ভবঘুরেকথা
যশোদা মাঈ

বৈষ্ণব সাধিকা যশোদা মাঈ

উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরে ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দে জন্ম হয় যশোদামাঈ এর। বাল্যকাল থেকেই তাঁর জীবনে অঙ্কুরিত হয় সহজাত ভক্তি ও ভগবৎপ্রেম। তাঁর পিতা গগনচন্দ্র রায় ছিলেন গাজীপুরের প্রবাসী বাঙ্গালীদের মধ্যে গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব।

ধর্মপ্রাণ ও সংস্কৃতিমনা হিসেবেও তার বেশ খ্যাতি ছিল । তার বাড়িতে সেসময় প্রায়ই ধর্মসভা বসত। সে সভায় আমন্ত্রিত হতেন সাধু সজ্জনরা। ১৮৯০ সালে জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে উত্তর ভারত পরিভ্রমণকালে স্বামী বিবেকানন্দ গাজীপুরে আসেন। তিনি তাঁর বাল্যবন্ধু সতীশ মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে অবস্থান করতে থাকেন।

স্বামীজী এসেছেন শুনে গগনচন্দ্র তাঁকে পরম আগ্রহভরে নিজ বাড়িতে ধর্মসভায় সমাদর করে নিয়ে এলেন। সেদিন তেজস্বী বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের অগ্নিগর্ভ বাণী ও মধুর কণ্ঠের ধর্মসংগীত শুনে আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েন সেই ধর্মসভার সকলে।

সভাশেষে একসময় স্বামীজীর দৃষ্টি পড়ে গগনচন্দ্রের নয় বছরের বালিকা কন্যার দিকে। ফর্সা রং, সারা অঙ্গে রূপলাবণ্য ফেটে পড়ছে, আয়ত চোখদুটিতে বুদ্ধির দীপ্তি। একদৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন স্বামীজী। তা দেখে গগনচন্দ্র বললেন, স্বামীজী! এটি আমার কন্যা, নাম মণিকা। আপনি দয়া করে একে একটু আশীর্বাদ করুন।

স্বামীজী বললেন, আপনার কন্যাকে আমি আশীর্বাদ অনেক আগেই করেছি। এবার থেকে করতে হবে মাতৃরূপে অর্চনা। চমকে উঠলেন গগনচন্দ্র। প্রসন্নতার হাসি হেসে স্বামীজী বললেন, আপনার কন্যা বড় শুদ্ধসত্ত্ব। দেখার সঙ্গে সঙ্গে মনে সংকল্প জাগে একে আমি জগন্মাতা জ্ঞানে অর্চনা করব। আপনারা কুমারী পূজার আয়োজন করুন।

একথা শুনে গগনচন্দ্রের আনন্দের সীমা রইল না। পরদিন শুভলগ্নে তাঁর বাসভবনে কুমারী পূজার অনুষ্ঠান হলো। স্বামীজী ভাবাবিষ্ট অবস্থায় বালিকা মণিকার মধ্যে জগন্মাতার আরাধনা শেষ করেই ধ্যানের গভীরে ডুবে গেলেন।
ধ্যান শেষে তাঁর কন্ঠ থেকে বেরিয়ে এল, এ বালিকা সামান্য মানবী নয়। জন্মান্তরের সাত্ত্বিক সংস্কার নিয়ে এ জন্মেছে।

উত্তরকালে স্বামীজীর একথা সত্য হয়ে ওঠে। কালক্রমে তাঁর জীবনে ঘটে এক আধ্যাত্মিক রূপান্তর এবং ভারতের ভক্তসমাজে এক অসামান্য বৈষ্ণব সাধিকার আসনে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর নাম হয় যশোদা মাঈ। বারাণসী, বৃন্দাবন, আলমোড়া ও মোর্তালার উওর বৃন্দাবনে তিনি বহু সাধক ও ভক্তদের পালয়িত্রীরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

মনস্বী ও কর্মকুশলী অধ্যাপক জ্ঞানেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে মণিকার বিয়ে হয়। জ্ঞানেন্দ্রনাথ প্রথমে ছিলেন থিয়োজফি আন্দোলনের অন্যতম নায়ক। পরে ধীরে ধীরে প্রেমভক্তিরসের বৈষ্ণবীয় সাধনা ও সিদ্ধির পথে অগ্রসর হতে থাকেন। স্বামীর আধ্যাত্মিক জীবনের আদর্শ ও প্রেরণা প্রভাবিত করতে থাকে মণিকাকে।

