ভবঘুরেকথা
সতী মাতা কর্তভজা

ঘোষপাড়ার ডালিম তলা ও হিমসাগরের মাহাত্ম্য

নিত্যধাম কল্যাণী ঘোষপাড়ার ডালিম তলা ‘ঠাকুর আউলচাঁদের অপূর্ব এক মহান কীর্তি, ঠাকুর আউলচাঁদ’ সতীমা ও রামশরণকে ‘সত্যনামে’ দীক্ষা দানের মাধ্যমে কর্তাভজা ধর্মের প্রবর্তন করেন, রামশরণের একটি দুরারোগ্য (পেটে শূলবেদনা) ব্যাধি ছিল, রামশরণ মাঝে মাঝে ঐ শূল বেদনায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতেন, একদিন রামশরণ শূল বেদনায় ছটফট করছিলেন।

এ সময় ঠাকুর আউলচাঁদ ‘সতীমা’র নিজ বাড়িতে থাকা (পূর্বেই সতীমার স্বহস্তে রোপিত) ডালিমগাছের তলায় বসে ডালিমতলার মাটি ও ঠাকুরের হস্তস্থিত কমুণ্ডলের জল দিয়ে রামশরণের ঐ দুরারােগ্য ব্যাধি অলৌকিক ভাবে মুহূর্তের মধ্যেই মুক্তি করে দিলেন।

সতীমার স্ব-হস্তে রােপিত ডালিম গাছটি (প্রায় তিনশত বছর) কল্যাণী ঘোষপাড়ায় আজও বিদ্যমান। সতীমার তিরােধানের শতশত বছর পরে আজও মানুষ মনের আশা-বাসনা নিয়ে ডালিম তলায় উপস্থিত হয়ে কায়মনবাক্যে মনের আশা-বাসনা মায়ের চরণে নিবেদন করছে, মায়ের আশির্বাদে ভক্তের মনােবসনা পূর্ণ হচ্ছে এবং মায়ের জয়গানে চারিদিক মুখরিত হচ্ছে।

আর সতীমাকে বললেন এই ডালিমতলে বসে প্রত্যহ বিধিমত ‘সত্যনাম’ স্মরণ, মনন, জপ, তপ, ধ্যান, সাধন-ভজন করবি, তোর সাধনায় সিদ্ধিলাভ হবে, আর তুই হবি ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারিণী আর এ ডালিমগাছটি কল্পবৃক্ষে পরিণত হবে।

এখানে যে কোন ব্যক্তি মালিকের উপর অটল ভক্তি-বিশ্বাস রেখে রোগ-শোক, আপদ-বিপদ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করলে মালিক তার মনােবাসনা পূর্ণ করবে, এজন্য আপনা-আপনি বহু অর্থ আসবে, এই অর্থ কিছু নিজে ভােগ করবি আর লােক হিতকর কাজ ও ঠাকুরের মহােৎসবে ব্যয় করবি।

সাবধান এই অর্থের উপর যেন লােভ না আসে, যখন-ই লােভ করবি তখনি গরল দেখা দিবে। ঠাকুরের আজ্ঞামত সতীমা ঐ ডালিমতলায় বসেই ‘সত্যনাম’ স্মরণ-মনন-জপ-তপ, ধ্যান, সাধন-ভজন করে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং বাকসিদ্ধা, ঐশ্বরিক ক্ষমতা ও অতিমানবীয় গুণাবলীর অধিকারিণী হয়েছিলেন।

সতীমার স্ব-হস্তে রােপিত ডালিম গাছটি (প্রায় তিনশত বছর) কল্যাণী ঘোষপাড়ায় আজও বিদ্যমান। সতীমার তিরােধানের শতশত বছর পরে আজও মানুষ মনের আশা-বাসনা নিয়ে ডালিম তলায় উপস্থিত হয়ে কায়মনবাক্যে মনের আশা-বাসনা মায়ের চরণে নিবেদন করছে, মায়ের আশির্বাদে ভক্তের মনােবসনা পূর্ণ হচ্ছে এবং মায়ের জয়গানে চারিদিক মুখরিত হচ্ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-১৯৪৫) বৃটিশ মিত্র বাহিনী, নিত্যধাম ঘােষপাড়া ঠাকুর বাড়ির বিরাট অঞ্চলকে যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য সেনা ঘাটি তৈরী করেছিল এবং ঠাকুর বাড়ির শতশত বিঘা জমি সরকারী ভাবে দখল করেছিল কিন্তু শত চেষ্টা করেও সেই জমি ঠাকুর বাড়ি আজও ফেরৎ পায়নি এজন্য নিত্যধাম ঘােষপাড়া মহাতীর্থের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

যুদ্ধের সুবিধার জন্য সৈন্যরা ঠাকুর বাড়ির বহু মূল্যবান গাছ কেটে পরিস্কার করে ফেলে কিন্তু ঐ ডালিম গাছের অলৌকিক মহিমায় মুগ্ধ হয়ে বৃটিশ মিত্র বাহিনীর সৈন্যরা ডালিম গাছট অক্ষত রাখে।

