সহস্রার চক্র : পর্ব বারো
-দ্বীনো দাস
সহস্রার চক্র
(আকফা – Crown chakra -Pineal gland)
এই চক্রটি মানুষের মাথার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। চক্রটি উচ্চতম আধ্যাত্মিক সাধনার মূল কেন্দ্র। যোগী বা সাধকরা নির্বিকল্প সমাধিস্থ হয়ে নিজের সম্পূর্ণ চেতনাকে এখানে কেন্দ্রভূত করেন। এখানে নির্বিকার ও ভাবশূন্য অবস্থা প্রাপ্ত হয়।
যোগী বা সাধক এখানে সহস্র দল পদ্ম বা আলী, ঔম, স্থিত হওয়ার কল্পনা করেন। এই পবিত্রতম স্থানটিকে পরমাত্মা নিবাস স্থান বলে মনে করা হয়। যোগানুসারে এই চক্রের উচ্চতম স্থিতি অন্তজ্ঞান এবং দিব্য দর্শনের বা উপলব্ধি করার স্থান।
মস্তিষ্কের উপরিভাগ, ডান নেত্র, পীযুষ (pituitary) গ্রন্থির সঙ্গে বিশেষ ভাবে সম্পর্কিত অঙ্গ।
নাভী থেকে দক্ষিণ দিকে বাকিয়ে দম বায়ু বাদিকে হৃদপিণ্ড, ডান হৃদপিণ্ড হয়ে কণ্ঠনালী দিয়ে উর্ধ্বে তোলার সশব্দ জপের পদ্ধতি গুরু দেখিয়ে দেন।
এই চক্রের রং বেগুনী। যোগী সাধকদের মতে, এ ছাড়া ডান বাম হাতের করতলেও একটি করে চক্র থাকে। যেখান দিয়া আর্শীবাদ শক্তি গ্রহণ প্রদান করা হয়। একে শূন্য চক্র বলে। এই চক্রের বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।
প্রতিটি চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু বিজমন্ত্র ধ্বনি বা শব্দ। আর প্রতিটা শব্দ বেরিয়ে আসছে প্লেক্সাস বা চক্র থেকে, নাড়ীপুঞ্জের কেন্দ্র থেকে। শাস্ত্রমতে, মানব শরীরে যত শীরাপুঞ্জ আছে সবগুলোকে বলা হয় এক একটা দেবত বা দেব যার দ্বারা সৃষ্টি, স্থিতি, লয় ঔম। তারেই দেব নামে জানতে হয়।
বলতে গেলে না দেখে কথা বলা ঠিক নয়- যোগী সাধকরা যে বিবরণ দিয়েছে তার কিঞ্চিৎ বিবরণ দেবার চেষ্টা করছি। কারণ এখানে পৌঁছানো দূূরূহ ব্যাপার, শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রমে পৌঁছানো যায়। জগৎ সংসার জালে আবদ্ধ জীব মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়।
মুক্ত সত্যবান ব্যক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। যে কিনা ইন্দ্রিয়গুলো চিনে বসে রেখেছে, কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করছে বায়ু।
মানুষের মন যে ভাবে চালাচ্ছে শরীরটা সেই ভাবে চলছে। সব কিছুর মূলে স্নায়ুতন্ত্র ও স্নায়ুকোষ।
আর এই যে মানব শরীরের মনের মননক্রিয়া হচ্ছে স্নায়ুরোষ ও স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে। আর এ সবই হচ্ছে বা নিয়ন্ত্রণ করছে পিনিয়্যাল গ্লান্ড সহস্রার চক্র।
প্রতিটি চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু বিজমন্ত্র ধ্বনি বা শব্দ। আর প্রতিটা শব্দ বেরিয়ে আসছে প্লেক্সাস বা চক্র থেকে, নাড়ীপুঞ্জের কেন্দ্র থেকে। শাস্ত্রমতে, মানব শরীরে যত শীরাপুঞ্জ আছে সবগুলোকে বলা হয় এক একটা দেবত বা দেব যার দ্বারা সৃষ্টি, স্থিতি, লয় ঔম। তারেই দেব নামে জানতে হয়।
মানব শরীরে ছোট বড় মিলিয়ে কয়েক কটি নাড়ী বা নার্ভ রয়েছে মানে দেবতা রয়েছে।
উনকোটি দেবতা সঙ্গে আছে গাথা।
-ফকির লালন সাঁই
এসবের নিয়ন্ত্রণ কর্তা হল পরম পুরুষ, আত্মার যে অভিস্ফুরণ অনুশরীরে অনুভাব অজস্র হয়ে সেই ভাবে অভিব্যাক্তিগুলো ভালভাবে প্রকাশ হতে পারে তার জন্য সৃষ্টির এই মানব শরীরে সুন্দর সহস্র নাড়ী বা দেবতা ব্যবস্থা।
প্রাণের এই স্থান ও মনের স্থিরতার পর সম্পূর্ণ বৃত্তির নিরোধ হয়। আধ্যাত্মিক বিকাশ এবং মুক্তি বা মোক্ষের কামনার জন্য এই চক্রকে বিকশিত করার প্রয়োজন মানুষ মাত্রই। এটাই হল চিত্তের স্থান, যাতে আত্মার জ্ঞানের প্রকাশ প্রতিবিম্ব পড়ে, এবং এইখানেই প্রাণ ও মন স্থির হলে পরে সমাধির অবস্থা অথাৎ সর্বনিবৃত্তি নিরোধ হয়।
একে প্রবোধন, একতার চেতনা এবং আমি আছি বা আমি সত্য তেতনা রূপে ব্যাখ্যা করা হয়। এ কারণেই আধ্যাতিক জাগ্রত প্রাপ্ত ব্যাক্তির তার মাথার চারধারে আলোকপুঞ্জসহ প্রদর্শিত হয়। এই চক্র অন্তবোধ এবং প্রত্যক্ষ আধ্যাত্মিক দৃশ্যের স্থান।
সংক্ষেপ বিবরণ-
১. নাম- সহস্রার চক্র.crownchakra আকফা-pineal gland।
২. স্থান- মস্তিষ্ক তালুর ওপরে ব্রহ্মরন্ধ্রর উপর।
৩. রং- বেগুনি- (violet)।
৪. পাপড়ির অক্ষর- অ-ক্ষ পর্যন্ত।
৫. তত্ত্ব- তত্ত্বাতীত/ধারণাতীত।
৬. সম্পর্ক- পীনিয়ল গ্রন্থির সঙ্গে।
৭. ফল- অমরতা, মুক্তি, সত্যম।
৮. শক্তির উৎস- আধ্যাতিক প্রগতি।
৯. আকৃতি- নানা রং এর আলোয় ভরা সহস্র দল পদ্মযুক্ত।
১০. নিয়ন্ত্রণ- ডান চোখ ও কপালের উপরিভাগ।
(চলবে…)
…………….
আরো পড়ুন:
ধ্যানযোগ : পর্ব এক
সপ্তচক্র লতিফা : পর্ব দুই
প্রবৃত্তি : পর্ব তিন
ধ্যান : পর্ব চার
অন্তস্রাবী গ্রন্থি : পর্ব পাঁচ
চক্র : পর্ব ছয়
সাধিষ্ঠান চক্র : পর্ব সাত
মনিপুর চক্র : পর্ব আট
অনাহত চক্র : পর্ব নয়
বিশুদ্ধ চক্র : পর্ব দশ
আজ্ঞা চক্র : পর্ব এগারো
সহস্রার চক্র : পর্ব বারো
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার
ভক্তি-সংসার-কর্ম
………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।