জ্ঞানেন্দ্রনাথ লখনৌ কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তিনি ছিলেন একাধারে আদর্শ শিক্ষাবিদ, চিন্তাশীল, মনীষী ও ভাবুক। সরকারী ও বেসরকারী মহলেই তাঁর ছিল অসাধারণ প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা। স্যার হারকোর্ট বাটলার তখন সবেমাত্র লখনৌ ইউনিভার্সিটি স্থাপন করেছেন।

ভালো করে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলার জন্য সব দিক দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি‌। বাটলার সাহেব জ্ঞানেন্দ্রনাথের প্রতিভা ও জ্ঞানবিদ্যার কথা জানতেন। তাই তিনি তাঁকে একদিন বললেন, ‘এই নতুন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলারের পদ গ্রহণ করতে হবে তোমায়, সব দায়িত্বভার নিতে হবে। আমি চাই এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটির থেকেও এটিকে বড় করে তোলো।’

দৈবক্রমে সুযোগ পেয়ে গেলেন অল্পদিনের মধ্যে। সেই সময় লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জ্ঞানেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ইংল্যাণ্ডে আসেন। ঘটনাক্রমে নিকসন একদিন পরিচিত হন তাঁর সঙ্গে। নিকসনকে দেখে ও তাঁর সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগে গেল জ্ঞানেন্দ্রনাথের। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি অধ্যাপকের কাজ দিতে চাইলেন।

জ্ঞানেন্দ্রনাথ এই দায়িত্বভার গ্রহণ করে লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। শিক্ষা সংগঠনের এক বিশিষ্ট নেতারূপে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশের দিকে দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ছাড়া থিয়োজফি সোসাইটির কাজকর্মও দেখাশোনা করতে হত জ্ঞানেন্দ্রনাথকে।

মরণোত্তর জীবনের নিগূঢ় তত্ত্ব আলোচনায় দীর্ঘ সময় কাটাতেন তিনি। শিকাগোর যে বিশ্ব ধর্মসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সেই সম্মেলনেই ভারতীয় থিয়োজফিস্টদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন জ্ঞানেন্দ্রনাথ।

স্বামীর সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার শিক্ষিত সমাজে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করেন মণিকা। আধুনিক চালচলন ও রীতিনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। বেশভূষায় হালফ্যাশানেও তিনি ছিলেন অগ্রণী। লখনৌর অভিজাত শ্রেণীর মহিলাদের তিনি ছিলেন মধ্যমণি।

এই সময়ে রোনাল্ড নিকসন নামে এক ইংরেজ যুবক লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ নিয়ে আসেন। তখন তাঁর বাসভবন নির্ধারিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জ্ঞানেন্দ্রনাথের অনুরোধে তাঁর বাসভবনেই বাস করত থাকেন তিনি।

নিকসন আগে ছিলেন ইংল্যাণ্ডের রয়েল এয়ার ফোর্সের পাইলট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অন্যান্য দেশপ্রেমিকদের মত কলেজের পড়া ছেড়ে সামরিক বিভাগে যোগদান করেন‌। একদিন বম্বার প্লেনের ককপিটে পাইলট হিসেবে বসে জার্মানির উপর বোমা বর্ষণের জন্য উড়ে যান। সহসা এক অলৌকিক ভাবের আবেশে আবিষ্ট হয়ে পরেন তিনি। ক্রমে বাহ্যজ্ঞান লোপ পায় তাঁর।

যখন জ্ঞান ফিরে এল তখন দেখলেন ব্রিটিশ বিমানঘাঁটিতে সুস্থ দেহে ফিরে এসেছেন। সঙ্গীরা বলতে লাগল, আজ নিশ্চিত মৃত্যুর খবর থেকে বেঁচে এসেছ। জার্মান জঙ্গী বিমানগুলো আগে হতেই তৈরি ছিল। অনেক বোমায় তোমাদের বিমানকে ঘায়েল করেছে। তুমি কোনরকমে ছিটকে বেরিয়ে এসেছ বিপদসীমা অতিক্রম করে।

নিকসনের বিশ্বাস, তিনি যখন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন তখন এক দৈবশক্তি অর্থাৎ পরম প্রভু তাঁর বিমানটিকে নিরাপদে এনে দিয়ে রক্ষা করেছেন তাঁকে অলৌকিকভাবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই সামরিক বিভাগ ছেড়ে দিলেন তিনি। এবার থেকে দেশ বিদেশের ধর্ম সাহিত্য পাঠ অধ্যাত্ম চিন্তায় মনোনিবেশ করলেন।

