বিধান নেই; উপবাস থাকা আর না থাকা সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
৩. শুক্রবারে সন্ধায় ”কর্তাভজা উপাসনালয়’ সতীমাতা মন্দিরে ভক্তগণ একত্রে মিলিত হয়ে পূঁজা- ভােগনিবেদন, পবিত্র ‘ভাবেরগীত”এর আলােকে উপাসনা প্রার্থনা-ভাবেরগীত পাঠ-শ্রবন-কীর্তন করতঃ অতপর স্ব-স্ব-স্থানে গমন করবে এটা মালিকের হুকুম। শুক্রবারে উপাসনা প্রার্থনার নির্দিষ্ট দিন ধার্য থাকায় ঐ দিন রাত্রিকালীন সময় সার্বজনীন অথবা ব্যক্তিগত কোন ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করবে না।
দশ ধারা-
১. যেস্থানে সত্যমতাশ্রিত একাধিক পরিবার বসবাস করবে সেখানে ভক্তগণ সম্মিলিত ভাবে ‘সার্বজনীন কর্তাভজা উপাসনালয়’ সতীমাতা মন্দির প্রতিষ্ঠা করবে এবং সার্বজনীন ভাবে বৎসরের যেকোন দিনে সার্বজনীন ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান, দেবীপক্ষের প্রতিপদ তিথীতে সতীমায়ের স্মরণ উৎসব ও ফাল্লুনী পূর্ণিমায় সতীমায়ের দোল উৎসবের আয়ােজন করবে, তাছাড়াও সাধ্য থাকলে ব্যক্তিগত ভাবে নিজগৃহে সাধু সেবার নিমিত্তে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানের আয়ােজন করবে।
২. একজন সত্যমতাশ্রিত ব্যক্তি পারিবারিক ভাবে প্রত্যহ নাম স্মরণ ও সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার জন্য অতিক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বাড়ীর আঙ্গিনায় অথবা নিজগৃহে সতীমায়ের আসন প্রতিষ্ঠা করবে।
৩. যদি নিকটতম দূরে ‘সার্বজনীন কর্তাভজা উপাসনালয়’ থাকে তাহলে নিজ বাড়ীতে মায়ের আসন থাকা সত্ত্বেও উপাসনালয়ে হাজির হয়ে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানের উপাসনা-প্রার্থনার কাজ সু-সম্পন্ন করবে, উপাসনালয়ের পরিচর্যার কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য উপাসনালয়ে উপস্থিত হয়ে ভক্তগণ প্রত্যহ মালিকের নাম স্মরণ-উপাসনা-প্রার্থনার কার্যাদি সু-সম্পন্ন করবে।
এগার ধারা-
১. মহাশয় তার ভক্ত/ভক্তগণ কর্তৃক আয়ােজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান অথবা ধর্মীয় সম্পর্কযুক্ত সামাজিক অনুষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে উক্ত অনুষ্ঠান সু-সম্পন্ন করবে।২. ভক্ত/ভক্তগণ কর্তৃক আয়ােজিত অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্দ্ধারণ অবশ্যই মহাশয় কর্তৃক হতে হবে, মহাশয় সত্যমতের উপর দৃষ্টি রেখে আলােচনা সাপেক্ষে অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্দ্ধারণ করবে।
৩. যদি অনিবার্য কারণ বশতঃ মহাশয়ের পক্ষে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সম্ভব না হয় তাহলে মহাশয়ের (গুরুদেব) আজ্ঞামত অন্য একজন মহাশয় দ্বারা অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্দ্ধারণ ও অনুষ্ঠানের করণীয় কাজ সু-সম্পন্ন করবে। মহাশয়ের অজ্ঞাতসারে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্দ্ধারণ করলে উক্ত অনুষ্ঠানে মহাশয় উপস্থিত হতে বাধ্য থাকবে না, মহাশয়কে উপেক্ষা করে ধর্মীয় ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান করা কর্তাভজা ধর্মের নীতি বিরুদ্ধ।
