শ্রীমৎ মাতান চাঁদ গোস্বামী
শ্রীমৎ মাতান চাঁদ গোস্বামী ১২৮৩ বঙ্গাব্দে চর-কাশিমপুর আশ্রমে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি পিতৃহারা হন। স্বামীকে হারিয়েও তার মা ভেঙে পরেন নি। একলা হাতেই বিশাল শিষ্যমহল, বৃহৎ আশ্রমের সেবা-কার্য ও মহোৎসবাদি যথাযথ পালনের পাশাপাশি পুত্রকে উপযুক্ত শিক্ষা বিধানের ব্যবস্থা করেন।
তিনি ছিলেন অতিশয় বুদ্ধিমতি, আত্মনির্ভরশীল, তদ্গতাচিত্তা এবং সহৃদয়া। মাতান চাঁদ স্থানীয় পাঠশালায় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পাঠশালার পাঠ শেষ করে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য অধ্যাপকের টোলে অধ্যয়ন শুরু করেন। এরপর ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত গোহালা নিবাসী স্বর্গীয় কালিচরণ তর্করত্ন মহাশয়ের টোলে কিছুদিন পাঠাভ্যাস করেন।
এরপর নবদ্বীপ যেয়ে সেখানে বৈষ্ণব স্মৃতি ও দর্শনাদি অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের আদ্যোপান্ত কণ্ঠস্থ করে ফেলেন অল্পদিনেই। এছাড়াও হরি ভক্তি বিলাস ও বহু বৈষ্ণবশাস্ত্রে অধিকারী ছিলেন তিনি।
চর-কাশিমপুর বড় আখড়া আশ্রমস্থিত পুরাতন অট্টালিকার আংশিক সংস্কার, নূতন দালান প্রস্তুত, পুষ্পোদ্যান, নানাবিধ ফল বাগান সাজানো প্রভৃতি আশ্রমের অনেক উৎকর্ষ সাধন করিয়াছেন। পানীয় জলকষ্ট নিবারণের জন্য পুষ্করিণীর পঙ্কোন্ধার করিয়া তত্রত্য অধিবাসিদের মহৎ উপকার করিয়া গিয়াছেন।
শ্রীশ্রী কুঁশল চাঁদ গোস্বামী তৎ সহধর্মিণী রাধারাণী গোস্বামীণী, শ্রীশ্রী নিতাই চাঁদ গোস্বামী ও শ্রীশ্রী রাম চাঁদ গোস্বামী তৎ সহধর্মিনী রাই কিশোরী গোস্বামীণীর আখড়া বাড়িতে সমাধি আছে। উক্ত সমাধিগুলিতে অদ্যাপি যথা নিয়মে নিত্যসেবা ও মোহন্তদিগের তিরোভাব উপলক্ষে প্রতি বছর মহোৎসব হইয়া থাকে।
ইহাকে দিবসি বলে। এতদুপলক্ষে নানা বিরাট স্থান হইতে নানা শ্রেণীর বহু লোকের সমাগম হয়। উপস্থিত সকলেই নাম সংর্কীতন, বাউল সঙ্গীত ও ভাগবতাদি শ্রবণে অপার আনন্দ উপভোগ করতঃ প্রসাদ-অন্ন প্রাপ্তে পরিতৃপ্তি লাভ করে।
বরিশাল জেলার অন্তর্গত কালীগঞ্জে শ্রীশ্রী নিতাই চাঁদ গোস্বামীর সহধর্মিণীর শ্রীশ্রী ব্রজেশ্বরী গোস্বামীণীর সমাধি আছে। সেই স্থানীয় শিষ্যবৃন্দ অদ্যাপি যথানিয়মে নিত্য সেবা করিয়া থাকে। বাৎসরিক ভোগরাগ উপলক্ষে সাধুসজ্জনের আগমন, ভগবৎ গুণানুকীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
দিবা শর্বরী অবিশ্রাম ঝি ঝি পোঁকার রব ও ফেরুপালের চিৎকার ভিন্ন আর কিছুই শ্রুত হইত না একদা উদাসীন বেশে কুঁশল চাঁদ বাবাজী আসিয়া এই অরণ্য মধ্যে বিশাল বটবৃক্ষ তলে উপবেশন করেন। তিনি একাকী নির্জন বনভূমিতে শ্বাপদ পরিবেষ্টিত হইয়া নিজ সাধন ভজনে নিমগ্ন ছিলেন।
পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে, ঢাকা, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি নানা জেলার সহস্র সহস্র বাউল বৈষ্ণব এবং ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, নবশায়ক, বৈশ্য, সাহা, পাল, কুণ্ডু প্রভৃতি এবং অন্যান্য নানা জাতীয় দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরু এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের তিরোধানে যে অভাব হইল তা পূরণ হইবার নহে।
গোস্বামীজী সাধনবলে অনেক উচ্চ স্তর লাভ করিয়াছিলেন। তিনি বালকের ন্যায় অতি সরল প্রকৃতি এবং মিষ্টভাষী ও সদালাপী ছিলেন। অসাধারণ চরিত্র বলে এবং প্রেম পূর্ণ মধু সদ্ব্যবহারে হিন্দু মুসলমান অপামর সর্ব সাধারণ তার প্রতি আকৃষ্ট না হইয়া পারিত না, এমন গৌরগত প্রাণ, সত্য পরায়ণ, প্রেম ভক্তির আঁধার এবং ঈশ্বরের দৃঢ় বিশ্বাসী সাধুমহাজন সচরাচর দেখা যায় না।
সঙ্গীত বিদ্যায় তিনি বিশেষ রূপে পারদর্শী ছিলেন। তার কণ্ঠস্বর অতি মধুর ছিল। তিনি সংস্কৃত ভাষায় সুশিক্ষিত অগাধ বৈষ্ণব শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। আকৃতি পরম সুন্দর এবং প্রকৃতি অশেষ সদাগুনে বিভূষিত ছিল তার গৌরবর্ণ চির উজ্জ্বল এমন সৌম্য মূর্তি কোথাও দেখা যায় না। তার রচিত অনেক দেহতত্ত্ব ও বাউল সঙ্গীত আছে।
যে স্থানে এমন সুরমা অট্টালিকা নির্মাণ বারিপূর্ণ পুষ্করিণী ফলের বাগান সুদৃশ্য পুষ্পোদ্যান পরিশোভিত এই আশ্রম বিরাজ করিতেছে। যেখানে এমন অহর্নিশি খোল করতাল শঙ্খ ঘণ্টা কাসর প্রভৃতি ধ্বনি সহ শ্রী ভগবানের অমিয় মধুরনাম সঙ্কীর্তন ভক্ত হৃদয়ে প্রেমের তরঙ্গ উত্থিত হইয়াছে দ্বিশত বর্ষ পূর্বে তথায় হিংস্র জন্তুর আবাস স্থল নিবিড় অরণ্য ছিল।
দিবা শর্বরী অবিশ্রাম ঝি ঝি পোঁকার রব ও ফেরুপালের চিৎকার ভিন্ন আর কিছুই শ্রুত হইত না একদা উদাসীন বেশে কুঁশল চাঁদ বাবাজী আসিয়া এই অরণ্য মধ্যে বিশাল বটবৃক্ষ তলে উপবেশন করেন। তিনি একাকী নির্জন বনভূমিতে শ্বাপদ পরিবেষ্টিত হইয়া নিজ সাধন ভজনে নিমগ্ন ছিলেন।
গোঁসাইজীকে শেষ দেখিবার জন্য সকলের প্রাণে ব্যাকুলতার সেই করুণ দৃশ্য অত্যন্ত হৃদয় বিদারক হইয়াছিল গোঁসাইজী একজন সাধন সিদ্ধ মহাপুরুষ ছিলেন। রাজৈর গোঁসাইজীর স্বনামীয় আখড়া বাড়ি নিজের প্রতিষ্ঠিত ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ দেব আছেন, তার নিত্য সেবাকার্য এবং বাৎসরিক মহোৎসবাদি ও গোঁসাইজীর স্থাপিত শ্রী গৌরাঙ্গ সভা যথা নিয়মানুসারে চলছে।
একে নিবিড় বন তাহাতে আবার বটবৃক্ষস্থ ব্রহ্মদৈত্যের ভয়ে অতি দূর দিয়া লোকে যাতায়াত করিত ভ্রমেও কদাচ ইহার ত্রিসীমানায় কেহ পদার্পণ করিত না। কুঁশল চাঁদের সাধদ প্রভাবে ও অলৌকিক শক্তিবলে ক্রমে তথায় জন সমাগম হইতে থাকে।
কিছুদিনের মধ্যেই জঙ্গলাবৃত নিবিড় অরণ্যভূমি মনুষ্য বাসার উপযোগী হয় এই স্থানেই ভূম্যধিকারী খালিয়ার ধর্মানুগত উচ্চবংশীয় ব্রাহ্মণ জমিদারগণ উক্ত সাধনসিদ্ধ মহাপুরুষের অলৌকিক ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করিয়া স্বেচ্ছায় ঐ ভূমি নিস্কর প্রদান করেন ক্রমে শিষ্য ও শিষ্যানুশিষ্য বৃদ্ধি হইতে থাকে পরে ঐ স্থানেই বৃহৎ একটি আখড়ায় বা আশ্রমে পরিণত হয়।