এই সময়ে বারবার ভারতের কথা উদিত হত তাঁর মনে। ভারতের অধ্যাত্মসাধনার কথা, তার সাধু সন্ন্যাসীদের খুব বেশী করে ভাবতে থাকেন তিনি। তিনি স্থির করেন ভারতীয় অধ্যাত্মসাধনার পরিচর্যা গ্রহণ করার জন্য ভারতে গিয়ে বসবাস করবেন।

দৈবক্রমে সুযোগ পেয়ে গেলেন অল্পদিনের মধ্যে। সেই সময় লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জ্ঞানেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ইংল্যাণ্ডে আসেন। ঘটনাক্রমে নিকসন একদিন পরিচিত হন তাঁর সঙ্গে। নিকসনকে দেখে ও তাঁর সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগে গেল জ্ঞানেন্দ্রনাথের। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি অধ্যাপকের কাজ দিতে চাইলেন।

কিন্তু নিকসন বললেন, সন্ন্যাস নেব বলেই সংকল্প করেছি, তার অন্যথা হবে না। যশোদা মাঈ বললেন, বেশ বাবা, সন্ন্যাস নেবে নাও। কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। আমি নিজে সন্ন্যাস নিইনি, তবে কি করে তোমায় দেব? তুমি বরং বৃন্দাবনের কোন বৈষ্ণব আচার্যের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে এসো।

নিকসনও তাতে রাজী হয়ে গেলেন। তখন জ্ঞানেন্দ্রনাথের সঙ্গেই ভারতে চলে এলেন নিকসন। লখনৌ শহরে তখন তাঁর থাকার জায়গা না থাকায় তিনি জ্ঞানেন্দ্রনাথের বাসভবনেই রয়ে গেলেন। এদিকে জ্ঞানেন্দ্রনাথের স্ত্রী মণিকা তখন কৃষ্ণপ্রেম ও কৃষ্ণধ্যানের গভীরে ডুবে ছিলেন। কৃষ্ণ-কৃপার অমৃতস্পর্শে ধন্য হয়ে উঠেছে তাঁর জীবন। তিনি হয়ে উঠেছেন বৈষ্ণবসাধিকা যশোদা মাঈ।

রোনাল্ড নিকসনকে ধর্মপুত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন যশোদা মাঈ। প্রথম দিকে নিকসন ছিলেন বৌদ্ধ দর্শন ও সাধনতত্ত্বের সমর্থক এবং এ বিষয়ে বহু গ্রন্থ-অধ্যায়ন করেন তিনি। কিন্তু যশোদা মাঈএর প্রেমভক্তি, ধর্মের আবেশ ও তাঁর অলৌকিক অভিজ্ঞতার কথা শুনে পরিবর্তন ঘটল তাঁর জীবনদর্শনে।

ধর্মপুত্র নিকসনকে যশোদা মাঈ ডাকতেন গোপাল বলে। গোপালের ঈশ্বর দর্শনের ব্যাকুলতা দেখে যশোদা মাঈ আগে তাঁর অধ্যাত্ম সাধনার ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠলেন। তাঁকে বললেন, পরমপ্রাপ্তির জন্য ব্যাকুল হয়েছ ঠিক, কিন্তু বাবা তার জন্য প্রস্তুতি দরকার। এ দেশের প্রেমভক্তির সাধনা, ভাবনা চিন্তা আয়ত্ত করতে হলে এ দেশের ভাষা ও ধর্মশাস্ত্র অধিগত করতে হবে।

এই কথা শোনার পর নিকসন নূতন উদ্যমে হিন্দী, বাংলা, সংস্কৃত শিখতে লাগলেন। যশোদা মাঈ এই সময় রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, এবং ধর্মশাস্ত্রগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিকসনকে শোনাতে থাকেন। এই সব শুনে এদেশের ধর্মতত্ত্বের উপর আগ্রহ জাগে নিকসনের মধ্যে।

বিশেষ করে মহাভারত ও ভাগবতের কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা ও মাধুর্য উপলব্ধি করে তাঁকে ইষ্টরূপে ভাবতে থাকেন। এই সময় যশোদা মাঈ বৈষ্ণবীয় সাধনার নিগূঢ় তত্ত্বগুলি শিখিয়ে দিয়ে তাঁর সাধন জীবনকে উন্নততর করে তোলেন।