বার ধারা-
১. ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানের দায়িত্ব প্রাপ্ত মহাশয় নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতঃ অনিবার্য কোন কারণে যদি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারেন তাহলে পূর্বেই তা যেকোন মাধ্যম দ্বারা অনুষ্ঠান আহ্বানকারীকে জানাবে।
২. ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে বিশেষ ভাবে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ভক্ত ও ভাবেরগীত কীক্তনীয়া দল নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতঃ অনিবার্য কোন কারণে যদি মহতী বৈঠক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারেন তাহলে পূর্বেই তা যেকোন মাধ্যম দ্বারা ‘মহতী বৈঠক’ আহ্বানকারীকে জানাবে।
৩. ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান আহ্বানকারী বৈঠক অনুষ্ঠান সু-সম্পন্ন করার জন্য মহাশয় ও ভক্তগণকে নিমন্ত্রণ করার পর অনিবার্য কোন কারণে যদি নির্দ্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠান সু-সম্পন্ন করা সম্ভব না হয় তাহলে পূর্বেই তা যেকোন মাধ্যম দ্বারা মহাশয় ও ভক্তগণকে অবশ্যই জানাবে, অন্যথায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া ভক্তগণ তাকে যে দন্ড দিবে তা সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করতে হবে।
১৩ ধারা-
১. কর্তাভজা সম্প্রদায়গণ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় সম্পর্কযুক্ত সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন- অন্তেষ্টিক্রিয়া, পারলৌকিকক্রীয়া, বিবাহ, অন্নপ্রাশন, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি মাঙ্গলিক কার্যসমূহ অবশ্যই গুরুদেবের উপস্থিতিতে অথবা গুরুদেবের আজ্ঞামত যেকোন একজন অভিজ্ঞ নিষ্ঠাবান ব্যক্তির দ্বারা সু-সম্পন্ন করবে। সত্যমতাশ্রিত নয় এমন কোন ব্যক্তির দ্বারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করবে না।
২. ভক্ত/ভক্তগণ কর্তৃক আয়ােজিত (ব্যক্তিগত অথবা সার্বজনীন) সত্যমত সংক্রান্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সু-সম্পন্ন করার জন্য অনুষ্ঠান সম্পাদনকারী মহাশয়কে সাধ্যমত দক্ষিণা দিবে।
৩. ভক্ত/ভক্তগণ সেচ্ছামতে যা প্রদান করবে মহাশয় তা হর্ষচিত্তে গ্রহণ করবে, ভক্তের কাছ থেকে মহাশয় কোন কিছু চেয়ে নিবে না, ভক্ত যদি আশানুরুপ দক্ষিণা দিতে না পারে তবুও কোন অবস্থাতেই ভক্তের প্রতি অসম্ভুষ্ট হবে না।
১৪ ধারা-
১. মহাশয় কর্তৃক নির্দেশিত সত্যমত সংক্রান্ত বাক্যসমূহ কর্তাভজা ধর্মের মূল পালনীয় বিষয়। শিষ্য মহাশয়ের বাক্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে এবং তা যথাযথভাবে পালনের জন্য স্বচেষ্ট থাকবে।
২. মহাশয়ের বাক্যসমূহ অবশ্যই সত্যমত সংক্রান্ত ও পবিত্র ‘ভাবেরগীত’এর আলােকে হতে হবে, সত্যমত বহির্ভূত কোন বাক্য মহাশয় তার শিষ্যকে পালন করার নির্দেশ দিবে না।
