ভবঘুরেকথা

চক্র : পর্ব ছয়

-দ্বীনো দাস

ষড়চক্র পরে আছে
আদি বিধান তার,
পূর্ণ করে ষোলকলা
ভেদ করে সপ্ততলা।।

তার উপরে বসে কালা
মধু করে পান,
সে চাঁদ মাহেন্দ্রযোগে
উদয় হয়।।
-সাঁইজি ফকির লালন

১. নফস (মুলাধার) Root chakra or basic chakra : সুপ্রারেনল গ্রন্থি।
২. নফস২ (সাধিষ্ঠান) Hera chakra : Gonad gland/Sex gland।
৩. রুহ (মনিপুর) Solar plexus : Adrenal gland।
৪. কলব (অনাহত বা হৃদয় চক্র) Heart chakra : Thymus gland।
৫. ছের (বিশুদ্ধ) Throat chakra : Thyroid gland।
৬. খফি (আজ্ঞা) Third eye chakra : Pituitary gland।
৭. আকফা (সহস্রার) Crown chakra : Pineal gland।

জীবনদায়ী শক্তির প্রবাহ উপর থেকে চার চক্রে স্থিত-

১. অনাহত- কলব।
২. বিশুদ্ধ- ছের।
৩. আজ্ঞ- খফি।
৪. সহস্রার- আকফা।

মনিপুরের হাটে মনোহরি কল
তেহাটা ত্রিবিনে তাহে বাকা নল,
মাকড়ার আঁশে বন্দি সে জল
লালন বলে ছন্দি বুজবে কেরে।।
-সাঁইজি ফকির লালন

চক্রের অবস্থান

নফস- মুলাধার এটি পুরুষের মেরুদণ্ডের সবচেয়ে নিচের ত্রিকনাস্থ সেক্রাম বন বা হাড়ের ভেতর অবস্থিত। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই চক্র ডিম্বাশয়ে অবস্থিত। শরীরের ভৌতিক শক্তির এটা হল প্রধান স্থান। এই চক্র জীবনের প্রেরণা দেয়।

সাধক যোগীদের মতে কুণ্ডলিনী নামক দিব্য শক্তি এই মুলাধার চক্রে সাড়ে তিন প্যাঁচে অবস্থায় স্থিত থাকে। সাধকগণ মুরাকাবা বা ধ্যানের শক্তির মাধ্যমে জাগ্রত করে উপররের দিকে তোলেন এবং এটি সমস্ত চক্রকে বিদ্ধ করে সহস্রার বা আকফা লতিফায় পৌঁছায়।

এর তত্ত্ব হলো- পৃথিবী। সম্পর্কিত অঙ্গ হলো- অধিবৃক্ক গ্রন্থি, বৃক্ক ও মূত্রথলি। এই চক্র ঠিকমতো কাজ না করলে তার প্রতিকূল প্রভাব গিয়ে পড়ে শরীর ও মনে। তখন শরীর মন উদাস হয়ে যায়, জড়তা আসে, শরীর ভার ভার লাগে এবং নানা অস্থি রোগ হয়। এর রং লাল।

যার যার স্বীয় মুর্শিদ গুরু কর্তৃক নিয়ম অনুসারে সাধন প্রক্রিয়ায় এই কুলকুণ্ডলিনী চক্র জাগ্রত করতে হয়। মুর্শিদের মেহের বা কৃপা না হলে সারা জীবনেও কেউ এটাকে জাগ্রত করতে পারবে না। একটি মাত্র পথ গুরু প্রেমে ডুবতে হবে ভক্তি ও দ্বাসত্ব সহকারে তবেই সেই মহাগুরুর কৃপা হবে।

মানুষকে এই চক্র জীবনের জন্য প্রেরণা দেয় ও প্রচুরতা, সমৃদ্ধির পরিচায়ক। এই চক্র কিডনী, শিরদাড়ার হাড়, স্নায়ু, এড্রিনাল গ্লান্ড আরো কিছু অঙ্গের উপর নিয়ন্ত্রণ করে।