এই সময় নিকসন যশোদা মাঈকে ধরে বসলেন তাঁকে দীক্ষা দিতে হবে। তিনি বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করবেন। তিনি বললেন, আমার একান্ত ইচ্ছা, তুমি আমায় দীক্ষা ও সন্ন্যাস দাও। যশোদা মাঈ বললেন, সংসার আশ্রমে থেকে সাধন ভজন করছ, এই ভাল। আবার সন্ন্যাস কেন? তুমি অভিজাত ইংরেজ ঘরের ছেলে, সুপণ্ডিত, কর্মকুশল। আর কিছুদিন পরে তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হবে।

কিন্তু নিকসন বললেন, সন্ন্যাস নেব বলেই সংকল্প করেছি, তার অন্যথা হবে না। যশোদা মাঈ বললেন, বেশ বাবা, সন্ন্যাস নেবে নাও। কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। আমি নিজে সন্ন্যাস নিইনি, তবে কি করে তোমায় দেব? তুমি বরং বৃন্দাবনের কোন বৈষ্ণব আচার্যের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে এসো।

পূণ্যভূমি বারাণসীর পবিত্র পরিবেশে যশোদা মাঈ-এর ধর্মসাধনার পক্ষে বিশেষ অনুকূল হয়ে ওঠে। তাঁদের বাসভবনটি ছিল লাগোয়ার এক প্রান্তে গঙ্গার ধারে রাধামার্গে। সেখানে সাধু-তপস্বীদের প্রায়ই আনাগোনা চলত। এই সময় ত্যাগ, তিতিক্ষা, কৃচ্ছসাধন ও সাধন ভজনের মধ্যে দিয়ে বৈষ্ণবীয় সাধনার স্তরগুলিকে একে একে অতিক্রম করতে চলতে থাকেন যশোদা মাঈ। এমন সময় অতিন্দ্রীয় দর্শনের শক্তি ও অলৌকিক বিভূতি লাভ করেন তিনি‌।

নিকসন তাতে সম্মত নন। বললেন, তোমার কাছেই পেয়েছি কৃষ্ণভক্তির আস্বাদন। এ জীবনে যদি সন্ন্যাস নিতে হয় তো তোমার কাছেই নেব। নিকসন অনেক ভেবে দেখেছেন, যশোদা মাঈ ছাড়া জীবনে তাঁর আর কোন সত্যিকারের আশ্রয় নেই। শুধু যশোদা মাঈ-এর মুখের দিকে চেয়েই তিনি তাঁর গৃহ, পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি সব ত্যাগ করেছেন।

এই সমস্যার মধ্যে যশোদা মাঈ একদিন ভাবাবিষ্ট হয়ে কৃষ্ণভক্ত রাধারাণীর কাছে নির্দেশ প্রার্থনা করলেন। দিব্যদর্শনের ভিতর দিয়ে রাধারাণী নির্দেশ দান করলেন। এরপর যশোদা মাঈ নিকসনকে বললেন, গোপাল! রাধারাণীর অনুমতি আমি পেয়েছি। আমি তোমাকে দীক্ষা দেব। তবে আগে আমি বৃন্দাবনে গিয়ে নিজে সন্ন্যাস নেব, তারপর ফিরে এসে তোমাকে দীক্ষা দেব।

বৃন্দাবনে গিয়ে যশোদা মাঈ রামকৃষ্ণদাস গোস্বামী নামে এক সুপ্রসিদ্ধ বৈষ্ণব সাধক ও ব্রজধামের বৈষ্ণব সমাজের মোহন্তের কাছে বৈষ্ণবীয় সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন। বৃন্দাবন থেকে ফিরে এসে নিকসনকে সন্ন্যাস দীক্ষা দান করলেন। নূতন নামকরণ হলো কৃষ্ণপ্রেম। সন্ন্যাস দীক্ষা দেবার সময় দুটি শর্ত কৃষ্ণপ্রেমকে দিয়ে স্বীকার করিয়ে নেন যশোদা মাঈ।

যশোদা মাঈ বললেন, গোপাল! প্রথমত: ঈশ্বর দর্শন হোক বা না হোক, এই গুরুপরম্পরা ও প্রেমভক্তির সাধনার ধারা জীবনে ত্যাগ করবে না। আর দ্বিতীয়ত: সাধনার পথে অগ্রসর হতে হতে অলৌকিক দর্শনের জন্য তুমি ক্ষুব্ধ হবে না। এ বিষয়ে সম্পূর্ণ মোহমুক্ত থাকতে হবে তোমায়। এই দুটি শর্ত সারাজীবন রক্ষা করে চলেন কৃষ্ণপ্রেম।