শ্রীমৎ মাতান চাঁদ গোস্বামী ৬৩ বছর বয়সে বিগত ১৩৪৪ সনের ৯ই অগ্রহায়ণ বৃহস্পতিবার রাত্রি ১১টায় দেহ রাখিয়াছেন।
এই সংবাদ ক্ষণকালের মধ্যেই দাবানলের ন্যায় চতুর্দিকে ছড়াইয়া পরে তৎমুহূর্তে শত শত পুরুষ নারী বালক বালিকা শোকবিহ্বল চিত্তে আশ্রমে আসিয়া সম্মিলিত হয়, জন সমাগমে আশ্রম প্রাঙ্গণ, বাগান, নাটমন্দির, দালানের কক্ষ, বারান্দা প্রভৃতি স্থানে তিল ধারনের স্থান ছিল না।
গোঁসাইজীকে শেষ দেখিবার জন্য সকলের প্রাণে ব্যাকুলতার সেই করুণ দৃশ্য অত্যন্ত হৃদয় বিদারক হইয়াছিল গোঁসাইজী একজন সাধন সিদ্ধ মহাপুরুষ ছিলেন। রাজৈর গোঁসাইজীর স্বনামীয় আখড়া বাড়ি নিজের প্রতিষ্ঠিত ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ দেব আছেন, তার নিত্য সেবাকার্য এবং বাৎসরিক মহোৎসবাদি ও গোঁসাইজীর স্থাপিত শ্রী গৌরাঙ্গ সভা যথা নিয়মানুসারে চলছে।
রাধাগঞ্জ গোঁসাইজীর স্থাপিত হরিসভা আছে, হরিসভায় কার্য এবং বাৎসরিক উৎসবাদি যথা নিয়মে চলছে। গোঁসাইজীর সহধর্মিণী শ্রীমতী মাধুর্যময়ী গোস্বামীণীর তার শিষ্য পুত্র শ্রীশ্রী গৌর গোপাল গোস্বামীকে মহান্ত পদে অভিসিক্ত করিয়া পুত্রকে উপযুক্ত শিক্ষা বিধানে নিযুক্ত করিয়াছেন।
……………………….
পুন:প্রচারে বিনীত: ভবঘুরেকথা.কম
তথ্যসূত্র:
শ্রীশ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য তত্ত্ব
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………..
আরো পড়ুন:
মাই ডিভাইন জার্নি : এক :: মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার
মাই ডিভাইন জার্নি : দুই :: কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়
মাই ডিভাইন জার্নি : তিন :: কোন মানুষের বাস কোন দলে
মাই ডিভাইন জার্নি : চার :: গুরু পদে মতি আমার কৈ হল
মাই ডিভাইন জার্নি : পাঁচ :: পাপীর ভাগ্যে এমন দিন কি আর হবে রে
মাই ডিভাইন জার্নি : ছয় :: সোনার মানুষ ভাসছে রসে
মাই ডিভাইন জার্নি : সাত :: ডুবে দেখ দেখি মন কীরূপ লীলাময়
মাই ডিভাইন জার্নি : আট :: আর কি হবে এমন জনম বসবো সাধুর মেলে
মাই ডিভাইন জার্নি : নয় :: কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি : দশ :: যে নাম স্মরণে যাবে জঠর যন্ত্রণা
মাই ডিভাইন জার্নি : এগারো :: ত্বরাও গুরু নিজগুণে
মাই ডিভাইন জার্নি : বারো :: তোমার দয়া বিনে চরণ সাধবো কি মতে
মাই ডিভাইন জার্নি : তেরো :: দাসের যোগ্য নই চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি :চৌদ্দ :: ভক্তি দাও হে যেন চরণ পাই
মাই ডিভাইন জার্নি: পনের:: ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই
মাই ডিভাইন জার্নি : ষোল:: ধর মানুষ রূপ নেহারে
মাই ডিভাইন জার্নি : সতের:: গুরুপদে ভক্তিহীন হয়ে
মাই ডিভাইন জার্নি : আঠার:: রাখিলেন সাঁই কূপজল করে
মাই ডিভাইন জার্নি :উনিশ :: আমি দাসের দাস যোগ্য নই
মাই ডিভাইন জার্নি : বিশ :: কোন মানুষের করি ভজনা
মাই ডিভাইন জার্নি : একুশ :: এসব দেখি কানার হাটবাজার