কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভ
১. প্রবর্তক।
২. বীজমন্ত্র।
৩. ধারক।
৪. বাহক।
৫. দর্শন।
১. ধর্মের প্রবর্তক
ঠাকুর আউলচাঁদ মহাপ্রভু। ঠাকুর আউলচাঁদ ঈশ্বরের অবতার স্বরুপ, কর্তাভজা সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণের এই বিশ্বাসে অটল থাকা।
আদ্যের অনাদি সে আপনি এসেছে,
কাঙাল দেখে সেই গুণমনি আপনি কাঙ্গাল হয়েছে।
সেই হরি এই জীবের ভাগ্যে আপনি সদয় হয়েছে।।
(ভাবেরগীত, গীত নং – ৯০, কলি- ২)
২. বীজমন্ত্র-সত্যনাম
‘দীক্ষামন্ত্র’ একমাত্র সত্যনামের মাহাত্ম্যেই জীবের পারমার্থিক মুক্তি লাভ হবে এই বিশ্বাসে অটল থাকা।
৩. ধর্মের ধারক
ঠাকুর আউলচাঁদ মহাপ্রভু প্রবর্তিত কর্তাভজা সত্যধর্ম বা সত্যনাম মহামন্ত্রে সর্বপ্রথম সতীমা ও রামশরণ দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন, তাই সতীমা ও রামশরণই কর্তাভজা ধর্মের ধারক। ঠাকুর আউলচাঁদ সতীমাকে কর্তাভজা ধর্ম প্রচারের আজ্ঞা দিয়েছিলেন।
সতীমার মাধ্যমেই কর্তাভজা ধর্ম প্রচার- প্রসার লাভ করেছিল, তাই সতীমা কর্তাভজা সম্প্রদায়ের পরমগুরু এবং পরম পূজনীয়। সত্যনামে দীক্ষিত কর্তাভজা সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণ সতীমা ও রামশরণের প্রতি অবশ্যই পূর্ণ শ্রদ্ধা-ভক্তি নিবেদন করবে।
৪. ধর্মের বাহক
দীক্ষাগুরু- ‘মহাশয়’ সতীমায়ের তিরােধানের পর- সত্যনামে দীক্ষিত জ্ঞানী-গুণী-সদাচারী যে সকল মহৎগণ-সত্যনামে দীক্ষা দানের মাধ্যমে ভক্তগণের মাঝে সত্যধারা অদ্যাবধি প্রবহমান রেখেছে তারাই কর্তাভজা ধর্মের বাহক। ঐ সকল মহৎগণ ভক্তগণের কাছে মহাশয় বা গুরুদেব নামে পরিচিত। সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তগণ মহাশয়ের প্রতি অবশ্যই পূর্ণ শ্রদ্ধা-ভক্তি, নিবেদন করবে।
৫. ধর্মের দর্শন
পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ ঠাকুর দুলালচাঁদ (লালশশী) কর্তৃক রচিত পবিত্র ‘ভাবেরগীত’এর মাধ্যমে ধর্মীয় নিতি-আদর্শ, বিধি-নিষেধসহ যাবতীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাই পবিত্র ‘ভাবেরগীত’ কর্তাভজা ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বা দর্শন। সত্যনামে দীক্ষিত ভক্তগণের ভাবেরগীতের যাবতীয় উপদেশ দিকনির্দেশনা যথাযথ ভাবে পালন করা একান্ত কর্তব্য। যাদের কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভের উপর পূর্ণশ্রদ্ধা-ভক্তি-বিশ্বাস আছে তারা-ই কর্তাভজা।
কর্তাভজা ধর্মের- মূল নীতি-
দশ আজ্ঞা
১. সদা সত্য কথা বলিবে।
২. কদাচ মিথ্যা বলিবে না।
৩, হিংসা করিবে না।
৪. উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ নিষিদ্ধ।
৫, চুরি করিবে না।
৬. ব্যভিচারী করিবে না।
৭, ডিম-মাংস ভক্ষণ নিসিদ্ধ।
৮. মাদক সেবন নিষিদ্ধ।
৯, অহংকার করা না হয়।
১০. মানুষই ঠাকুর জানিব, (সহজ ভাব)।
কর্তাভজা ধর্মের আদর্শ