এই সময় ভারত বিখ্যাত নেতা পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যজীর আহ্বানে জ্ঞানেন্দ্রনাথকে বারাণসী হিন্দু ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলারের পদ গ্রহণ করতে হয়। ফলে লখনৌ ত্যাগ করে তাঁকে আসতে হয় বারাণসীতে। স্বামীর সঙ্গে যশোদা মাঈও চলে আসেন বারাণসীতে।

পূণ্যভূমি বারাণসীর পবিত্র পরিবেশে যশোদা মাঈ-এর ধর্মসাধনার পক্ষে বিশেষ অনুকূল হয়ে ওঠে। তাঁদের বাসভবনটি ছিল লাগোয়ার এক প্রান্তে গঙ্গার ধারে রাধামার্গে। সেখানে সাধু-তপস্বীদের প্রায়ই আনাগোনা চলত। এই সময় ত্যাগ, তিতিক্ষা, কৃচ্ছসাধন ও সাধন ভজনের মধ্যে দিয়ে বৈষ্ণবীয় সাধনার স্তরগুলিকে একে একে অতিক্রম করতে চলতে থাকেন যশোদা মাঈ। এমন সময় অতিন্দ্রীয় দর্শনের শক্তি ও অলৌকিক বিভূতি লাভ করেন তিনি‌।

ভারতে সেকালে থিওজফিস্ট আন্দোলনের প্রধান নেত্রী এ্যানী বেসান্ত বারাণসীতে তাঁর কর্মকেন্দ্র স্থাপন করেন। এখানে থেকে হিন্দুধর্মের উন্নতির জন্য থিওজফিস্ট মতবাদের প্রচারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি। মনীষী ও সাধক জ্ঞানেন্দ্রনাথের সঙ্গে এ্যানী বেসান্তের পরিচয় ছিল দীর্ঘদিনের।

জ্ঞানেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক জ্ঞানের গভীরতা অনুপ্রাণিত করতো এ্যানী বেসান্তকে। আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক জীবনের নানা সমস্যার সমাধানের জন্য জ্ঞানেন্দ্রনাথের উপদেশ মেনে চলতেন তিনি। শ্রদ্ধা করতেন যশোদা মাঈকেও।

যশোদা মাঈ-এর আদেশমত এই সুশিক্ষিত ইংরেজ যুবক দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে উপস্থিত হতেন, রাধাকৃষ্ণের জয়ধ্বনি দিতেন আর গৃহস্থেরা প্রশংস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত তাঁর দিকে। আলমোড়া থেকে চোদ্দ মাইল দূরে যোগেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের কাছে মের্তোলা পাহাড়ের সামনে প্রসারিত আছে পূণ্যভূমি কৈলাসের দুর্গম পথ।

যশোদা মাঈ-এর সাধন ঐশ্বর্যের খ্যাতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে দলে দলে বহু ভক্ত ও মুমুক্ষু ক্রমে ভিড় করতে থাকে। এ্যানী বেসান্তও রাধামাধব চক্রবর্তীদের বাড়িতে প্রায়ই আসতেন‌। যশোদা মাঈ-এর আধ্যাত্ম সাধনা ও অলৌকিক অভিজ্ঞতার পরিচয় পেয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধান্বিত ও আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন ক্রমশ।

একদিন বেসান্ত যশোদা মাঈকে বললেন, আমি তোমাকে জীবনের গুরুরূপে পেতে চাই। আমি দীক্ষা নিতে চাই তোমার কাছে।

কিন্তু এ্যানী বেসান্ত তখন তাঁর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের কাজে খুবই ব্যস্ত ছিলেন‌। এই জন্য যশোদা মাঈ এ্যানী বেসান্তকে বুঝিয়ে নিবৃত্ত করলেন। তিনি বললেন, শিষ্যকে গুরুর প্রতি প্রাণময় সমর্পণ করে তাঁর নির্দেশিত পথে অনন্য নিষ্ঠায় চলতে হবে। গুরু সেই গুরু সেই শিষ্যকেই দীক্ষা দেবেন যার আত্মিক উন্নয়নের সব ভার গ্রহণ করতে তিনি সমর্থ।