এটি শরীরকে উষ্ণতা প্রদান করে প্রাণশক্তি বজায় রাখে। ছোট বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও এই চক্র সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শরীরের আঘাত, চোট, ক্ষত সারাতে এই চক্রের ভূমিকা অসীম। এই চক্র পুরো সক্রিয় থাকলে মানব সুস্থ থাকে আর সক্রিয় না থাকলে মানুষ বিক্ষিপ্ততা, ঔদাসীন্য, চিন্তাগ্রস্ত, উদ্বিগ্ন হয়।

এই চক্রের নিচে ত্রিকাস্থি যন্ত্র আছে। অনেকটা সূক্ষ্ম যোনি মণ্ডলের মতো যার মধ্য কোন দিয়ে সুষুম্না (সরস্বতী) নাড়ী, দক্ষিণ কোন থেকে পিঙ্গলা (যমুনা) নাড়ী এবং বাম কোন থেকে ইড়া (গঙ্গা) নাড়ী বেরিয়েছে। এজন্য একে মুক্ত ত্রিবেণী বলে। এটা কুণ্ডলিনী শক্তির কেন্দ্রস্থল।

৭টি চক্র আমাদের শরীরের ৭টি অন্তস্রাবী গ্রন্থির প্রতিনিধিত্ব করে।

যার যার স্বীয় মুর্শিদ গুরু কর্তৃক নিয়ম অনুসারে সাধন প্রক্রিয়ায় এই কুলকুণ্ডলিনী চক্র জাগ্রত করতে হয়। মুর্শিদের মেহের বা কৃপা না হলে সারা জীবনেও কেউ এটাকে জাগ্রত করতে পারবে না। একটি মাত্র পথ গুরু প্রেমে ডুবতে হবে ভক্তি ও দ্বাসত্ব সহকারে তবেই সেই মহাগুরুর কৃপা হবে।

সংক্ষেপ বিবরণ-

১. স্থান- কটিদেশ, গোপনাঙ্গের পাশে।
২. নাম- মুলাধার চক্র, নফস।
৩. আকৃতি- রক্ত রঙ্গের আলোয় প্রজ্বলিত চার পাপড়ি বা দল বিশিষ্ট পদ্মের সমান।
৪. রঙ- লাল।
৫, দলের অক্ষর- চার দলে -।
৬. তত্ত্ব- পৃথিবী।
৭. সম্পর্ক- সুপ্রারেনল গ্রন্থি।
৮. ফল- আরগ্য, আনন্দ চিত্ত, বাক্য, কাব্য, লেখন ক্ষমতা।
৯. শক্তির উৎস- চেতনা ও ফুর্তি, জড়তা ও আলস্য।
১০. নিয়ন্ত্রণ- কিডনি, ব্লাডার ও শিরদাড়ার হাড়।

এই চক্রের আরো কিছু গোপন শব্দ বা বর্ণ আছে যা কিনা আপন মুর্শিদ কেবলার কাছ হতে সিদ্ধ জ্ঞানী গুরুর কাছ থেকে- জেনে বুঝে দেখে নিয়ে করতে হয়।

(চলবে…)

সাধিষ্ঠান চক্র : পর্ব সাত>>

…………….
আরো পড়ুন:
ধ্যানযোগ : পর্ব এক
সপ্তচক্র লতিফা : পর্ব দুই

প্রবৃত্তি : পর্ব তিন
ধ্যান : পর্ব চার
অন্তস্রাবী গ্রন্থি : পর্ব পাঁচ
চক্র : পর্ব ছয়
সাধিষ্ঠান চক্র : পর্ব সাত
মনিপুর চক্র : পর্ব আট  
অনাহত চক্র : পর্ব নয়
বিশুদ্ধ চক্র : পর্ব দশচক্র
আজ্ঞা চক্র : পর্ব এগারো
সহস্রার চক্র : পর্ব বারো

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার

ভক্তি-সংসার-কর্ম

………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!