হিমসাগরের মাহাত্ম্য

‘নিত্যধাম কল্যাণী ঘোষপাড়ায়’ ডালিমতলার ন্যায় হিমসাগরও ‘ঠাকুর আউলচাঁদের অপূর্ব এক মহান কীর্তি, ঠাকুর আউলচাঁদ’ সতীমা ও রামশরণকে ‘সত্যনামে’ দীক্ষা দানের মাধ্যমে কর্তাভজা ধর্মের প্রবর্তন করেন, রামশরণের একটি দুরারোগ্য (পেটে শূলবেদনা) ব্যাধি ছিল এবং মাঝে মাঝে ঐ শূল বেদনায় অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতেন।

একদিন রামশরণ শূল বেদনায় ছটফট করছিলেন, এ সময় ঠাকুর আউলচাঁদ ‘সতীমার নিজ বাড়িতে থাকা সতীমার স্বহস্তে রোপিত ডালিমগাছের তলায় বসে ডালিমতলার মাটি ও ঠাকুরের হস্তস্থিত কমুণ্ডলের জল দিয়ে রামশরণের ঐ দুরারােগ্য ব্যাধি অলৌকিক ভাবে মুহূর্তের মধ্যেই চিরতরে মুক্তি করে দিলেন।

বলাবাহুল্য রামশরণ ও সতীমা ঐ দিনের পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত্য আর জ্বরাব্যাধি ভোগ করেননি, সতীমার তিরোধানের শতশত বছর পরেও অদ্যাবধি অগণিত ভক্ত মনের আশা-বাসনা নিয়ে নিত্যধাম কল্যাণী ঘোষপাড়ায় এসে ঐ হিমসাগরে স্নান করে ডালিমতলায় মানত করছে।

অতঃপর- সতীমায়ের বাড়ির সন্নিকটে একটি ছোট্ট পুষ্করণী (পুকুর) ছিল, ঠাকুর আউলচাঁদ ‘সতীমা ও রামশরণকে সঙ্গে নিয়ে ঐ পুষ্করণীতে গেলেন, এবং নাভী সমান জলে গিয়ে ঠাকুর আউলচাঁদ নিজ হস্তস্থিত কমুণ্ডলের জল ঐ পুষ্করণীতে ঢেলে দিয়ে রামশরণ ও সতীমাকে বললেন এখানে সাতবার ডুব দিয়ে স্নান কর তাহলে তোদের জ্বরা ব্যাধি চিরতরে মুক্তি হবে।

ঠাকুর আউলচাঁদ আরও বললেন এই ছোট্ট পুষ্করণী একদিন একটি বৃহৎ সরোবরে পরিণত হবে, এখানে যেকোন ব্যক্তি মালিকের উপর অটল বিশ্বাস-ভক্তি রেখে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতঃ স্নান করলে সর্বপাপ ক্ষয় হবে, জ্বরা-ব্যাধি মুক্ত হবে, বোবায় কথা বলবে, হিমসাগরের জল ও ডালিমতলার মাটির মহত্বগূণে অন্ধ দৃষ্টি ফিরে পাবে, বন্ধ্যানারী সন্তান পাবে, ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হবে।

তবে সাবধান- এ বিষয়ে মনে বিন্দুমাত্র অহংকার না আসে, অহংকার ও অবহেলা করলে গরল দেখা দিবে, পরবর্তীতে ঠাকুর আউলচাঁদের মহিমা ও সতীমায়ের অলৌকিক ক্ষমতায় ঐ ছোট্ট পুষ্করণীটি ধীরে ধীরে বৃহৎ সরোবরে পরিণত হয়েছিল।

বলাবাহুল্য রামশরণ ও সতীমা ঐ দিনের পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত্য আর জ্বরাব্যাধি ভোগ করেননি, সতীমার তিরোধানের শতশত বছর পরেও অদ্যাবধি অগণিত ভক্ত মনের আশা-বাসনা নিয়ে নিত্যধাম কল্যাণী ঘোষপাড়ায় এসে ঐ হিমসাগরে স্নান করে ডালিমতলায় মানত করছে।

অনেক ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হচ্ছে এবং মায়ের জয়ধ্বণিতে চারিদিক মুখরিত হচ্ছে। হিমসাগর সরোবরটি নিত্যধাম কল্যাণী ঘোষপাড়ায় আজও বিদ্যমান।

কর্তাভজার বাইশ ফকির >>

……………..
‘সতীমা ও সত্যদর্শন’ বই থেকে সংগৃহীত

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………..
আরও পড়ুন-
কর্তাভজা ধর্মের ইতিহাস
ঠাকুর আউলচাঁদের আবির্ভাব
গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তদের বিশ্বাস
রামশরণ ও সতীমার দীক্ষা গ্রহণ
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের দশ আজ্ঞা
সতীমা কে?
শূদ্র কারা?
ঘোষপাড়ার ডালিম তলা ও হিমসাগরের মাহাত্ম্য
কর্তাভজার বাইশ ফকির
আউলচাঁদের তিরােধান
দুলালচাঁদ
সতীমায়ের উপদেশ বাণী
ঘোষপাড়ার রথযাত্রা উৎসব
সতীমার তিরােধান
কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভ

ত্রিশ ধারা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!