সন্ন্যাস গ্রহণের পর বারাণসীতে কিছুকাল থাকার পর সাধনার সুবিধার জন্য হিমালয়ের নির্জন কোলে অবস্থিত আলমোড়ায় চলে গেলেন যশোদা মাঈ। সঙ্গে গেলেন তাঁর পুত্র প্রতিম শিষ্য কৃষ্ণপ্রেম ও আরো কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ভক্ত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুমায়নের এই পার্বত্য অঞ্চলে উত্তরে, পূর্ব ও পশ্চিমে যেদিকেই তাকানো যায় শুধু দিগন্তজোড়া পাহাড়ের ঢেউ। দূরে আকাশকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে নন্দাদেবী, ত্রিশূল প্রভৃতি উত্তুঙ্গ তুষারশৃঙ্গ।

এই নিভৃত অঞ্চলে এক স্থায়ী সাধন আশ্রম গড়ে তুললেন যশোদা মাঈ। তারপর একদিন তিনি কৃষ্ণপ্রেমকে ডেকে বললেন, গোপাল! কৃষ্ণ আরাধনার জন্য তুমি বৈরাগীর জীবন বেছে নিয়েছ, এবার বৈরাগ্যময় তপস্যা শুরু করে দাও। এখন থেকে লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা চেয়ে আনো। সেই ভিক্ষার অন্নে ইষ্টসেবা ও নিজের উদরপূর্তি করো। এই ভিক্ষাবৃত্তিতে অহংজ্ঞান দূর হয় আর প্রকৃত কৃষ্ণপ্রেম স্ফূরিত হয়।

যশোদা মাঈ-এর আদেশমত এই সুশিক্ষিত ইংরেজ যুবক দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে উপস্থিত হতেন, রাধাকৃষ্ণের জয়ধ্বনি দিতেন আর গৃহস্থেরা প্রশংস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত তাঁর দিকে। আলমোড়া থেকে চোদ্দ মাইল দূরে যোগেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের কাছে মের্তোলা পাহাড়ের সামনে প্রসারিত আছে পূণ্যভূমি কৈলাসের দুর্গম পথ।

এখানকার নৈসর্গিক শোভা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন যশোদা মাঈ। এই মের্তোলা পাহাড়টিতেই তিনি তাঁর শেষ পর্যায়ের সাধনস্থানরূপে নির্বাচন করলেন। তারপর একটি ছোট্ট আশ্রম গড়ে তুললেন। সেখানে স্থাপন করলেন রাধা ও কৃষ্ণের দুটি বিগ্ৰহ। মের্তোলার এই সাধনকেন্দ্রটির নাম করলেন উত্তর বৃন্দাবন।

বিগ্ৰহসেবা, বৈরাগ্যসাধন ও ধ্যান জপের উপর বরাবরই বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করতেন যশোদা মাঈ। কঠোরভাবে শিষ্যদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ন্ত্রিত করতেন‌। তাঁর সেবা পদ্ধতি হাতেকলমে শিখিয়ে দিতেন তিনি তাঁর ভক্তদের।

কৃষ্ণপ্রেম আরও বলেন, ইষ্টকে ব্যাকুলভাবে ধরতে হয় দুহাত দিয়ে। একহাত দিয়ে নয়। একহাতে সংসার আর একহাতে ইষ্ট- এতে কিন্তূ হবে না। এই দুহাত মানে পিছুটান না রেখে ইষ্টসেবা ও ইষ্টভজন করে যাওয়া। সর্বস্ব ছাড়লেই সর্বময় ইষ্টদেব এগিয়ে আসবেন।

শেষ রাতে সকলকেই কুমায়ুনের প্রবল শীতেও বিছানা থেকে উঠতে হত। ঠাকুরের শয্যা, উত্থান, মঙ্গলারতি, পূজা, ভোগনিবেদন থেকে শুরু করে বিগ্রহের শয়ান দেওয়া পর্যন্ত সারাদিন সব সেবাকার্য সাধুদের নিখুঁতভাবে করতে হত। ফুলতলা, চন্দন ঘষা, রান্নাকরা, বাসনমাজা, ঝাঁট দেওয়া প্রভৃতি সব কাজই শিষ্যদের নিজের হাতে করতে হত।

আশ্রম সংলগ্ন পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ছিল চাষের ক্ষেত। সেখানে অতি কষ্টে জল সেচ করে ধান, আলু, বেগুন, ভিণ্ডির চাষ করা হত। সাধুরা এই সব ফসল তুলে এনে রান্না করে ভোগপ্রসাদ তৈরি করত।

ভোগ ও আরতি শেষে অতিথি আপ্যায়ন ও দিন দুঃখীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করার পর সাধুরা প্রসাদ গ্রহণ করত। বিগ্রহসেবা ও সারাদিন রাতের কাজ শেষ করে তারা নিবিষ্ট হত আপন সাধন ভজন ও ইষ্টধ্যানে।

