মনের স্তরবিন্যাস
-রব নেওয়াজ আল্ গওহার
মনের সংজ্ঞা- জীবের ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ও অতীন্দ্রিয় অনুভূতির প্রকৃতিই মন।
চেতনাগত দিক থেকে মন তিনটি স্তরে সজ্জিত। যথা-
১. সাধারণ চেতন-স্তর।
২. অতিচেতন বা অবচেতন-স্তর।
৩. মহাচেতন-স্তর।
১. সাধারণ চেতন-স্তর:
জীবের জাগ্রত অবস্থায় ইন্দ্রীয়দ্বার দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশকৃত তথ্যাবলীর সমন্বিত চেতনার স্তর হলো সাধারণ চেতন-স্তর। এটি মনের উপরিভাগের স্তরবিশেষ। জাগ্রত ও স্বজ্ঞাত অবস্থায় সবসময় এ স্তরে বিরাজ করে মন।
সুন্দর কিছু দেখে আকৃষ্ট হওয়া, অসুন্দর কিছু দেখে ঘৃণাবোধ তৈরি হওয়া, সুগন্ধ কিংবা দুর্গন্ধে ভালোলাগা বা খারাপলাগা, শব্দে আনন্দ বা বিরক্তি, স্পর্শে বস্তুর ধরণ সম্পর্কে অবগত হওয়া, স্বাদে মিষ্ট বা তিক্ততার অনুভূতি এসবই মনের সাধারণ চেতন-স্তরের অনুভূতি।
২. অতিচেতন বা অবচেতন-স্তর:
এটি মনের মধ্য বা স্বল্পগভীর স্তর। নিদ্রিত কিংবা অর্ধনিদ্রিত অবস্থায় জীব এ স্তরে বিরাজ করে। স্বপ্নদেখা, ঘুমন্ত অবস্থায় প্রলাপ, প্রচণ্ড জ্বরে প্রলাপ, তন্ময়তা এ স্তরে সংঘটিত হয়। অনিচ্ছাকৃত কাশি বা হাঁচি এ স্তরের চেতনা দ্বারা ঘটে থাকে।
মানসিক ভারসাম্যহীন কিংবা উন্মাদ প্রায় সবসময় এ স্তরে বিরাজ করে। বস্তুত এ স্তরটি সাধারণ চেতন-স্তরেরই একটি নেপথ্য বা রোমন্থিত অবস্থা, যা বাস্তবতার নিরিখে অলীক বলে মনে হয়।
৩. মহাচেতন-স্তর:
এ স্তরটি মানুষ ব্যতিত অন্যকোনো প্রাণীর বেলায় দেখা যায় না। তবে সব মানুষের পক্ষে এ স্তরে প্রবেশ সম্ভব হয় না। মহাচেতন-স্তরে আরোহী মানুষ পৃথিবীতে একেবারেই বিরল। এ স্তরটিতে যাঁরা প্রবেশ করেন তাঁরা অতীন্দ্রিয়বাদী হয়ে ওঠেন। কারণ এটি অত্যন্ত সুগভীর স্তর। তাই এ-কে পরম-স্তরও বলা যায়।
দায়েমি সালাত, জিকিরে ক্বলব, মোরাক্কাবা, প্রাণায়াম বা দমসাধনা, বিভিন্ন প্রকার যোগ-যেমন, প্রেমযোগ, ভক্তিযোগ, ক্রিয়াযোগ, কর্মযোগ প্রভৃতি হলো এ স্তরে পৌঁছার উপায়। তবে, মহাচেতন-স্তরে আরোহনকারী কোনো আত্মজ্ঞানী মহাপুরুষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এ স্তরে পৌঁছা যায় না।
এটি এমন এক বিষ্ময়কর স্তর যা সাধারণ মানুষের পক্ষে অবিশ্বাস্য ও রহস্যপূর্ণ মনে হয়। এ স্তরে উন্নীত মহাপুরুষগণ মহাজগতের অজানা তথ্য সম্পর্কে অবগত হন। তাঁদের মাধ্যমে তাই অলৌকিক ঘটনার অবতারণা হয়। যা দেখে সাধারণ লোক তাঁদের সান্নিধ্যে ভীড় জমায়। অনেকে তাঁদের আশির্বাদে দৈনন্দিন অসাধ্য বিষয়ের সমাধান পেয়ে থাকেন।
জগৎবিখ্যাত এসব দিব্যজ্ঞানীর কয়েকটি উদাহরণ- যীশু, শ্রীকৃষ্ণ, গৌতম, মোহাম্মদ (স), মাওলা আলী (আ), ওয়ায়েস করনী, হোসাইন ইবনে আলী, জাফর সাদিক, আব্দুল কাদের জিলানী, খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী, হজরত শাহ্ জালাল, শাহ সুলতান কমর উদ্দীন, শামস তাবরিজ, জালাল উদ্দীন রুমি, লোকনাথ ব্রহ্মচারী, রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, রিয়াজ আহমেদ গওহার শাহী প্রমুখ।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………..
আরো পড়ুন:
মাই ডিভাইন জার্নি : এক :: মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার
মাই ডিভাইন জার্নি : দুই :: কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়
মাই ডিভাইন জার্নি : তিন :: কোন মানুষের বাস কোন দলে
মাই ডিভাইন জার্নি : চার :: গুরু পদে মতি আমার কৈ হল
মাই ডিভাইন জার্নি : পাঁচ :: পাপীর ভাগ্যে এমন দিন কি আর হবে রে
মাই ডিভাইন জার্নি : ছয় :: সোনার মানুষ ভাসছে রসে
মাই ডিভাইন জার্নি : সাত :: ডুবে দেখ দেখি মন কীরূপ লীলাময়
মাই ডিভাইন জার্নি : আট :: আর কি হবে এমন জনম বসবো সাধুর মেলে
মাই ডিভাইন জার্নি : নয় :: কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি : দশ :: যে নাম স্মরণে যাবে জঠর যন্ত্রণা
মাই ডিভাইন জার্নি : এগারো :: ত্বরাও গুরু নিজগুণে
মাই ডিভাইন জার্নি : বারো :: তোমার দয়া বিনে চরণ সাধবো কি মতে
মাই ডিভাইন জার্নি : তেরো :: দাসের যোগ্য নই চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি :চৌদ্দ :: ভক্তি দাও হে যেন চরণ পাই
মাই ডিভাইন জার্নি: পনের:: ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই
মাই ডিভাইন জার্নি : ষোল:: ধর মানুষ রূপ নেহারে
মাই ডিভাইন জার্নি : সতের:: গুরুপদে ভক্তিহীন হয়ে
মাই ডিভাইন জার্নি : আঠার:: রাখিলেন সাঁই কূপজল করে
মাই ডিভাইন জার্নি :উনিশ :: আমি দাসের দাস যোগ্য নই
মাই ডিভাইন জার্নি : বিশ :: কোন মানুষের করি ভজনা
মাই ডিভাইন জার্নি : একুশ :: এসব দেখি কানার হাটবাজার