১. একেশ্বরবাদ।
২. গুরুবাদ।
৩. অসাম্প্রদায়িকতা।
৪. আধ্যাত্মিকতা।
৫. আমিত্ব বর্জন।
১. একেশ্বরবাদ-
বহুদেবতার পুঁজা অর্চণার পরিবর্তে এক জগৎকর্তার ভজনা করা।
আমি একলা একেশ্বর দোসর তো কেউ নাই,
পার করি বে-ওজরি যে জনারে পাই।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ২৭৬)
যদি আপন কুশল চাও,
সৃজন করেছে যে তার-ই গুণগাও।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ৪১৭)
পাঁচ ভাবে ভাবিয়ে ভাবি কেমনে হইবে পার।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ৪১২)
২. গুরুবাদ-
বৈষম্য মূলক বংশগত ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তে গুণগত ও কর্মের ভিত্তিতে গুরুবাদী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
ছত্রিশ জাতি চার বর্ণ কারু খান না তিনি,
বর্ণ মধ্যে কোন বর্ণ তা শুনি হন মানুষে নিশানি,
যে তার হুকুমে মকাম করে স্বকাম করে ত্যাগ,
তার-ই হন তার-ই সেবা লন তাতেই অনুরাগ।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ৪২১)
৩. অসাম্প্রদায়িকতা-
জন্মসূত্র ধরে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না করা এবং সম্প্রদাযের ভিত্তিতে শরীরে কোন চিহ্ন ধারণ না করা।
আছে মানুষে মানুষে যার ভেদাভেদ জ্ঞান,
সে রাজ্যে গমনে তাঁর মিলবে না সন্ধান।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ৪২১)
যত ভেক ভিখারি আখড়াধারী এদের কর্ম নয়,
সহজ দেশের করণ কারণ দেশ আলাদা হয়,
ভাইরে লোকাচারে দেশাচারে কখনও সে ফেরে না।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ৪১৬)
৪. আধ্যাত্মিকতা
ধর্মের বহিরঙ্গ বা তামসিকতাকে বর্জন করে আধ্যাত্মিকতা বা সাত্ত্বিক ভাব গ্রহণ করা।
কেউ এই জলধির অবধি চাও যদি দেখিতে,
তার ঠিকানা আর কোথাও পাবেনা,
তা দেখতে হয় আপনাতে।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ২৭২)
৫. আমিত্ব বর্জন
মন থেকে সব ধরনের অহংকার বর্জন করে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে পরমাত্মা রুপে ঈশ্বর বিরাজমান তাই মানুষের মাঝেই ঈশ্বর দর্শন করা।
তুমি আমি ছেড়ে ভজ তুমি, তবে কে আমি,
তুমিই সর্বভূতে। মর্মটি হবে তার বুঝিতে।।
(ভাবেরগীত, গীত নং- ৪২১)
……………..
‘সতীমা ও সত্যদর্শন’ বই থেকে সংগৃহীত
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………..
আরও পড়ুন-
কর্তাভজা ধর্মের ইতিহাস
ঠাকুর আউলচাঁদের আবির্ভাব
গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত ভক্তদের বিশ্বাস
রামশরণ ও সতীমার দীক্ষা গ্রহণ
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের দশ আজ্ঞা
সতীমা কে?
শূদ্র কারা?
ঘোষপাড়ার ডালিম তলা ও হিমসাগরের মাহাত্ম্য
কর্তাভজার বাইশ ফকির
আউলচাঁদের তিরােধান
দুলালচাঁদ
সতীমায়ের উপদেশ বাণী
ঘোষপাড়ার রথযাত্রা উৎসব
সতীমার তিরােধান
কর্তাভজা ধর্মের মূলস্তম্ভ
ত্রিশ ধারা