তাঁর গুরুর কাছে যে ভজনতত্ত্ব শেখেন কৃষ্ণপ্রেম তার কথাটি সাধারণের উপযোগী করে ভক্তদের কাছে বলেন। মূল কথাটি হচ্ছে কৃষ্ণবিগ্রহের সেবা। দিনরাত সেবা ও চিন্তার মধ্য দিয়ে আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমার যেটুকু হয়েছে মায়ের কৃপাতেই তা সম্ভব হয়েছে।

কৃষ্ণপ্রেম আরও বলেন, ইষ্টকে ব্যাকুলভাবে ধরতে হয় দুহাত দিয়ে। একহাত দিয়ে নয়। একহাতে সংসার আর একহাতে ইষ্ট- এতে কিন্তূ হবে না। এই দুহাত মানে পিছুটান না রেখে ইষ্টসেবা ও ইষ্টভজন করে যাওয়া। সর্বস্ব ছাড়লেই সর্বময় ইষ্টদেব এগিয়ে আসবেন।

মের্তোলার উত্তর-বৃন্দাবনের শ্রী রাধারাণী ও শ্রীরাধারমণের বিগ্রহ দুটি যশোদা মাঈ-এর তপস্যায় জাগ্রত হয়ে ওঠে। এই জাগ্রত বিগ্রহের নানা অলৌকিক কাহিনীও শোনা যায়‌।

একবার প্রসিদ্ধ সাধক ও সঙ্গীতশিল্পী দিলীপকুমার রায় মের্তোলায় আসেন। পূজার শেষে বিগ্রহের সামনে তাঁর ভজন শুরু হয়। যশোদা মাঈ তখন দারুণ অসুস্থ অবস্থায় পাশের ঘরে রোগশয্যায় শুয়ে ছিলেন।

দিলীপকুমারের ভজনের সুর ও বাণী শুনে ভাবাবিষ্ট হয়ে পরেন যশোদা মাঈ। সহসা এক অলৌকিক দৃশ্য দেখে এক দিব্য আনন্দের উত্তেজনায় আলোড়িত হয়ে ওঠে তাঁর সমগ্র সত্ত্বা। তিনি দেখলেন, ঘরে দিলীপকুমারের পিছনে দাঁড়িয়ে প্রসন্ন মুখে গান শুনছেন শ্রীকৃষ্ণ।

বলে দিতেন, অতিথি অভ্যাগতদের সেবার যেন কোন ত্রুটি না হয়। দীর্ঘকাল ইষ্টদেব ও অসংখ্য মানববিগ্রহের সেবা করার পর যশোদা মাঈ-এর জীবনে ঘনিয়ে আসে ইহলীলা সংবরণের দিন। কিন্তু বিকার নেই দেহে, নেই কোন রোগের যন্ত্রণা। চোখে মুখে এক পরম আত্মিক প্রশান্তির ছাপ। নিরুচ্ছ্বাস নিরুচ্চার এক শান্ত নদী যেন সব গতিবেগ সংবরণ করে ঢলে পড়তে চাইছে সমুদ্রের কোলে।

যশোদা মাঈ তখন রোগ ভোগ করে শয্যাগত হয়ে ছিলেন। চলার শক্তি ছিল না। কিন্তু এই অলৌকিক দৃশ্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অবলীলাক্রমে মন্দিরে গিয়ে বিগ্রহের সামনে বসে ধ্যানস্থ হয়ে পড়লেন‌। কিছুক্ষণ পরে সেবকরা যশোদা মাঈ-এর শোবার ঘরে গিয়ে দেখলেন বিছানায় নেই।

চলৎশক্তিহীন অবস্থায় কোথায় কি করে গেলেন তা কেও ভেবে পেল না। খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে অবশেষে পূজার ঘরে তাঁকে পাওয়া গেল। কিন্তু দেখা গেল, তাঁর দেহে কোন রোগ নেই। এক দিব্য জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে তাঁর চোখমুখ।

পরে যশোদা মাঈ দিলীপকুমারকে বললেন, দিলীপ, তোমরা কেউ দেখনি, আমি দেখেছি আমার লীলাকর কৃষ্ণ দাঁড়িয়ে তোমার গান শুনছিলেন। যশোদা মাঈ-এর এর সবদিকে ছিল সজাগ দৃষ্টি। প্রভু বালক গোপালজীর সেবা ও পূজায় তাঁর ছিল ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও ব্যাকুলতা, তেমনি বাইরের ব্যবহারিক জীবনে তাঁর সেবক ও ধর্মপুত্রের জন্য ছিল সমান ব্যাকুলতা।