৩. যদি সত্যমত বহির্ভূত কোন বাক্য পালনের জন্য মহাশয় তার শিষ্যকে নির্দেশ করে তাহলে উক্ত বাক্য পালন না করলেও শিষ্যের কোন অপরাধ হবে না।
১৫ ধারা-
১. একজন ব্যক্তি সত্যনামে দীক্ষা গ্রহণ করার পর গুরু ত্যাগ করে অন্য কারাে নিকট থেকে দীক্ষা গ্রহণ করবে না, তবে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য স্ব-ধর্মের আদর্শের অনুসারী একাধিক গুরুদেবের উপদেশ গ্রহণ ও সাধু সঙ্গে কোন নিষেধ নেই।
সত্যমতাশ্রিত চৈতন্য জ্ঞান সম্পন্ন একজন মহাশয় তার নিজ ভক্ত ছাড়াও সম্প্রদায়ভুক্ত যেকোন ব্যক্তিকে ধর্মীয় বিষয়ে উপদেশ দিতে কুণ্ঠাবােধ করবে না, তবে অভক্ত-ঠক-প্রতারক-অবিশ্বাসীকে সাধন-ভজন ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে উপদেশ দিবে না।
২. একজন ব্যক্তি ‘সত্যনামে’ দীক্ষা গ্রহণের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে যদি তার মহাশয় (গুরুদেব) দেহান্তর/দেশান্তর হয় তাহলে প্রয়ােজন বােধে অন্য একজন সত্যমতাশ্রিত মহাশয়ের নিকট থেকে দীক্ষাগ্রহণে কোন নিষেধ নেই।
৩. সত্যমতাশ্রিত যে ভক্ত ধর্মীয় বিধি নিষেধ গুলাে সাধ্যমত মেনে চলে, প্রত্যহ বিধিমত নাম স্মরণ ও উপাসনা-প্রার্থনার কার্য সুসম্পন্ন করে তার মহাশয় দেহান্তর/দেশান্তর হলে ঐ ব্যক্তিকে পুনরায় আর দীক্ষা গ্রহণের প্রয়ােজন নেই।
তার গৃহে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি করার জন্য গুরু পরিবারে যদি যােগ্যতম ব্যক্তি থাকে তাহলে তাকে দিয়ে অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করবে, নতুবা সত্যমতাশ্রিত অন্য যেকোন মহাশয় দ্বারা অনুষ্ঠানের কার্যাদি সুসম্পন্ন করবে, ঐ অবস্থায় উক্ত ব্যক্তির গৃহে ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানাদি করতে সত্যমতাশ্রিত কোন মহাশয় ও ভক্তবৃন্দের আপত্তি থাকবে না।
১৬ ধারা-
১. যিনি কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভের উপর দৃঢ় বিশ্বাসী, ধর্মের মূলনীতি-আদর্শ যথাযথ ভাবে পালনে সচেষ্ট ২/৩/৪ বারা মতে শুদ্ধাচারী, ১৭ ধারা মতে গুণযুক্ত, ‘সত্যনাম’ মহামন্ত্রে দীক্ষিত এবং পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানী একমাত্র সেই ব্যক্তিই গুরুদেব বা মহাশয় হওয়ার যােগ্য ব্যক্তি বলে বিবেচিত হবে।
এখানে নারী পুরুষ উভয়ের সমান অধিকার, গুরুদেবের পুত্র-ই গুরুদেব বলে বিবেচিত হবে না, কর্তাভজা ধর্মের গুরুদেব বংশগত নয়, গুণ ও কর্ম-ই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। এ বিষয়ে জাত-পাত, বর্ণ-বৈষম্য সম্পূর্ণ রূপে পরিত্যাজ্য।
২. একজন মহাশয় মহাপ্রয়াণের পূর্বে তার পরিবারের সদস্য অথবা ভক্তগণের মধ্য হতে উপরে উল্লেখিত বিষয়ে যােগ্য বিবেচিত এক বা একাধিক ব্যক্তিকে যেকোন ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলােচনা সাপেক্ষে গুরুদেবের করণীয় কাজের ভার অর্পণ করবে।
