ভবঘুরেকথা
ধ্যান চক্র সপ্তচক্র আসন যোগ

প্রবৃত্তি : পর্ব তিন

-দ্বীনো দাস

মনের দুই ধরনের প্রবৃত্তির কথা মেনে নেওয়া হয়-

১. দৈবিক প্রেম।
২. অদৈব্য রাক্ষসী ঘৃণা।

একটা সাকারাত্মক (positive) দ্বিতীয়টা নঞর্থক (negative)। এই শক্তিগুলো আধারে উৎপাদিত ভাবনার অনুরূপই ব্যক্তির জীবন সঞ্চালিত হয়। মনের কাজ হল বিভিন্ন প্রকারের ভাবনার উদ্রেক করে আমাদের সুরক্ষা শরীরের মাধ্যমে কায়া শরীরে পৌছে দেয়।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাবনাত্মক চাপ মানুষের দেহের উপর পড়ে তখন তার শ্বাসক্রিয়ার উপর মন্দ প্রভাব পড়ে। ভাবনার অধিক চাপের ফলে ব্যক্তি তার ফুসফুসের প্রয়োগ শতকরা ৩০-৫০ ভাগই মাত্র করতে পারে।

পরিণামত তাতে নিহিত পঞ্চতত্ত্বের পোষণ ক্রিয়া ঠিকমতো হতে পারে না। পঞ্চতত্ত্বের সঠিক ও উপযুক্ত পোষণ না হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। শেষে ঔষধ খাই মালিশ করি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হই।

একেতো আমরা চিন্তা, কুচিন্তা নানা রকম দুশ্চক্রিয়ার কারণে ৩০-৫০ ভাগ প্রকৃতি প্রদত্ত শক্তি উপভোগ করতে পারি। ফলে আমাদের শরীরের নিহিত পঞ্চতত্ত্বের পোষণ সঠিকভাবে হতে পারে না। তার উপর তিন রকমের আক্রমণ অহরহ হয়ে চলছে-

১. ভাবনার অত্যধিক চাপ।
২. বেসামাল ভোজন, অনিয়মিততা।
৩. বিষাক্ত পরিবেশ।

এতো প্রতিকুলতার মধ্যে অবশ্যই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে সুস্থ অবস্থায়। তার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান অর্জন, যোগ ও যোগাসন, সাধুসঙ্গ, ভক্তিসাধনা, সাধুবাক্য, গুরু নির্দেশিত পথে নিয়ম পালন, বিভিন্ন সৎগুণ সম্পন্ন কাজ করা।

নিহেতু সাধক যাঁরা
তাঁদের করণ খাঁটি জবান খাড়া।।

উপশক্য কাটিয়ে তাঁরা চলছে পথ
মুক্তিপদ ত্যাজিয়ে সদাই
ভক্তিপদে রেখে হৃদয়
শুদ্ধপ্রেমের হবে উদয় সাঁই রাজি যাতে।।
-সাঁইজি ফকির লালন

নিহেতু সাধু পুরুষ- যারা ধ্যানী, তাদের দেহ মধ্যস্থ শক্তিকে সূক্ষ্ম শরীরে অত্যাধিক বিকাশ করতে পারে। তারা সূক্ষ্ম শরীরকে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর বর্ধিত করতে পারে বা তারও বেশী। সাধু বা মোমিনদের দিব্য শক্তি অত্যাধিক বিকশিত হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে একটা দিব্য চমক বা আভা দৃষ্ট হয়।

তাঁদের শরীরে প্রকাশমান ও শান্তিপ্রিয়, মুখাবয়ব হয় মনোরম। তাদের দেখলে ভালো লাগে ও মনে ভক্তি আসে, মনের মধ্যে শ্রদ্ধা ভাব আসে। এনাদের সঙ্গ করলে মন প্রফুল্ল হয়। তাদের এই সূক্ষ্ম শরীরের সংস্পর্শে যে ব্যক্তিই আসে, সে একটা পরম শান্তি অনুভব করে, চিন্তা মুক্ত হয়। চরণ স্পর্শের কথা এই কারণে আছে।

‘দরশনে দুঃখ হরে পরশনে পরশ করে’
-ফকির লালন সাঁই।

লোহা সোনা পরশ পরশে
মানুষের কারণ তেমনই সে,
লালন বলে হলে দিশে
জঠরজ্বালা যায়।।

(চলবে…)

ধ্যান : পর্ব চার>>

…………….
আরো পড়ুন:
ধ্যানযোগ : পর্ব এক
সপ্তচক্র লতিফা : পর্ব দুই

প্রবৃত্তি : পর্ব তিন
ধ্যান : পর্ব চার
অন্তস্রাবী গ্রন্থি : পর্ব পাঁচ
চক্র : পর্ব ছয়
সাধিষ্ঠান চক্র : পর্ব সাত
মনিপুর চক্র : পর্ব আট  
অনাহত চক্র : পর্ব নয়
বিশুদ্ধ চক্র : পর্ব দশ
আজ্ঞা চক্র : পর্ব এগারো
সহস্রার চক্র : পর্ব বারো

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার

ভক্তি-সংসার-কর্ম

………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!