শিষ্যদের কাছে তিনি ছিলেন সবার মা। মমতাময়ী মাতৃ রূপিণী যশোদা মাঈ-এর কাছে তাঁর প্রতিটি শিষ্য ছিল এক একটি গোপাল। এদের সংখ্যা ছিল প্রায় পঞ্চাশটি। এদের মধ্যে জাতি, ধর্ম বা বর্ণের কোন বাছ-বিচার ছিল না। তাঁর ভক্ত শিষ্যদের মধ্যে ছিল হিন্দু, মুসলমান, খ্রীস্টান, ধনী, গরিব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব রকমের লোক।

যশোদা মাঈ-এর সিদ্ধির কথা শুনে আনন্দময়ী মা একবার মের্তোলার আশ্রমে দর্শন করতে যান যশোদা মাঈকে। গিয়েই প্রেমভরে জড়িয়ে ধরেন তাঁকে আবেগের সঙ্গে।

আশ্রমের পাশেই ছিল কৈলাসের দুর্গম পথ। কিছু দূরে ছিল যোগেশ্বর মহাদেবের মন্দির। এ পথে বহু তীর্থযাত্রী আসা যাওয়া করত‌। অনেক তীর্থযাত্রী যাবার পথে এই আশ্রমে এসে উঠতেন। অনেক সাধু সন্ন্যাসীও আসতেন প্রায়ই। যশোদা মাঈ সকলের সেবা ও পরিচর্যা করার নির্দেশ দিতেন আশ্রমের শিষ্যদের।

বলে দিতেন, অতিথি অভ্যাগতদের সেবার যেন কোন ত্রুটি না হয়। দীর্ঘকাল ইষ্টদেব ও অসংখ্য মানববিগ্রহের সেবা করার পর যশোদা মাঈ-এর জীবনে ঘনিয়ে আসে ইহলীলা সংবরণের দিন। কিন্তু বিকার নেই দেহে, নেই কোন রোগের যন্ত্রণা। চোখে মুখে এক পরম আত্মিক প্রশান্তির ছাপ। নিরুচ্ছ্বাস নিরুচ্চার এক শান্ত নদী যেন সব গতিবেগ সংবরণ করে ঢলে পড়তে চাইছে সমুদ্রের কোলে।

অবশেষে মহাপ্রয়াণের দিনটি এসে পরে। সিদ্ধ সাধিকা সকলের প্রিয় ও পরম পূজনীয়া যশোদা মাঈ ধ্যানাবিষ্ট অবস্থায় ধীরে ধীরে প্রবেশ করলেন নিত্যলীলায়।

………………………………….
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে :
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………..
আরো পড়ুন:
মা সারদা দেবী
প্রজ্ঞাপারমিতা শ্রীশ্রীমা সারদা
বহুরূপিনী বিশ্বজননী সারদামণি
মা মনোমোহিনী
শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে সপ্তসাধিকা
মাতৃময়ী তিনরূপ
মা আনন্দময়ী
আনন্দময়ী মায়ের কথা
ভারত উপাসিকা নিবেদিতা
রাসমণি
নিরাহারা যোগিনী মায়ের সন্ধানে
পূণ্যশীলা মাতা কাশীমণি দেবীর সাক্ষাৎকার
আনন্দময়ী মা
মা মারিয়াম :: পর্ব-১
মা মারিয়াম :: পর্ব-২
মা মারিয়াম :: পর্ব-৩
মা মারিয়াম :: পর্ব-৪
মীরার কথা
অলৌকিক চরিত্র মাদার তেরেসা
মা আনন্দময়ীর কথা
বৈষ্ণব সাধিকা যশোদা মাঈ
আম্মার সঙ্গলাভ
শ্রীশ্রী সাধিকা মাতা
জগৎ জননী ফাতেমা-১
জগৎ জননী ফাতেমা-২
জগৎ জননী ফাতেমা-৩
জগৎ জননী ফাতেমা-৪
জগৎ জননী ফাতেমা-৫
জগৎ জননী ফাতেমা-৬
জগৎ জননী ফাতেমা-৭
জগৎ জননী ফাতেমা-৮
জগৎ জননী ফাতেমা-৯
জগৎ জননী ফাতেমা-১০
জগৎ জননী ফাতেমা-১১
জগৎ জননী ফাতেমা-১২

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!