৩. কোন মহাশয় যদি তার মহাপ্রয়াণের পূর্বে গুরুদেবের করণীয় কাজেের জন্য কোন ব্যক্তির উপর ভার অর্পণ করে যেতে না পারেন তাহলে গুরুদেবের পরিবারের সদস্যগণ/ভক্তগণ ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে আলােচনার মাধ্যমে যােগ্যতম এক বা একাধিক ব্যক্তিকে গুরুদেবের করণীয় কাজের ভার অর্পণ করবে। (মহাশয় যদি দেশান্তর হয় তাহলেও একই নিয়ম প্রযােজ্য।)
১৭ ধারা-
১. যিনি কর্তাভজা ধর্মের মহাশয় (গুরুদেব) পদবাচ্য হবেন তাকে অবশ্যই সত্যনামে দীক্ষিত হতে হবে এবং স্ব-ধর্ম, সৎ আচার-আচরণ যথাযথভাবে পালনে স্বচেষ্ট হতে হবে।
২. যিনি মহাশয় তিনি অবশ্যই মিথ্যা বলা, পরনিন্দা করা ও পরনিন্দা শ্রবণ করা থেকে বিরত থাকবে এবং তাকে ২/৩/৪ ধারামতে শুদ্ধাচারী, রাগরহিত, ক্ষমাযুক্ত, নেশা বর্জিত, সংযমী, নির্লোভী, নিস্কামী, অকপট, সত্যবাদী, ধৈর্য্য ও সহনশীল গুণের অধিকারী/অধিকারীণি হতে হবে।
৩. যিনি মহাশয় তাকে অবশ্যই কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভের উপর অটল বিশ্বাস থাকতে হবে, প্রত্যহ বিধিমত নাম স্মরণ ও শুক্রবারের সাপ্তাহিক মহতী বৈঠককে প্রার্থনায় অংশ গ্রহণ করতে হবে অন্যথায় তিনি ‘মহাশয়’ বলে বিবেচিত হবে না।
১৮ ধারা-
১. মহতী বৈঠক অনুষ্ঠানে উপবেশন করতঃ অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সেচ্ছাচারী ভাবে উঠে যাওয়া অভক্তের লক্ষণ।
২. মহাশয়/ভক্ত যেকোন ব্যক্তি যদি বিশেষ কারণে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান থেকে উঠে যেতেই হয়, তাহলে অনুষ্ঠানে উপবেশনকারী অন্ততঃ একজন ভক্তকে বলে তারপর অনুষ্ঠান থেকে উঠে যেতে হবে।
৩. মাদক জাতীয় দ্রব্য পান-আহার করে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে যােগদান করবে না এবং অনুষ্ঠানে বসে কোন প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য পানাহার করবে না, একজন মহাশয়/ভক্ত কর্তৃক আয়ােজিত ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে অন্য একজন মহাশয় ও তার ভক্তগণ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে যােগদান করবে।
তবে একজন মহাশয় অন্য একজন মহাশয়কে, একজন ভক্ত অন্য একজন ভক্তকে যােগ্য সম্মান দিতে বাধ্য থাকবে। নিমন্ত্রিত না হয়েও শুধু শ্রবণমাত্র অনুষ্ঠানে যােগদান করতে দ্বিধাবােধ করবে না।
১৯ ধারা-
১. কর্তাভজা সম্প্রদায়ের নিকট ‘ভাবেরগীত’ অতি পবিত্র, শ্রদ্ধেয় ও পূঁজনীয় ধর্মগ্রন্থ। ঠাকুর দুলালচাঁদ (লালশশী) কর্তৃক পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ রচিত। উপাসনা তত্ত্ব ও ১৪টি সাট, ৪২৫টি গীত, ১৫৯৯টি কলি, ১০০৮১টি লহর-এ পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ সমাপ্ত।
২. পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ সদাসর্বদা পবিত্র অবস্থায় রাখবে, অপবিত্র অবস্থায় ভাবেরগীত পাঠ ও কীর্তন করবে না, যে ব্যক্তির গৃহে পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ থাকবে সেই ব্যক্তি নিজে অথবা নিজ পরিবারের যে কোন (সত্যনামে দীক্ষিত) সদস্য দ্বারা সন্ধ্যাকালীন সময়ে ‘সত্যনাম’ স্মরণ পূর্বক পবিত্র ‘ভাবেরগীত থেকে প্রার্থনাদি করতঃ ধুপ-ধুনাে প্রদীপ দ্বারা ভাবেরগীত-এর প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি নিবেদন করবে।
৩. পবিত্র ‘ভাবেরগীত’এর প্রতিটি শব্দ-বাক্য কর্তাভজা সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণের নিকট অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং এর নির্দেশাবলী যথাযথ ভাবে পালনীয়, কর্তাভজা সম্প্রদায়ের যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় সম্পর্কযুক্ত সামাজিক অনুষ্ঠানাদি পবিত্র ‘ভাবেরগীত’এর আলােকেই পরিচালিত হবে।
২০ ধারা-
১. ভক্তগণ কর্তৃক মহাশয়ের নিকট প্রদানকৃত বার্ষিক খাজনা ও মায়ের ধামে মানসিক বিষয়ের অর্থ-সমূহ প্রত্যেক বছরে দোল পূর্ণিমায় মহাশয় নিজে উপস্থিত হয়ে অথবা যেকোন মাধ্যম দ্বারা নিত্যধাম ঘােষপাড়ায় দাখিল করবে।
২. কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মহাশয়বৃন্দ বছরে কমপক্ষে একবার নিত্যধাম ঘােষপাড়ার সাথে যােগাযােগ রক্ষা করে চলবে।
৩. ভক্তগণ কর্তৃক প্রদেয় অন্যান্য বিষয়ের অর্থসমূহ কিছু নিজে ভােগ করবে এবং সাধু সেবা দিবে।
২১ ধারা-
১. কোন ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ ব্যক্তিগত বা সার্বজনীন ভাবে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে মনস্থির করলে পূর্বেই নিমন্ত্রণ করে ভক্তগণকে জানাবে।
২. সত্যনামাশ্রিত, শুদ্ধাচারী ভক্ত/ভক্তগণ দ্বারা পবিত্রতা ও শ্রদ্ধা-ভক্তি সহকারে ভক্ত সেবার জন্য রন্ধন ও পরিবেশনের কাজ সু-সম্পন্ন করবে, ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানের ভােজন দ্রব্যগুলাে অবশ্যই নিরামিষ হতে হবে।
৩. কর্তাভজা ধর্মে ভক্ত সেবার জন্য রন্ধন ও পরিবেশনে জাত-পাত বিচার্য নয়, সত্যনামাশ্রিত একজন মানুষ, এটাই তার পরিচয়।
২২ ধারা-
১. একজন মানুষ জন্মসূত্রে সে যেজাতি-ই হােক না কেন সে যদি কর্তাভজা ধর্মের মূলমন্ত্র ’ সত্যনামে’ দীক্ষাগ্রহণ করে তখন থেকেই তার পূর্বের জাতি-বর্ণ গােত্রের পরিচয় আর থাকবে না, তখন জাতি হিসাবে সে একজন কর্তাভজা। কর্তাভজা সম্প্রদায়গণ বংশ পরম্পরায় কোন গােত্র পরিচয় বহন করবে না।
২. কর্তাভজা সম্প্রদায়ভুক্ত একজন মানুষ তার স্ব-ধর্মের বিধি-নিষেধ-আচার অনুষ্ঠান যথাযথভাবে পালন করতে না পারলেও যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্ব-ধর্মের নীতি-আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে, বিধি-নিষেধ-আচার অনুষ্ঠানের বিপরীতে কোন কর্মকাণ্ড না করে ততক্ষণ পর্যন্ত সে একজন কর্তাভজা।
৩. সত্যমতাশ্রিত একজন মানুষ যখন তার স্ব-ধর্মের নীতি-আদর্শ পালনে সাধ্যমত সচেষ্ট ও শ্ৰদ্ধা-ভক্তিতে অবিচল থাকে, তখনই সে হয় একজন পরমভক্ত বা ভগবজ্জন, সত্যমতাশ্রিত একজন ভক্ত সমমনা একজন ভক্তের সাথে ‘জয় গুরু সত্য’ অথবা ‘জয় সতীমা’ জয় কর্তামা’ বলে সম্বােধন করবে, জয় গুরু সত্য’ কর্তাভজা সম্প্রদায়ের পরিচয় বহন করে।
২৩ ধারা-
১. কোন ব্যক্তি শারীরিক পীড়ার কারণে অথবা অমঙ্গল জনিত যেকোন প্রকার দায় হতে নিস্তার পাওয়ার আশায় কোন ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে জানায় তাহলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মহাশয়গণ ও ভক্তবৃন্দ আলােচনা স্বাপেক্ষে তার সুব্যবস্থা করবে।
২. সত্যের উপর অটল ভক্তি বিশ্বাস স্থাপন করলে মালিকের কৃপায় অসাধ্য সাধন হয়, যদি কোন দায়গ্রস্থ ব্যক্তি দায়মুক্তির জন্য মহাশয় (গুরুদেব)-এর শরণাপন্ন হয়, তাহলে বিধান মত ‘দায়িক মহতী বৈঠক’’ অনুষ্ঠানের আয়ােজন করবে।
৩. কোন মহাশয় স্বপ্রণােদিত হয়ে কোন ব্যক্তিকে ‘দায়িক ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান করতে রাজী করাবে না।
২৪ ধারা-
১. সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণ সুখে-সম্পদে, দুঃখে বিপদে সর্বাবস্থায় এক ঈশ্বরের উপর অটল ভক্তি-বিশ্বাস রেখে চলবে।
২. সত্যমতাশ্রিত ব্যক্তিগণ রােগে-শােকে, দুঃখে-বিপদে যেকোন আপদ কালীন সময়ে মানসিক করলে তা কর্তাভজা ধর্মের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মালিকের নামে মালিকের নিকট মানসিক করবে। স্ব-ধর্মের আদর্শের পরিপন্থী কোন মানসিক করবে না।
৩. মালিকের কৃপায় আপদ-বিপদ থেকে মুক্তি পেলে মহাশয় ও ভক্তবৃন্দকে সাক্ষী স্বরূপ রেখে যথাসময়ে মানসিক এর দায়মুক্ত হবে।
২৫ ধারা-
১. সত্যমতাশ্রিত কোন ব্যক্তি যদি ধর্মীয় নীতি-আদর্শের পরিপন্থী কোন কাজ করে তাহলে সে অপরাধী বলে গণ্য, ঐ ব্যক্তি তখন থেকে আর ভগবজ্জন বলে বিবেচিত হবে না।
২. কোন ব্যক্তি অপরাধী হয়েও সে যদি অনুতপ্ত হয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে এবং পুনরায় ঐ জাতীয় অপরাধ আর না করার অঙ্গীকার করে তাহলে তার সাথে ‘মহতী বৈঠক’ ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি করতে কোন নিষেধ নেই।
৩. একজন ভক্ত অপরাধ করার পর ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে সে যদি পূণরায় ঐ জাতীয় অপরাধ করে তাহলে ভগবজ্জনগণ তার সাথে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান করবে না।
২৬ ধারা-
১. বিশুদ্ধ জ্ঞান, সৎকর্ম ও অচলা ভক্তি এই তিনটি বিষয় ধর্মের প্রধান অঙ্গ। সত্যমতাশ্রিত প্রত্যেক ব্যক্তি-ই সাধ্যানুযায়ী স্বধর্ম পালনে ব্রতী হবে। ভক্তগণের মধ্যে যাদের ঈশ্বর তত্ত্ব ও সামাজিক বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান আছে তারা লেখনি শক্তি, বক্তব্য-বিবৃতি ও সংগীতের মাধ্যমে স্বধর্ম পালন এবং মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করবে, অজ্ঞানকে জ্ঞান দান করা ধর্মের বিশেষ অংশ।
২. সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণের মধ্যে মালিকের কৃপায় যারা অর্থ-সম্পদের অধিকারী তারা অনিবার্য কারণ বশত: স্ব-ধর্ম পালনে এবং মানব কল্যাণে শ্রম-বা সময় দিতে না পারলেও সৎপথে উপার্জিত অর্থ স্বধর্ম পালনে এবং মানব কল্যাণে ব্যয় করবে, সৎপথে অর্থ উপার্জন করা, সৎ কর্মে অর্থ-সম্পদ দান করা ধর্মের অংশ।
৩. সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণের মধ্যে যাদের অর্থ-সম্পদ নেই, অল্প শিক্ষিত, স্বল্প জ্ঞানী তারা শ্রম ও ভক্তির মাধ্যমে স্বধর্ম পালন এবং মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করবে।
২৭ ধারা-
১. সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণের মধ্যে যদি একে অপরের সাথে যেকোন বিষয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয় তাহলে উক্ত বিষয় মীমাংসার জন্য ভক্ত সমাজে নেতৃত্ব দানকারী বিজ্ঞ ব্যক্তিগণকে জানাবে।
২. ভক্ত সমাজের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ সত্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে মীমাংসা করার জন্য স্বচেষ্ট হবে, বিচারকগণ বিচারের বিধান ক্রমে যে মীমাংসা করে দিবে উভয় পক্ষকে তা সন্তুষ্ট চিত্তে রক্ষা করতে হবে।
৩. সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এমন কোন কাজ করবে না, ক্ষমাগুণ ধর্মের একটি বিশেষ অঙ্গ।
২৮ ধারা-
১. কর্তাভজা সম্প্রদায়গণ স্ব-ধর্মের নীতি-আদর্শ সমুন্নত রেখে সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এবং ভিন্ন মতালম্বীগণের সাথেও সৌহার্দ্য পূর্ণ পারস্পরিক সহযােগিতা ও সহবস্থানের মাধ্যমে বসবাস করবে।
২. সত্যনামাশ্রিত একজন ব্যক্তি দেহ রাখলে তার সন্তানগণ অন্তেষ্টিত্রিয়া ও পারলৌকিকক্রিয়া অনুষ্ঠান পবিত্র ‘ভাগেরগীত’-এর আলােকে এবং গুরুদেব বা গুরুদেবের আজ্ঞামত অন্য একজন মহাশয় ও ভগবজ্জন সমন্বয়ে সুসম্পন্ন করবে।
সম্প্রদায়ভুক্ত একজন মানুষ দেহরাখার পর ১০দিন ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করতঃ ১১তম দিবসে অথবা ৭দিন ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করতঃ অষ্টম দিবসে পারলৌকিকক্রিয়া অনুষ্ঠান সু-সম্পন্ন করবে। কর্তাভজা ধর্মে পরলােকগত পিতা/মাতার পারলৌকিকত্রিয়ায় পুত্র-কন্যার সমান অধিকার।
একদিন ঐ মানুষের তল্লাসে দেশ বিদেশে ঘুরে,
এক তামাসা দেখতে পেলাম খাসা দশ দশার পাথারে।।
(‘ভাবেরগীত’, গীত নং- ৩২৬)
আমি অভুক্ত ভাই এ সপ্ত দিবস,
অন্ন জল ফল মূল কিছুই হয় নাই পরশ।।
(‘ভাবেরগীত’ গীত নং- ২৭৫)
৩. গুণ ও কর্মগত গুরুবাদের সমাজ ব্যবস্থা-ই কর্তাভজা সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযােগ্য আর বৈষম্যমূলক বংশগত জাতিভেদ তথা ব্রাহ্মণ্যবাদের সমাজ ব্যবস্থার কু-সংস্কার পূর্ণ যাবতীয় বিধি-বিধান পরিত্যাজ্য।
২৯ ধারা-
১. জন্মসূত্রে কর্তাভজা সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ অথবা জন্মসূত্রে একজন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ কর্তাভজা ধর্মের নীতি-আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কিন্তু ধর্মীয় বিধি-নিষেধ কিছুই পালন করে না, ঐ জাতীয় ব্যক্তিগণকে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করতে বা বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে কোন নিষেধ নেই।
২. ভিন্ন মতাদর্শের কোন ব্যক্তি যদি অনিবার্য কারণ বশতঃ ‘মহতী বৈঠক”এর মানসিক করে থাকে, আর সেই মানসিক এর দায়মুক্তির জন্য যদি নিজ গৃহে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান করতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে তাকে সর্বপ্রথম কর্তাভজা ধর্মের নীতি-আদর্শের প্রতি ভক্তি-বিশ্বাস স্থাপন করার উপদেশ দিবে।
পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তি যােগ্য বিবেচিত হলে তার গৃহে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান করবে অন্যথায় তার গৃহে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠান করবে না। ‘সত্যনামে’ দীক্ষিত নয় এমন কোন ব্যক্তি তার মানসিক এর দায় মুক্তির জন্য নিকটবর্তী কোন কর্তাভজা উপাসনালয় ‘সতীমাতা মন্দির’ এর মাধ্যমে অথবা নিত্যধাম কল্যাণী ঘােষপাড়ায় সতীমায়ের ধামে অথবা সত্যমতাশ্রিত একজন অভিজ্ঞ মহাশয়ের সাথে আলােচনার মাধ্যমে তার মানসিক এর দায় মুক্তির ব্যবস্থা করবে।
৩. কোন ব্যক্তির আচার-আচরণ, চরিত্রগত দোষ বিষয়সমূহ ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করবে না এবং কোন ব্যক্তিকে কটাক্ষ করে প্রকাশ্যে ‘মহতী বৈঠক’ অনুষ্ঠানে কোন বিষয় আলােচনা করবে না, তবে সামগ্রীক ভাবে ধর্মীয় নীতি-আদর্শ বিধি নিষেধসমূহ অনুষ্ঠানে আলােচনা করতে কোন নিষেধ নেই।
৩০ ধারা-
১. সত্যমতাশ্রিত ভক্তবৃন্দের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে যে কোন প্রকার মতভেদ হলে প্রথমে তা মহাশয়ের উপদেশ নির্দেশকে গ্রাহ্য করতঃ তা সমাধান করবে, তবে মহাশয়কে অবশ্যই কর্তাভজা ধর্মের মূলনীতি-আদর্শ-উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে উপদেশ নির্দেশ দিতে হবে।
২. মহাশয় কর্তৃক উপদেশকৃত বা নির্দেশিত পথে যদি সমাধান না হয় তাহলে ৩০ ধারায় বর্ণিত বিধি-বিধান ও পবিত্র ‘ভাবেরগীত’এর আলােকে সমাধানের জন্য স্বচেষ্ট হবে।
৩. ‘মহাশয় বাক্য, ৩০ ধারা, পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ এসবের মাধ্যমে যদি সমাধান সম্ভব না হয় তাহলে ধর্ম বিষয়ে অভিজ্ঞ মহাশয়বৃন্দ ও বিশিষ্ট ভক্তবৃন্দ সম্মিলিত ভাবে আলােচনা সাপেক্ষে সত্যের উপর দৃষ্টি রেখে তা সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, আলােচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে সকলে তা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে।
নির্দেশিকা-
৩০ ধারার প্রত্যকটি ধারা-উপধারা কর্তাভজা সম্প্রদায়গণ সর্বতোভাবে মেনে চলতে সাধ্যমত সচেষ্ট থাকবে।
……………..
‘সতীমা ও সত্যদর্শন’ বই থেকে সংগৃহীত
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………..
আরও পড়ুন-
কর্তাভজা ধর্মের ইতিহাস
ঠাকুর আউলচাঁদের আবির্ভাব
গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তদের বিশ্বাস
রামশরণ ও সতীমার দীক্ষা গ্রহণ
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের দশ আজ্ঞা
সতীমা কে?
শূদ্র কারা?
ঘোষপাড়ার ডালিম তলা ও হিমসাগরের মাহাত্ম্য
কর্তাভজার বাইশ ফকির
আউলচাঁদের তিরােধান
দুলালচাঁদ
সতীমায়ের উপদেশ বাণী
ঘোষপাড়ার রথযাত্রা উৎসব
সতীমার তিরােধান
কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভ
ত্রিশ ধারা
1 Comment